– ব্যস্ত?
– না। খুব একটা না। বল।
– বাবাহ! তুই আমাকে রিপ্লাই করলি!! আমার কি সৌভাগ্য!!
– বাজে বকা ছাড়া অন্য কিছু বলার আছে?
– না না সিরিয়াসলি। যবে থেকে বয়ফ্রেন্ড হয়েছে, রিপ্লাই করাই তো বন্ধ করে দিয়েছিস!
– চল। বাই।
– আরে শোন না। একটা ঘটনা ঘটেছে। সেটা শুনে যা।
– কী হয়েছে?
– কাল রাত্রে আমি একটা ভুলভাল স্বপ্ন দেখেছি!
– তো আমি কী করব?
– আরে তোকে নিয়ে ছিল স্বপ্নটা!
– তাই নাকি? কী দেখলি? নিশ্চয় ভুলভাল কিছু করছিস আমার সাথে!!
– তোর যেমন নোংরা চিন্তা ভাবনা! সব স্বপ্ন ওরকম হয় নাকি?
– আমি তোকে চিনি তো! তাই বললাম!
– চিনতিস! চিনি আবার কী! ব্রেক আপ এর পর তিন বছর হয়ে গেছে! সবাই পাল্টেছে। আমিও পাল্টেছি!
– উফফ! হয়েছে হয়েছে! ঢং না করে কী স্বপ্ন দেখলি বলে ফ্যাল!
– আরে দেখলাম যে আমি যে কলেজে পড়াই তোর ছেলে সেখানে পলিটিক্যাল সায়েন্স অনার্স নিয়ে ভর্তি হয়েছে। মানে আমার আন্ডারেই আর কি। তবে তোর ছেলেটা ভীষন বিচ্ছু! সবার সাথে ঝামেলা পাকায়! পড়াশুনো করে কিন্তু ম্যানার্স জানেনা একটুও! মাঝে মধ্যেই বকুনি খায় আমার কাছে। তারপর-
– স্বপ্ন টা কি বাই এনি চান্স হ্যারি পটার থেকে ইন্সপায়ার্ড? তুই কি প্রফেসর স্নেপ?
– ধুর বাল! শোন না…
– হ্যাঁ বল।
– তো যাই হোক, আমি তো জানিনা ও তোর ছেলে। তারপর একদিন তোর ছেলে একটা ছেলেকে মেরে তার চোখ কালো করে দিয়েছে। তারপর তো আর কিছু করার নেই। ওর গার্জেন কল হয়েছে।
– বাহ! তারপর?
– তারপরের দিন দেখলাম তোর বয়ফ্রেন্ড থুড়ি হাসব্যান্ড এসেছে। ওকে দেখেই তো আমি চিনতে পেরেছি ছেলেটা তোর ছেলে। তোর বর আমাকে চিনতে পারেনি! আমি একটু ভয় টয় দেখালাম। টিসি দিয়ে দেবো, ভবিষ্যত নষ্ট হয়ে যাবে, কোথাও ভর্তি নেবে না। তোর বর ভীষন ভয় টয় পেয়ে হাতে পায়ে ধরার উপক্রম করল। আমি বললাম, ঠিক আছে পরে আসুন। দেখছি কী করা যায়! তোর বর বলল, কাল তো আমার হবে না, এখানে রিক্সাওয়ালাদের ইউনিয়নের মিটিং আছে। ওখানে থাকতেই হবে আমাকে।
– এক সেকেন্ড এক সেকেন্ড! আমার বর কে রিক্সাওয়ালাদের ইউনিয়নের মিটিংএ কেন থাকতে হবে?
– কারন ও চাকরি পায়নি কোনো। বেকার ছেলে। তাই রিক্সা চালিয়ে সংসার চালায়!
– আমার বর রিক্সা চালায়?
– তো কী হয়েছে? রিক্সা চালানো খারাপ নাকি? আর তাছাড়া আমার স্বপ্নে আমি এটা দেখেছি, রিয়েল লাইফে ও রিক্সা চালাক বা অটো চালাক, আমার কি তাতে?
– অসাধারন! যাই হোক, তারপর বল। শুনি…
– ও হ্যাঁ। তারপর আমি বললাম ঠিক আছে আপনার মিটিং থাকলে আপনার বৌকে পাঠান। তোর বর একটু চমকে উঠে বলল, বৌকে? আমি বললাম, হ্যাঁ। আর একজন যে গার্জেন আছে তাকে! তোর বর বলল, “ওহ ঠিক আছে। তাই পাঠাবো তাহলে!” তারপর সে চলে গেল। যাওয়ার আগে শুধু আমাকে একবার জিজ্ঞেস করল, আপনাকে কি আগে কোথাও দেখেছি? আমি বললাম, “দেখে থাকতে পারেন! আমি আগে দূরদর্শনে সিরিয়াল করতাম! তোর বর ছেলেকে নিয়ে আর কিছু না বলে চলে গেল!
– তারপর? আমি গেলাম?
– হ্যাঁ। তুই এলি পরের দিন! তুই তো আমাকে দেখেই চিনতে পেরেছিস! আমি একটু না চেনার ভান করলাম। ঘ্যাম নিলাম! তারপর বললাম তোর ছেলের টিসি আটকানোর একটাই উপায়! তুই বললি, “কী উপায়?” আমি বললাম, “আমার সাথে কফি খেতে যেতে হবে?”
– তুই তোর ছাত্রদের মাকে বলিস যে তোর সাথে তাকে কফি খেতে যেতে হবে?
