১
“তাহলে কি গিফট কিনলে ফাইনালি?”
প্রশ্ন টা করা হয়েছে আমাকে সেটা বুঝতেই পেরেছি। ২ দিন আগে ডাইনিং এ সোফাতে বসেছিলাম হঠাৎ শারদ্বত ঘরে ঢুকে বলল, “আমাজনের বক্স দিয়ে দাও!”
আমি ভুরু কুঁচকে বলেছিলাম, “হ্যাঁ? কী?”
শারদ্বত বলল, “আরে তুমি ভাবছিলে তো বন্ধুর বিয়ে তে কি গিফট দেবে সেই জন্যেই বললাম।”
বুঝতে পারলাম It’s show off time. তবুও জিজ্ঞেস করলাম, “কীভাবে বুঝলে যে আমি গিফট দেওয়ার কথা ভাবছিলাম?”
শারদ্বত হেসে বলল, “একটু আগেই যখন ফিল্টার থেকে জল নিচ্ছিলাম তখন দেখলাম তুমি টেবিলে রাখা বিয়ের কার্ডটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছো। আর মাঝে মাঝে মাথা চুলকোচ্ছো। আর এখন ঘরে ঢুকেই দেখলাম দেওয়ালে তোমার বন্ধুদের যে গ্রুপ ফটোটা তোমায় দেওয়া আছে সেটার দিকে দেখলে একবার। আর তারপরেই দেখলে নতুন বছরের ক্যালেন্ডার। এর থেকে কী প্রমান হয়?”
আমি বললাম, “কিছুই প্রমান হয় না। কিন্তু তুমি কিছু একটা প্রমান করেই ছাড়বে সেটা বুঝতে পারছি।”
শারদ্বত বলল, “এর থেকে প্রমান হয় যে তুমি দেখছো দিন এগিয়ে আসছে তোমার বন্ধুর বিয়ের কিন্তু কি গিফট দেবে সেটা বুঝতে পারছো না। কিন্তু ওরা তোমাকে জন্মদিনে একটা ভালো গিফট দিয়েছে তাই তুমিও ভাবছো এরকমই কিছু দেবে নাকি আর একটু ভাববে! সেই জন্যেই বললাম আমাজনের বক্স দিয়ে দাও!”
– আমাজনের বক্স মানে? বুঝলাম না
– আমাজন থেকে যখন প্রোডাক্ট অর্ডার করো তখন তো বড় বড় প্যাকিং বক্স দেয়। ওগুলোকেই গিফট র্যাপ করে দিয়ে দিতে পারো। কেউ জানতেও পারবেনা। সবাই ভাববে কি না কি গিফট আছে ভেতরে।
– মানে? পাগল নাকি?
– আরে কেউ তো খুলে দেখবে না। দিতে পারো।
– শারদ্বত প্লিজ। এরকম কেউ করে না বিশ্বাস করো।
– আমি করি। In fact করেওছি কয়েকবার।
– Seriously? কবে? কার বিয়ে তে?
– এক্স গার্লফ্রেন্ড।
– What???? তুমি প্রেম করেছো নাকি?
শারদ্বত বলেছিল, “বেশি Information দিয়ে দিচ্ছি তোমায়। এক্ষুনি তো ব্লগে লিখে ফেলবে। নাহ। আর বলব না।”
কথাটা বলেই আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নিজের ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল সেদিন।
আজ আমি বিয়েবাড়ি যাবো বলে রেডি হয়েছি দেখে আমায় জিজ্ঞেস করল, কি গিফট কিনলাম।
চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে বললাম, “ল্যাম্প শেড কিনলাম।”
শারদ্বত বলল, “উফফ! পৃথিবীতে উপহার কি কম পড়িয়াছে? শেষে ল্যাম্প শেড! Urgh!”
বললাম, “দেখো ভায়া, যাবো, বিরিয়ানি খাবো, চলে আসব। গিফট এর জন্য বেশী ভেবে ব্রেন সেলে চাপ দিতে পারলাম না।”
– Good Point.
