– শুভ বিজয়া! ভালো থাকিস!
– শুভ বিজয়া!
– কেমন আছিস?
– কী শুনতে চাস বল!
– সত্যি টা!
– তোকে মিথ্যে কবে বলেছি আমি!
– তাহলে বল না.. কেমন আছিস?
– আছি একটু অন্যরকম।
– মানে?
– মানে মাঝে মাঝে এত ভালো আছি যে এত ভালো কখনও থেকেছি বলে মনে হয় না! আবার মাঝে মাঝে এত যন্ত্রনার মধ্যে রয়েছি যে মনে হচ্ছে এর চেয়ে মৃত্যু কি সহজ হত?
– মৃত্যু কখনই সহজ হয় না রে। মৃত্যুর কথা মুখে বলা যতটা সহজ, মৃত্যু ব্যাপারটা তার চেয়ে অনেক কঠিন! বিশ্বাস কর আমার চেয়ে ভালো কেউ জানেনা!
– হুম। কিন্তু এই চিন্তাটা মাথায় আসছে মানে বুঝতেই পারছিস কেমন আছি!
– পারছি!
– অদ্ভুত ব্লক চলছে মাথার মধ্যে! লিখতে পারছি না জানিস।
– কেন? এটা কবে থেকে?
– হয়ে গেল অনেক মাস। মাথার মধ্যে কনসেপ্ট আছে বেশ অনেকগুলোই। কিন্তু সাজাতে পারছি না। এটার জন্যেই মাঝে মাঝে বড্ড কষ্ট হচ্ছে। মনে হচ্ছে তোর সাথে সাথে লেখা আমাকে ছেড়ে চলে গেল!
– মানে বলছিস আমি চলে যাওয়ার পর থেকে এই সমস্যাটা শুরু হয়েছে?
– হুম। তারপর থেকেই।
– একটা স্টেবল লাইফে না গেলে হয়ত লেখা আসবে না জানিস তো! যেটা তোর এখন নেই। বড্ড চড়াই-উতরাই এর মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে তোকে।
– কি জানি। আর আসবে কিনা তাও জানিনা।
– আসবে আসবে। একটা ভালো মানুষ কে আসতে দে। লেখাও আসবে!
– সিরিয়াসলি? লেখা আসাটা গার্লফ্রেণ্ড আসার ওপর নির্ভর করবে নাকি বাল?
– ব্যাপারটা ঠিক তা না। তোকে এতদিন চিনি তো! সেই কারনেই বললাম কথাটা।
– মানে? বুঝলাম না।
– You can’t function alone. তুই একা কখনও ভালো থাকিস না। তোর সাথে একটা মানুষ থাকলে তবেই তুই ভালো থাকিস। তাকে আলাদা করে কিছু করতে হয় না। জাস্ট তোর হাতটা শক্ত করে ধরে থাকতে হয়! তাহলেই তুই সব ঠিক ঠাক করিস!
– কীসব বলছিস বল তো?
– ঠিকই বলছি! এত বছর তোকে দেখছি। মনে করে দ্যাখ স্কুলে পড়ার সময় তোর লাইফে একজন ছিল। তুই ভালো রেজাল্ট করে স্কুল থেকে বেরোলি। তোর ব্রেক আপ হল। তুই ফার্স্ট ইয়ারে পুরো ঘেঁটে গেলি। একটা ইয়ার লস হল। সব ওলট পালট হয়ে গেল তোর…
– কিন্তু-
– দাঁড়া। আমাকে শেষ করতে দে.. তুই সাবজেক্ট চেঞ্জ করলি। আমি এলাম তোর লাইফে। তুই কী রেজাল্ট করলি তোর মনে আছে? গ্র্যাজুয়েশনে কলেজ টপার। ইউনিভার্সিটি র্যাংক ৩. এম.এ তেও দারুন পারফর্ম করলি। চাকরি পেলি পর পর অনেকগুলো। বই বেরোলো বেশ কয়েকটা। তারপর আবার আমি চলে গেলাম তোকে ছেড়ে! এখন তোর কী অবস্থা খেয়াল কর!
