ট্রেন থেকে নেমেই এদিক ওদিক তাকিয়ে কাউকে একটা খুঁজছিল আগন্তুক। স্টেশনেই তো থাকার কথা ছিল। হাতের সুটকেস টা নিয়ে একটা আনমনা ভাবেই স্টেশন থেকে বেরোলেন উনি। ভেবেছিলেন বাইরে হয়ত গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকবে। কিন্তু নাহ! কাউকে তো চোখে পড়ছে না! তাহলে কি ভদ্রলোক ভুলে গেলেন?

“কেমোন আছেন?”

একটা ভীষন চেনা গলার আওয়াজে পেছনে ফিরে যাকে দেখলেন, এই অচেনা জায়গায় তার সাথে দেখা হবে এ কথা তিনি কস্মিনকালেও ভাবেন নি!

আগন্তুক বলল, “এই তো দিব্যি আছি! আপনি কেমন আছেন?”

সেই ভদ্রলোক বললেন, “ভালোই আছি বেশ। বেওসার কাজে স্টেশনে এসেছিলাম। আপনার সাথে দেখা হোয়ে গেলো! আপনি কোনদিকে যাবেন? চলুন হামি নামিয়ে দিচ্ছি!”

আগন্তুক বললেন, “না না। আমার গাড়ি চলে আসবে!”

আগন্তুকের কথা শেষ হওয়ার আগেই একটা সবুজ অ্যাম্বাসাডার বিকট হর্ন বাজাতে বাজাতে স্টেশনের বাইরে এসে দাঁড়াল।

আগন্তুক বললেন, “ঐ তো এসে গিয়েছে আমার গাড়ি। চলি মগনলালজি!”

মগনলাল মেঘরাজ বললেন, “ওকে মিস্টার মিটার! ভালো থাকবেন। আঙ্কেল আর কাজিনকে আমার ভালোবাসা জানাবেন!”

আগন্তুক আর কথা না বাড়িয়ে এগিয়ে গেলেন সবুজ অ্যাম্বাসাডারটার দিকে।

তারপর গাড়ির দরজা খুলে সামনের সীটে বসলেন।

পেছনের সীট এ বসে থাকা প্রখ্যাত রহস্য রোমাঞ্চ ঔপন্যাসিক লালমোহন গাঙ্গুলী ওরফে জটায়ু বললেন, “পথে কোনো সমস্যা হয় নি তো ফেলুবাবু?”

ফেলুদা বলল, “তা হয় নি। তবে আপনি এই বিচ্ছিরি হর্ণ টা চেঞ্জ করুন শিগগিরি! নাহলে ২১, রজনী সেন রোডে আপনার গাড়ি ঢোকা বন্ধ!”

লালমোহনবাবু বললেন, “হেঁ হেঁ। বাই দি বাই, আপনি প্রখর রুদ্রর নতুন অ্যাডভেঞ্চারটা পড়েছেন নাকি?”

ফেলুদা বলল, “নতুন? কবে বেরোলো?”

লালমোহনাবু বললেন, “এই তো পুজোতে। তপেশ কে দিয়েছিলুম তো! আটলান্টায় আতঙ্ক!”

ফেলুদা ভুরু কুঁচকে বলল, “আটলান্টা?”

লালমোহনবাবু বললেন, “আটলান্টা জানেন না? জলের তলায় একটা আলাদা রাজ্য। সেখানে আলাদা রাজা, রানী আছে। প্রচুর মানুষ রয়েছে। সেইখানে নিয়ে গিয়ে ফেলেছি এবার প্রখর রুদ্র কে!”

ফেলুদা ভুরুটা এখনও কুঁচকোনো! সে বলল, “সে তো আটলান্টিস! আটলান্টা তো আমেরিকাতে। জর্জিয়ার সবচেয়ে জনবহুল শহর আটলান্টা!”

লালমোহনবাবু জিভ কাটলেন! বললেন, “ইস! তাই নাকি? যাতা ব্লাণ্ডার করে ফেলেছি তাহলে!”

ফেলুদা বলল, “ঠিক আছে। পরের এডিশনে শুধরে নেবেন!”

লালমোহনবাবু হাসলেন। ফেলুবাবু একটুও বদলায় নি! এবার আর ওর গল্প নিয়ে কোনো চিন্তা নেই। পান্ডুলিপি প্রকাশকের কাছে পাঠানোর আগে একবার শুধু ওঁকে দেখিয়ে নেবেন। তাহলেই আর কোনো সমস্যা থাকবে না! শুধু তপেশটার জন্যই খারাপ লাগছে! সে বেচারা তার ফেলুদা কে বড্ড মিস করবে!

বিদায় ফেলুদা

Arnab Mondal


হিজিবিজি লেখা আর বিরিয়ানি নিয়ে Phd করছি আর আকাশবাণী কলকাতায় নিজের কন্ঠস্বর ভাড়া দিয়ে সংসার চালাচ্ছি।


Post navigation


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কপি করবেন না দাদা/দিদি