শারদ্বতর কাছে এমন কিছু কিছু কেস এসেছে যে সময় আমি থাকতে পারিনি বা অন্য কাজে ব্যস্ত আছি। এটাও সেরকম একটা কেস। সেই কারনেই এই কেসের ডিটেইলে বর্ণনা আমার পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। যেটুকু শারদ্বতর কাছ থেকে জানতে পারা সেটুকু নিয়েই বিষয়টা দাঁড় করাতে হয়েছে।

–   বলুন

–   ইয়ে… আপনি কি… অনিরুদ্ধ সেন?

–   না।

–   আমি আসলে শারদ্বত বাবু কে খুঁজছিলাম।

–   আমিই শারদ্বত বাবু। বলে ফেলুন।

–   না মানে… আমি অনিরুদ্ধবাবু কে ফোন করেছিলাম কাল। একটা কেসে আসলে…

–   আপনার কাকে লাগবে ঠিক করে বলুন তো? অনিরুদ্ধ কে লাগবে না আমাকে লাগবে?

–   না মানে… আমি ওঁর সাথেই যোগাযোগ করেছিলাম কাল। উনি বললেন আজ সকালে আসতে।

–   উনি তো এখন নেই দাদা। পরে আসবেন তাহলে…

–   পরে? না মানে…

–   আপনি না মানে টা বড্ড বেশী বলেন।

–   আজ্ঞে… না মানে…

–   আবার!

–   না মানে…সরি। আসলে আমি কখনও প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটরের সাথে কথা বলিনি আগে। কেমন একটা ভয় ভয় লাগছে।

–   ভয় পাবেন না। ভেতরে চলে আসুন। প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর কামড়ালে জলাতঙ্ক হওয়ার চান্স নেই।

–   আচ্ছা আসছি।

–   এবার বলুন। আপনার প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর কি দরকার?

–   দাঁড়ান একটা চিঠি দেখাতে হবে তার আগে।

–   দেখান।

–   এই যে। এই নিন। এটা কয়েকমাস আগে আমার কাছে এসেছে।

–   কী দেখি? হুমকি চিঠি?

–   না না।

–   তাহলে?

–   এটা এসেছে State Vigilance Commission থেকে।

–   বাবাহ! অনেক ওপরমহল থেকে তো? কি বলছে শুনি?

–   বলছে যে ওদের কাছে অভিযোগ গেছে যে আমি একজন দূর্নীতিপরায়ন সরকারী কর্মচারী। এবং আমার বিরুদ্ধে আমার ডিপার্টমেন্ট কে তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে বলেছে।

–   এটা সত্যি কথা?

–   হ্যাঁ মিথ্যে কেন হবে?

–   যাক আপনি তাহলে দূর্নীতিপরায়ন হলেও Honest.

–   মানে? আমি দূর্নীতিপরায়ন নই।

–   এইমাত্র তো বললেন ওই অভিযোগ টা সত্যি।

–   না না। মানে… এই ঘটনাটা সত্যি। কিন্তু আমি ওরকম না।

–   তো আমি কী করব? এটার জন্যে তো কোনো তদন্ত হয় না!

–   না মানে… তদন্ত এটার জন্যে না… এই ঝামেলাটা মিটে গেছে।

–   তাহলে আমার কাছে এসেছেন কেন?

–   আসলে এই ঝামেলাটা মেটার পর আমি ভেতর থেকে আসল চিঠিটা পেয়েছি। যে চিঠিতে লিখে আমার নামে অভিযোগ করা হয়েছিল State Vigilance Commission এর কাছে। যদিও চিঠিটা লেখা হয়েছে বেনামে। আসল পরিচয় বের করার কোনো উপায় নেই সেই চিঠি থেকে। তবে সেই চিঠিতে এমন কিছু বিষয় ছিল যেগুলো আমার খুব কাছের লোক ছাড়া জানতে পারেন না।

–   যেমন?

–   যেমন আমি কবে জয়েন করেছি। আমার কোথায় কটা ফ্ল্যাট আছে। কোন ফ্লোরে আছে। এই সমস্ত কিছু নিয়েই বলা হয়েছে ওই চিঠিতে। আমার টাকা রয়েছে তার মানেই নাকি আমি Corrupt.

–   দেখুন… ইয়ে… আপনার নামটা কি যেন বললেন?

–   সমীরন।

–   হ্যাঁ সমীরন বাবু কেস টা না বড্ড বোরিং। আমার একদম ইচ্ছে করছে না কেস টা নিতে। বড্ড বোকা বোকা। কিছু মনে করবেন না।

–   না মানে আমি তো আপনাকে ফ্রীতে কাজ করতে বলছি না। টাকা দেবো আপনাকে। অনিরুদ্ধবাবু বলছিলেন আপনি অ্যাডভান্স ৮ হাজার…

–   ১৮।

–   হ্যাঁ? কত?