– wow!!!
– কী?
– এভাবে তো ভেবে দেখিনি!
– স্বাভাবিক। তোকে তোর নিজের থেকে আমরা মানে তোর এক সময়ের কাছের মানু্ষরা বেশী ভালো চিনি।
– হুম। বুঝলাম।
– এই আজ তো দশমী!
– হ্যাঁ তো?
– ক্লাবে যাস নি? প্রত্যেকবার যাস তো!
– নাহ। আজ আর ইচ্ছে করল না। মা,বাবা, বোন গেছে…
– একটা স্টেবল লাইফে আয়। নাহলে ভালো থাকবি না রে।
– সেটার রাস্তাই তো খুঁজছি। পাচ্ছি কই!
– কী সমস্যা হচ্ছে?
– ঘেঁটে ফেলছি সবটা আমি! উল্টোদিকের মানুষটাকে ভালো রাখতে পারছি না।
– কেন পারছিস না?
– জানিনা। কিন্তু আমি আপ্রান চেষ্টা করছি বিশ্বাস কর। সবটুকু দিয়ে ভালোবাসছি। তাও পারছি না!
– ভালোবাসা হয়ত সব সময় যথেষ্ট নয়! কখনও মানু্ষের আরও কিছু প্রয়োজন হয় যেটা ভালোবাসা দিতে পারে না!
– কী?
– একটা মানুষকে বুঝতে হয়। নিজের দুঃখ কষ্টের উর্ধ্বে গিয়ে তার দুঃখ কষ্ট কে প্রায়োরিটি দিতে হয়। নাহলে আর তুই কীসের পার্টনার হলি?
– কিন্তু সেটা সব সময় একতরফা কেন হবে? সব সময় আমাকেই কেন বুঝতে হবে একটু বলবি? উল্টোদিকের মানুষটা কি আমার কষ্টটা একটুও বুঝবে না?
– এই তো! তার মানে কি তুই কিছু পাওয়ার জন্য ভালোবাসছিস? নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসতে পারছিস না কেন? কিছু পাওয়ার আশা না করে। ভালোবাসা মানে কি শুধু নিজে ভালো থাকা নাকি? ভালোবাসা মানে তো উল্টোদিকের মানুষটাকেও ভালো রাখা। তাই না?
– তুই এত জ্ঞানপাপী কবে হলি বল তো?
– আমি চিরকালই ছিলাম এরকম। তুই দেখতে পাস নি!
– শোন না…
– Thank you…
– কীসের জন্য?
– কিচ্ছু ভালো লাগছিল না! তাও যেন একটু ভালো লাগছে। জানি একটু পর থেকে আবার কষ্ট হবে। তাও এই মুহুর্তে যেন ইট্টু ইট্টু ভালো আছি!
– ইট্টু ইট্টু নাকি? ঢং! এসব আবার কোত্থেকে শিখলি?
– আরে ও বলে যখন তখন খুব সুইট লাগে। তাই ভাবলাম আমিও বলার চেষ্টা করি!
– ‘ও’ টা কে সেটা যদিও আমি জানিনা। কিন্তু তোকে একটুও সুইট লাগছেনা বিশ্বাস কর।
– -_-
– যাই হোক… আমি যাই… পরলোক থেকে ইহলোকে কথা বলতে বেশ চাপ পড়ে শরীরে!
– হুম। তুই ঠিক আছিস তো ওখানে?
– বাসটা যখন খাদে উলটে পড়ে তখন আমার একটা আঙুল কোনোভাবে আলাদা হয়ে যায় শরীর থেকে! ওটাই একটা আক্ষেপ! নাহলে ভালো আছি! বিজয়া তে তোকে খুব মনে পড়ল। তাই…
– সাবধানে থাকিস! মাঝে মাঝে কথা বলিস!
– চেষ্টা করব! আসি!
– হুম। আয়!
Secular Weirdo
Personal blog of Arnab Mondal