বাথরুম থেকে ফিরে ঘরে ঢুকেই একটু অবাক হলাম আমি। আবার সেই আগের দিনের মত ব্যাপার! ফ্যান বন্ধ, এসি বন্ধ! উফফ! এ তো আচ্ছা ঝামেলা হল! কালকেও এই এক জিনিস হয়েছিল।

কাল সন্ধ্যেবেলা খুব গরম লাগছিল বলে এসি চালিয়ে ঘর অন্ধকার করে একটু শুয়েছিলাম। হঠাৎ ঘন্টাখানেক পর ঘুম ভাঙতে দেখি এসিটা বন্ধ! প্রথমে ভাবলাম রিমোটে চাপ পড়ে হয়ত বন্ধ হয়ে গেছে। তারপরেই দেখলাম রিমোট বিছানায় নেই! অথচ আমার স্পষ্ট মনে আছে রিমোট বালিশের পাশে রেখে আমি শুয়েছিলাম। তাহলে সেটা গেল কোথায়?

বিছানা থেকে উঠে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলাম। ঘরের দেওয়ালের কাছে থাকা বই এর একটা Cupboard  এর ওপর রয়েছে রিমোট। শুধু তাই নয়। বোর্ডের এসির সুইচ টাও অফ! কাল ভেবেছিলাম ঘুমের ঘোরে উঠে নিজে করেছি হয়ত! কিন্তু আজ আবার এক জিনিস দেখে একটু খটকা লাগল!

আজ এসিটা আর ফ্যানটা চালিয়ে একটু বাথরুমে গিয়েছিলাম। এসে দেখলাম শুধু এসিই বন্ধ নয়। ফ্যানও বন্ধ! উফফ! এতো আচ্ছা ঝামেলা! প্রায় বছর ১৫ রয়েছি আমি এই বাড়িতে! এরকম উপদ্রব এত বছরে কখনও হয় নি! কিন্তু হঠাৎ করে এটা শুরুই বা হল কেন! আর কাজটা করছেই বা কে?

হঠাৎ মনে হল নীচের বড় গেট টা কোনোভাবে খোলা রয়ে যায়নি তো? কথাটা মাথায় আসতেই একটু দ্রুত পা চালিয়ে নেমে গেলাম সিঁড়ি দিয়ে। গিয়ে দেখলাম, না! নীচের গেটটা তো ভেতর থেকে বন্ধ! তাহলে কী হতে পারে? কিচ্ছু মাথায় আসছিল না।

এসব ভাবতে ভাবতে ওপরে উঠে এসেই থমকে গেলাম! আমার ঘরের দরজাটা বাইরে থেকে ভেজানো! আটকানো নেই। তার কারন হয়ত দরজার লকটা ভাঙা! অথচ মিনিট পাঁচেক আগে আমি এই ঘর থেকে বেরিয়েই দরজা খুলে রেখে নীচে গিয়েছিলাম। এসব কী হচ্ছে টা কী? পরক্ষনেই একটা কথা মাথায় খেলে যেতেই শরীর টা যেন একবারের জন্য কেঁপে উঠল!

মনে হল এরকমটা কি হতে পারে যে নীচের গেট খোলা ছিল। কেউ একজন এ বাড়িতে ঢুকেছে! তারপর ভেতর থেকে নীচের গেটটা বন্ধ করে দিয়েছে। যাতে কেউ বুঝতে না পারে ভেতরে কেউ ঢুকেছে! কিন্তু তাই যদি হয়ে থাকে তাহলে সে লোক এখনও আমার বাড়ির মধ্যেই রয়েছে! এটা মনে হতেই কেমন যেন একটা অদ্ভুত ভয় লাগতে শুরু করল। এই মনে হল পেছন থেকে এসে কেউ মাথায় বাড়ি মারবে! কিছুক্ষন ছাড়া ছাড়াই বার বার চমকে পেছনে তাকাচ্ছি।

তারপর ঘরের মধ্যে বসে ঠান্ডা মাথায় কিছুক্ষন ভাবলাম। যদি ধরেও নিই গেট খোলা ছিল এবং বাড়িতে কেউ ঢুকেছে, কিন্তু তার উদ্দেশ্য টা কী? আমার ইলেকট্রিক বাঁচানো? সেই জন্যেই আমার ঘরের এসি, ফ্যান অফ করছে? এবার যেন ব্যাপারটা একেবারেই অবাস্তব লাগল! চোর চুরি করতে ঢুকে বিদ্যুৎ বাঁচাচ্ছে? ধুর এ আমার মনের ভুল! নিজেকে বোঝালাম আমি!

“শোনো অনিকেত, এত ভয় পেলে চলবে? নতুন জীবন এই তো শুরু! এখনও অনেকটা পথ চলা বাকি!”

ঘড়ির দিকে তাকালাম। সাড়ে ৯ টা বাজে! এসিটা চালিয়ে আর একটু ঘুমোই বরং। তখন ঘুমটা ঠিকমত হয় নি!

রাত ১০ টার সময় এসি চলার আওয়াজ পেয়ে বাড়ির আর একপ্রান্ত থেকে এদিকে আবার ছুটে এল মৈত্রেয়ী! বার বার এক জিনিস কেন হচ্ছে ও বুঝতে পারছে না! কাল থেকে ২ বার এটা হল। ওর স্বামী অনিকেত এই ঘরে সুইসাইড করার পর থেকে ঘরটা ব্যবহার করা বন্ধ করে দিয়েছে ও। এই দরজাটা আবার বাইরে থেকে আটকানো যায় না! তার কারন সেদিন দরজার লক ভেঙে ঘরের মধ্যে ঢুকতে হয়েছিল সবাইকে। কিন্তু বারবার কে এসি, ফ্যান চালাচ্ছে এই ঘরে? এসি বন্ধ করে দিল ও আবারও!

মৈত্রেয়ীর হঠাৎ খেয়াল হল নীচের গেট টা খোলা রয়ে যায়নি তো?

কথাটা মাথায় আসতেই একটু দ্রুত পা চালিয়ে ও নেমে গেল সিঁড়ি দিয়ে!

অস্তিত্ব

Arnab Mondal


হিজিবিজি লেখা আর বিরিয়ানি নিয়ে Phd করছি আর আকাশবাণী কলকাতায় নিজের কন্ঠস্বর ভাড়া দিয়ে সংসার চালাচ্ছি।


Post navigation


2 thoughts on “অস্তিত্ব

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কপি করবেন না দাদা/দিদি