শারদ্বতর কথাটা বলার সাথে সাথে ফোন বাজল আমার। শারদ্বত এক ঝলক ফোনটার দিকে দেখেই বলল, “এই তোমার বন্ধু-বর ফোন করছে!”
আমি বললাম, “কে দীপাংশু? তুমি কি করে জানলে এই ছেলেটারই বিয়ে?”
শারদ্বত বলল, “Oh Please অনিরুদ্ধ! টেবিলের ওপর বিয়ের কার্ডের ওপর জ্বলজ্বল করছে, দীপাংশু আর মানালির শুভবিবাহ!”
সত্যিই তো! বোকা বোকা প্রশ্ন! ফোন টা ধরলাম।
“হ্যালো! হ্যালো অনি… অনিরুদ্ধ!” – ও প্রান্ত থেকে কাঁপা কাঁপা গলায় আওয়াজ এলো!
আমি বললাম, “কী হয়েছে? তোর গলাটা এরকম শোনাচ্ছে কেন? শরীর খারাপ নাকি রে?”
দীপাংশু আবারও ভয়ার্ত গলায় বলল, “তোর দাদা… তোর দাদা তো পুলিশ তাই না?”
আমি বললাম, “হ্যাঁ। কিন্তু কি হয়েছে সেটা বলবি একটু?”
দীপাংশু বলল, “শ্রীলেখা! শ্রীলেখা আর ওর বর এর বডি পাওয়া গেছে! বিয়েবাড়ি তে। আমি মানে… কাকে ফোন করব… মানে…”
কথাটা শুনেই মনে হল যেন ইলেকট্রিক শক খেলাম। বডি পাওয়া গেছে মানে? শ্রীলেখা?? আমাদের কলেজের…
“শুনছিস… অনিরুদ্ধ? প্লিজ… তুই… কিছু… একটা কর। তোর… দাদা কে খবর দে। আমি… আমি জানিনা আমি কি করব!”
তারপরেই ফোন টা কেটে গেল হঠাৎ! আজ… আজ আমাদের একটা বন্ধুর বিয়ে… আর আর একজন… আর একজন…
শারদ্বত জিজ্ঞেস করল, “কিছু হয়েছে নাকি?”
বললাম, “বডি… শ্রীলেখা… বডি!”
আমার চোখের সামনেটা হঠাৎ অন্ধকার লাগছে কেন? হঠাৎই মাথাটা ঘুরে গেল কী?
২
বিয়েবাড়িতে যখন পৌঁছোলাম তখন অলরেডি পুলিশ এসে গিয়েছে দেখলাম। বেরোনোর সময় দাদাকে ফোন করেছিলাম আমি, দাদা বলল লোকাল থানার অফিসাররা আগে যাবেন সিন এ। তারপর গুরুত্ব বুঝলে আমরা। লজটার নাম তানিয়া ভিলা।
“ঠিক আছো তো?”
প্রশ্নটা করেছে শারদ্বত। ও এসেছে আমার সাথে আজ। হঠাৎ ব্ল্যাকআউট করে যাওয়ায় আমায় একা ছাড়তে ভরসা পেল না। আমাকে দেখে এগিয়ে এলে দীপাংশু। চোখ লাল। কেঁদেছে নাকি খুব? সেটাই স্বাভাবিক বোধহয়।
দীপাংশু কে বললাম, “ঠিক আছিস?”
দীপাংশু ঘাড় নাড়ল। বলল, “এক্ষুনি বডি দু’টো নিয়ে গেল পুলিশের লোক। পোস্ট মর্টেমের জন্য।”
শারদ্বত জিজ্ঞেস করল, “কে প্রথম দেখেন বডিগুলো?”
দীপাংশু বলল, “ফারহান অনেকক্ষন থেকেই বলছিল শ্রীলেখারা আসছে না কেন নীচে? কেউ পাত্তা দিচ্ছিলাম না। তারপর ও নিজেই ওদের রুমে গিয়ে দেখে এই জিনিস!”
