সকাল থেকেই ভেতরে বড্ড কষ্ট হচ্ছে! বার বার মনে হচ্ছে এটা আমি কী করলাম! আমি কী করে এটা করতে পারলাম। আমি কিনা চিট করলাম! জীবনে কখনও প্রেমিকা ছাড়া অন্য কারুর দিকে তাকাইনি পর্যন্ত! … না এক মিনিট… তাকিয়েছি। ভুল বললাম। জীবনে কখনও প্রেমিকা ছাড়া অন্য কারুর সাথে কিছু করিনি। আর আমি করলাম কিনা চিট!

চা হাতে নিয়ে চেয়ারে বসে বসে বিছানাটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম! এই বিছানাতেই কাল রাত্রে আমি অন্য একজনকে… মাথাটা দু’পাশে ঝাঁকালাম জোরে জোরে।

নাহ! এখন এসব ভাবলে চলবে না। একটু পরেই জুন আসবে। না না এটা আন্টি নয়। জুন আমার প্রেমিকা। আজ আসবে আমার বাড়িতে। আজ অনেক দিন পর সারাটা দিন আমরা একসাথে কাটাবো! আর কাল রাত্রে আমি…

চা খেয়ে বাথরুমে গিয়ে স্নান করলাম। বেশ ঠান্ডা পড়েছে। বাড়িতে যদিও গীজার আছে। কিন্তু আজ চালাই নি। মনে হল কাল রাত্রের পাপের শাস্তি এই কনকনে ঠান্ডা জলে স্নান করে নিজেই নিজেকে দিই। তাই গীজার ছাড়াই স্নান করলাম আজ।

বার বার মনে হচ্ছে আমার কী সব বলে দেওয়া উচিত জুন কে। কিন্তু তারপর যদি আমায় ছেড়ে চলে যায়! তখন কী হবে? তখন আমি কী করব? এসব ভাবতে ভাবতেই গামছা পরে সবে বেরিয়েছি তখনই কলিং বেল টা বাজল! ঘড়ির দিকে তাকালাম। আরেহ সাড়ে ৯ টা বাজে। এত তাড়াতাড়ি চলে এসেছে। একদম সকালে বেরিয়েছে এই ঠান্ডায়।

গামছা পরেই দরজা খুললাম। জুন ঘরে ঢুকেই জড়িয়ে ধরল আমায়। একবার ভাবলাম আরেহ করোনা! তারপর ভাবলাম থাক। পাপের শাস্তি না হয় এভাবেই হোক। আমিও জড়িয়ে ধরলাম ওকে। আহ! বহুদিন পর প্রেমিকা কে জড়িয়ে ধরলে অদ্ভুত একটা ভালো লাগে। মনে এবং শরীরে।

গিল্ট টা বাড়ছে আস্তে আস্তে! বড্ড সুন্দর একটা গন্ধ আসছে ওর গা থেকে। সারা ঘর মম করছে সেই গন্ধে। জুন বলল, “যা। গায়ে কিছু দে। বড্ড ঠান্ডা!”

আমি হাসলাম। পাশের ঘরে গিয়ে একটা টিশার্ট আর একটা হাফ প্যান্ট পরে এলাম বেডরুমে। জুন ততক্ষনে বিছানায় বসে একটা খবরের কাগজ পাতছে দেখলাম।

বললাম, “কী করবি?”

ও বলল, “খিদে পেয়েছে তো? সকালে উঠে নিশ্চয় কিছু খাস নি চা ছাড়া! তোর জন্যে পাস্তা বানিয়ে এনেছি। আয় একসাথে খাবো!”

এক একটা মুহুর্ত আসে যখন অনেকগুলো চিন্তা একসাথে মাথার মধ্যে দৌড়োতে দৌড়োতে হঠাৎ থেমে যায়। এটা হল সেরকম একটা মুহুর্ত। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। এগিয়ে গিয়ে বিছানায় বসে জুন এর হাত টা ধরলাম। তারপর কয়েক মুহুর্ত ওর দিকে তাকিয়ে থেকে বললাম, “I have cheated on you.”

জুন এর চোখ টা স্থির হয়ে গেল সাথে সাথে! আমি বললাম, “আমি তোকে ডিসার্ভ করি না রে। আমি… আমি জানিনা কী করলাম আমি… কেন করলাম… কিন্তু…

“কার সাথে?” জুনের প্রশ্ন ছিটকে এল সাথে সাথে…

আমি বললাম, “তুই বিশ্বাস কর-

“কার সাথে প্লিজ বল…” আমার কথা শেষ করতে না দিয়ে জুন বলল আবার।

আমি বললাম, “নম্রতার সাথে।”

নম্রতা আমার এক্স। জুন তা জানে।

জুন একটু জোরে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তারপর আমাকে টেনে নিল ওর বুকে। আমার মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বলল, “It’s okay.”

আমি বললাম, “না। It’s not okay. আমি তোকে একদম ডিসার্ভ করি না রে! আমি খুব খারাপ একটা মানুষ!”

জুন বলল, “নারে পাগল। আমরা সবাই তো ভুল করি। আমিও করেছি।”

চমকে উঠলাম আমি। “মানে? তুইও চিট করেছিস!”

একটু থেমে জুন বলল, “হ্যাঁ। অনিন্দ্যর সাথে কাল রাত্রে ছিলাম আমি। অনেকদিন বলছিল ও ভালো নেই। তাই কাল রাত্রে আমরা…”

আমি মাথায় যেন বাজ পড়ল মনে হল। “মানে? তুই? তুই কী করে?”

জুন বলল, “আমরা সবাই ভুল করি বাবু। আমিও করেছি তুইও করেছিস। তুই যে সবটা আমায় সাহস করে বলতে পেরেছিস এটাই আমার পাওয়া। আমি তো তোকে বলতে পারিনি এতদিন ধরে! তবে আর হবে না বিশ্বাস কর। আজ থেকে আমি শুধু তোরই!”

আমি কথা বলতে পারছিলাম না। জুন কে আমি এতটা বিশ্বাস করতাম। এতটা ভালোবাসতাম। আর ও…

জিজ্ঞেস করলাম, “তুই ওর সাথে… সেক্স করেছিস?”

জুন মাথা নীচু করে বলল, “হ্যাঁ! কেন তুই করিস নি? নম্রতার সাথে?”

আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম, “করেছি… তবে স্বপ্নে…”

“মা-মানে?” খুব অবাক হল জুন।

বললাম, “হ্যাঁ। সেই জন্যেই গিল্ট এ মরে যাচ্ছিলাম। কাল রাত্রে স্বপ্নে ঘটেছে পুরো ব্যাপার টা! সেটাই বলছিলাম তোকে…”

জুন আর কিছু বলতে পারল না। জানি ও এটা ভাবেই নি। কিন্তু কী করব? জুন আসার এক ঘন্টা আগেই নম্রতা বেরিয়ে গেছে আমার বাড়ি থেকে। ওর আমাকে চিট করার গল্প শোনার পর নিজের টা আর সত্যি বলতে ইচ্ছে করছিল না। তাই স্বপ্ন দিয়েই গল্প সারলাম। এবার ভালো করে ওর হাতের পাস্তাটা খাওয়া যাবে।

চিটিং ফাক

Arnab Mondal


হিজিবিজি লেখা আর বিরিয়ানি নিয়ে Phd করছি আর আকাশবাণী কলকাতায় নিজের কন্ঠস্বর ভাড়া দিয়ে সংসার চালাচ্ছি।


Post navigation


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কপি করবেন না দাদা/দিদি