–   ১৮ হাজার নিই। জানি আপনার পোষাবে না এত টাকায়। আসুন আপনি এবার।

–   না না ঠিক আছে। চেক চলবে? নাকি গুগল পে বা ফোন পে করে দেবো?

–   বাবাহ! আপনি তো দেখছি মারাত্মক ডেসপারেট।

–   না মানে আমি আসলে জানতে চাই কে আমার আসল বন্ধু আর কে আমার শত্রু। কে আমার সম্পর্কে এই তথ্যগুলো ফাঁস করল এবং আমাকে ফাঁসালো। সব জানতে চাই আমি।

–   গুগল পে করে দিন।

–   হ্যাঁ? কী?

–   গুগল পে তে টাকাটা পাঠিয়ে দিন আমি কেস টা নিচ্ছি। আর আপনি না মানে কথাটা কম ব্যবহার করুন। বড্ড কানে লাগছে।

–   আচ্ছা। Thank you শারদ্বত বাবু। কেস টা আগে সল্ভ হোক। তারপর Thank You বলবেন।  ও হ্যাঁ দরকারী কথা? আপনি কী করেন?

–   আমি রাইটার্স এ চাকরি করি। অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি।

–   আচ্ছা আমি যে তদন্ত করব তার জন্য তো আমাকে আপনার কাছের এবং দূরের কিছু লোকজন কে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। ওনারা কি সত্যিটা জানবেন?

–   নাহ ইয়ে মানে… ওনাদের কে আমি বলব আপনি ভিজিল্যান্স কমিশন থেকে এসেছেন। আমাকে নিয়ে তদন্ত করতে। তাই ওনাদের সাথে কথা বলতে চান।

–   আপনার কাউকে সন্দেহ হয়?

–   দেখুন মানে… সন্দেহ করার মত অফিসে ২-১ জন আছে। তবে যাকে সবচেয়ে বেশী সন্দেহ হয় সে আমার জুনিয়র। এই কয়েক বছর হল জয়েন করেছে। ঘুষখোর এবং দূর্নীতিগ্রস্ত একটা লোক।

–   তাহলে ওর নামে চিঠি গেলো না কেন?

–   জানিনা। সেই কারনেই ওকে সন্দেহ হচ্ছে আমার। কারন ও আড়ালে প্রায়ই আমাকে নিয়ে উলটোপালটা কথা বলে।

–   কীরকম কীরকম?

–   আমার অফিসের একজন ক্লার্ক আছেন। মিহির। তো মিহির আমাকে খুব ভালোবাসে। ওকে আমিই ঢুকিয়েছিলাম চাকরি তে। তো ওকে অঞ্জন একদিন বলেছে তোমার দাদা তো আর ৬ বছর পর রিটায়ার করবে তখন তোমার সাথে সমস্ত হিসেব চুকোবো।

–   আপনি কনফ্রন্ট করেন নি?

–   নাহ। কি লাভ? অকারন ঝামেলা বাড়িয়ে কী হবে?

–   বুঝলাম। ঠিক আছে। কাল তাহলে আমি রাইটার্স বিল্ডিং এ যাচ্ছি। সকাল ১০ টায়। আপনি অ্যাডভান্স টা পাঠিয়ে রাখুন।

–   আচ্ছা। আর একটা কথা?

–   কী?

–   দেখুন আমাকে নিয়ে যদি তদন্ত হয় তাহলে তো আমার থাকা চলবে না।

–   না। সেটাই তো স্বাভাবিক।

–   হ্যাঁ। তাহলে অফিসের কোনো ক্লার্ক কে বলব আপনার সাথে কথা বলতে। আর আপনার কোনো আইডি কার্ড…

–   ওসব নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না। আমি বুঝে নেবো।

–   আসুন স্যার। আসুন আসুন।

–   স্যার বলতে হবে না। আপনার নাম কী?

–   আমার নাম মিহির স্যার।

–   আচ্ছা মিহির স্যারবাবু? বলছিলাম যে…

–   না না। স্যার না স্যার। শুধু মিহির স্যার।

–   ওহ আচ্ছা। ঠিক আছে। শুধু মিহির স্যারবাবু আমাকে একটু…

–   স্যার? আমার নাম…

–   আপনার নাম আমি বুঝে গেছি। আপনি স্যার বলা বন্ধ করুন তাহলেই দেখবেন বেশী কথা বলতে হচ্ছে না।

–   ঠিক আছে স্যা-… মানে… ঠিক আছে।

–   গুড। আমরা প্রথমে অঞ্জনবাবুর কাছে যাবো।

–   আচ্ছা।

–   আপনি কি জানেন আমি কেন এসেছি?