“তার আগে কেউ টের পাননি আপনারা?” শারদ্বতর গলার স্বর এবার তীক্ষ্ণ।
– না। I am sorry. আপনি কে?
– ওহ! নমস্কার। আমার নাম শারদ্বত… শারদ্বত হাজরা।
আমি বললাম, “শারদ্বত আমার ফ্ল্যাটমেট। আসলে আমার শরীরটা হঠাৎ একটু খারাপ করেছিল। তাই ও আমার সাথে এসেছে।”
শারদ্বত বলল, “আচ্ছা শ্রীলেখার স্বামীও কি আপনাদের গ্রুপের কেউ? মানে আপনাদেরই বন্ধুবান্ধব?”
আমি এবার বলতে বাধ্য হলাম, “শারদ্বত প্লিজ। Interrogation টা এখন থাক। ভালো লাগছে না জাস্ট।”
শারদ্বত বলল, “Okay. যথা আজ্ঞা হুজুর!”
আমি আর কিছু বললাম না। এগিয়ে গেলাম বিয়েবাড়ির দিকে। দীপাংশু কে জিজ্ঞেস করলাম, “তোরা বিয়েটা করছিস? লগ্ন ক’টায় তোদের?”
দীপাংশু বলল, “কিচ্ছু জানিনা। আমার মাথা কাজ করছেনা বিশ্বাস কর। এরপর কী করে আমি আজ বিয়ের পিঁড়িতে বসি বল তো?”
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম, “দেখ যেটা হয়েছে সেটা তো আর কোনোভাবেই Undo করা যাবে না। কিন্তু তোরা আজকের দিনটার জন্য এতদিন ধরে অপেক্ষা করছিস আর আজ এরকম বললে হয়?”
– হুম। মানালিও তাই বলছে। জানিস সবাই বলে যে বর বৌ কে বিয়ের আগে দেখা নাকি অশুভ। কিন্তু আজ ও না থাকলে যে আমি সবটা কীভাবে হ্যান্ডেল করতাম জানিনা। ওই একটা মানুষ আমার জন্য যা করেছে… তা আর কেউ করেনি। আর কেউ করবেও না!
– হুম। জানি। মেয়েটা তোকে বড্ড ভালোবাসে।
কিছুক্ষন দু’জনেই চুপ। শারদ্বতর দিকে তাকিয়ে দেখলাম গম্ভীর মুখে হাঁটছে আমাদের পেছন পেছন। ততক্ষনে আমি নিজেকে অনেকটা সামলে নিয়েছি।
আমি বললাম, “দীপাংশু কী হয়েছিল বলতে পারবি? মানে রুমে গিয়ে কি দেখল ফারহান? আর তোরাই বা কী দেখলি?”
দীপাংশু বলল, “আমরা গিয়ে দেখলাম বিছানায় পড়ে রয়েছে শ্রীলেখা আর ওর বর এর বডি। পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করা হয়েছে দু’জনকেই। কপালে দু’জনেরই বুলেটের…
“পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ কাকে বলে সেটা কীভাবে জানলেন? হলিউড সিনেমা?” এবার প্রশ্ন করল শারদ্বত।
হাঁটতে হাঁটতে থেমে গেলাম আমরা সবাই। দীপাংশু শারদ্বতর দিকে ফিরে বলল, “শুটিং এর ক্লাস করেছি আমি। F-Class Shooting Academy তে। রাইফেল চালানো শিখেছি। কাজেই এই সংক্রান্ত শব্দ গুলোর সাথে পরিচিত।”
আমি বললাম, “পুলিশ কি বলছে?”
শারদ্বত মুখ থেকে একটা বিরক্তিসূচক আওয়াজ বের করল। পুলিশ শুনলেই ওর এটা হয়। আমি আজ পাত্তা দেওয়ার মুডে ছিলাম না।
দীপাংশু বলল, “পুলিশ বলল এটা মার্ডার। খুব শিগগিরি তদন্ত শুরু হবে। কেউ শহর ছেড়ে যাবেন না!”
