অর্ণব মণ্ডল
আমাদের ছোটোবেলাটা বেশ ভালো ছিল। জয়েন্ট ফ্যামিলি ছিল তখন। বাড়িতে কেউ এলে আর পড়তে বসতে হত না। হই হই করে কেটে যেত। আর পড়তে যাতে বসতে না হয় তার জন্য আরও বেশী করে চাইতাম যাতে সেই মানুষটা বেশীক্ষন থাকে। অচিন্ত্যকাকু মাঝে মাঝেই আমাদের বাড়িতে আসত। বাবার অনেক ছোটোবেলার বন্ধু। অচিন্ত্যকাকু এলেই ভালো ভালো গল্প শুনতে পেতাম। বিশেষ করে এত সুন্দর সুন্দর ভূতের গল্প বলত, সে বলার নয়।
একদিন দুপুরের দিকে অচিন্ত্য কাকু আমাদের বাড়িতে এসেছিল। আমাদের বাড়িতে সেদিন কিছু একটা পূজো ছিল। তাই অনেকেরই নিমন্ত্রন ছিল। বিকেলের দিকে সবাই চলে যায়। কিন্তু অচিন্ত্যকাকু বাবার সাথে গল্প করছিল। আষাড় মাস সবে পড়েছে। যদিও সকাল থেকে গরম ছিল মারাত্মক। অনেকক্ষণ ধরে আকাশে মেঘ করেছিল। সন্ধ্যে বেলা যখন অচিন্ত্যকাকু চলে যাবে বলে উঠছিল। ঠিক সেই সময় আকাশ কালো করে ভয়ংকর ঝড় উঠল। তার সাথে শুরু হল প্রচণ্ড বৃষ্টি। অচিন্ত্যকাকুর বাড়ি যেতে হলে প্রথমে ট্রেন এ ঘন্টাখানেক তারপর বাসে করে আরও ২ ঘন্টা। কাজেই বোঝা গেল ঝড় থামলেও আজ মনে হয় না অচিন্ত্যকাকু কিছুতেই বাড়ি যেতে পারবে না। আর যে বৃষ্টি শুরু হয়েছে, এ থামবার নয়।
বাবা অচিন্ত্য কাকু কে বলল, “আজ রাতটা এখানে থেকে যাও হে! কাল সকালে যেও। এই বাদলার দিনে আর বেরোতে হবে না!”
অচিন্ত্যকাকু একটু কিন্তু কিন্তু করছিল। কিন্তু দেখল উপায় তো নেই।
তারপর মা ও বলল, “অচিন্ত্যদা আজ থেকেই যাও। রাত্রে একটু খিচুড়ি, বেগুন ভাজা করব ভাবছি। খেয়ে কাল যেও!”
উপায় না পেয়ে অচিন্ত্যকাকু, বাধ্য হয়ে রাজী হল। হঠাৎ লোডশেডিং হয়ে গেল। কি অদ্ভুতভাবে বিধাতাপুরুষ যেন ইঙ্গিত দিচ্ছিল অন্য কিছুর। লোডশেডিং আর বৃষ্টি, ভূতের গল্পের জন্য এর থেকে পারফেক্ট পরিবেশ আর কিছু হতে পারে কি?
এই লোডশেডিং এ পড়াশোনা তো হবেই না। আর তাছাড়া আগেই বললাম, আমরা ভাই বোনেরা বাড়িতে কেউ এলে পড়তে বসতাম না।
অচিন্ত্যকাকুর কাছে সেদিন খুব আবদার করলাম, “আজ একটা ভূতের গল্প বল না!”
