১
– জেগে আছিস?
– হ্যাঁ। বল।
– ওহ আছিস? আমি ভাবলাম ঘুমিয়ে পড়েছিস।
– নাহ। ঘুমোইনি। কিছু বলবি?
– হুম। বলছি। এত রাতে জেগে? কী ব্যাপার?
– কমিক্স পড়ছি একটা।
– কী কমিক্স? আবার টিনটিন গুলো রিপিট করছিস নাকি?
– না না। টিনটিন না। The Cobrapost Affair নাম। নতুন বেরিয়েছে দেখলাম। কিনে নিলাম।
– ভালো?
– হ্যাঁ আপাতত খারাপ লাগছে না। সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতি থেকে শুরু করে তালিবান দের খুন খারাপি সব কিছুই রেখেছে দেখছি।
– বুঝলাম। পড়ব!
– তুই কমিক্স পড়বি?
– কেন? টিনটিন পড়িনি?
– আহ! সেতো আমার পাল্লায় পড়ে! ছাড় বাদ দে। কী বলছিলি যেন?
– ওহ হ্যাঁ। বলছিলাম যে কাল আমি মান্দারমনি যাচ্ছি!
– হ্যাঁ তো? আমি কী করব?
– না। মানে মা তোকে ফোন করলে বলিস যে আমি দিল্লী গেছি। অফিসের কাজে। তোর সাথে থাকবো!
– তুই এবার কাকিমা কে বলে দে ভাই! আর কতদিন ডিভোর্স এর ব্যাপার টা…
– নাহ। প্লিজ না। মা তোকে খুব ভালোবাসে। ভরসা করে। ওটা ভাঙতে চাই না। আর ক’টা বছর সহ্য কর। মায়ের শরীর এমনিই খারাপ।
– তোর আর আমার ডিভোর্স হয়েছে ২ বছর হয়ে গেল? কী বলিস কাকিমা কে? আমি তোর সাথে থাকি না কেন?
– ওই তো! তোর প্রোমোশন হয়েছে। তুই দিল্লীতে রয়েছিস!
– ওই তো চাকরি তার আবার প্রোমোশন! ঠিক আছে। আমি ম্যানেজ করে দেবো ফোন করলে। কাল কখন যাবি?
– সকালেই।
– সন্দীপ যাচ্ছে তো?
– হ্যাঁ।
– ঠিক আছে। সাবধানে যাস!
– আর কিছু বলবি না?
– মানে? আর কী বলব?
– কিছু না ছাড়!
– আরে বল! কী শুনতে চাইছিস?
– কিচ্ছু শুনতে চাইছি না। চল ঘুমোই আমি! কাল খুব সকালেই বেরোনো!
– আচ্ছা বেশ। Good Night.
২
(খুব সকালে ফোন বাজে)
– হ্যালো!
– (ঘুম জড়ানো গলায়) হুঁ? কে?
– অদ্রীশ আমি বলছি।
– আমিটা কে?
– আমি কাকিমা বলছি। রুনুর মা।
– ওহ হ্যাঁ। কাকিমা… সরি… (গলা ঝেড়ে) হ্যাঁ। বলুন।
– সরি তোমার ঘুম ভাঙালাম এত সকালে।
– না না। ঠিক আছে। বলুন।
– রুনু তো বেরোলো একটু আগেই।
– কে? রুক্মিনী তো? হ্যাঁ। জানি। মানে কাল কথা হয়েছে। সকালেই তো ওর ফ্লাইট!
– ওহ আচ্ছা। তোমার সাথেই থাকবে তো?
– হ্যাঁ। আমার সাথেই। আবার কী?
– একটা কথা জিজ্ঞেস করব অদ্রীশ?
– হ্যাঁ কাকিমা বলুন না।
– বলছি যে তোমার কী তাহলে দিল্লী থেকে মান্দারমনি তে ট্র্যান্সফার হল?
