–        জেগে আছিস?

–        হ্যাঁ। বল।

–        ওহ আছিস? আমি ভাবলাম ঘুমিয়ে পড়েছিস।

–        নাহ। ঘুমোইনি। কিছু বলবি?

–        হুম। বলছি। এত রাতে জেগে? কী ব্যাপার?

–        কমিক্স পড়ছি একটা।

–        কী কমিক্স? আবার টিনটিন গুলো রিপিট করছিস নাকি?

–        না না। টিনটিন না। The Cobrapost Affair নাম। নতুন বেরিয়েছে দেখলাম। কিনে নিলাম।

–        ভালো?

–        হ্যাঁ আপাতত খারাপ লাগছে না। সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতি থেকে শুরু করে তালিবান দের খুন খারাপি সব কিছুই রেখেছে দেখছি।

–        বুঝলাম। পড়ব!

–        তুই কমিক্স পড়বি?

–        কেন? টিনটিন পড়িনি?

–        আহ! সেতো আমার পাল্লায় পড়ে! ছাড় বাদ দে। কী বলছিলি যেন?

–        ওহ হ্যাঁ। বলছিলাম যে কাল আমি মান্দারমনি যাচ্ছি!

–        হ্যাঁ তো? আমি কী করব?

–        না। মানে মা তোকে ফোন করলে বলিস যে আমি দিল্লী গেছি। অফিসের কাজে। তোর সাথে থাকবো!

–        তুই এবার কাকিমা কে বলে দে ভাই! আর কতদিন ডিভোর্স এর ব্যাপার টা…

–        নাহ। প্লিজ না। মা তোকে খুব ভালোবাসে। ভরসা করে। ওটা ভাঙতে চাই না। আর ক’টা বছর সহ্য কর। মায়ের শরীর এমনিই খারাপ।

–        তোর আর আমার ডিভোর্স হয়েছে ২ বছর হয়ে গেল? কী বলিস কাকিমা কে? আমি তোর সাথে থাকি না কেন?

–        ওই তো! তোর প্রোমোশন হয়েছে। তুই দিল্লীতে রয়েছিস!

–        ওই তো চাকরি তার আবার প্রোমোশন! ঠিক আছে। আমি ম্যানেজ করে দেবো ফোন করলে। কাল কখন যাবি?

–        সকালেই।

–        সন্দীপ যাচ্ছে তো?

–        হ্যাঁ।

–        ঠিক আছে। সাবধানে যাস!

–        আর কিছু বলবি না?

–        মানে? আর কী বলব?

–        কিছু না ছাড়!

–        আরে বল! কী শুনতে চাইছিস?

–        কিচ্ছু শুনতে চাইছি না। চল ঘুমোই আমি! কাল খুব সকালেই বেরোনো!

–        আচ্ছা বেশ। Good Night.

(খুব সকালে ফোন বাজে)

–        হ্যালো!

–        (ঘুম জড়ানো গলায়) হুঁ? কে?

–        অদ্রীশ আমি বলছি।

–        আমিটা কে?

–        আমি কাকিমা বলছি। রুনুর মা।

–        ওহ হ্যাঁ। কাকিমা… সরি… (গলা ঝেড়ে) হ্যাঁ। বলুন।

–        সরি তোমার ঘুম ভাঙালাম এত সকালে।

–        না না। ঠিক আছে। বলুন।

–        রুনু তো বেরোলো একটু আগেই।

–        কে? রুক্মিনী তো? হ্যাঁ। জানি। মানে কাল কথা হয়েছে। সকালেই তো ওর ফ্লাইট!

–        ওহ আচ্ছা। তোমার সাথেই থাকবে তো?

–        হ্যাঁ। আমার সাথেই। আবার কী?

–        একটা কথা জিজ্ঞেস করব অদ্রীশ?

–        হ্যাঁ কাকিমা বলুন না।

–        বলছি যে তোমার কী তাহলে দিল্লী থেকে মান্দারমনি তে ট্র্যান্সফার হল?