– আরে আমি কেন বলব? স্বপ্নে এসব হয়েছে। যাই হোক, শোন তারপর। তুই তো এক কথায় রাজি! বললি আমার ছেলের জন্য আমি সব করতে পারি। আর কিছু করতে হলেও বলবেন! তারপর আমরা গেলাম কফি খেতে! আর তোর ছেলেও বেঁচে গেল টিসি পাওয়া থেকে। তবে তোর ছেলেকে আমি বলেছি মারামারিটা না থামাতে! কারন তাহলে আবার গার্জেন কল হবে। আর আবার কফি খেতে যাওয়া যাবে তোর সাথে!
– তুই ছাড়া এরকম বাল এর মত স্বপ্ন আর কেই বা দেখতে পারে!
– ওসব আমি জানিনা ভাই! দেখলাম স্বপ্ন। তাই বললাম।
– এত ডিটেইলে প্রত্যেকটা কথা স্বপ্ন থেকে কে মনে রাখতে পারে? গুলবাজির একটা লিমিট আছে!
– শোন ভাই, বিশ্বাস করলে কর, না করলে না কর! দেখেছি বলেই তোকে বললাম।
– হুম! বুঝলাম। তবে একটা জিনিস একটু ভুল আছে স্বপ্নে!
– কী?
– আমার ছেলের গার্জেন কল হলে আমাকেই যেতে হবে!
– এক সেকেন্ড? তোর ছেলেও হয়ে গেছে নাকি? এই তো ২ বছর প্রেম করছিস! বিয়ে করলি কবে?
– সেটা বলছি না! কিন্তু আমার রিক্সাওয়ালা বয়ফ্রেন্ডটা আর নেই। কাজেই ছেলে যদি হয়ও আমিই সবটা সামলাবো!
– দাঁড়া দাঁড়া! তোর ব্রেক আপ হয়েছে নাকি? কবে?
– এই তো এক মাস হল!
– সত্যি!! 😀
– খুব খুশি হলি বল শুনে!
– না না। রাম রাম! খুশি হব কেন? ব্রেক আপ এর খবর শুনে কি আর কেউ খুশি হতে পারে? 😀
– থাক! তোকে আমি হাড়ে হাড়ে চিনি!
– এই তাহলে তুই আছিস কোথায়? তোরা তো লিভইন করতিস বলেই জানতাম!
– আপাতত সোহিনীর ফ্ল্যাটে আছি! তবে বাড়ি খুঁজছি। কলকাতায় ওয়ান বিএইচকে ফ্ল্যাটের বড্ড অভাব! আর সব জায়গায় ব্রোকার!
– ইয়ে আমার ফ্ল্যাটে আমি একাই…
– না! অসম্ভব! আমি এতটাও চিপ নই!
– মানে? এতে চিপ এর কী হল?
– শোন। তোর সাথে আমার সম্পর্ক নেই তিন বছর! কনট্যাক্টও ছিল না অনেকদিন! কাজেই আমার ব্রেক আপ হয়েছে বলে আমি আবার তোর কাছ থেকে ফেভার নেব! এটা তুই ভাবলি কী করে? আমি নিজে খুঁজে নেব ফ্ল্যাটে!
– সোহিনীর সমস্যা হচ্ছে না?
– হচ্ছে তো জানি। সেই জন্যেই তাড়াতাড়ি চাই একটা ফ্ল্যাট। যদিও ও কিছুই বুঝতে দিচ্ছে না। কিন্তু তাও… আমি চাই না ওর লাইফে বার্ডেন হতে!
– এখানে বার্ডেনের কিছু নেই। ও তোকে বড্ড ভালোবাসে! ওই একটা বন্ধুই তোর হাত কখনও ছাড়বে না আমি জানি।
– হুম জানি রে। যাই হোক… তুই ভালো আছিস তো?
– হ্যাঁ। সে আছি! আচ্ছা আর একটা প্রস্তাব দিই? তোর সুবিধে হবে!
– কী শুনি!
– আমি কয়েকজনের সাথে কথা বলি? আমার বন্ধু রুদ্রর একটা ফ্ল্যাট আছে ওয়ান বিএইচকে। ও ছেড়ে দেবে বলছিল ওটা। ওর সাথে কথা বলি?
– রুদ্র মানে তোর বেস্ট ফ্রেন্ড?
– হ্যাঁ রে। বলব ওকে?
– নাহ ছাড় না। সেই তো ফেভার নেওয়াই হবে। বাদ দে। আমি দেখছি।
– আরে শোন না ব্যাঙ! ফেভার নেওয়া হবে না। কারন এর বদলে আমিও কিছু একটা নেবো! আমারও একটা জিনিস চাই!
– ভুল ভাল কিছু চাইলে খিস্তি খাবি কিন্তু!
– ভুল ভাল না! কফি!
– কফি?
– ইয়েস! কফি খেতে যেতে হবে! আমার সাথে।
– তাহলেই হবে? আর কিছু না!
– তুই আর কিছু দিতে চাইলে আমি না করব না! কিন্তু আমি এতেই খুশি!
– সব সময় অসভ্যতা!
– তাহলে ওই কথাই রইল! কফি খেতে যাচ্ছি। তারপর রুদ্রর ফ্ল্যাট টাও দেখতে যাবো!
– বেশ! তাই হবে। কবে যাবো তাহলে?
– ২ দিন দাঁড়া। পরশু দিন বা তার পরের দিন যাই?
– হ্যাঁ ঠিক আছে। চাপ নেই!
– ওকে! আমি কথা বলছি রুদ্রর সাথে!
– বেশ।
– আচ্ছা বাই!
– শোন না…
– হ্যাঁ?
– Thank You.
-Thank you বলিস না। কফি খাওয়াবি!
– অবশ্যই খাওয়াবো! তবে Thank you টা ফ্ল্যাট খুঁজে দেওয়ার জন্য নয়!
– তাহলে?
– আজ আমাকে মেসেজ করার জন্য!
– ওহ। ওতে আমার কোনো ভূমিকা নেই। কাল স্বপ্নটা দেখলাম বলেই তাই!
– বুঝলাম! পাগল!
– আচ্ছা টাটা এখন। একটা ফোন আসছে।
– হ্যাঁ টাটা!