–   তদন্ত করতে তো? হ্যাঁ সমীরন দা বলছিল।

–   কী নিয়ে তদন্ত সেটা নিয়ে কিছু জানো?

–   ওই যে চিঠি।

–   হুম। কী মনে হয় কে করেছে কাজ টা?

–   আমার কী এসব নিয়ে কথা বলা ঠিক হবে?

–   নিশ্চয় হবে। ক্লার্ক রা সব অফিসারের ঘরে যান। কাজেই সবাইকেই অল্পবিস্তর ভালোভাবে চেনে। বলে ফেলুন আপনি।

–   যার রুমে যাচ্ছেন সে তো এক নম্বরের বদমাইশ লোক। কিন্তু…

–   কিন্তু?

–   কিন্তু আমার মনে হয় ইনি যদি কাজ টা করেও থাকেন একা করেন নি।

–   পার্টনার আছে বলছেন?

–   হ্যাঁ। আমাদের অফিসের বড়বাবু যিনি আছেন। মানে নীরেন বাবু…

–   আচ্ছা উনি বড়বাবু কেন? ওনার কী কিছু বড়?

–   ইয়ে না… আমি তো… আসলে সবাই বলে…

–   ঠিক আছে বাদ দিন। বলুন।

–   হ্যাঁ। মানে নীরেন বাবুর সাথে এমনি সমীরন দার ভালো সম্পর্ক। কিন্তু একদিন মদ খেয়ে উনিও সমীরন দা কে নিয়ে উলটোপালটা কথা বলছিলেন।

–   কী বলছিলেন?

–   বলছিলেন সমীরন একটা বৌ পেয়েছে বটে! আমাদের গুলো সব কেমন যেন হোঁৎকা কুমড়ো পটাশ টাইপ! আর ওর টা দেখো যৌবন যেন এখনও ঠিকরে বেরোচ্ছে!

–   সত্যি?

–   হ্যাঁ আমার সামনেই কাকে একটা যেন বলছিলেন।

–   সেটা জিজ্ঞেস করিনি। ওনার বৌ কী সত্যিই সুন্দরী?

–   ওহ! হ্যাঁ। ভালো দেখতে বেশ।

–   ঠিক আছে। চলুন।

–   নমস্কার অঞ্জনবাবু।

–   কী চাই?

–   আপনাকে।

–   What?

–   ইংরেজীতে বলব?

–   কে আপনি?

–   আজ্ঞে অধমের নাম শারদ্বত হাজরা। আমি State Vigilance Commission থেকে এসেছি।

–   ওহ ইয়ে… আচ্ছা। নমস্কার। হ্যাঁ বলুন স্যার।

–   একটা তদন্তের ব্যাপারে আপনার হেল্প লাগবে।

–   হ্যাঁ নিশ্চয় স্যার। বসুন।

–   আমরা আপনার কলিগ মিস্টার সমীরন বোস কে নিয়ে একটা চিঠি পেয়েছি সম্প্রতি। সেই বিষয়েই আসা।

–   কি চিঠি স্যার?

–   ওই সমীরন বাবু একজন দূর্নীতিপরায়ন মানুষ। ঘুষখোর।

–   যাক কেউ তো বলল!

–   বাহ! আপনারাও জানেন তাহলে?

–   হ্যাঁ। জানবো না কেন? অফিসের সবাই জানে।

–   তাহলে আরও আগে চিঠিটা লিখতে পারতেন আপনি।

–   আমি? আমি জানতামই না এভাবে চিঠি লিখে জানালেই তদন্ত হয় বলে। জানলে আগেই লিখতাম।

–   সে কী? আপনি লেখেন নি?

–   না স্যার।

–   Shit!

–   কী হল স্যার?

–   এই তদন্তের পর যদি সমীরন বাবু দোষী সাব্যস্ত হন তাহলে ওনার পোস্টের জন্য সরকার এমন কাউকে প্রোমোট করবে যার জন্য এই তদন্ত শুরু হয়েছে। সেই জন্যেই এই চিঠির মালিককেও আমাদের দরকার।

–   ইস! আগেই হ্যাঁ বলে দিলে ভালো হত তাই না স্যার?