কথাটা বলার পরেই মানালি কে দেখতে পেলাম। আমাদের দেখে এগিয়ে আসছে। ওর চোখটাও ফুলে গিয়েছে দেখেই বোঝা যাচ্ছে। মেকআপ এর কোনো চিহ্ন নেই মুখে। আজ এই মেয়েটার বিয়ে। আর মানালি কে যতদূর চিনি এই দিনটার জন্য ও কত দিন ধরে অপেক্ষা করেছে!
মানালি কে জিজ্ঞেস করলাম, “ঠিক আছিস তুই?”
মানালি একটা ম্লান হাসি হেসে ঘাড় নাড়ল। তারপর দীপাংশুকে বলল, “তোর দাদু একবার কথা বলতে চাইছেন তোর সাথে। আসবি?”
দীপাংশু বলল, “হ্যাঁ চল!”
তারপর আমার দিকে ফিরে কিছু একটা বলতে যাওয়ার আগেই শারদ্বত বলল, “আপনি যান দীপাংশু। আমি আর অনিরুদ্ধ এখানেই রয়েছি।
দীপাংশু আর কিছু না বলে চলে গেল! অনেক দূর থেকে বিয়েবাড়ির একটা ফিকে সানাই এর সুর ভেসে আসছে।
শারদ্বত বলল, “কি বুঝছো?”
আমি বললাম, “দেখো দীপাংশুর সামনে বলতে কেমন একটা লাগছিল। আমি কিছু বোঝার মত অবস্থায় নেই। প্লিজ এরকম গোয়েন্দাদের মত Behave কোরো না। তোমাকে সাথে নিয়ে এলাম আমার শরীর টা খারাপ লাগছিল বলে। এই কেসের তদন্ত করার জন্য নয়।”
শারদ্বত বলল, “তোমার জানতেও ইচ্ছে করছে না এই কাজ টা কে করল?”
আমি বললাম, “অবশ্যই করছে। তবে সেই খুনীকে খুঁজে বের করার কাজ টা পুলিশ করুক। এই বিয়েবাড়ি সুদ্ধু এর লোকের মাঝে খুনী কে খোঁজা আর খড়ের গাদায় সূঁচ খোঁজা একই ব্যাপার।”
শারদ্বত বলল, “খড়ের গাদায় সূঁচ খোজাটা কিন্তু খুব সহজ। একটা শক্তিশালী চুম্বক দরকার। চুম্বক যত শক্তিশালী হবে তোমার খাটনি তত কমবে। আর এই কেস টাও তাই। আমার চেয়ে বড় ক্রিমিনাল ম্যাগনেট তুমি পাবে না সেটা তুমিও ভালো করে জানো!”
শারদ্বতর সাথে তর্ক করার ক্ষমতা নেই আমার। বললাম, “কি করতে চাইছো শুনি?”
শারদ্বত বলল, “তোমার ক্লোজ ফ্রেন্ড সার্কেলটা সম্পর্কে বলো আমায়। যাদের আজ এই বিয়েবাড়িতে আসার কথা।”
আমি বললাম, “ক্লোজ ফ্রেন্ড মানে? শুধু ক্লোজ ফ্রেন্ড কেন? এই বিয়েবাড়িতে অন্তত ৫০০ লোক আছে। তারা Suspect নয়?”
শারদ্বত বলল, “ওহ অনিরুদ্ধ! বড্ড ভালো লাগে তোমায় দেখলে!”
“What?” আমার গলার স্বরে বিরক্তি স্পষ্ট।
– না আসলে… তুমি ব্রেনের পেশীগুলো কে ছুটিতে পাঠিয়ে কি সুন্দর রয়েছো!
– সিরিয়াসলি? এই সময়েও ইয়ার্কি মারতে তোমার ভালো লাগছে?
