–      এই?

–      কী?

–      তুমি ইদানীং বড্ড ভূতের গল্প লিখছো কেন বলতো?

–      কেন? কী সমস্যা?

–      কতদিন প্রেমের গল্প লেখোনি তো!

–      আরে ওরকম ভাবে বললেই লেখা যায় নাকি?

–      হ্যাঁ! যায়!

–      আচ্ছা দেখছি।

–      নাহ। লিখতে হবে।

–      আচ্ছা লিখলে কী পাবো?

–      ভালো কিছুই পাবে। চিন্তা কোরো না।

–      সিরিয়াসলি?

–      ব্যাস! অমনি এক পায়ে খাড়া!

–      বলো না…

–      আরে হ্যাঁ রে বাবা! পাবে। আগে লেখো!

ঠান্ডাটা এই বছর বেশ জাঁকিয়ে পড়েছে। সেটা বোধহয় করোনার ভয়ে মানুষ সারা বছর বাইরে বেরোয়নি বলেই। যদিও এই ডিসেম্বর মাসে এসে করোনা থাকা সত্ত্বেও মানুষের যা সাহস দেখছি তাতে মানুষের ভয় যে একেবারেই চলে গেছে সেটা বুঝতে পারছি। সেদিন অফিস থুড়ি ব্যাংক থেকে বেরোতে অনেকটা দেরী হয়ে গিয়েছিল। মাঝখানে প্রায় ৫ ঘন্টা লিংক ছিল না। প্রচুর কাজ বাকি ছিল।

বেরোনোর সময় পলাশদা একটু রাগী রাগী চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “কাল করলেই তো পারতেন। ক’টা বাজে দেখেছেন?”

পলাশদা আমাদের সিকিউরিটি গার্ড। সবার শেষে উনিই সব চাবি দিয়ে বেরোন। ওর কথাটা শুনেই আমি তখনই ঘড়ি দেখলাম। সাড়ে ৯ টা বাজে। ইস! এত দেরী হয়ে গেল! খেয়ালই করিনি। অফিসে আর একটা প্রানীও নেই।

বললাম, “আসলে কাল পরশু দু’দিন ছুটি তো। সেই কারনেই সেরে নিলাম পুরোটা।”

সত্যিই কাজ নিয়ে যেতে চাইছিলাম না বাড়িতে। সামনে বইমেলা আসছে। আমাকে একটা উপন্যাস শেষ করতে হবে। বইমেলাতে বেরোবে।

ও হ্যাঁ। আমি ব্যাংকে চাকরি করার পাশাপাশি লিখিও। কলেজ থেকেই এটা আমার নেশা। ইদানীং যদিও লেখার জন্য সময় পেতে খুব সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু তাও। একটু ছুটি পেলে বড্ড ভালো লাগে। ঠান্ডা মাথায় লিখতে পারি।

পলাশদা ক্ষুন্ন হয়েছে বুঝতে পারলাম। কিন্তু সে নিয়ে মুখে কিছু বলল না। শুধু বলল, “টেবিলে কেক আছে। তোমার জন্য। নিয়ে যেও।”

ভুরু কুঁচকে বললাম, “কেক? কে দিল?”

পলাশদা বলল, “কৌশিক স্যার এর জন্মদিন কাল। সবার জন্য একটা করে কেক অর্ডার দিয়েছিল!”

কৌশিকদা আমাদের ব্যাংকের ম্যানেজার! বাবাহ! সবার জন্য কেক! বিরাট ব্যাপার তো! কথা না বাড়িয়ে কেকটা ব্যাগে ঢুকিয়ে নিলাম।

রাস্তায় বেরিয়ে দেখলাম আর এক ঝামেলা। রাস্তায় ভীষন জ্যাম! সম্ভবত খ্রীষ্টমাসের আগের রাত বলেই হয়ত লোকজন ঘুরতে বেরিয়েছে। অনলাইন ক্যাব বুক করতে গিয়ে দেখি আমার বাড়ি পর্যন্ত যেতে ভাড়া চাইছে ৫৭০ টাকা। সার্জ চলছে! বাপরে! এত টাকা দিয়ে যাওয়া যায় নাকি? আমার বাবার জমিদারি নেই। আর থাকলেও যেতাম না।

কী মনে হতে ক্যাব এর অ্যাপ এ অ্যাড্রেসটা চেঞ্জ করে সিঁথির মোড় দিলাম। সাথে সাথে দেখলাম টাকাটা কমে হয়ে গেল ৩১০ টাকা। যাহ বাব! এত টাকার পার্থক্য? সিঁথির মোড় থেকে আমার বাড়ি রিক্সাতে ১৫-২০ মিনিট। ৪০ টাকা মত ভাড়া নেয়। এই রাত্রে হয়ত ৫০ নিতে পারে ম্যাক্সিমাম। হিসেব করে দেখলাম তাহলেও ৩৬০ টাকার বেশী খরচা হচ্ছে না। বুক করে দিলাম ক্যাব। সিঁথির মোড় পর্যন্ত। মিডল ক্লাস ফ্যামিলি বাওয়া! ভাবতে হয়। ভাবতে হয়।

ক্যাব এ উঠে গান চালিয়ে দিলাম। তারপর চোখ বন্ধ করে দিলাম। ভীষন টায়ার্ড। বাড়িতে টেক্সট করে দিয়েছি। ফিরতে দেরী হবে বলে। নাহলে মা আবার চিন্তা করবে। তার ওপর আজকে যা জ্যাম। ক’টা বাজবে কে জানে!

