– এই যে কাকু? আপনার মতলবটা কী?
– ইয়ে? আমার?
– আর না তো কার? তখন থেকে এরকম ফলো করছেন কেন?
– ফলো? কই না তো!
– কই না তো মানে? করছেন তো! বাস থেকে নামার পর থেকেই দেখছি আপনাকে। তিনবার গলি চেঞ্জ করলাম আমি। আপনিও তো দেখলাম তাই করলেন!
– নাহ ঠিক আছে! আমি যাই মা!
– এক পা নড়লে ঠ্যাঙ ভেঙে দেবো! চুপচাপ দাঁড়ান এখানে।
– আচ্ছা দাঁড়াচ্ছি।
– হ্যাঁ এবার বলুন তো! কী মতলব আপনার? আমাকে ফলো করছিলেন কেন?
– মা বলছি, তুমি কি সবসময় এরকম রেগে ব্যোম হয়ে থাকো?
– মানে?
– মানে একটু আগেই দেখলাম বাসে একজন কে বললেন দূরে গিয়ে দাঁড়াতো কারন তার গায়ে গন্ধ!
– হ্যাঁ তো কী করব? ওরকম ছাগলের মত গন্ধ নিয়ে বাসে ওঠে কেন?
– তারপর দেখলাম কন্ডাকটর কে রেগে গিয়ে কিসব বলে দিলে।
– বলব না তো কী? আমাকে বলে আপনারটা দেখি! সোজাসুজি টিকিত চাইতে পারে না হতচ্ছাড়া গুলো।
– সেই জন্যেই জিজ্ঞেস করলাম তুমি কি এরকমই রেগে থাকো সবসময়?
– কেন মশাই? আপনার কী? আপনি আমাকে ফলো করছেন কেন সেটা আগে বলুন তো!
– সে তো বলবই, তা মা, তোমার কি বিয়ে হয়ে গেছে?
– মানে? কেন? আপনি করবেন? ফালতু ঝাঁট কেন জ্বালাচ্ছেন?
– তুমি কিন্তু আমায় বললেন না তুমি সব সময় এরকম রেগে থাকো কিনা?
– না সব সময় থাকি না। কিন্তু Indiscipline মানুষজন দেখলেই আমার মাথা গরম হয়ে যায়!
– বুঝলাম। বলছি মা, তোমার Whatsapp Number টা পাওয়া যাবে?
– মানে? এটা কি ইয়ার্কি হচ্ছে? বয়সে বড় বলে কী যা ইচ্ছে তাই বলবেন নাকি?
– তুমি রেগে যাচ্ছো কেন? আমি খারাপ কথা কিছু বললাম কী?
– আপনি এত কথা বলছেনই বা কেন? আপনার দাবীটা একটু বলুন তো!
– আসলে আমার স্ত্রী যতদিন বেঁচেছিল ততদিন খুব কড়া শাসনে রাখত আমাকে আর বাবুকে। ও তো আর নেই, তাই দু’জনে খুব ছন্নছাড়া হয়ে গেছি! তাই ভাবছিলাম তুমি যদি আমাদের সংসারে আসো মানে বাবুর…
– মা হয়ে?
– অ্যাঁ?
– আপনার বাবুর মা হতে বলছেন কী আমায়?
– না না। একদম না। বৌ হলেই ভালো হয়।
– ওহ আচ্ছা। সরি কাকু নট ইন্টারেস্টেড।
– আমার বাবু খুব ভালো ফটো তোলে।
– তো আমি কী করব? নাচব? যান তো। বিরক্ত করবেন না।
– তোমার কি বয়ফ্রেন্ড আছে মা?
– সেটা জেনে আপনার কী?
– আমার বাবুর ছবি টা যদি একবার…
– বললাম তো নট ইন্টারেস্টেড।
– ঠিক আছে মা। ভালো থেকো! কী আর বলব? আমাদের ভাগ্যটাই খারাপ!


– হ্যালো বাবু…
– হ্যাঁ বলো। কী বুঝলে?
– খুব ভালো মেয়ে রে। তোকে আমাকে বড্ড নিয়মের মধ্যে বেঁধে রাখতে পারবে।
– তাহলে আজকেই অফিসে প্রোপোজ টা করে দেব বলছ?
– করে ফ্যাল। শুভ কাজে দেরী করতে নেই!
– তোমার পছন্দ তো?
– খুব পছন্দ।
– বেশ।
– আর যখন জানবে আমি তোর বাবা! কি করবি?
– বাবা পালটে নেবো!
– কী? তোর জন্য ভীড় বাসে ওঠানামা করে এরকম একটা ভয়ংকর মেয়েকে ফেস করলাম আর তুই বলছিস বাবা পালটে নিবি?
– আরে ধুর! ও ম্যানেজ হয়ে যাবে। এই আমাকে মিটিং এ ডাকছে। যাই আমি।
– ওখানেই প্রোপোজ করবি নাকি?
– ধ্যাত। তুমি না! রাখো এখন।
– আচ্ছা বাবা!


– ম্যাডাম আপনি ডাকছিলেন?
– হ্যাঁ, তোমার বাবা আমার পেছনে লেগেছিল কেন?
– অ্যাঁ? আমার বাবা!
– ন্যাকামো কোরো না। যেটা জিজ্ঞেস করছি উত্তর দাও।
– না আসলে… মানে আপনার সাথে আলাপ করতে চেয়েছিল!
– আলাপ করতে চেয়েছিল তো অফিসে আসতে বলতে পারতে! ওভাবে রাস্তায় কেন?
– আসলে মানে…
– শোনো আমাকে পছন্দ হলে নিজে বলবে। বাবা-কাকা কে ডেকে এনো না। বুঝেছো? দু’দিন পর চুমু খেতে না পারলে কী বাবাকে ডাকবে?
– না। মানে…
– ঠিক আছে যাও।
– বলছি যে…
– হ্যাঁ কী?
– আপনি আজ ফ্রী?
– আমি সবসময় এক্সপেনসিভ! কেন বলো!
– না মানে… আজকে অফিসের পর… মানে…
– বুঝে গেছি। বেরোবার আগে জানিও!
– ^_^ আচ্ছা।

ভয়ংকর সুন্দর

Arnab Mondal


হিজিবিজি লেখা আর বিরিয়ানি নিয়ে Phd করছি আর আকাশবাণী কলকাতায় নিজের কন্ঠস্বর ভাড়া দিয়ে সংসার চালাচ্ছি।


Post navigation


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কপি করবেন না দাদা/দিদি