– হ্যাঁ কী? মানে? বুঝলাম না… ইয়ে… এসব কেন…
– শোনো বাবা, তুমি আমার ছেলের মত। তোমায় একটা কথা বলি। মা এর কাছে একটা মিথ্যে নিয়ে দিনের পর দিন থাকা যায় না।
– সরি কাকিমা। আসলে ও আমাকে…
– ডিভোর্স দিয়েছে তো? আর তুমি কিছু করোনি বলছ?
– নাহ! আমি তো করেইছি। সারাক্ষন অফিস অফিস করতাম… তারপর…
– শোনো তোমাদের ডিভোর্স কেন হয়েছে? কার কী দোষ সেটা জানার জন্য আমি ফোন করিনি। তোমাকে শুধু একটা কথাই বলার…
– কী?
– ওই সন্দীপ ছেলেটাকে আমার ভালো লাগে না!
– না কাকিমা। ছেলেটা এমনি খারাপ না। আমার এমনি আলাপ নেই কিন্তু…
– সে তুমি আমাকে হাজারটা যুক্তি দিলেও আমি মানবো না। ছেলেটা সুবিধের না। কিন্তু মেয়েটা তো আমার নিজের। সুতরাং আমার চিন্তা আমার হবেই। সেই কারনেই তোমাকে ফোন করা। একটু খেয়াল রেখো।
– কি খেয়াল রাখবো কাকিমা? আপনি তো চেনেন ওকে। আমায় কিছু বলবেই না। যা ইচ্ছে হবে তাই করবে!
– নিশ্চয় করবে। কেউ বারণ করেনি। কিন্তু সাবধানে করুক। ভুল নৌকোয় পা ফেললেই কিন্তু অথৈ জলে পড়ে যাবে!
– আমি কী করতে পারি বলুন? ওর জীবন ও বেছে নিয়েছে।
– মান্দারমনি যাবে?
– অ্যাঁ? কী?
– মান্দারমনি? যাবে?
– না মানে? কেন? একি? ওর পিছু নিতে বলছেন?
– নিতেই পারো। কোন হোটেলে থাকছে আমি জানি। আমি বলে দিচ্ছি তোমাকে।
– আচ্ছা আপনি আমাদের ডিভোর্সের কথা জানলেন কীভাবে একটু বলবেন?
– সব জানতে পারবে পরে। আগে বলো মান্দারমনি যাবে কিনা!
– সেটা বোধহয় উচিত হবে না কাকিমা। ও ঘুরতে গেছে ওর বয়ফ্রেন্ডের সাথে আমি কেন শুধু শুধু…
– আরে থামো তো! ও স্কুলে পড়ার সময় ওরকম প্রচুর বয়ফ্রেন্ডকে আমি কাটিয়েছি।
– প্রচুর মানে? ২ জন তো?
– অত কথার সময় নেই। ও কিন্তু বেরিয়ে গেছে গাড়ি নিয়ে। সন্দীপ নিতে এসেছিল। আমি দেখেছি। তুমি যাবে কিনা বলো!
– (একটু ভেবে) না কাকিমা। I’m Sorry. এটা ঠিক না। ওর জীবন ওকে বুঝে নিতে দিন। আমাদের Interfere করা ঠিক না। আর যেটা শেষ হয়ে গিয়েছে সেটাকে শুধু শুধু…
– আরে ধুর পাগল! শেষ থেকেই তো শুরু হয়! তোমরা আজকালকার ছেলে মেয়েরা এসব আর বুঝবে না। ঠিক আছে ছাড়ো! তোমার দ্বারা হবে না। ভীতুর ডিম একটা!
– কী বললেন?
– কিছু না। রাখলাম বাবা! কিছু মনে কোরো না!
৩
– হ্যালো.. অদ্রীশ!
– হ্যাঁ কে?
– রুক্মিনী বলছি...
– এটা কার নাম্বার?