একটু তন্দ্রা মত এসেছিল। সাউথ সিঁথি পেরোনোর পরেই একটা ঝাঁকুনিতে ঘুমটা ভেঙে গেল। এটাই হয় সবসময়। ট্রেনে ওঠার সময়েও দেখেছি। যে যতই ঘুমোক। যে স্টেশনে নামতে হয়, সেই স্টেশনের আগের স্টেশনে এসেই ঘুমটা ভেঙে যায়।

ফোনের ঘড়িতে দেখলাম ১০ টা ৫০ বাজে। নড়ে চড়ে বসলাম। মিনিট ৫-৭ এক পরে যখন নামলাম সিঁথির মোড়ে তখন রাস্তায় একটাও লোক নেই। কি অদ্ভুত। কলকাতার একটা দিকে এত লোক যে রাস্তায়র গাড়ি এগোচ্ছে না, আবার একটা দিক একদম শুনশান! এটাই হয়ত কলকাতার কলকাতাত্ব। এই বিভিন্নতাটাই বড্ড ভালো লাগে আমার।

রাস্তা ক্রশ করে যখন ওপারে গেলাম তখন দেখলাম রিক্সা রয়েছে একটাই। আমার বাড়ি 30A Bus Stand থেকে একটু ভেতর দিকে। রিক্সাওয়ালাটা মোটামুটি আমার মুখ চেনা। নাম বোধহয় স্বপন। ওর মুখের মাস্কটা নাকের নীচে নামানো। আজকাল সবাই তাই করছে। ওকে বললাম, “যাবে?”

সে বলল, “কোথায়?”

বললাম, “জানো তো তুমি। 30A Bus Stand থেকে একটু ভেতর দিকে যাবো! মিনিট দু’য়েক ওখান থেকে।”

স্বপনদা বোধহয় মাটির দিকে চোখ করে একটু মনে করার চেষ্টা করল। তারপর বলল, “৫০ টাকা লাগবে।”

জানতাম। রাত ১১ টা বেজে গেছে মানে ৫০ টাকার কমে যাবেই না। আর তর্ক করতে ইচ্ছে করছিল না। বললাম, “ঠিক আছে। চলো!”

বলেই রিক্সায় উঠে বসলাম। সেও আর কথা না বাড়িয়ে রিক্সাটা সবে এগোতে শুরু করেছে হঠাৎ পেছন থেকে একটা মেয়ের গলার আওয়াজ শোনা গেল!

“রিক্সা!! রিক্সা!!”

তারপরেই দৌড়ে একজন মহিলা আমাদের রিক্সার সামনে এসে দাঁড়াল। মুখে মাস্ক সে বোধহয় পেছন থেকে আমাকে দেখতে পায়নি। ভেবেছে খালি রিক্সা চলে যাচ্ছে। তাই হয়ত জোরে ডাকল। কিন্তু সামনে এসে দাঁড়ানোর পরেই আমাকে দেখেই সে একটু থমকে গেল। বুঝল এই রিক্সা সে পাবে না!

মেয়েটা তখনও হাঁফাচ্ছে। স্ট্রীট লাইটের আলোতে মনে হচ্ছে এই ডিসেম্বরের রাত্রেও কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম!

স্বপনদাও প্রথম হঠাৎ ওরকম ডাকে চমকে গিয়েছিল। তারপরেই সে আস্তে আস্তে রিক্সা নিয়ে আমাদের গন্তব্যের দিকে এগোতে লাগল। মেয়েটা দেখলাম একবার ঘড়ির দিকে দেখল। তারপর এদিক ওদিক আর কোনো রিক্সা আছে নাকি খুঁজল।

জানিনা কী মনে হল। আমি স্বপন দা কে বললাম, “এই একবার দাঁড়াও তো!”

তারপর রিক্সায় পেছন ফিরেই মহিলাকে জিজ্ঞেস করলাম, “Excuse Me. বলছিলাম যে আপনি কতদূর যাবেন?”

মেয়েটা বোধহয় হঠাৎ আমার কথায় একটু হকচকিয়ে গিয়েছিল। তারপরেই আমাদের রিক্সার কাছে এসে ভুরু কুঁচকে বলল, “কেন? তাহলে কি আপনি আমায় রিক্সাটা ছেড়ে দেবেন?”

কেন মানে? নিজেই তো রিক্সা খুঁজছিল। ওর গলার টোনটা আমার ভালো লাগেনি। এই জন্যেই লোককে সাহায্য করতে নেই।

বললাম, “না ছাড়ব কেন? যদি একই রুটে যান তাহলে শেয়ারে যেতে পারি। সেই কারনেই জিজ্ঞেস করলাম।”

মেয়েটি বলল, “না। অত দয়া করতে হবে না। আপনি যান!”