অচিন্ত্যকাকু তো এককথায় রাজি! কাকু বলত ওর ঝুলিতে নাকি এত গল্প আছে, মোটামুটি ১০ টা গল্পের বই হয়ে যাবে। আমাদের বারান্দায় সবাই মিলে বসলাম আমরা। মা একটা মোমবাতি জালিয়ে দিল। মাঝে মাঝেই হাওয়াতে মোমবাতির শিখা প্রায় নিভু নিভু করছিল। । বাইরে তখনও মুষলধারে বৃষ্টি পড়ে যাচ্ছে।
অচিন্ত্যকাকু বলতে শুরু করল, “এটা যখনকার ঘটনা বলছি, তখন আমি সাহেবগঞ্জের সরকারী হাসপাতালে চাকরি করি।
আজ থেকে কম করেও বছর ১৫ আগেকার ঘটনা। সাহেবগঞ্জ গ্রামটা খুব একটা বড় গ্রাম নয়। কাঁচা রাস্তা। বোম্বে রোডের পাশ দিয়ে একটা রাস্তা চলে গেছে, সেটা দিয়েই যেতে হয় সাহেবগঞ্জ। ইলেক্টট্রিসিটি এসেছে, তবে সন্ধ্যে হলেই কারেন্ট চলে যেত। পাকা বাড়ির চিহ্নও দেখতে পাওয়া যায় না। আমি থাকতাম হাসপাতালের পাশে একটা এক কামরার ঘর ভাড়া নিয়ে। সকাল থেকে বিকেল অবশ্য হসপিটালের কাজকর্মতেই কেটে যেত। আমার ছিল ক্লার্কের চাকরি। তো যাই হোক একদিন সকালে কানাঘুষো শুনলাম হসপিটালে একটা পেশেন্ট এসেছে তার ডান হাতের ৩ টে আঙুল কাটা। খুব অদ্ভুত! গিয়ে দেখলাম আঙুলগুলো এমনভাবে কাটা যেন কোনো ভোঁতা জিনিস দিয়ে কেটে নেওয়া হয়েছে সেটা। গ্রামের ২ জন ভাগচাষী এসেছিল ছেলেটিকে নিয়ে। ছেলেটির নাম বুবাই।
বললাম, “কী করে হল এটা?”
ওরা একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করল, তারপর একজন গলা নামিয়ে বলল, “পিচাসে খেয়েছে গো! পিচাসে!!”
আমি একটু চমকে গেলাম। সাহেবগঞ্জে পিশাচের গল্প আগে কখনও শুনিনি! যদিও ভূত-প্রেত, ভগবান কিছুই মানতাম না। কিন্তু ওদের কথাটা একটু ভাবালো আমাকে। তারপর ভাবলাম এই কুসংস্কার আচ্ছন্ন গ্রামে এসব গাল-গল্প আর নতুন কী! বুবাই এর হাতে আমাদের একজন ডাক্তার ব্যান্ডেজ করে দিল। তারপর ওকে নিয়ে চলে গেল ওরা।
এর পরের ঘটনা ঘটল, ঠিক ২ দিন পর। হাসপাতালের কাজ সেরে বেরোতে সেদিন একটু দেরীই হয়েছিল। যখন বেরোলাম তখন বাজে সাড়ে ৯ টা। খুব স্বাভাবিক ভাবেই লোডশেডিং! হঠাৎ দেখি হাতে মশাল নিয়ে, গ্রামের ৬-৭ জন লোক কোথায় যেন যাচ্ছে!
জিজ্ঞেস করলাম, “কী ব্যাপার? আগুন নিয়ে কোথায় যাচ্ছো?”
একজন বলল, “বুবাই মারা গেছে! পিচাশে মাংস খেয়েছে ওর! ওর দেহ আনতে যাচ্ছি! সৎকার করতে হবে”
আবার পিশাচ!! হল কী সাহেবগঞ্জের! আর ডাক্তারদের সাথে থাকি বলে! মোটামুটি ডাক্তারী বিদ্যে আমার জানা আছে। কী মনে হল যদি সত্যিই বুবাই মারা না গেলে এরা যদি জ্যান্ত জ্বালিয়ে দেয়। তাই ভাবলাম আমিও সাথে যাই। গেলাম ওদের সাথে। সাহেবগঞ্জ পেরোলেই মুরারীপুকুর বলে আর একটা গ্রাম আছে। দুই গ্রামের যে সীমানা সেখানে গিয়ে যে দৃশ্য দেখলাম তাতে ঘেন্নায় আমার গা গুলিয়ে উঠল। বুবাই এর দেহটা পড়ে আছে রাস্তার পাশে। তার নাড়িভুঁড়ি সব বেরিয়ে গেছে। কে যেন খুবলে খুবলে খেয়েছে তার শরীর! এটা দেখে আমার শরীরটা ছেড়ে দিল। আমি রাস্তার পাশে মাঠের ধারে গিয়ে গলগল করে বমি করে দিলাম।
পরের দিন কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানতে পারি, বুবাই আর দুলাল ওই রাস্তা দিয়ে ফিরছিল। হঠাৎ করেই ওরা সামনে দেখে একটা অতিকায় দানব ওদের সামনে দাঁড়িয়ে। চোখের লাল মনি দু’টো থেকে যেন আগুন ঠিকরে বেরোচ্ছে! ওরা কিছু বোঝার আগেই সেই দানব তার নখ দিয়ে এফোঁড় ওফোঁড় করে দেয় বুবাই এর শরীর। দুলাল দৌড়ে গ্রামের দিকে পালিয়ে আসে। তারপর গ্রামের কয়েকজনকে সে কথা বলার পরেই মাটিতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়! তারপরেই গ্রামের কয়েকজন মশাল নিয়ে যায় সেদিকে। এই কথাগুলো বিশ্বাস হল না! মনে হল কোনো জন্তু জানোয়ারে খেয়েছে হয়ত বুবাই কে। কিন্তু দুলাল মিথ্যে কেন বলবে?
