সময়টা তখন জুলাই এর মাঝামাঝি। অসহ্য গরম। মাথার ওপরের পাখাটা ঘুরেও ঘুরছেনা। অফিসে বসে কয়েকটা প্রুফ চেক করছিলাম। হঠাৎই অমিয়র আভির্ভাব। অমিয় আমার কলেজের বন্ধু। এখন ডাক্তার, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ। এর আগে একবার আমায় ওর এক অদ্ভুত পেশেন্টের ডায়রি দিয়েছিল। যেটা আমার পত্রিকাতে আমি ছেপেও ছিলাম। সে এক অন্য গল্প। যাই হোক আজ ওর এই হঠাৎ আগমনের কারনটা ঠিক বুঝতে পারলাম না।
হাতের ডাক্তারির ব্যাগটা নিচে রেখে আমার সামনে একটা চেয়ার নিয়ে বসতে বসতে বলল, “কিরে? আমায় দেখে অবাক হলি নাকি?”
বললাম, “তা একটু হয়েছি। সেই ‘টেলিপ্যাথেটিক’ এর পর থেকে তো আর পাত্তাও নেই। আর কিছু লেখাও দিলি না আমার পত্রিকার জন্যে।”
“দাঁড়া দাঁড়া। অনেক কথা আছে।” হাত তুলে আমিয় আমার থামবার ইঙ্গিত করে বলল, “তার আগে একটু জল খাওয়া তো। খুব তেষ্টা পেয়েছে”
আমি বেল টিপে রাজু কে ডেকে ২ টো কোকাকোলা আনতে বললাম। তারপর বললাম, “কি ব্যাপার রে? কিছু হয়েছে নাকি?”
অমিয় বলল, “হ্যাঁরে একটা খুব ইন্টারেস্টিং ব্যাপার ঘটেছে। সেটার জন্যেই তোর কাছে আসা। তোর পত্রিকার কাজে লাগবে।”
এরপর আমি একটু নড়ে চড়ে বসলাম। ইতিমধ্যে রাজু দুটি ছোটো কোক দিয়ে গেল। তার একটায় চুমুক দিয়ে অমিয় বলল, “প্রোফেসর শঙ্কুর নাম শুনেছিস?”
সত্যি অমিয় পারেও বটে। আমায় জিজ্ঞেস করছে প্রোফেসর শঙ্কুর নাম শুনেছি কিনা। পত্রিকা নিয়ে কারবার আমার। আর সত্যজিৎ রায়ের অমর সৃষ্টি শঙ্কুর নাম শুনব না?
আমি বললাম, “হ্যাঁরে শুনেছি। কেন?”
“শোন তাহলে!” অমিয় বলতে শুরু করল, “আমার কাছে সম্প্রতি একজন পেশেন্ট এসেছেন যিনি ক্লেম করছেন যে উনি নাকি পূর্ব জন্মে প্রোফেসর শঙ্কু ছিলেন। ওঁর নাকি আগের জন্মের সমস্ত ঘটনা স্পষ্ট মনে আছে। এলিয়েনরা ওকে অন্য গ্রহে নিয়ে গিয়েছিল সেখানে গিয়ে কি কি হয়েছিল ওর সাথে সব ওনার মনে আছে।”
“জাতিস্মর” আমার মুখ দিয়ে হঠাৎ বেরিয়ে গেল।
“Exactly! তবে ওঁর কথা বলতে আমি তোর কাছে আসিনি। খুব মূল্যবান একটা জিনিস ওঁর কাছে আছে অনেকদিন ধরে। সেটা হাতে পেয়েই তোর কাছে ছুটে এলাম।”
“কি সেটা?” আমি প্রশ্ন করলাম।
“একটা ডায়েরি।”
“কার?”
“সেটা বলছি” অমিয় বলল, “তার আগে একটা কথা বল তো? রেডিও কে আবিস্কার করেছেন জানিস?”
একটু ভাবতে হল আমাকে। আসলে জেনারেল নলেজে আমি খুবি কাঁচা। তারপর মনে পড়ল।
বললাম, “মার্কনি কি?”
অমিয় বলল “জানতাম এটাই বলবি। কিন্তু না রে! তোরা সবাই ভুল। রেডিও আবিস্কার করেছেন একজন বাঙালী বিজ্ঞানী। তাঁর নাম জগদীশ চন্দ্র বোস।”
“কি বলছিস রে? কে বলল এসব তোকে?” আমি ভীষন অবাক হয়েই বললাম।
এরপর অমিয় ব্যাগ থেকে একটা নীল রঙের ডায়েরি বের করে টেবিলের ওপর রাখল। তারপর আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, “এটা পড়িস। সব জানতে পারবি।”
ডায়রিটা হাতে নিয়ে বললাম “কার ডায়েরি এটা?”