যাহ বাবা! এভাবে বলার কী হল? আমার খুব বিরক্ত লাগল। আমি আর মেয়েটিকে কিছু না বলে স্বপনদা কে বললাম, “চলো তুমি! আর দাঁড়াতে হবে না।”

***

–      এই এই! এরকম কথা তো ছিল না!

–      কী হল?

–      এটা কেন লিখছো?

–      কেন? কী হয়েছে? প্রেমের গল্প লিখতে বললে তো!

–      না তাই বলে…

–      চুপ করো। লেখার মাঝে ইন্টারাপ্ট কোরো না।

–      কিন্তু এটা তো…

–      আবার!! একদম চুপ।

যত দিন যাচ্ছে, কলকাতা শহরটা আস্তে আস্তে মেয়েদের জন্য বাঁচার অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে – এটা খুব ভালো বুঝতে পারছে রোহিণী। রোজ ওর শিফট শেষ হওয়ার আগে ওর বস সুদীপ্তদা ওকে নিজের ঘরে ডাকবে। তারপর অকারনে বসিয়ে রাখবে ১ ঘন্টা করে। এটা সেটা বলে সময় নষ্ট করবে।

উদ্দেশ্যটা ও বোঝে। এই ধরনের লোকজন ও প্রথম দেখছে না। ও জানে সুদীপ্তদার চোখ কোথায় থাকে! যত দিন যাচ্ছে ও বুঝতে পারছে ওর অসহ্য লাগছে এগুলো। কিন্তু কী করবে? বসকে উল্টোপাল্টা বলা মানে চাকরি ছাড়তে হবে। এই মুহুর্তে ওর ফ্যামিলির যা অবস্থা তাতে চাকরি ছাড়ার কথা ভাবার মত লাক্সারী করার সময়ও ওর নেই। অগত্যা ওকে যেতে হয় বস এর ঘরে। বসে থাকতে হয় যতক্ষন না বস যেতে বলছে!

কাল ২৫শে ডিসেম্বর আর পরশু রবিবার। রোহিণী ভেবেছিল আজ বেরোনোর সময় কেক কিনে নিয়ে যাবে বাড়িতে। ওর মা প্লাম কেক গুলো খেতে খুব ভালোবাসে। ওর শিফট শেষ হয় ৯ টায়। বেরোতে বেরোতে সাড়ে ৯টা বাজলেও ও দোকান খোলা পাবে ও জানত। কারন কাল খ্রীষ্টমাস। কিন্তু সুদীপ্তদার কথাটা ওর একদম মাথা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল।

আজ বেরোবার আগে নিজের ডেস্কটা একটু গুছিয়ে নিচ্ছিল রোহিণী। হঠাৎ মধুরিমা এসে বলল, “এই তোকে স্যার ডাকছেন!”

বলেই মধুরিমা চলে গেল। মধুরিমারাও জানে স্যার ওকে কেন ডাকে নিজের ঘরে বারবার। শুধু মধুরিমা কেন? অক্ষয়, নীতিশ, রাজীব সবাই জানে। কিন্তু কেউ কখনও প্রতিবাদ করে না। লোকটার নাকি পলিটিকাল কানেকশন বিশাল। ঘড়ির দিকে তাকাল একবার রোহিণী। ৮ টা ৫৫। স্যার কে বলে যদি আজ আধঘন্টার মধ্যেও বেরিয়ে আসা যায় তাহলেও কেকের দোকান খোলা পেয়ে যাবে ও।

ও গেল সুদীপ্তদার ঘরে। সুদীপ্তদা কম্পিউটারে কিছু একটা দেখছিলেন। ওকে ঘরে ঢুকতে দেখেই বত্রিশ পাটি বের করে বললেন, “এসো! বসো!”

ও শান্তভাবে গিয়ে একটা চেয়ারে বসল। তারপর বলল, “হ্যাঁ স্যার। বলুন!”

সুদীপ্তদা বলল, “ও হ্যাঁ… বলছিলাম যে… কাজ ঠিকঠাক হয়েছে?”

রোজ এই এক প্রশ্ন করে সুদীপ্তদা। রোজ এক উত্তর দেয় রোহিণী। আজকেও তাই বলল, “হ্যাঁ।”

কম্পিউটার স্ক্রীনের দিকে একবার তাকিয়ে সুদীপ্তদা এবার জিজ্ঞেস করল, “এখানে কাজ করতে তোমার কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো?”

রোহিণী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। ইসস যদি সমস্যাটা বলতে পারত! তাহলে কী ভালো হত!

আবারও প্রত্যেকদিনের মত একই উত্তর দিল রোহিণী। “না সমস্যা হচ্ছে না!”

কিছুক্ষন দু’জনেই চুপ।

“কাল পরশু তো ছুটি। কী প্ল্যান?” সুদীপ্তদা জিজ্ঞেস করল

রোহিণী বলল, “কোনো প্ল্যান নেই। বাড়িতেই থাকবো। মায়ের সাথে সময় কাটাবো!”

সুদীপ্তদা এবার চেয়ার থেকে উঠে পড়ল। তারপর ওঁর পেছনে রাখা আলমারীটা খুললেন।

খুলতে খুলতেই জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি ড্রিংক করো তো!”