– দেখো তোমরা তো কলেজের বন্ধুরা কলেজ শেষ হয়ে যাওয়ার পর যে যার লাইফ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেছো। কারুর সাথে কারুর যোগাযোগ নেই। সুতরাং এই খুন দু’টো যদি প্রি প্ল্যানড ধরে নি তাহলে যে যে মানুষগুলো জানতো যে শ্রীলেখা এবং তার বর আসছে আজ বিয়েবাড়িতে তারাই হল গিয়ে মূল সাসপেক্ট। আর তারা হল তোমাদের ক্লোজ ফ্রেন্ড দের গ্রুপ টা। এর বাইরে কারুর জানার কথা না ওরা আজ আসছে।
আমি চুপ করে শারদ্বতর কথাটাই Process করছিলাম।
শারদ্বত বলল, “আর যদি এরকম হয় যে খুনদু’টো হঠাৎ করা হয়েছে। মানে যদি প্রিপ্ল্যানড না হয়। তাহলেও একটা মোটিভ তো রয়েছে। সেটা কী? কারন আমার মনে হয় না ওদের কিছু চুরি গেছে। চুরি গেলে বোঝা যেত যে চোর চুরি করতে এসেছিল। হঠাৎ ওরা ঘরে চলে আসে চোর কে দেখে ফ্যালে তাই হয়তো খুন করা হয়েছে ওদের। চুরি কি গেছে কিছু? জানো?”
আমি বললাম, “জানি না। দীপাংশু কে জিজ্ঞেস করতে হবে। আমি কিচ্ছু জানিনা।”
৩
“আমাদের ক্লোজ সার্কেলে রয়েছে ৭ জন… ৬ জন… সরি। ৭ জন ছিল আগে… আজ থেকে ৬ জন। আপনি কি সবার সাথেই কথা বলতে চান?” দীপাংশু জিজ্ঞেস করল শারদ্বত কে।
আমিই দীপাংশু কে পরিচয় দিলাম শারদ্বতর। বললাম “এর একটা সমাধান দরকার। শুনতে খারাপ লাগলেও আমাদের মধ্যে থেকেই কেউ এই কাজ টা করেছে। অন্তত শারদ্বতর তো তাই ধারনা।”
দীপাংশু কি বুঝল জানিনা। কিন্তু আমার কথায় রাজি হয়ে গেল দেখলাম।
শারদ্বত বলল, “হ্যাঁ। সবার সাথে কথা বলতে পারলেই ভালো হয়! একটু দেখুন না যদি সম্ভব হয়!”
দীপাংশু বলল, “ঠিক আছে। আমি জানিয়ে দিচ্ছি ওদের!”
শারদ্বত বলল তার আগে আপনার সাথে কথাটা সেরে নিই।
– হ্যাঁ বলুন কী জানতে চান!
শারদ্বত প্রশ্ন শুরু করল, “শ্রীলেখা আর ওর বরকে আপনি কতদিন ধরে চিনতেন?”
দীপাংশু বলল, “শ্রীলেখা কে কলেজ থেকেই চিনি। ওর বর কে এই বছর দু’য়েক”
– ওর সাথে আপনার সম্পর্ক কেমন ছিল?
– খারাপ কেন থাকবে… নরম্যাল… নরম্যালই ছিল সব। বন্ধুর বর। এই আর কি!
– আমি শ্রীলেখার সাথে সম্পর্ক কেমন ছিল জানতে চাইলাম।
– ওহ সরি! আমি ভাবলাম ওর বর এর সাথে কেমন সম্পর্ক ছিল জানতে চাইছেন হয়তো।
– আপনার কেন মনে হল আমি ওটা জানতে চাইছি?
– না আসলে… মানে…
এই দ্বিধার কারন টা আমি বুঝতেই পারছিলাম। আমি বললাম, “আসলে ওর সাথে শ্রীলেখার কলেজে কিছুদিন একটা সম্পর্ক ছিল। সেই কারনেই ও বোধহয়…”
শারদ্বত বলল, “ওহ তাই নাকি? এটা ওর স্বামী বা আপনার হবু স্ত্রী জানে?”