এর পরের ঘটনা ঘটল ঠিক ৫ দিন পরে। সাহেবগঞ্জের একজন দিনমজুর দামু আমাদের হাসপাতালে এল সন্ধ্যে বেলা। বলল, ওর মেয়ের খুব জ্বর তিনদিন ধরে। কিছুতেই কমছে না! ডাক্তারবাবু যদি যান। তখন হাসপাতালে ছিলেন, কালিকাবাবু। তিনি আমাকে বললেন, “অচিন্ত্য, চলো তো একটু আমার সাথে। একা একা যেতে ইচ্ছে করছে না!”
আমি আপত্তি করলাম না। ঘরে গিয়েই বা কী করব। সন্ধ্যে থেকে তো সেই লোডশেডিং। দামুর বাড়ি ওখান থেকে পায়ে হেঁটে মিনিট ১৫-২০। ও রিক্সা করবে কিনা জিজ্ঞেস করছিল। ডাক্তারবাবু বললেন হেঁটেই যাবেন!
আমরা যখন সেখানে পৌঁছোলাম তখন রাত প্রায় ৯ টা। ঘরের মধ্যে কোনো সাড়া শব্দ নেই দেখে দামু দু’বার ডাকল। “চুমকির মা! ও চুমকির মা! কই গেলে?”
কেউ উত্তর দিল না। দরজা ভেজানোই ছিল! দরজা খুলতেই যা দেখলাম তাতে আমার সারা শরীর যেন শিউরে উঠল! বিছানায় শোয়ানো দামুর মেয়ের শরীরের ওপর ঝুঁকে রয়েছে একটা কালো ছায়া! দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে সেই ছায়া টা মুখ তুলে তাকালো আমাদের দিকে। কী ভয়ংকর সেই মুখ। মানুষের মুখ এটা হতেই পারে না। দাঁত থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। চোখদুটো লাল টকটক করছে। দামু আর্ত চিৎকার করে উঠল, “চুমকি!!!”
হঠাৎ কালিকাবাবু হাতের বড় টর্চটা ছুঁড়ে মারলেন সেদিকে! টর্চটা ওর শরীরে লেগে মাটিতে পড়তেই নিভে গেল সেটা। সেই অন্ধকারের মধ্যেও শুনলাম পিশাচের ভয়াবহ চিৎকার!! তারপরেই বুঝতে পারলাম একটা প্রানী দৌড়ে পালিয়ে গেল দরজা দিয়ে বেরিয়ে। তাড়াতাড়ি করে মোমবাতি জ্বালিয়ে দেখা গেল, চুমকির শরীরটাও খুবলে খুবলে খেয়েছে সেই পিশাচ। একই রকম ভাবে নাড়ি ভুঁড়ি বেরিয়ে পড়ে আছে তার নিথর দেহ টা। ঘরের এক কোনে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে চুমকির মা! চোখে মুখে জল দিয়ে তার জ্ঞান ফেরানো হল। সে কোনো কথাই বলতে পারল না! তার ওপর বিছানার ওপর নিজের মেয়ের ওরকম অবস্থা দেখে সে আবার অজ্ঞান হয়ে গেল!