এই প্রশ্নটার জন্য রোহিণী একেবারেই তৈরী ছিল না। বন্ধুদের সাথে মাঝে মধ্যে ড্রিংক ও করে থাকে। কিন্তু এই লোকটাকে সত্যি কথা বলতে ইচ্ছে করছিল না ওর।

ও বলল, “নাহ করি না!”

সুদীপ্তদা হাসলেন। তারপর আলমারী থেকে বার করলেন একটা মদের বোতল এবং দু’টো গ্লাস! তারপর সেগুলো রাখলেন টেবিলে।

রোহিণীর মধ্যে এবার একটা চাপা উত্তেজনা কাজ করছিল। ও বুঝতে পারছিল না এর পর কী হতে পারে! আর হলে ওই বা কী করবে।

সুদীপ্তদা গ্লাসে মদ ঢালতে ঢালতে বললেন, “আমি জানি তুমি খাও। আমাকে মধুরিমা বলেছে!”

এই কথাটা একদম খেয়াল ছিল না ওর। কয়েক সপ্তাহ আগে। একটা অফিস কলিগের বিয়েতে ও ড্রিংক করেছিল। সেখানে মধুরিমাও ছিল। আর মধুরিমা তো সব কথা বস কে বলে। ওর নিজের বোধহয় একটু ভালো লাগাও রয়েছে স্যারের প্রতি। কে জানে!

সুদীপ্তদা এবার একটা গ্লাস এগিয়ে দিল রোহিণীর দিকে। তারপর বলল, “নাও। একটু খাও। কাল পরশু তো ছুটি।”

রোহিণীর মাথাটা গরম হচ্ছিল। আর নিতে পারছে না ও এসব। ও যতটা সম্ভব ঠান্ডা গলায় বলল, “না স্যার। আমি এখন যাই!”

সুদীপ্ত দা বলল, “আরে দাঁড়াও। আমি ড্রপ করে দেব আজ তোমাকে।”

–      না না। কোনো দরকার নেই। আমি চলে যাবো!

–      আরে তোমার দরকার না থাকতে পারে। আমার আছে!

কথাটা বলেই অদ্ভুতভাবে কেমন যেন হাসল সুদীপ্তদা। তারপরেই ও দেখল সুদীপ্তদার চোখটা ওর মুখ থেকে আর একটু নীচের দিকে নামল।

আর পারল না রোহিণী। টেবিল থেকে মদের গ্লাসটা হাতে নিয়ে সেটা ছিটিয়ে দিল সুদীপ্তদার মুখে। তারপর ঝড়ের বেগে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। তারপর নিজের ডেস্ক থেকে ব্যাগটা নিয়ে বেরিয়ে গেল অফিস থেকে। সুদীপ্তদা পুরো ব্যাপারটাতে এতটাই হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল যে কয়েক মুহুর্ত কোনো কথাই বলতে পারেনি।

অফিস থেকে বেরিয়ে যখন রাস্তায় এল রোহিণী তখন দেখল ফোন বাজছে। সুদীপ্তদা ফোন করছে। ও ধরল না। বড় রাস্তায় উঠে সামনেই ওর বাড়ি যাওয়ার একটা বাস ছিল। ওতে উঠে পড়ল ও।

মাথা যখন একটু ঠান্ডা হয়েছে, তখন ও বুঝতে পারল একটা বড় কিছু করে ফেলেছে ও। ওর চাকরিটা হয়ত আর থাকবে না। কিন্তু ও আর পারছিল না। কী করবে! আজ আর কেক নেওয়া হল না। ধুর!

বাস থেকে যখন নামল ও তখন বাজে ১০ টা ৫৫। ওর বাড়ি সিঁথির মোড় থেকে একটা অটো বা রিক্সা নিয়ে যেতে হয়। খুব বেশীক্ষন লাগে না। মিনিট দশেক লাগে। ও অটৈ নেই। কারন টাকাটা কম লাগে।

তবে আজ ও রাস্তা ক্রস করতে করতেই দেখল একটা অটো নেই। অটো তো দূরের কথা একটা লোক নেই রাস্তায়। একটা মাতাল যাত্রী প্রতীক্ষালয়ের চেয়ারে শুয়েছিল। ওকে দেখেই হঠাৎ উঠে বসে,  বেসুরো গলায় “নাচ ময়ূরী নাচ রে” গান করতে করতে এগিয়ে এল ওর দিকে।

সেই মুহুর্তে রোহিণীর আবার মনে হল কলকাতা শহর টা মেয়েদের জন্য আর সেফ নয়। ও প্রায় দৌড়েই ক্রস করল রাস্তাটা। তারপরেই সামনে দেখল একটা রিক্সা চলে যাচ্ছে ওর বাড়ির দিকে।

তারপর চেঁচিয়ে ডাকল! “রিক্সা! রিক্সা!” বলে। তারপর দৌড়ে গিয়ে দাঁড়াল রিক্সার সামনে।

ও খেয়াল করেনি। রিক্সাতে অলরেডি একজন বসেছিল। সেটা দেখেই ও বুঝতে পারল। এই রাত্রেবেলা ঠান্ডায় ওকে বোধহয় হাঁটতেই হবে।

এরপরেই একটা অদ্ভুত ব্যাপার ঘটল।

রিক্সাটা দু’পা গিয়েই থেমে গেল। তারপর রিক্সায় বসে থাকা ছেলেটি ওকে বলল, “Excuse Me. বলছিলাম যে আপনি কতদূর যাবেন?”