দীপাংশু বলল, “ওর স্বামী জানেন কিনা জানিনা। কিন্তু মানালি জানে। ও সবই জানে।”
– কতদিনের সম্পর্ক ছিল আপনাদের?
– ৯ মাস মত।
– তারপর ব্রেক আপ কে করে?
– শ্রীলেখাই করে। ও বলেছিল আমার মত মানুষের সাথে থাকা সম্ভব নয়?
– ঠিক বলেছিল?
– Excuse Me?
– আপনার কি মনে হয়? আপনার মত মানুষের সাথে থাকা সম্ভব নয়?
– জানিনা। আর একজন মানুষ তো তারপর ৫ বছর হল আছে এবং সারাটা জীবন থাকার জন্য তৈরী বলেই মনে হল।
– আচ্ছা পুলিস কি Murder Weapon টা পেয়েছে? মানে যেটা দিয়ে শ্রীলেখা আর ওর Husband কে গুলি করা হয়েছে সেই বন্দুকটা কি পেয়েছে?
– না পায় নি। ওরা তো কিছু বললই না ভালো করে। শুধু বলল কেউ শহর ছেড়ে যাবেন না।
শারদ্বত বলল, “ঠিক আছে Thank you. আপনি এবার মানালি দেবী কে পাঠিয়ে দিন একটু এই ঘরে!”
দীপাংশু বলল, “মানালি কে? মানালিকে কেন?”
শারদ্বত বলল, “উনি কি আপনাদের ক্লোজ ফ্রেন্ড সার্কেলের মধ্যে নয়?”
– হ্যাঁ। কিন্তু ও এসব কেন করবে?”
– Jealousy? রাগ? অনেক কিছুই হতে পারে!
“আপনি কি পাগল নাকি বলুন তো?”, এবার চেঁচিয়ে উঠল দীপাংশু, “এরকম একটা দিনে এভাবে কথা বলতে আপনার আটকাচ্ছে না?”
আমি শান্ত করতে যাচ্ছিলাম দীপাংশু কে।
এমন সময় শারদ্বত খুব শান্ত গলায় বলল, “না আটকাচ্ছে না! তার কারন দু’জন মানুষ অলরেডি মৃত। অর্থাৎ একজন খুনি সমাজের বুকে নিশ্চিন্ত হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাকে ধরাটাই আমার আসল উদ্দেশ্য। আশা করি বুঝেছেন। এবার আপনি কি মানালী দেবী কে ডেকে পাঠাবেন একবার?”
দীপাংশু বলল, “Get Out!”
আমি বললাম, “দীপাংশু প্লিজ আমার কথাটা শোন।”
দীপাংশু বলল, “তুইও বেরিয়ে যা। Get lost!”
– তুই আমার কথাটা শোন!
দীপাংশু আরো জোরে চেঁচিয়ে উঠল, “জাস্ট বেরিয়ে যা অনিরুদ্ধ! নাহলে আমি এবার পুলিশ ডাকব।”
৪
ফেরার পথে শারদ্বত আমার সাথে একটা কথাও বলেনি। খুব অপমানিত লাগছিল নিজেকে। দীপাংশুর মনের অবস্থাটা আমি বুঝতে পারছি কিন্তু তাই বলে এভাবে কথা বলল ও আমার সাথে? শারদ্বতর সামনে?
ফ্ল্যাটে ফিরে নিজের ঘরে ঢোকার আগে শারদ্বত বলে গেল, “দোষটা তোমার না। এত ভেবো না।”
পরের দিন সকালে উঠে শারদ্বত দেখলাম ডাইনিং এ বসে আছে কফির কাপ আর ল্যাপটপ নিয়ে। বললাম, “কি করছ?”