তারপর ডায়রিটা খুলতেই চমক। দেখলাম ইংরেজীতে খুব সুন্দর হস্তাক্ষরে লেখা আছে – Sri Jagadish Chandra Bose.
বললাম, “এটা তুই কি করে পেলি?”
“আরে ওই ‘শঙ্কু’ ভদ্রলোকের কাছে ছিল। ওনার কাছ থেকেই পেলাম।”
“আর উনি কোথায় পেলেন এটা?”
কোকাকোলার বোতলে শেষ চুমুক দিয়ে টেবিলে বোতলটা নামিয়ে রেখে অমিয় বলল, “এটার পেছনেও একটা ঘটনা বলছেন উনি। ওনাকে আগের জন্মে যে টাফা নামক গ্রহে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সেখানে নাকি ওনার প্রোফেসর জগদীশ বোসের সাথে দেখা হয়েছিল। জগদীশ বোস মারা যাওয়ার পর এলিয়েনরা নাকি তাঁর শরীরকে ওখানে নিয়ে গিয়ে ফের জীবন্ত করে তুলেছিল নিজেদের সুবিধের জন্যে। উনিই ওকে বলে দেন যে ওর এই মূল্যবান ডায়রি কোথায় আছে। সেইমত ওনার নবজন্মে ওই ভদ্রলোক খুঁজে বার করেন এই ডায়েরি।”
“কিছু মনে করিসনা ভাই একটা কথা বলছি” একটু হেসে আমি বললাম, “ব্যাপারটা আমার নিতান্তই গাঁজাখুরি লাগছে। জাতিস্মর-মৃত-সঞ্জীবনী! আজকের যুগে এসব কেউ বিশ্বাস করবে?”
অমিয় ঘাড় নেড়ে বলল, “আমারও যে প্রথমে এটা মনে হয়নি বলব না। তবে ডায়েরিটা পড়ার পর আর মনে হয়নি। তুই পড়িস ডায়েরিটা। আর পছন্দ হলে সৃজনে বের করিস।”
তারপর চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়ল অমিয়। ব্যাগ নিয়ে বেরোবার আগে বলে গেল, “ডায়রিটা কে অবহেলা করিস না। তাতে তোরই ক্ষতি।”
আমি শুধু হেসে মাথা নাড়লাম।
তখন আর কাজের চাপে ডায়েরিটা পড়া হয়ে ওঠেনি। রাত্রে শোবার সময় পড়লাম। শধু পড়লাম বলা ভুল হবে। গোগ্রাসে গিললাম। পাঠকদের জন্য কোনোরকম পরিবর্তন ছাড়াই ডায়রির বিশেষ কয়েকটি জায়গা প্রকাশ করছি।
৩রা ফেব্রুয়ারী,১৮৯৯
আমার নতুন যন্ত্রটার একটা নাম ভেবেছি। যদিও যন্ত্র তৈরীর কাজ এখনো সম্পূর্ন হয়নি, তাও নামটা ভেবেই রাখলাম। ক্রেসক্রোগ্রাফ। গাছেরও যে প্রান আছে সেটা পরীক্ষামূলকভাবে প্রমান করার জন্যেই আমার এই যন্ত্র।
যন্ত্রটি কোনো গাছের এক ইঞ্চির 1/1,000,000 ভাগ অংশের সূক্ষ থেকে সূক্ষতর কম্পনও বুঝতে পারবে। এখনো সারা পৃথিবীর কাছে আমার এই আবিস্কারের কথা আমি প্রকাশ করিনি। তবে কিছু পরীক্ষার মাধ্যমে এটাতে নিশ্চিত হয়েছি যে গাছের প্রান আছে। অবশ্যই আছে।
প্রত্যেক গাছেরই একটা সক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র রয়েছে যেমন মানুষ বা অন্য প্রানীর থাকে ঠিক সেরকমই। সারা পৃথিবীকে এটা বোঝানোর জন্যে আমার যন্ত্রটা খুব জরুরী ভূমিকা নেবে।
১৮ই ফেব্রুয়ারী,১৮৯৯