উফফ! ব্যাস শুরু হয়ে গেছে। রাত্রেবেলা একা একটা মেয়েকে দেখেই শুরু হয়ে গেছে!

“কেন? তাহলে কি আপনি আমায় রিক্সাটা ছেড়ে দেবেন?” একটু বাজেভাবেই বলল রোহিণী।

ছেলেটি বলল, “না ছাড়ব কেন? যদি একই রুটে যান তাহলে শেয়ারে যেতে পারি। সেই কারনেই জিজ্ঞেস করলাম।”

ছেলেটিকে দেখে খুব একটা উল্টোপাল্টা মনে হচ্ছে না যদিও। কিন্তু আজকাল মানুষকে দেখে বোঝা সত্যিই খুব কঠিন। খুব সুন্দর দেখতে একটা মানুষের মধ্যেই যে কত ভয়ংকর একটা পশু লুকিয়ে থাকতে পারে সেটা বোঝাও যায় না।

রোহিণী আগের মতি ঝাঁঝের সাথেই বলল, “না। অত দয়া করতে হবে না। আপনি যান!”

কথাটা বলেই ওর মনে হল হয়ত একটু বেশী বাড়াবাড়ি করে ফেলল ও। এভাবে হয়ত না বললেই হত।

ছেলেটি আর দাঁড়াল না। রিক্সাটা চলতে শুরু করল এবার।

রোহিণী পেছন দিকে তাকাল একবার। তাকিয়েই দেখল সেই মাতালটা আসছে ওদিকেই। গুনগুন করে এখনও কি যেন গাইছে।

রোহিণী আবার দৌড়োলো চলে যাওয়া রিক্সার দিকে। চেঁচিয়ে ডাকল, “এই যে! শুনছেন! Excuse Me!”

***

–      শোনো না…

–      আবার কী হল?

–      বলছিলাম যে থাক না।

–      মানে? কী থাকবে?

–      লিখতে হবে না গল্প!

–      এই! তুমি তো জোর করলে প্রেমের গল্প লেখার জন্য! তাহলে?

–      না না। আমার চাই না। আর লিখতে হবে না।

–      পাক্কা তো? মাঝপথে থেমে যাবো?

–      হুম? আচ্ছা না। লেখো। তুমি খুব পচা! জানো আমি তোমার গল্প পড়ার জন্য কেমন করি…

–      কিন্তু এই গল্পটাতে তো কোনো টুইস্ট নেই। সবই তো জানা তোমার!

–      আমার জন্য নেই হয়ত… কিন্তু…

আর একটু বাঁদিকে সরে বসার চেষ্টা করলাম আমি। যদিও জায়গা নেই একদমই। তাও মনে হল যদি একটু সরে বসা যায়। আমি কোনোভাবেই চাইছিলাম না আমার পাশে বসা ভদ্রমহিলাকে Uncomfortable feel করাতে। উনি এখন মুখের মাস্কটা খুলেছেন।

একটু আগে রিক্সাটা নিয়ে যখন এগিয়ে যাচ্ছিলাম তখন আবার হঠাৎ মেয়েটি ডাকল। কেন কে জানে! বলল সামনেই ফোয়ারার মোড়ের কাছে ওর বাড়ি। শেয়ারে যাওয়া কি সম্ভব?

30A Bus Stand যাওয়ার পথে ফোয়ারার মোড় গেলে সামান্য একটু ঘুরপথে যেতে হয়! সেই জন্যেই স্বপনদা একটু গাঁইগুঁই করছিল। আমি ১০ টাকা বেশী নিও বলাতে আর কিছু বলল না।

রিক্সা কিছুটা যাওয়ার পরেই মেয়েটি বলল, “আমি রোহিণী!”

বললাম, “অভিনন্দন!”

রোহিণী বলল, “নাম বললাম তাতে অভিনন্দনের কী আছে?”

আমি হেসে বললাম, “আমার নাম। অভিনন্দন!”

রোহিণীও হেসে ফেলল। বলল, “ওহ সরি!”

আমি বললাম, “আরে ঠিক আছে। অনেকেরই এটা হয়।”

রোহিণী কয়েক মুহুর্ত থেমে বলল, “ওহ! আর ইয়ে… তখনের জন্যেও সরি!”

“কীসের জন্যে?” আমি জিজ্ঞেস করলাম!

–      ওই যে তখন আপনি হেল্প করতে চাইলেন। আমি ওভাবে বললাম।

–      ঠিক আছে। চাপ নেই।

–      আসলে এমন কিছু অভিজ্ঞতার মধ্যে পড়তে হয় আমাদের, যে ভালো খারাপের বিচারবুদ্ধির ওপরেও ভরসা থাকে না।

–      জানি। কলকাতাটা দিনকে দিন মেয়েদের বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে!

