– শুনুন
– আমার বয়ফ্রেন্ড আছে
– কোথায়?
– মানে?
– মানে কোথায় আছে?
– বাড়িতে?
– আপনার?
– না ওর।
– বেশ তাহলে সমস্যা নেই।
– মানে?
– মানে আপনার সাথে তো নেই এখন?
– হ্যাঁ তাতে কী?
– কিছু না। বলছি একটু কথা ছিল।
– কী? বলুন।
– একটু আগে আপনি একটা লেখা শেয়ার করেছেন দেখলাম।
– হ্যাঁ বেচে থাকার গান। করেছি তো কী হয়েছে?
– হ্যাঁ ওটা কে লিখেছে জানেন?
– জানি। আমার বয়ফ্রেন্ড!
– বালের বিচি!
– কী?????
– মানে ওটা আপনার বয়ফ্রেন্ড লিখেছে কে বলল?
– মানে? ওই তো লেখা দিল। ও তো কবিতা লেখে!
– ওকে জিজ্ঞেস করুন তো লেখাটা কার লেখা?
– এতো আজব ঝামেলা! ওটা ওর লেখা মশাই। আমি জানি সেটা।
– কী করে জানলেন? আপনার সামনে লিখেছে?
– হ্যাঁ তো!
– সিরিয়াসলি?
– হ্যাঁ। কাল বিকেলে। গঙ্গার ঘাটে বসেছিলাম। বলল খাতা পেন দে। কবিতা পাচ্ছে।
– তারপর?
– তারপর আমি দিলাম। ও ইনস্ট্যান্ট লিখল কবিতাটা!
– বলেন কী?
– হ্যাঁ।
– আচ্ছা লেখার আগে আপনার বয়ফ্রেন্ড কী করছিল?
– কী জানি মনে নেই। ফোন ঘাটছিল, ফেসবুক করছিল বোধহয়।
– ওই তো বুঝে গেছি।
– কী?
– আপনার বয়ফ্রেন্ড একটা ধড়িবাজ মাল। শালা লেখা ঝেঁপে দেয় অন্য লোকের। তারপর নিজের নামে চালায়।
– এই একটা খারাপ কথা বলবেন আমার বয়ফ্রেন্ডের নামে!!!
– মানে টা কী? আমার লেখা ঝেড়ে নিজের নামে চালাচ্ছে আর বলছেন খারাপ কথা বলব না? পুজো করব নাকি বালটাকে?
– দেখুন আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে! ও কিন্তু কখনও…
– কিছু ভুল হচ্ছে না। চোরের গার্লফ্রেন্ড কোথাকার!
– আমি আপনাকে ব্লক করছি।
– বাল ছেঁড়া যায় তাতে!
– 😑

– কী করছ?
– এই তো একটু কবিতা পাচ্ছে। ছাদে যাবো।
– ছাদে করবে?
– অ্যাঁ?
– মানে কবিতা লিখবে ছাদে?
– হ্যাঁ আবার কী!
– আচ্ছা শোনো না…
– হ্যাঁ বলো না…
– বলছিলাম যে কাল তুমি একটা লেখা দিলে না?
– হ্যাঁ। বেঁচে থাকার গান তো!
– হুম… বলছিলাম যে ওটা…
– আমার নিজেরও খুব প্রিয়। তোমার ভালো লাগে নি?
– হ্যাঁ। খুব ভালো লেগেছে। ইয়ে বলছিলাম যে…
– কী গো?
– মানে বলছি যে ওটা তোমারই লেখা তো?
– কী? মানে? বুঝলাম না।
– না মানে ওটা তুমিই লিখেছো তো?
– তোমার সামনেই তো লিখলাম। আর কে লিখবে?
– হ্যাঁ তা ঠিক… মানে ওটা কী অন্য কারও লেখা থেকে…
– কারও লেখা থেকে কী? চুরি?
– না না… মানে ইন্সপায়ার্ড কী?
– What the hell? কী বলছ তুমি? আমি ইন্সপায়ার্ড কবিতা লিখব? ছি ছি! তুমি এরকম বলতে পারলে।
– না মানে…
– কাল সকালে তোমার যদি পটি পায় আর আমি যদি জিজ্ঞেস করি যে তোমার পটি টা অন্য কারও থেকে ইন্সপায়ার্ড কিনা তুমি কী বলবে?
– আরে… পটি আর কবিতা…
– জানি আলাদা… কিন্তু ২ টোই পায়। আমার অন্তত পায়। আমি কখনও কারও লেখা কপি করি না।
– হ্যাঁ জানি বাবু…
– থাক! তুমি আমায় এরকম ভাববে আমি ভাবিনি… বিশ্বাস না থাকলে সম্পর্কের কী ভ্যালু আছে বল তো?
– না মানে আমায় একজন বলল যে তার লেখার সাথে মিল আছে… তাই মানে…
– কে বলল?
– ওই ফেসবুকে একজন। ব্লক করে দিয়েছি ওকে… চাপ নিও না।
– হ্যাঁ। ব্লক করে রাখো এসব মাল কে। এরা নিজেদের কে খুব বড় কবি ভাবে! সব কবিতাতেই নিজের ছায়া দেখে। গান্ডু লোকজন সব।
– হ্যাঁ বাবু। ঠিক বলেছো!