–        হ্যাঁ কী? মানে? বুঝলাম না… ইয়ে… এসব কেন…

–        শোনো বাবা, তুমি আমার ছেলের মত। তোমায় একটা কথা বলি। মা এর কাছে একটা মিথ্যে নিয়ে দিনের পর দিন থাকা যায় না।

–        সরি কাকিমা। আসলে ও আমাকে…

–        ডিভোর্স দিয়েছে তো? আর তুমি কিছু করোনি বলছ?

–        নাহ! আমি তো করেইছি। সারাক্ষন অফিস অফিস করতাম… তারপর…

–        শোনো তোমাদের ডিভোর্স কেন হয়েছে? কার কী দোষ সেটা জানার জন্য আমি ফোন করিনি। তোমাকে শুধু একটা কথাই বলার…

–        কী?

–        ওই সন্দীপ ছেলেটাকে আমার ভালো লাগে না!

–        না কাকিমা। ছেলেটা এমনি খারাপ না। আমার এমনি আলাপ নেই কিন্তু…

–        সে তুমি আমাকে হাজারটা যুক্তি দিলেও আমি মানবো না। ছেলেটা সুবিধের না। কিন্তু মেয়েটা তো আমার নিজের। সুতরাং আমার চিন্তা আমার হবেই। সেই কারনেই তোমাকে ফোন করা। একটু খেয়াল রেখো।

–        কি খেয়াল রাখবো কাকিমা? আপনি তো চেনেন ওকে। আমায় কিছু বলবেই না। যা ইচ্ছে হবে তাই করবে!

–        নিশ্চয় করবে। কেউ বারণ করেনি। কিন্তু সাবধানে করুক। ভুল নৌকোয় পা ফেললেই কিন্তু অথৈ জলে পড়ে যাবে!

–        আমি কী করতে পারি বলুন? ওর জীবন ও বেছে নিয়েছে।

–        মান্দারমনি যাবে?

–        অ্যাঁ? কী?

–        মান্দারমনি? যাবে?

–        না মানে? কেন? একি? ওর পিছু নিতে বলছেন?

–        নিতেই পারো। কোন হোটেলে থাকছে আমি জানি। আমি বলে দিচ্ছি তোমাকে।

–        আচ্ছা আপনি আমাদের ডিভোর্সের কথা জানলেন কীভাবে একটু বলবেন?

–        সব জানতে পারবে পরে। আগে বলো মান্দারমনি যাবে কিনা!

–        সেটা বোধহয় উচিত হবে না কাকিমা। ও ঘুরতে গেছে ওর বয়ফ্রেন্ডের সাথে আমি কেন শুধু শুধু…

–        আরে থামো তো! ও স্কুলে পড়ার সময় ওরকম প্রচুর বয়ফ্রেন্ডকে আমি কাটিয়েছি।

–        প্রচুর মানে? ২ জন তো?

–        অত কথার সময় নেই। ও কিন্তু বেরিয়ে গেছে গাড়ি নিয়ে। সন্দীপ নিতে এসেছিল। আমি দেখেছি। তুমি যাবে কিনা বলো!

–        (একটু ভেবে) না কাকিমা। I’m Sorry. এটা ঠিক না। ওর জীবন ওকে বুঝে নিতে দিন। আমাদের Interfere করা ঠিক না। আর যেটা শেষ হয়ে গিয়েছে সেটাকে শুধু শুধু…

–        আরে ধুর পাগল! শেষ থেকেই তো শুরু হয়! তোমরা আজকালকার ছেলে মেয়েরা এসব আর বুঝবে না। ঠিক আছে ছাড়ো! তোমার দ্বারা হবে না। ভীতুর ডিম একটা!

–        কী বললেন?

–        কিছু না। রাখলাম বাবা! কিছু মনে কোরো না!

–        হ্যালো.. অদ্রীশ!

–        হ্যাঁ কে?

–        রুক্মিনী বলছি...

–        এটা কার নাম্বার?

–        এখানে একটা রেস্টুরেন্ট থেকে ফোন করছি।

–        কেন? তোর ফোন কী হল?

–        সে অনেক ব্যাপার! তুই কী একটু আসতে পারবি?

–        মানে? কোথায় আসব? কেন?

