কালীঘাট মেট্রো স্টেশনে পৌঁছে দেখলাম, এক ভদ্রলোক মাস্ক পরে দমদমের মেট্রোর সাইডে এক দিক থেকে প্ল্যাটফর্মের আর এক দিকে দৌড়োচ্ছেন। যাকেই সামনে দেখছেন তাকে সরিয়ে দিচ্ছেন গায়ে হাত দিয়ে। ভাবলাম তাড়া আছে হয়ত। পাত্তা দিলাম না।
২ মিনিট পর দেখি ভদ্রলোক আবার উলটো দিক থেকে আবার যেদিক থেকে এসেছিলেন সেদিকে দৌড়োচ্ছেন। সামনে কেউ একটা দাঁড়িয়ে থাকায় হালকা একটা ধাক্কা লাগল। ভদ্রলোক আবার সরি বলে এগিয়ে যাচ্ছেন সেদিকে। এরকমটা মাঝে মাঝেই হয় আমারও। ৫ নম্বর গেট খুঁজতে গিয়ে দেখি গেট টা অন্য সাইডে। তখন আবার ঘুরে আসতে হয়। যাই হোক আবারও পাত্তা দিলাম না।
- ফোনে রিলস দেখছি হঠাৎ গায়ে হালকা ধাক্কা লাগতে দেখি ভদ্রলোক আবার ঘুরে এসেছেন! ঘুরে মানে সেই দৌড়ে! ঘেমে স্নান করে গেছেন উনি। এবার একটু অদ্ভুত লাগল! ভদ্রলোক করতে কি চাইছেন সেটাই ভাবছি! এমন সময় দেখলাম প্ল্যাটফর্মে থাকা একজন পুলিশও ব্যাপারটা লক্ষ্য করেছেন! উনি ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে আছেন সেইদিকেই। আর পায়ে পায়ে এগোচ্ছেন।
শেষটায় যখন ভদ্রলোক আবার উলটো দিকে ঘুরে এলেন! তখন আমি ব্যাপারটা কিছুটা আন্দাজ করেছি। পুলিশ ভদ্রলোকটি বোধহয় বুঝতে পারেননি। আরও কয়েকজন মুচকি মুচকি হাসছিল। লোকটি এবার দৌড়োতে দৌড়োতে প্ল্যাটফর্মের মাঝামাঝি জায়গায় আসতেই পুলিশটি তাকে হাত দেখিয়ে থামালো!
ভদ্রলোক অবাক হয়ে বললেন, “কী ব্যাপার? বলুন!”
পুলিশ লোকটি বলল, ” আমি কী বলব? আপনি বলুন!! প্ল্যাটফর্মে দৌড়োচ্ছেন কেন?”
তখন দেখলাম আমার ট্রেন ঢুকছে। আমাকে উঠতে হবে ট্রেনে। আমি তখনও তাকিয়ে আছি ওদের দু’জনের দিকে!
ভদ্রলোক একটা কান এঁটো করা হাসি হেসে বললেন, ” আসলে ডাক্তার বলেছেন রোজ ২-৩ কিলোমিটার দৌড়োতে। আজ সকালে দৌড়োনো হয় নি। হে হে… তাই আর কি!”
পুলিশটি কটমট করে তাকিয়ে ছিল ওনার দিকে! বোধহয় কি বলবে ভাবছে। আমি মেট্রোয় ঢুকলাম। ভদ্রলোকও আর অপেক্ষা না করে ঢুকে পড়ল মেট্রোতে।
ব্যাপারটা লক্ষ্য করলাম তখনই! প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা ৩-৪ জন লোক পকেট হাতড়াচ্ছে। মেট্রোর দরজা বন্ধ হচ্ছে তখন। একজনের চিৎকার শুনলাম মনে হল, “আরেহ আমার মানিব্যাগ টা কোথায় গেল?”
হঠাৎ ঝড়ের বেগে একটা কথা মনে পড়ল। এই লোকগুলোর সাথেই ওই ভদ্রলোকের দৌড়োনোর সময় ধাক্কা লেগেছিল না? তাহলে কি ওদের সবারই পেছন… থুড়ি… পকেট মারা গেল!
পরক্ষনেই নিজের পকেটে হাত গেল! নাহ! ঠিক আছে! ২ টো ওয়ালেটই আছে। দৌড়োতে দৌড়োতে আমার ভাগের বখরা ঠিকই দিয়ে গেছে মন্টু। কথা দিয়েছিলাম ইন্টারফেয়ার করব না। করিও নিই। নীরব দর্শকের মত অবসার্ভ করে গেলাম সব! বড্ড গর্ব হচ্ছে মন্টুর জন্য! আফটারঅল আমার পিকপকেট অ্যাসোসিয়েশনের ছাত্র তো! বাড়ি গিয়ে ওর গ্র্যাজুয়েশন সার্টিফিকেট টা তৈরী করতে হবে!