–   ভালো হয়তো হত। কিন্তু আপনি একজন সৎ অফিসার হয়ে কেনই বা এরকম করবেন! আচ্ছা কাউকে সন্দেহ হয়? মানে যিনি চিঠিটা লিখতে পারেন?

–   নাহ স্যার। ওরকম কারুর কথা মাথায় আসছে না। কিন্তু এরকম লোকের অভাব নেই। অনেকেই জানেন ওনার এইসব কীর্তির কথা।

–   ওহ আচ্ছা। তা কোনো প্রমান আছে? সমীরন বাবুর এসব কীর্তিকলাপ এর।

–   নাহ তা নেই। তবে আপনাকে বললাম তো। সবাই জানে ওর কীর্তির কথা।

–   ঠিক আছে। আপাতত আসছি। পরে দরকার হলে কথা হবে।

–   হ্যাঁ স্যার। নিশ্চয়।

–   ও বাবা! থিয়েটারের এতগুলো টিকিট? আপনি কি টিকিট কাউন্টারে পার্ট টাইম কাজও করেন নাকি?

–   ওহ এগুলো? না না। এগুলো তো আমাদের দলের পরের শো এর টিকিট। এই অফিসের পাশেই একটা জায়গায় প্রিন্ট করাতে দিয়েছিলাম। আজ দিয়ে গেল।

–   বাহ! খুব ভালো। চালিয়ে যান।

–   হেঁ হেঁ!

–   এই যাহ আমার পেন টা বোধহয় পড়ে গেছে।

–   ওহ! দাঁড়ান দেখছি।

–   না না। আমি দেখছি… এই তো… পেয়ে গেছি। Thanks

–   আসতে পারি?

–   আপনি?

–   আমি শারদ্বত হাজরা। আমায় পাঠানো হয়েছে State Vigilance Commission থেকে।

–   ওহ আচ্ছা। হ্যাঁ বলুন। কী ব্যাপারে?

–   সমীরন বোস কে নিয়ে একটি চিঠি গিয়েছিল আমাদের দপ্তরে। সেই ব্যাপারেই আসা।

–   তা আপনি একাই এলেন? মানে অন্য আর কোন অফিসার পাঠালেন না?

–   নাহ। আপাতত আমি একাই। আপনি বড়বাবু তো?

–   হ্যাঁ। নমস্কার। আমি নীরেন সেনগুপ্ত।

–   কতদিন রয়েছেন এই অফিসে?

–   তা প্রায় বছর ত্রিশেক তো হবেই।

–   বাবাহ! অনেক দিন তো?

–   সমীরন বাবু কেমন মানুষ বলে মনে হয়?

–   ও তো খুব ভালো মানুষ। কাজ করে বেশ ভালো। মাথা ঠান্ডা। ঝামেলায় থাকে না।

–   আপনাকে যখন বললাম যে সমীরন বাবু কে নিয়ে চিঠি গিয়েছিল আমাদের দপ্তরে। তখন খুব একটা অবাক হলেন না দেখলাম। আপনি কি জানতেন চিঠি কে পাঠিয়েছে? নাকি আপনি নিজেই পাঠিয়েছেন?

–   আরে ধুর! কী যে বলেন। আমি কেন এসব করতে যাবো? আসলে অফিসে একটা কানাঘুষো শুনছি অনেকদিন ধরেই যে এরকম একটা চিঠি গিয়েছে। তাই অবাক হইনি। আর তাছাড়া সমীরন আমার খুব কাছের মানুষ। ওর ক্ষতি চাই না আমি।

–   ওর স্ত্রী আপনার কতটা কাছের?

–   What? কী বলতে চাইছেন কী মশাই?

–   বলছি যে ওনার স্ত্রী কে কেমন লাগে আপনার?

–   এসব ফালতু প্রশ্নের মানে কী? কিছু বলার থাকলে সরাসরি বলুন।

–   আচ্ছা আপনার কী মনে হয়? কে লিখেছে চিঠিটা?

–   আমি জানিনা। তবে সমীরনের অনেক শত্রু আছে এটা জানি।

–   কেন?

–   কারন ওর সাথে সবার সম্পর্ক ভালো। বহু মানুষকে ও হেল্প করে দেখেছি। শুনেছি। সেই জন্যেই অনেক মানুষ ওকে ভালোবাসেন। আর সেই কারনেই ওনার শত্রুর সংখ্যাও নেহাত কম নয়।

–   বুঝলাম। আচ্ছা সমীরন বাবুর ঘর টা কোনদিকে?

–   আমার রুম থেকে বেরিয়ে বাঁদিকে যান তারপর সোজা চলে যান ডানদিকে। একদম শেষের ডানদিকের ঘর টা।

–   Thank you.