– হ্যালো সোহিনী!
– হ্যাঁ বল। কী হল?
– Thank you ভাই ব্রেক আপ এর খবরটা দেওয়ার জন্য!
– You are welcome. কী কথা হল?
– সে অনেক কথা! বলব পরে। আপাতত কফি খেতে আর ফ্ল্যাট দেখতে যাবো!
– বাহ! ফাটাফাটি! তবে একটা কথা!
– কী?
– রুশাকে যদি আগের মত ট্রীট করিস তাহলে আমি দায়িত্ব নিয়ে তোদের মধ্যে ঝামেলা বাঁধাবো!
– আরে ভাই ওই মানুষটা আমি আর নেই রে। তিন বছর হয়ে গেছে।
– দেখা যাক!
– যাই হোক সেসব ছাড় কিন্তু এখন একটা জরুরী কাজ আছে!
– কী?
– রুদ্রকে একটা ফোন করতে হবে।
– কেন?
– বলব পরে!
– আচ্ছা ঠিক আছে।


– ভাই!
– বল!
– শোন না রুদ্র! তুই আর আমি তো সেই ক্লাস ফাইভ থেকে বেস্ট ফ্রেন্ড তাই না!
– কি দরকার সেটা বলে ফ্যাল নাটক না করে!
– তোর ফ্ল্যাটটা দরকার!
– কেন? টিণ্ডার ডেট নাকি? তোর তো নিজেরই ফ্ল্যাট আছে!
– আরে না রে ভাই! রুশার ব্রেক আপ হয়েছে। ওর একটা ফ্ল্যাট লাগবে শুনলাম। তাই মানে তোর ফ্ল্যাটটা…
– যাহ শালা! আমি কোথায় থাকবো?
– আমার ফ্ল্যাটে। রুমমেট!
– বাল! বড্ড ঝামেলা পাকাস তুই ভাই!
– সরি ভাই… আসলে… জানিস তো রুশাকে আমি…
– ন্যাকামো করিস না! কবে থেকে লাগবে? এত জিনিস নিয়ে শিফট করতে টাইম লাগবে!
– ইয়ে! পরশু?
– What? ইয়ার্কি মারাচ্ছিস নাকি?
– না মানে… আচ্ছা ঠিক আছে আমি অন্য কোথাও কিছু খালি আছে নাকি দেখছি!
– ঢং করিস না। প্যাকিং আর মুভিং এর দায়িত্ব তোর। একদিনে যদি করতে পারিস কর!
– ওক্কে ডান!
– আর একটা কথা?
– কী?
– তোর ফ্ল্যাটের বড় ঘরটা আমার! ছোটোটা তোর।
– বেশ! তাই হবে।
– ঠিক আছে।