আজ একটা চিঠি পেলাম রয়্যাল সোসাইটি থেকে। ওরা আমায় ওদের ওখানে রেডিও নিয়ে একটা Paper Presentation এর জন্যে ডেকেছে। ৪ বছর আগে কলকাতায় আমি রেডিও তরঙ্গ নিয়ে একটা পরীক্ষা করে দেখিয়ে ছিলাম গভর্নর জেনারেল কে। তিন মাইল দূর থেকে রেডিও তরঙ্গের সাহায্যে একটা ঘন্টা বাজিয়ে ছিলাম। তার পরের বছর একটা বিজ্ঞানী সম্মেলনে লন্ডন গিয়ে এই প্রসঙ্গটা একবার তুলেও ছিলাম কিন্তু কেউ পাত্তা দেয়নি।
তারপর আজ আবার এই চিঠি পেয়ে বেশ গর্ব অনুভব করলাম। শেষবার লন্ডনে গিয়ে এক ভদ্রলোকের সাথে আলাপ হয়েছিল। গুলিয়েলমো মার্কনি। উনিই দেখেছিলাম আমার এই রেডিওর ব্যাপারটা খুব গুরুত্ব সহকারে শুনেছিলেন। আমি এতদূর এগিয়েছিলাম বলে আমায় বললেন আমার পেটেন্টের জন্য অ্যাপ্লাই করা উচিত। আমি বলেছিলাম – আমার পেটেন্টের কোনো দরকার নেই। আমি শুধু চাই আমার আবিস্কারগুলো যেন বিজ্ঞানের কাজে লাগে।
খুব অবাক হয়েছিলেন উনি সেটা শুনে। পরে আমি শুনেছিলাম উনিও নাকি বেতার নিয়ে কিছু গবেষনা করছেন। তবে সঠিক কোহারার এখনো খুঁজে বের করেতে পারেননি।
তবে এই পেটেন্টের ব্যাপারটা আমায় যে উনিই প্রথম আমায় বলেছিলেন তা নয়। নরেন্দ্রনাথ একদিন আমায় বলেছিল একই কথা। আমি ওকেও একই কথা বলেছিলাম।
২৭শে ফেব্রুয়ারী,১৮৯৯
ক্রেসক্রোগ্রাফের কাজ আপাতত বন্ধ। লণ্ডন থেকে ফিরে ওটার কাজ আবার শুরু করব। এখন রয়্যাল সোসাইটির জন্য পেপার লিখতে বসেছি।
আজ একটা খুব ভাল ব্যাপার হয়েছে। মার্কনি একটা চিঠি পাঠিয়েছে। আমি লণ্ডন যাচ্ছি কিনা জানতে চেয়ে। আমি ওকে জানিয়ে দিয়েছি যে আমি যাচ্ছি। এপ্রিলের ২৪ তারিখ নাগাদ আমি লন্ডন পৌছব।
১৫ই মার্চ,১৮৯৯
পেপার লেখার কাজ আজ শেষ হল। হেডিং দিলাম – “On a Self Recovering Coherer and study of cohering action of different Materials”. হেডিংটা নিজের বেশ পছন্দ হয়েছে।
এবার জিনিসপত্র গুছোতে হবে। যদিও যেতে এখনো অনেক দিন বাকি। কিন্তু কেন জানিনা আমার কাজ ফেলে রাখতে ইচ্ছে করেনা।
২রা এপ্রিল,১৮৯৯
আজ একটা দারুন ব্যাপার ঘটল। আমার এলিয়েনোগ্র্যাবার যন্ত্রে প্রথম অন্য গ্রহের থেকে সাড়া এল। আমি এর আগে বেশ কয়েকবার কিছু সিগন্যাল পাঠিয়েছি কিন্তু কোনো উত্তর পাইনি। আমার Iron-Murcury-Iron কোহারারটা খুব কাজের বোঝাই যাচ্ছে। শুধুমাত্র এটা বুঝতে পারেননি বলেই হার্ৎজ্ জল বা দেওয়ালের মধ্য দিয়ে রেডিও তরঙ্গকে পাঠাতে পারেননি।
আপাতত অন্য গ্রহ থেকে শুধু রেডিও তরঙ্গই এসেছে। সুতরাং এটা সম্পর্কে আমি নিশ্চিত যে পৃথিবী ছাড়াও অন্য গ্রহে প্রানের অস্তিত্ত্ব আছে। তবে তারা আদৌ কি ধরনের প্রানী, ভাল না খারাপ সে ব্যাপারে কোনো ধারনা আমার নেই। লন্ডন থেকে ফিরে এসে এটা নিয়েও লাগতে হবে।
২৪শে এপ্রিল, ১৮৯৯
আজ একটু আগেই লন্ডন পৌঁছালাম। রয়্যাল সোসাইটি থেকেই আমন্ত্রিত সব বিজ্ঞানীদের ‘হোটেল স্যাভয়’ তে থাকার ব্যবস্থা করেছে। এদের ব্যবস্থা বেশ ভালই। শুনছি লন্ডনের সব থেকে ভাল হোটেল এটা।