– শুনুন…
– কী হল? আনব্লক করলেন কেন?
– বলছিলাম যে ওই কবিতাটা আপনার লেখা তার কোনো প্রমান আছে?
– মানে? কী প্রমান দেবো?
– আপনি ফেসবুকে আগে লিখেছেন তার স্ক্রীনশট দেখান দেখি!
– দেখালে কী করবেন?
– আপনি দেখান না।
– বয়ফ্রেন্ড কী বলল?
– বলল ওর লেখা ওটা।
– তাহলে অবিশ্বাস করছেন কেন?
– জানি না। ভরসা হচ্ছে না ঠিক। আপনি দেখান না।
– শোনো একটা কথা বলি…
– তুমি বলছেন?
– হ্যাঁ। বলছি। ঠিক করলেনা তুমি?
– মানে? কী ঠিক করলাম না?
– আমায় অবিশ্বাস করলে। বারন করা সত্ত্বেও একটা অচেনা মানুষকে ভরসা করে আমাকে সন্দেহ করলে…
– মানে আপনি…
– আমি অংকুশ! তোমার বয়ফ্রেন্ড! এটা আমার ফেক প্রোফাইল। তুমি আমায় কতটা ভরসা করো সেটা জানতে ইচ্ছে হল। তাই মেসেজ করলাম। আর তুমিও ঠিক ফাঁদে পা দিলে…
– মানে? তুমি…
– ছি ছি! একটা বাইরের লোকের ওপর ভরসা করে তুমি আমার ওপর সন্দেহ করতে পারলে? আমার লেখা নিয়ে সন্দেহ করতে পারলে!
– আসলে… আমি…
– থাক। বিশ্বাস ছাড়া সম্পর্কের কোনো মূল্য নেই। তোমায় আমি ব্লক করলাম। আমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা কোরো না। বাই।
– আরে শোনো…

– সরি বাবু। আমার ভুল হয়েছে। আর কখনও হবে না। এই অ্যাকাউন্ট থেকে প্লিজ আমায় ব্লক কোরো না। আই লাভ ইউ। আই ট্রাস্ট ইউ।
– ???
– সরি। আমি অন্য একজনের কথায় তোমাকে অবিশ্বাস করেছিলাম। আমাকে প্লিজ ক্ষমা করে দাও। আমি আর এরকম করব না। ভুল হয়ে গেছে আমার। আসলে আমি বুঝতে পারিনি।
– কী???
– আমার ভুল হয়ে গেছে বাবু। অন্য কারও কথায় আমি আর তোমায় অবিশ্বাস করব না। আমার আনব্লক করে ওকে প্রমান চাওয়া উচিত হয় নি।
– মানে? তুমি প্রমান চেয়েছো ওকে?
– কী? একটু আগেই তো তুমি…
– ছি ছি! তুমি অচেনা মানুষের সাথে এসব করছ।
– এসব কী হচ্ছে। তুমিই তো একটু আগে কথা বললে ওই অ্যাকাউন্ট থেকে আমার সাথে…
– What????? অন্য অ্যাকাউন্ট???? মানে তুমি শুধু আমার কবিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছো না আমার অন্য অ্যাকাউন্টও আবিষ্কার করে ফেললে!
– আমি তো…
– নাহ গো। আমার মনে হয় আমাদের সম্পর্ক টা আর রাখা উচিত হবে না।
– তুমি একটিবার আমার কথা শোনো…
– বাই। ব্লক করলাম তোমায়…
– আরে শোনো… ধুর বাল!!

অ-বিশ্বাস!

Arnab Mondal


হিজিবিজি লেখা আর বিরিয়ানি নিয়ে Phd করছি আর আকাশবাণী কলকাতায় নিজের কন্ঠস্বর ভাড়া দিয়ে সংসার চালাচ্ছি।


Post navigation


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কপি করবেন না দাদা/দিদি