৭ মাস পর

– ভাই রুদ্র!
– কী হয়েছে?
– তুই আর আমি তো সেই ক্লাস ফাইভ থেকে বেস্ট ফ্রেন্ড তাই না!
– এই কেলো করেছে! আবার কী হল?
– না মানে। রুশা আর আমার… রিসেন্টলি…
– কী হয়েছে? ব্রেক আপ?
– না ভাই। প্যাচ আপ হয়েছে! তাই মানে… আমরা ভাবছিলাম… এই ফ্ল্যাটে…!
– বাল! বড় ঝামেলা পাকাস তুই! সুস্থ শরীরকে ব্যস্ত করা!
– সরি ভাই আসলে জানিস তো…
– থাক! সব জানি আমি। প্যাকার্স আর মুভার্স এর দায়িত্ব তোর! যা করবি কর।
– ওক্কে ডান!
– আর একটা কথা?
– যদি ওই মেয়েটা এবার তোকে কষ্ট দেয়! আমি কিন্তু এর শেষ দেখে ছাড়ব বলে দিলাম।
– আচ্ছা বাবা! ঠিক আছে। পাগল একটা!
– ঠিক আছে। যা এক কাপ কফি খাওয়া!
– এখন?
– ইয়েস! এই কদিন যা যা খাওয়াতে বলব সব খাওয়াবি! নাহলে এই ফ্ল্যাট থেকে আমি এক পাও নড়ব না!
– উফ!! ঠিক আছে ঠিক আছে। বানাচ্ছি কফি!

(সমাপ্ত)

কফি, স্বপ্ন আর বেস্ট ফ্রেন্ড

Arnab Mondal


হিজিবিজি লেখা আর বিরিয়ানি নিয়ে Phd করছি আর আকাশবাণী কলকাতায় নিজের কন্ঠস্বর ভাড়া দিয়ে সংসার চালাচ্ছি।


Post navigation


4 thoughts on “কফি, স্বপ্ন আর বেস্ট ফ্রেন্ড

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কপি করবেন না দাদা/দিদি