–   দাঁত দিয়ে নখ কাটতে নেই সমীরনবাবু!

–   ওহ আপনি! না মানে… টেনশন হলে হয় এরকম আমার। বসুন।

–   হুম। একটু জল খাওয়াবেন?

–   হ্যাঁ নিশ্চয়। এই নিন।

–   ধন্যবাদ।

–   তারপর? কিছু বুঝতে পারলেন? আর কারুর সাথে কথা বলার দরকার হবে?

–   নাহ। চোর তো আপনিই ধরে ফেলেছিলেন মশাই। আবার আমাকে ডাকলেন কেন?

–   মানে? অঞ্জন? সত্যি?

–   হুম। ভদ্রলোক মহা ধড়িবাজ। থিয়েটার টা করেন বলেই হয়তো অভিনয়টাও ভালো করতে পারেন।

–   Shit! ধুর! এভাবে আমি আর কাজ করব না!

–   আহ! এরকম ভুলভাল লোকের জন্য নিজের ক্ষতি করবেন না।

–   এভাবে কাজ করা যায় বলুন তো? একটা লোক যদি Constant আপনার পেছনে লেগে থাকে?

–   হুম। সে ঠিক আছে। তবে সবটা অবশ্য উনি একা করেন নি?

–   মানে? আবার কাকে জুটিয়েছে?

–   এমন একজন কে জুটিয়েছে যাকে আপন প্রচন্ড বিশ্বাস করেন। যে আপনার ফাইল বা অন্যান্য সমস্ত কিছু হ্যান্ডেল করে। অর্থাৎ আপনার ব্যক্তিগত সমস্ত তথ্যই যার পক্ষে Access করা সবচেয়ে সহজ!

–   What?? মি… মি…মিহির??????

–   হুম।

–   না না। আপনার কোথাও একটা ভুল হচ্ছে। মিহির কে আমি চাকরি করে দিয়েছি। ও আমার সাথে এরকম বিশ্বাসঘাতকতা করবে না।

–   এই নিন। শুনুন তাহলে।

–   কী শুনবো?

–   ২ জন মানুষের কথোপকথন। মন দিয়ে শুনুন

–   অঞ্জন দা?

–   হ্যাঁ বল?

–   কথা বললে?

–   হ্যাঁ বললাম তো।

–   কিছু বুঝতে পারেনি তো? যে তুমি চিঠিটা পাঠিয়েছো আর তুমি আগে থেকে সব জানো?

–   নাহ পারেনি। তুমি যাও এখন।

–   হ্যাঁ যাচ্ছি। বলছি অঞ্জন দা, আমার দাদার চাকরিটা…

–   চাকরিটা হয়ে যাবে যখন বলেছি, তখন হয়ে যাবে। আগে সমীরন টাকে বের করতে দাও। তারপর সব হয়ে যাবে। এখন যাও।

–   ঠিক আছে দাদা। আসছি।

–   কী? চেনা যাচ্ছে গলাগুলো?

–   কিন্তু আপনি এগুলো?

–   অঞ্জনবাবুর ঘরে টেবিলের নীচে একটা খুব ছোট্টো একটা ট্র্যান্সমিটার রাখা আছে। ডিজিটাল যুগে গোয়েন্দাদের কাজ টা বড্ড সহজ হয়ে গেছে বুঝলেন। It almost feels like Cheating. Anyway, আমার কাজ শেষ আমি চলি। আপনি দেখুন কীভাবে Deal করবেন ব্যাপারটার সাথে।

–   কিন্তু আমি জাস্ট ভাবতে পারছি না। যে মানুষটা কে আমি এত বিশ্বাস করি সেই মানুষ টা…

–    (হেসে)  বিশ্বাস খুব দামী একটা শব্দ। মাঝে মাঝে আমাদের সবাইকেই বিশ্বাসের মূল্য চোকাতে হয়। কারুর কারুর জন্য এই মূল্যটা বড্ড বেশী হয়ে যায়। যাই হোক ভালো থাকবেন সমীরনবাবু। ও আর আমার ট্র্যান্সমিটার টা একটু যোগাড় করে নেবেন পরে। ঠিক টেবিলের নীচেই আছে। ছোট্টো বোতামের মত। চলি।

বিশ্বাসে মিলায় বস্তু

Arnab Mondal


হিজিবিজি লেখা আর বিরিয়ানি নিয়ে Phd করছি আর আকাশবাণী কলকাতায় নিজের কন্ঠস্বর ভাড়া দিয়ে সংসার চালাচ্ছি।


Post navigation


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কপি করবেন না দাদা/দিদি