এরপর থেকে গ্রামবাসীরা আতঙ্কে থাকে কখন কি ঘটে যায়। সবাই বুঝে গেছে এটা অলৌকিক ব্যাপার। পঞ্চায়েতে মিটিং ডাকা হল। তাতে আলোচনা করে ঠিক হল একজন তান্ত্রিক কে ডাকা হবে। এখান থেকে প্রায় মাইল তিনেক দূরে শ্মশানে ইন্দ্রনাথ নামে এক তান্ত্রিক সাধনা করেন। ওনার নাকি অনেক ক্ষমতা। ঠিক হল সবাই মিলে ওর কাছে যাওয়া হবে। আমিও গেলাম সাথে। গ্রামবাসীরা তাকে সব ঘটনা বলল। উনি সব শুনে কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে থাকলেন। তারপর বললেন, “তোদের গ্রামে পিশাচ এসেছে। ও কাউকে বাঁচতে দেবে না! গ্রাম উজাড় হয়ে যাবে। শেষ হয়ে যাবে সব!”
একজন জিজ্ঞেস করল “কেন এমন হল বাবা?
ইন্দ্রনাথ বললেন, “এসব পরিতোষ সিংহ রায়ের পাপের ফল! কেউ বাঁচবে না। কেউ না!”
আমি বলললাম, “পরিতোষ সিংহ রায় কে?”
ইন্দ্রনাথ তান্ত্রিক আমার দিকে একবার দেখলেন, তারপর যা বললেন তার সারমর্ম হল এই –
“আজ থেকে প্রায় দেড়শ বছর আগের কথা, তখন এখানে ছিল জমিদার পরিতোষ সিংহ রায়ের রাজত্ব। তিনি যাকে বিয়ে করেছিলেন তার সাথে জমিদারের প্রিয় বন্ধু প্রবীরেন্দ্রর প্রেম ছিল বিয়ের আগে। তিনি তা জানতেন না! পরিতোষ সিংহ রায় খুব স্বৈরাচারী এবং নৃশংস জমিদার ছিলেন। কাউকে বিশ্বাস করতেন না! নিজে গিয়ে চাবুক মেরে খাজনা আদায় করতেন। একবার তিনি মুরারীপুকুর গিয়েছিলেন খাজনা আদায় করতে। সেদিন ফেরার কথা ছিল না। রাত্রে ফিরে দেখেন তার বন্ধু প্রবীরেন্দ্র আর তাঁর স্ত্রী নীলিমা শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত! তারাও ভাবতে পারেনি সেদিন জমিদার ফিরে আসবে। জমিদার ওই অবস্থায় নিজের স্ত্রীকে দেখে রাগে ক্রোধে পাগল হয়ে যান! সাথে সাথে দেওয়াল থেকে তরবারি নামিয়ে নিজের স্ত্রী এবং বন্ধু দু’জনেরই ধড় থেকে মাথা আলাদা করে দেন! তারপর ওদের দেহ ভাসিয়ে দেয় কাঁসাই নদীতে।
গ্রামবাসীদের একজন জিজ্ঞেস করল, “আমরা এবার কী করব বাবা? আমাদের বাঁচান”
ইন্দ্রনাথ বলল, “ওদের দেহ যদি দাহ করা হত, তাহলে ওদের আত্মা এতদিনে মুক্তি পেত। তোরাও বেঁচে যেতিস! কিন্তু এখন কিছু করার নেই। প্রবীরেন্দ্র পিশাচ হয়ে ফিরে প্রতিহিংসা নিচ্ছে। মানুষের কাঁচা রক্ত-মাংস খায়। মুরারীপুকুরের কাছে যে শ্মশানটা আছে, ওখানেই থাকে!”
গ্রামবাসীরা এবার বলে উঠল, “বাবা, আপনি আমাদের বাঁচান, কিছু একটা করুন। ঐ পিশাচের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করুন বাবা!