কথাটা বলার পরেই কেন জানিনা রোহিণী অদ্ভুতভাবে তাকালো আমার দিকে। আমি বললাম, “কী হল?”

রোহিণী বলল, “কিছু না!”

তারপর একটু থেমে বললাম, “অফিস থেকে ফিরছেন?”

–      হ্যাঁ? আপনি?

–      আমিও তাই। একটু দেরী হয়ে গেল আজ।

–      ওহ! আমার রোজই দেরী হয়। কিন্তু আজ আসলে রাস্তায় এত জ্যাম যে… ১১ টা বেজে গেল।

–      ওহ আচ্ছা।

কথা বলতে বলতেই আড়চোখে মেয়েটাকে দেখছিলাম মাঝে মাঝে। মেয়েটি বেশ মিষ্টি দেখতে। পরনে কূর্তি আর জিন্স। আর তার ওপর একটা সোয়েটার। কপালে কালো টিপটার জন্যেই বোধহয় আরও সুন্দর লাগছে ওকে। এতক্ষন খেয়াল করিনি কেন কে জানে!

বৈশাখীর মোড় থেকে ডানদিকে গেলে ফোয়ারার মোড়। হঠাৎ ওই মোড়ের মাথায় এসেই হল এক বিপদ। রিক্সাটা চলতে চলতে হঠাৎ থেমে গেল। একটু অবাক হলাম দু’জনেই। বললাম, “কী হল?”

স্বপনদা বলল, “চেইনটা খুলে গেছে। একটু দাঁড়ান।”

বলে সে নেমে পড়ল রিক্সা থেকে। রোহিণী অনেকক্ষন থেকে ঘড়ি দেখছিল। কী মনে হতে ও নিজেও হঠাৎ নেমে পড়ল রিক্সা থেকে। তারপর আমাকে বলল, “আমি বাকিটা হেঁটে নেবো। এই তো এইটুকু!”

আমি বললাম, “এত রাত্রে? একা হাঁটবেন?”

–      হ্যাঁ। অভ্যেস আছে। কিছু হবে না!

আমি আর কিছু বলতে পারলাম না। কীই বা বলব। জোর করে তো আটকে রাখতে পারি না!

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে যাচ্ছিলাম, “ঠিক আছে। সাবধানে যান।”

কিন্তু বলে বসলাম, “ঠিক আছে চলুন আমি এগিয়ে দিচ্ছি!”

কোথাও একটা ঝিঁঝি ডাকছে অনেকক্ষন থেকেই। দু’টো মানুষ অন্ধকারে হাঁটছে। কেউ কারুর সাথে কোনো কথা বলছে না। রোহিণী মাঝে মাঝে অভিনন্দনের দিকে দেখছে। মুখটা যদিও সেভাবে দেখতে পাচ্ছে না। কিন্তু তাও তাকাচ্ছে ও মাঝে মাঝে আড়চোখে।

প্রথম কথা বলল ছেলেটিই। বলল, “আপনি কি কিছু মনে করলেন?”

রোহিণী বলল, “কেন মনে করব?”

–      এই যে এগিয়ে দেব বললাম।

–      না না। মনে করার কী আছে…

একটু আগে যখন অভিনন্দন এগিয়ে দেবে বলেছিল, তখন রোহিণী একবারের জন্যেও “না না” বলে ওকে বারন করার চেষ্টা করে নি। ওর সত্যিই মনে হচ্ছিল এই রাস্তাটায় একা না যাওয়াই বোধহয় শ্রেয়।

তাই ও বলেছিল, “ঠিক আছে। চলুন!”

অভিনন্দন এখন বলল, “বাড়িতে কে আছে আর আপনার?”

রোহিণী বলল, “মা আছেন। আর কেউ নেই!”

কথাটা বলেই রোহিণীর মনে পড়ল এত ঝামেলার মধ্যে মায়ের জন্য কেক কেনার কথা আর মনেই নেই। ধুর! যেটা আগে থেকে প্ল্যান করে সেটা কখনও হয় না! ওর মুখ থেকে নিজের অজান্তেই একটা বিরক্তিসূচক শব্দ বেরোলো।

অভিনন্দন বলল, “কি হল? কিছু সমস্যা?”

রোহিণী বলল, “আরে আর বলবেন না। মা এই খ্রীষ্টমাস কেক খেতে ভালোবাসে। ভেবেছিলাম ফেরার সময় নিয়ে আসব! কিন্তু সেটা আর হল না! যা সব ঘটল বেরোবার সময়!”

অভিনন্দন অবাক হয়ে বলল, “কী ঘটল?”

রোহিণী সংক্ষেপে অফিসের ঘটনাটা বলল অভিনন্দনকে।

অভিনন্দন বলল, “সিরিয়াসলি? তারপর? আপনি থানায় যাননি কেন?”