– এখানে একটা রেস্টুরেন্ট থেকে ফোন করছি।
– কেন? তোর ফোন কী হল?
– সে অনেক ব্যাপার! তুই কী একটু আসতে পারবি?
– মানে? কোথায় আসব? কেন?
– এরা বলল জায়গাটার নাম চাউলখোলা! আমার কাছে ফোন, পার্স কিছু নেই। শুধু তোর নাম্বার মুখস্থ ছিল তাই তোকেই ফোন করছি রেস্টুরেন্ট থেকে। তুই কি একটু আসতে পারবি?
– এই শোন! কী হয়েছে স্পষ্ট করে বল। নাহলে আমি কোথাও যেতে পারব না! সন্দীপ কোথায়? অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে নাকি কিছু?
– আরে ধুর বাল! লোকের ফোন থেকে ফোন করছি এখানে। তুই আসতে পারবি কী?
– আগে বল কী হয়েছে? নাহলে যেতে পারব না!
– আসতে হবে না। ভাগ! আমি দেখছি কী করা যায়!
– হ্যালো… হ্যালো… যাহ শালা কেটে দিলি?
(আবার কলব্যাক করে)
– হ্যালো?
– হঁ! ক্যা?
– ওই যিনি ফোন করছিলেন তাকে একবার দিন তো ফোন টা?
– অ দিদি! ফন লিন!
– …
– হ্যালো…
– অদ্রীশ বলছি।
– হ্যাঁ কী হয়েছে? বল না।
– সন্দীপ আমায় মাঝপথে নামিয়ে চলে গেছে। খুশি?
– মানে? কেন?
– কাল রাত্রে তোকে মেসেজ করেছিলাম তাই।
– তো কী হয়েছে?
– তো কী হয়েছে আমায় জিজ্ঞেস করছিস কেন? ওর নাম্বার দেবো? ওকে বলবি?
– (দীর্ঘশ্বাস ফেলে) আমার যেতে সময় লাগবে।
– জানি। পারলে আয়। জোরজবরদস্তির কিছু নেই।
– হুম। আসছি। রেস্টুরেন্টের নাম কী?
– Blue Velvet!
– বাপরে! কী নাম! ঠিক আছে। বোস ওখানে। আসছি আমি।
– Okay. Thank you.
৪
– হ্যালো মা?
– হ্যাঁ রুনু বল!
– হয়েছে!
– তাই সত্যি? ও আসছে?
– হ্যাঁ। আসছে বলল।
– সন্দীপের সাথে যে তোর অনেক আগেই ব্রেকআপ হয়েছে সেটা কোনোভাবে জানতে পারবে না তো পরে?
– নাহ পারবে না। চাপ নিও না তুমি।
– আমি কেন চাপ নেবো? আমিই তো প্ল্যান বাতলে দিলাম তোকে! তোরা দু’টোই তো ভীতু।
– আমি ভীতু নই মা।
– থাক। হয়েছে! কতবার বললাম ফিরে যা ওর কাছে। গেলি না! শেষ পর্যন্ত সেই ঘুরিয়ে নাক দেখানো হল!
– বাদ দাও ওসব। ও আসুক। তারপর দেখা যাবে!
– কিচ্ছু দেখা যাবে না। ৩ দিন মান্দারমনি তে কাটিয়ে তারপর ফিরবি!
– মানে? একি? না না! ওসব হয় না!
– বেশী ন্যাকামো করিস না। তিনদিনের আগে বাড়ি এলে সব বলে দেবো ওকে আমি।
– মা এটা কিন্তু ঠিক করছো না তুমি!
– চুপ কর। আর বাড়াবাড়ি করিস না। উফফ! এই বয়সে এসেও হাড় জ্বালিয়ে খেলো। নিজেরা ঝগড়া করবে আর আমাকে ঠিক করতে হবে।
– আর বলব না তোমাকে যাও!
– হ্যাঁ হ্যাঁ দেখা যাবে!