আজ বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী লর্ড রেলাইখ কে দেখলাম রিসেপশনের কাছে। আমায় বোধহয় চেনেন না উনি, কেন না আমার পাশ দিয়ে গটগট করে হেটে চলে গেলেন আমার দিকে একবারও না তাকিয়ে।
সন্ধ্যেবেলা-
তখন ডায়রি লেখা হঠাৎ থামাতে হল। কারন আমার দরজায় টোকা পড়েছিল। খুলে দেখলাম মার্কনি হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে। ওকে চিঠিতে লিখেছিলাম যে আজ পৌঁছোব। তাই বলল দেখা করতে এসেছে।
আজও আমায় জিজ্ঞেস করলে পেটেন্টের ব্যাপারে আমার মত পাল্টেছি কিনা। আমি আবারও একই কথা বললাম, “আমার আবিস্কার বিজ্ঞানের কাজে লাগলেই আমি খুশি। আমার পেটেন্টের কোনো দরকারই নেই।”
মার্কনি বলল, “তোমার মধ্যে এই স্পিরিটটা দেখে খুব ভাল লাগছে। তোমরা ইন্ডিয়ানরা এতটা ভাল সেটা তোমার সাথে না মিশলে আমি জানতেই পারতাম না।”
খুব গর্ব হল কথাটা শুনে। সত্যি কথা বলতে কোনো ইউরোপীয়কে ভারতবাসীর প্রশংসা করতে এই প্রথম শুনলাম। তাই হয়ত ভাল লাগল এত।
তবে একটা কথা আজ মার্কনি কে আমি বলিনি। সেটা হল আমার যে আবিস্কারগুলো পৃথিবীর জন্যে সামান্যতম হলেও ক্ষতিকারক সেগুলো আমি কোনোদিনই জনসমক্ষে আনব না।
২৬শে এপ্রিল,১৮৯৯
আজ একটা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটল। সকালে একটা খুব বিখ্যাত টেলিগ্রাফ কোম্পানীর কোটীপতি মালিকের (নাম উল্লেখ নিষ্প্রয়োজন) টেলিগ্রাম এল হোটেলে। উনি বললেন আমার সাথে দেখা করতে চান। আমি সাথে সাথে জানালাম আমার এখন সময় নেই। উনি বললেন উনি আজই আসছেন আমার কাছে। দরকারটা নাকি খুবই গুরুত্বপূর্ন।
সন্ধ্যেবেলা সেই ভদ্রলোক এলেন। হাতে একটা পেটেন্ট ফর্ম নিয়ে। তারপর আমার কাছে হাত জোড় করে মিনতি করলেন আমি যেন আমার গবেষনার গুরুত্বপূর্ন তথ্যগুলো কালকের বক্তৃতায় না ফাঁস করি।
উনি আমায় তারপর একটা খাম দিয়ে বললেন, “এতে যা টাকা আছে তা আপনি সারাজীবনেও রোজগার করে উঠতে পারবেন না মিস্টার বোস। আপনি শুধু আমায় আপনার আবিস্কারের পেটেন্ট টা দিন। আপনার পরবর্তী সমস্ত গবেষনার টাকা আমি দেব।”
টাকা টাকা টাকা। এ দেশটা কি টাকা ছাড়া কিচ্ছু বোঝেনা?
আমি বললাম, “শোনো বন্ধু, তোমাদের ইউরোপ মহাদেশে টাকা ছাড়া কিছু হয়না তা আমি জানি। কিন্তু একজন ভারতীয়কে এত সহজে টাকা দিয়ে কেনা যায়না। দুঃখিত। আমি তোমার প্রস্তাব রাখতে পারছি না”
তারপর চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললাম, “তুমি এবার এস। আমার অনেক কাজ বাকি আছে।”
লোকটির মুখ অপমানে লাল হয়ে গেল। সে বলল, “তুমি কল্পনাও করতে পারবেনা কি পরিমান টাকা তুমি অবহেলা করছ।”
আমি কিছু বললাম না। লোকটি উঠে দাঁড়িয়ে বেরিয়ে যাবার আগে বলল, “মিস্টার বোস , এখানে একটা খুব বড় ষড়যন্ত্র চলছে। সাবধান!”