ইন্দ্রনাথ তান্ত্রিক বললেন “মা কালী কে ডাক। যা করার উনিই করবেন!।”
২ দিন পর অমাবস্যা ছিল। ইন্দ্রনাথ তান্ত্রিকের কথা মত, গ্রামের একটি ছেলেকে ওই শ্মশানের পাশ দিয়ে আসতে বলা হল! বাকি সবাই কিছু দূরে ছিল। ইন্দ্রনাথ তান্ত্রিককে যদিও দেখতে পেলাম না। কিছুক্ষন পরেই শুরু হল ঝোড়ো হাওয়া। আর তারপরেই দেখতে পেলাম সেই অতিকায় পিশাচ কে। আজকে যেন আরও দৈত্যাকার লাগছে তাকে। হাতে বড় বড় নখ। চোখ দুটো লাল! মুখ থেকে ক্রুদ্ধ গর্জনের শব্দ শোনা যাচ্ছে। এত মানুষের মাঝে দাঁড়িয়ে থেকেই যেন গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল। গ্রামের সবার এক অবস্থা।
সেই পিশাচ সেই ছেলেটির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে যেতেই চমকে উঠে দেখলাম হঠাৎ করে যেন অন্ধকার ফুঁড়ে হাজির হল ইন্দ্রনাথ তান্ত্রিক! কোমরের ঝোলা থেকে কি একটা ধুলোর মত বের করে পিশাচের দিকে ছুঁড়ে দিতেই যন্ত্রনায় চিৎকার করে উঠল সে। ইন্দ্রনাথ জিজ্ঞেস করল, “কী চাই তোর? কেন এসেছিস এখানে?”
পিশাচ গর্জন করে বলল, “শেষ করে ফেলব! সবাই কে শেষ করে ফেলব!”
ইন্দ্রনাথ বলল, “চলে যা! চলে যা এখান থেকে! যা বলছি!”
পিশাচ আবার বলে উঠল, “যাবো না! যাবো না আমি! শেষ করে দেব সবাইকে!”
ইন্দ্রনাথ চিৎকার করে বলল, “যাবি না মানে? দেখ তবে!”
তারপরে সে ঝোলা থেকে কী একটা বের করে মন্ত্র বলতে বলতে ওর দিকে ছুঁড়ে দিল আবার! যন্ত্রনায় চিৎকার করতে লাগল সেই পিশাচ! আমরা সবাই স্তব্ধ হয়ে দেখছি সেই কান্ড! নিজের চোখকে বিশ্বাস হচ্ছিল না যেন। দাঁড়িয়ে দেখলাম। লোম খাড়া হয়ে গেল গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল। গলা শুকিয়ে গেল। গ্রামের লোকেদেরও তাই অবস্থা। পিশাচ আর এক পাও এগোতে পারল না। হাত পাও নাড়াতে পারল না। সেই ছেলেটি আস্তে আস্তে এক পা পা করে পিছিয়ে সরে এল আমাদের দিকে। হঠাৎ দেখলাম মন্ত্রবলে পিশাচের সারা শরীরে আগুন ধরে গেল! দাউ দাউ করে জ্বলতে লাগল সেই আগুন! শেষে একটা কালো ধোঁয়া উঠে গেল আকাশে! মাটিতে পড়ে রইল শুধু কালো ছাই!
এইভাবে ইন্দ্রনাথ তান্ত্রিকের হাতে সাহেবগঞ্জের পিশাচের মুক্তি হল।
আমরা মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনছিলাম সে গল্প! গল্প শেষ হওয়ার পর আমার মুখ দিয়ে কথাই বেরোচ্ছিল না। অচিন্ত্য কাকা বলল, “মিমি কী খুব ভয় পেলে নাকি?”
আমি কিছু বললাম না! মা বলল, “অচিন্ত্যদা এটা কি সত্যি না বানানো ঘটনা!”
অচিন্ত্যকাকু হাসল। উত্তর দিল না। সেদিন রাত্রে আমার ঘুমোবার সময় মনে পড়ল, সাহেবগঞ্জ এর জমিদার তো দু’জনকে মেরে নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছিল। তাহলে প্রবীরেন্দ্র পিশাচ হয়ে ফিরে এল! নীলিমার কী হল ও ফিরল না কেন? নাকি সে পরে ফিরে এসেছিল? পরে অচিন্ত্যকাকুকে জিজ্ঞেসও করেছিলাম সে কথা।
তবে সেই গল্প পরে একদিন হবে। আজ এই পর্যন্তই থাক!