–        এরা বলল জায়গাটার নাম চাউলখোলা! আমার কাছে ফোন, পার্স কিছু নেই। শুধু তোর নাম্বার মুখস্থ ছিল তাই তোকেই ফোন করছি রেস্টুরেন্ট থেকে। তুই কি একটু আসতে পারবি?

–        এই শোন! কী হয়েছে স্পষ্ট করে বল। নাহলে আমি কোথাও যেতে পারব না! সন্দীপ কোথায়? অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে নাকি কিছু?

–        আরে ধুর বাল! লোকের ফোন থেকে ফোন করছি এখানে। তুই আসতে পারবি কী?

–        আগে বল কী হয়েছে? নাহলে যেতে পারব না!

–        আসতে হবে না। ভাগ! আমি দেখছি কী করা যায়!

–        হ্যালো… হ্যালো… যাহ শালা কেটে দিলি?

(আবার কলব্যাক করে)

–        হ্যালো?

–        হঁ! ক্যা?

–        ওই যিনি ফোন করছিলেন তাকে একবার দিন তো ফোন টা?

–        অ দিদি! ফন লিন!

–        …

–        হ্যালো…

–        অদ্রীশ বলছি।

–        হ্যাঁ কী হয়েছে? বল না।

–        সন্দীপ আমায় মাঝপথে নামিয়ে চলে গেছে। খুশি?

–        মানে? কেন?

–        কাল রাত্রে তোকে মেসেজ করেছিলাম তাই।

–        তো কী হয়েছে?

–        তো কী হয়েছে আমায় জিজ্ঞেস করছিস কেন? ওর নাম্বার দেবো? ওকে বলবি?

–        (দীর্ঘশ্বাস ফেলে) আমার যেতে সময় লাগবে।

–        জানি। পারলে আয়। জোরজবরদস্তির কিছু নেই।

–        হুম। আসছি। রেস্টুরেন্টের নাম কী?

–        Blue Velvet!

–        বাপরে! কী নাম! ঠিক আছে। বোস ওখানে। আসছি আমি।

–        Okay. Thank you.

–        হ্যালো মা?

–        হ্যাঁ রুনু বল!

–        হয়েছে!

–        তাই সত্যি? ও আসছে?

–        হ্যাঁ। আসছে বলল।

–        সন্দীপের সাথে যে তোর অনেক আগেই ব্রেকআপ হয়েছে সেটা কোনোভাবে জানতে পারবে না তো পরে?

–        নাহ পারবে না। চাপ নিও না তুমি।

–        আমি কেন চাপ নেবো? আমিই তো প্ল্যান বাতলে দিলাম তোকে! তোরা দু’টোই তো ভীতু।

–        আমি ভীতু নই মা।

–        থাক। হয়েছে! কতবার বললাম ফিরে যা ওর কাছে। গেলি না! শেষ পর্যন্ত সেই ঘুরিয়ে নাক দেখানো হল!

–        বাদ দাও ওসব। ও আসুক। তারপর দেখা যাবে!

–        কিচ্ছু দেখা যাবে না। ৩ দিন মান্দারমনি তে কাটিয়ে তারপর ফিরবি!

–        মানে? একি? না না! ওসব হয় না!

–        বেশী ন্যাকামো করিস না। তিনদিনের আগে বাড়ি এলে সব বলে দেবো ওকে আমি।

–        মা এটা কিন্তু ঠিক করছো না তুমি!

–        চুপ কর। আর বাড়াবাড়ি করিস না। উফফ! এই বয়সে এসেও হাড় জ্বালিয়ে খেলো। নিজেরা ঝগড়া করবে আর আমাকে ঠিক করতে হবে।

–        আর বলব না তোমাকে যাও!

–        হ্যাঁ হ্যাঁ দেখা যাবে!

শেষ থেকে শুরু

Arnab Mondal


হিজিবিজি লেখা আর বিরিয়ানি নিয়ে Phd করছি আর আকাশবাণী কলকাতায় নিজের কন্ঠস্বর ভাড়া দিয়ে সংসার চালাচ্ছি।


Post navigation


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কপি করবেন না দাদা/দিদি