রোহিণী বলল, “কি করতাম থানায় গিয়ে? লোকটার হাত অনেক দূর! কিচ্ছু হত না! ইনফ্যাক্ট একটা রেপের কেসেও শুনেছিলাম…

কথাটা বলতে গিয়ে থেমে গেল রোহিণী। দেখল সামনে একটা গাড়ির হেডলাইট দেখা যাচ্ছে। ওরা হাঁটছিল রাস্তার মাঝখান দিয়ে। রোহিণী বলল, “সরে আসুন এদিকে!”

অভিনন্দন বলল, “তাও! কিছু একটা করতে পারতেন! এভাবে ছেড়ে দেওয়া ঠিক নয়।”

রোহিণী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। কীই বা করবে। ওর কতটুকুই বা ক্ষমতা।

গাড়িটা হেডলাইট জালিয়ে চলে গেল ওদের পাশ দিয়ে। রাস্তায় আর কোনো লোক নেই। ওরা তখন ফোয়ারার মোড় পৌঁছেই গেছে প্রায়। অভিনন্দনের হঠাৎ মনে পড়ল কৌশিকদার কেকটার কথা।

ও ব্যাগ থেকে বের করল প্যাকেটটা।  তারপর রোহিণীর দিকে ফিরে বলল, “এই যে! এটা নিয়ে যান কাকিমার জন্য!”

রোহিণী বলল, “না না! একি! আপনি প্রচুর সাহায্য করেছেন অলরেডি! আর না।”

–      আরে নিন না। বলছি তো। আমার বাড়িতে এমনিতেও কেউ কেক খায় না! এটা আমি কিনিনি অফিসের কলিগ দিল। ওর জন্মদিন বলে।

রোহিণী একটু ইতস্তত করছিল। অভিনন্দন আবার বলল, “ঠিক আছে। আপনি তো সামনেই থাকেন। আমায় পরে কেক খাইয়ে দেবেন! ঠিক আছে?”

রোহিণী হাসল। নিয়ে নিল কেকটা। বলল, “Thank you so much!”

ফোয়ারার মোড়টা পেরিয়েই একটা ছোটো গলি আছে। সেখানে গিয়ে দাঁড়াল ওরা। রোহিণী বলল, “এই তো। দু’টো বাড়ি পরেই আমার বাড়ি। আপনি যান। রিক্সা দাঁড়িয়ে আছে।”

অভিনন্দনের মনে পড়ল রিক্সার কথা। তাই তো! স্বপনদা আদৌ দাঁড়িয়ে আছে তো? নাহলে এই ঠান্ডায় হাঁটতে হবে। যদিও আসার সময় ৫০ টাকা দিয়ে এসেছে। যাতে চলে না যায়।

একটা কথা অভিনন্দনের বলতে খুব ইচ্ছে করছিল অনেকক্ষন থেকেই। এবার বলে ফেলল!

“কাল বা পরশু তো ছুটি। কাছাকাছি বেরোবেন নাকি?”

রোহিণী কি বলবে বুঝতে পারছিল না। এটা একটু বেশী ডিরেক্ট হয়ে গেলনা কি? এগুলো এন্টারটেন করা ঠিক হবে?

এসব ভাবছিল। হঠাৎ ও খেয়াল করল সেই গাড়িটাকে। যেটা একটু আগেই ওদের ক্রশ করে গেছে। ওটা আবার এদিকে আসছে কেন?

অভিনন্দন বলল, “কী হল? বেশী বাড়াবাড়ি করলাম?”

রোহিণী বলল, “ওই গাড়িটা! ওটাকে কোথায় যেন দেখেছি!

অভিনন্দন ফিরে তাকাল। গাড়িটা ওদের দিকেই আসছে। হেডলাইটের আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে গেল দু’জনেরই।

ওদের সামনে এসে গাড়িটা থামল। গাড়ি থেকে নামল তিনজন। তার মধ্যে একজন কে রোহিণী চেনে খুব ভালো করে। গাড়িটা এবার ও চিনতে পেরেছে। এটা সুদীপ্তদার গাড়ি।

সুদীপ্তদা সাথে দু’জনকে নিয়ে নামল। তারপর এগিয়ে এল ওর দিকে। লোকটার গা থেকে কেমন যেন একটা অদ্ভুত গন্ধ বেরোচ্ছে!

সুদীপ্তদা একবার অভিনন্দনের দিকে দেখল। তারপর রোহিণীকে বলল, “আচ্ছা। তাহলে এর জন্যে আমায় এতদিন পাত্তা দিতে না! বয়ফ্রেন্ড!”

রোহিণী বুঝল সুদীপ্তদা সেন্স এ নেই। অভিনন্দন বলল, “কে আপনি?”

রোহিণী বলল, “আমার অফিসের বস!”

“ইয়েস! ইয়েস! বস!” সুদীপ্তদা বলল, “বস মানে জানো তুমি? আজ তুমি যেটা করলে তার জন্য আমি তোমার কী করতে পারি জানো?”

রোহিণী বলল, “আমি আর আপনার অফিসে চাকরি করি না সুদীপ্তদা। ধরে নিন আমি রিজাইন করেছি। হয়েছে? আর কিচ্ছু করতে পারবেন না আপনি!”

সুদীপ্তদা কথাটা শুনে খ্যাক খ্যাক করে হাসল। তারপর বলল, “রিজাইন? Who the hell are you to resign?”

