ভালো করে ঘোষনাটা শুনল আর একবার সে। নাহ তার ডাক এখনও আসেনি। আর একটু পরেই আসবে হয়ত! ঘড়ির দিকে একবার দেখল সে। সাড়ে দশটা বাজে।
আর একটু। আর একটু পরেই….

“কী হল তোর? কোথায় যাচ্ছিস” সেদিন চেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করেছিল অভ্রনীল! অভিষিক্তা উত্তর দেয়নি! ঝড়ের বেগে এগিয়ে গিয়েছিল সে রাস্তার দিকে।

অভ্রও দৌড়েছিল ওর পেছনে! রাস্তায় নেমে তখন সে তীরবেগে দৌড়োচ্ছে!
“কী হয়েছে তোর? বল না। এই! চলে যাচ্ছিস কেন?” আবার জিজ্ঞেস করেছিল অভ্র।

অভিষিক্তা তাও গতি থামায় নি। অভ্র আর থাকতে না পেরে চেঁচিয়ে বলে উঠেছিল, “আমায় মিথ্যে ভয় দেখিয়ে ডেকে এনে এখন এরকম নাটক করছিস কেন?”

কথাটা শুনেই থেমে গিয়েছিল অভিষিক্তা! ঘুরে বলেছিল, “কী?”

“এক্সকিউজ মি! আপনার ব্যাগ টা কাইন্ডলি…”
একটা অচেনা গলার আওয়াজে সম্বিৎ ফিরল ওর।
ওহ হ্যাঁ! তাই তো! ওর ব্যাগ টা পাশের চেয়ারে রেখে দিয়েছিল ও।
“হ্যাঁ সরি!” বলে ব্যাগটা সরিয়ে নিয়েছিল ও!

“সরি” কত সহজলভ্য একটা শব্দ! মাঝে মাঝে ম্যাজিকের মত কাজ করে! অথচ সেদিনে যেন এটার কোনো এফেক্টই বুঝতে পারল না সে!

“যদি চলেই যাবি তাহলে ডাকলি কেন মিথ্যে কথা বলে?” একটু জোরেই বলেছিল অভ্রনীল!
অভিষিক্তা বলেছিল, “আমি ডাকিনি! আমি জানিও না তোকে কখন ফোন করা হয়েছে!”
– ওহ তাই বল! আমি তাই ভাবলাম তুই ডেটে এসে আমায় কেনই বা ফোন করবি!
– আমি তো তাল ডেটে এসেছি। তুই তো বেডরুমে গিয়ে লাগিয়ে নিলি রে!
– মানে?
– মানে? মানে বুঝিস না ন্যাকাচোদা? সৃজিতা কী করছিল তোর সাথে? যোগব্যায়াম?

অভ্র বলল, “দেখ ও এসেছিল এটা সত্যি! কিন্তু আমরা কিছু…
” জাস্ট শাট দ্য ফাক আপ! ওকে? কতটা গান্ডু ভাবিস তুই আমাকে?” অভিষিক্তা চেঁচিয়ে বলল।

ফোন বাজছে ওর। ঘোরটা হঠাৎ কেটে গেলো ফোনের আওয়াজে! ও ধরবে না ফোনটা! কী হবে ধরে? কোনো কথা তো বলার নেই আজ আর। শোনারও নেই কিছু!

যেটার জন্য অপেক্ষা করছিল সেই ঘোষনাটা শোনা গেল এবার! এবার যাওয়ার পালা! অনেকটা দূরে। ওর নাগালের বাইরে!

অভ্র একটা শেষ চেষ্টা করেছিল সেদিন। বলেছিল, “প্লিজ আমার কথাটা শোন তুই। যাই ঝামেলাই হোক, আমরা দু’জনে সব মিটিয়ে নিতে পারব! সব ঠিক হয়ে যাবে!”

অভিষিক্তা বলল, “নারে আর কখনও কিছু ঠিক হবে না! আজকের আগে আমি ভাবছিলাম ঠিক হয়ে যাবে সব! কিন্তু আমি জানি হবে না। আজ আমি শিওর!”

– সৃজিতার সাথে আমি…

অভিষিক্তা বলল, “সৃজিতা, সুদীপ্ত এরা সমস্যা নয় রে। সমস্যা আমরা। সমস্যা হল আমাদের সম্পর্ক! যে সম্পর্কে একবার বিষ ঢুকে আয় সেই সম্পর্ককে বাঁচানো যায় না! আমাদের সম্পর্কটা আর সুস্থ নেই রে! বিষে বিষে নীল হয়ে গেছে!”

এরপর আর কিছু বলতে পারে নি সুদীপ্ত! অভিষিক্তা চলে গেল অন্ধকার রাস্তা ধরে!

ব্যাগ নিয়ে উঠে পড়ল সে! আর দেরী করা যাবে না। ফোনে একটা মেসেজ ঢুকল ওর। তাতে লেখা- এতটা না করলেই পারতিস!

ও রিপ্লাই করল না। প্ল্যাটফর্মে গিয়ে উঠে বসল ট্রেনে। জানলা থেকে বাইরের দিকে তাকিয়ে একবার ভাবলো ও কী আসবে? একবার শেষ চেষ্টা কি করবে?

পুনের এই কোম্পানীতে অনেকদিন আগেই সিভি পাঠিয়েছিল অভ্র। এরকম একটা সময়ে উত্তর আসবে ও ভাবেনি! মাইনে অবশ্য খুব কম! সে অসুবিধে নেই। কলকাতা শহর থেকে দূরে যাওয়া নিয়ে কথা! অভিষিক্তার থেকে দূরে যাওয়া দরকার! অনেকটা দূরে!

জানলা দিয়ে হঠাৎ চেনা একটা মুখকে সামনে দেখে প্রথমটায় চমকে গিয়েছিল অভ্র। আসলে একটা ঘোরের মধ্যে রয়েছে ও আজ সারাদিন!

জানলার বাইরে দাঁড়িয়ে অভিষিক্তা বলল, “যেতে কী হবেই?”

অভ্র ম্লান হাসল। বলল, “তুই আবার আসতে গেলি কেন?”

অভিষিক্তা বলল, “ফোনটাও তো তুললি না। মেসেজেরও রিপ্লাই করলি না। ট্রেনে উঠতে গিয়ে ট্রেনে কাটা পড়লি কিনা দেখতে হবে না?”
অভ্র বললো, “ভাবিস না অত!”

অভিষিক্তা বলল, “তাহলে আর চেষ্টাও করবি না বল?”

অভ্র বলল, “লাভ নেই রে! আর ঠিক হবে না!”

অভিষিক্তা বলল, “এতটা শিওর?”

– হ্যাঁ।
– বুঝলাম!

ট্রেনের বাঁশি বেজে উঠল এই সময়। এতক্ষন খুব শক্ত থাকার চেষ্টা করছিল অভিষিক্তা। কিন্তু আর থাকতে পারল না। আকুতির স্বরে বকে উঠল, “প্লিজ যাস না তুই!”

গলাটা ভেঙে গেল ওর। অভ্রর চোখেও জল। সেটা লুকোতে ও মুখটা ঘুরিয়ে নিল অন্যদিকে।

ট্রেন ততক্ষনে ছেড়ে দিয়েছে!

(শেষ)

বিষে বিষে নীল – পঞ্চম পর্ব

Arnab Mondal


হিজিবিজি লেখা আর বিরিয়ানি নিয়ে Phd করছি আর আকাশবাণী কলকাতায় নিজের কন্ঠস্বর ভাড়া দিয়ে সংসার চালাচ্ছি।


Post navigation


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কপি করবেন না দাদা/দিদি