আমি দরজার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম অনেকক্ষন।
ষড়যন্ত্র? কিসের-কী কিছুই মাথায় ঢুকল না।
২৭শে এপ্রিল,১৮৯৯
সন্ধ্যে সাতটা বেজে ২০। হোটেলের ঘরে বসে ডায়রি লিখছি। আজকের রয়্যাল সোসাইটির সম্মেলন খুব ভাল কাটল। আমার গবেষনার কিছুই আমি গোপন করিনি। কোহারারটার ব্যাপারেও সব প্রকাশ করলাম আজ প্রথম। তবে রেখাচিত্র গুলো আমি বলার প্রয়োজন দেখলাম না। কেউ ওই কোহারার বানাতে ইচ্ছুক হলে আমার কাছে আসুক। আমি অবশ্যই সাহায্য করব।
যাই হোক সব মিলিয়ে আজ বেশ ভাল গেল। আজ আমার বক্তৃতার পর মার্কনি এগিয়ে এসে আমায় জড়িয়ে ধরেছিল। বাকিরা অনেকেই কনগ্র্যচুলেট করলেন।
সবশেষে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ওদের ওখানে অধ্যাপনার জন্য বলছিল। আমি রাজি হইনি। ভারতবর্ষ ছেড়ে আমি থাকতে পারব না।
২৮শে এপ্রিল,১৮৯৯
সকাল তিনটে বেজে ৪৫ মিনিট। আজ আর ঘুম হবেনা। যা হল একটু আগে তারপর কতদিন যে ঘুমোতে পারব না কে জানে। আমার গবেষনার কাগজপত্রের ফাইলটা চুরি হয়ে গেছে। কিভাবে? আমি নিজেও জানিনা। ওতে আমার এখানকার বক্তৃতার পুরো পেপারটা ছিল। আর ছিল সমস্ত ডায়াগ্রাম(রেখাচিত্র)। কি যে করব বুঝতে পারছি না। আজ দুপুরেই ভারত রওনা হওয়ার কথা আমার। খুব ছন্নছাড়া লাগছে নিজেকে।
রাত্রে দরজা আটকে শুয়ে ছিলাম ১১ টার দিকে। একটু আগেই টেবিল থেকে কিছু একটা পড়ার আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেল। সাথে সাথে বিছানা থেকে উঠে লাইট জ্বাললাম। দেখলাম অ্যাসট্রেটা পড়ে আছে মাটিতে। তারপরেই দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলাম সেটা হাট করে খোলা। বেরিয়ে গেলাম কিন্তু করিডরে কাউকে দেখতে পেলাম না। আর ফিরে এসে দেখলাম আমার ফাইলটা গায়েব।
আর লিখতে পারছি না। এখানেই শেষ করছি এখনকার মত।
১২ই মে,১৮৯৯
অনেকদিন পর ডায়েরিতে হাত পড়ল আজ। এতদিন লেখার মত অবস্থায় ছিলাম না। আজ বুঝতে পারলাম এরকম চলতে থাকলে আমার গবেষনা অর্থাৎ যেগুলোর প্রতি আমার জীবন আমি উৎসর্গ করেছি অনেক আগেই, সেগুলো শেষ হয়ে যাবে।
এই পৃথিবীটা বড় নোংরা হয়ে গিয়েছে। মানুষের থাকার যোগ্য আর নেই। এখন আমি আমার অ্যালিয়েনোগ্র্যাবারের সামনে বসে। যদি অন্য গ্রহ থেকে কোনো উত্তর আসে সেই আশায়।
কাল থেকে ক্রেসক্রোগ্রাফ এর কাজ আবার শুরু করব।
– – – – – – – – – – – – – – – – – – – – – – – – –
ডায়রি আপাতত আর ছাপার প্রয়োজন হল না। শুধু পাঠকদের জন্য কয়েকটা তথ্য জানিয়ে রাখি। এই ঘটনার এক বছর পর মার্কনি বেতারের জগতে এক বিপ্লবের সূচনা করেন। সেই কাজে যে কোহারারটি উনি ব্যবহার করেছিলেন সেটি ছিল জগদীশ্চন্দ্র বসুর আবিস্কার করা কোহারার। আর ওনার রেখাচিত্রগুলিও ছিল জগদীশ্চন্দ্র বসুর রেখাচিত্রগুলীর সাথে পুরোপুরি এক। তবে এই রেখাচিত্র নিয়ে কোনো ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষন উনি করতে পারেননি।