কথাটা বলেই সুদীপ্তদা এগিয়ে আসতে গেল রোহিণীর দিকে। অভিনন্দন সামনে দাঁড়িয়ে ওকে আটকে দিল। বলল, “দাদা! কেন ঝামেলা করছেন? যান না! ও তো আর চাকরি করছেনা আপনার অফিসে!”

সুদীপ্তদা যেন তেলেবেগুনে জ্বলে উঠল কথাটা শুনে। অভিনন্দনের কলারটা ধরে বলল, “এই তুই জানিস আমি কে? জানিস আমি কী করতে পারি?”

রোহিণী আর থাকতে পারল না। এতক্ষন ও অভিনন্দনের পেছনে দাঁড়িয়েছিল। এবার সামনে এসে প্রচন্ড জোরে একটা ঘুঁষি মারল ও সুদীপ্তদার নাকে!

***

–      এবার থেমে যাও না প্লিজ!

–      কেন? আর একটু পাঁচ মিনিটও লাগবে না!

–      জানি! সেই জন্যেই থামতে বললাম।

–      কী হল? তুমিই তো বলেছিলে লিখতে!

–      কিন্তু…

–      আর একটু। শেষ করতে দাও বাকি টা।

–      হুম। বেশ! সবাই নিতে পারবে তো?

–      কী?

–      আমাদের প্রেমটা?

–      Who Cares? প্রেমটা তো আমরা করছি। ওরা করছে না। বা করবেও না।

–      বেশ! লেখো তাহলে।

সুদীপ্ত নামে লোকটির নাক থেকে রক্ত বেরোচ্ছে দেখলাম। এটা যে রোহিণী করবে সেটা আমি ভাবতেও পারিনি। লোকটা হঠাৎ এই ঘটনায় একটু হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তারপর যেটা হল সেটার জন্য আমি একদম প্রস্তুত ছিলাম না। এবং আমি জানি রোহিণীও ছিল না।

সুদীপ্ত রাগে ফুঁসছিল যেন। জোরে জোরে নিঃশ্বাস পড়ছিল ওর। ওর সাথের দু’জন লোকও দেখলাম এই ঘটনায় কিংকর্তব্যবিমূড় হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল কয়েক মুহুর্ত।

তারপরেই সুদীপ্তকে বলতে শুনলাম, “ফিনিশ দেম!”

একি? ফিনিশ দেম মানে? ইয়ার্কি নাকি? কথাটা বলতেই লোকদু’টো পকেট থেকে যেটা বের করল সেসব আমি শুধু সিনেমাতেই দেখেছি। আজ দেখলাম সামনে থেকে। রিভলবার।

আর তার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই পর পর দু’টো বুলেটের আওয়াজ। কপালে একটা ছোট্টো ধাক্কা অনুভব করলাম। তারপরেই জোরে দু’টো আওয়াজ হতেই খেয়াল করলাম, আমি আর রোহিণী দাঁড়িয়ে আছি এক জায়গাতেই।  শুধু আমাদের শরীর দু’টো পড়ে আছে মাটিতে। স্ট্রীট লাইটের আলোতে দেখলাম কপাল থেকে রক্ত বেরোচ্ছে গলগল করে। আমি রোহিণীর দিকে একবার তাকালাম। ওর চোখ মাটির দিকে। নিজের শরীরটার তাকিয়ে আছে অদ্ভুতভাবে। আর তাকিয়ে আছে ওর হাতে ধরা কেকটার দিকে। বোধহয় ভাবছে এই বছর কাকিমার আর খ্রীষ্টমাস কেক খাওয়া হল না।

***

–      সেই প্রেমের গল্পটাকেও ভূতের গল্প বানিয়েই ছাড়লে!

–      আরেহ ভূতের গল্প কেন লিখছিলাম বলে মনে হয়? ভূতেদের লাইফ লিড করছি। সব কিছু সামনে থেকে দেখছি, আর ভূতের গল্প লিখব না?

–      মাঝে মাঝে বড্ড খারাপ লাগে জানো?

–      কেন? আমায় যদি তুমি সেদিন রিক্সায় লিফট না দিতে তাহলে হয়ত…

–      এসব কথা বলে কিছু হবে না। গল্প লেখা ডান! এবার যেটা দেওয়ার কথা সেটা দাও!

–      মানে? কী দেওয়ার কথা?

–      এই! এসব চালাকি করবেনা একদম আমার সাথে! শুরুতেই বলেছিল ভালো কিছু পাবো!

–      ওহ হ্যাঁ তাই তো! না দিলে হবে না, না?

–      নাহ হবে না! দিতেই হবে!

–      আচ্ছা ঠিক আছে বাবা! উফফ! দিচ্ছি!

–       হ্যাঁ! <3

নিশি কাব্য

Arnab Mondal


হিজিবিজি লেখা আর বিরিয়ানি নিয়ে Phd করছি আর আকাশবাণী কলকাতায় নিজের কন্ঠস্বর ভাড়া দিয়ে সংসার চালাচ্ছি।


Post navigation


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কপি করবেন না দাদা/দিদি