শারদ্বত বলল, “এই তো কেস নিয়ে কাজ এগোচ্ছি।”
আমি ম্লান হেসে বললাম, “দিবাস্বপ্ন দেখছো নাকি? কোথায় কেস?”
– সে কি গো? এই তো কালকেই কেস পেলাম একটা। ভুলে গেলে?
– তুমি কি ভুলে গেলে? আমাদের অপমান করে বের করে দেওয়া হয়েছে বিয়েবাড়ি থেকে।
– ঠিক আছে। তাতে কী? আমরা আমাদের মত কেস সল্ভ করব।
“ওই আশাতেই থাকো!” বলে আমি ঢুকে গেলাম বাথরুমে।
বাথরুম থেকে বেরিয়ে দেখি শারদ্বত নেই। যাহ বাবা! আমাকে সাথে না নিয়েই বেরিয়ে গেল? সারাটা দিন এবার একা একা কাটবে বাড়িতে। ফেসবুক খুলে দেখলাম Wall টা পুরো শ্রীলেখা কে নিয়ে ভরে গিয়েছে। ও খুব Active ছিল সোশ্যাল মিডিয়াতে।
ফোনটা বেজে উঠল হঠাৎ। নাম্বারটা দেখে একটু অবাক লাগল। দীপাংশু ফোন করেছে। ধরব না ধরব না করেও ফোন টা ধরেই নিলাম।
“হ্যালো” ও প্রান্ত থেকে দীপাংশুর আওয়াজ এল।
আমি বললাম, “হুম বল!”
– সরি কালকের ওই Outburst এর জন্যে। Please কিছু মনে করিস না।
– হুম ঠিক আছে রে। It’s okay.
– আর একটা জিনিস তোকে জানানোর জন্য ফোন করলাম।
– কী?
– পুলিশ… ফারহান কে ধরে নিয়ে গেছে!
– মানে? কেন? ফারহান কী করেছে?
– ওর ঘর থেকে রিভলভার টা পাওয়া গেছে।
– ওতে কি ওর আঙুলের ছাপ পাওয়া গেছে?
– জানিনা আমি এত কিছু। আমি জাস্ট ভাবতেই পারছি না ব্যাপার টা। How is this even possible? ফারহান খুন করল শ্রীলেখা কে? কেন?
– জানিনা। ছাড়। ছাড়। বাদ দে। তুই এত ভাবিস না!
– হ্যাঁ চেষ্টা করছি না ভাবার। বলছিলাম যে…
– হ্যাঁ বল।
– বলছি যে তুই আর শারদ্বত বাবু আজ একবার আসবি আমাদের বাড়িতে? কালকের ওরকম Behavior এর জন্য খুব খারাপ লাগছে আমার। প্লিজ না বলিস না।
– আরে ঠিক আছে রে। তোর মাথায় অনেক চাপ ছিল আমি জানি। বাদ দে ওসব।
– না। প্লিজ আয় আজ বিকেলে। মানালিও বলছিল সবার সাথে ভালো করে কথা হল না কাল। তাই সবাই কেই ডেকেছি আমি আজ।
– আচ্ছা বেশ। আমি শারদ্বত কে বলছি।
– ঠিক আছে।
ফোন টা রেখেই শারদ্বত কে ফোন করলাম। ও যখন ফোন ধরল তখন ও প্রান্ত থেকে বোম ফাটার আওয়াজ পেলাম কয়েকবার। এই জানুয়ারী মাসে কে বোম ফাটাচ্ছে কে জানে!
শারদ্বত কে সব টা বলতে ও বলল, “এই রে! তাহলে একবার যে থানায় যেতে হবে। চলে এসো ঠিক আধঘন্টা পর।”
আধঘন্টা বাদে কথামত হাজির হলাম কাশীপুর থানার বাইরে। শারদ্বত সিগারেট খাচ্ছিল দাঁড়িয়ে। আমায় দেখে ফেলে দিয়ে বলল, “চলো!”
থানায় ঢুকে দেখলাম একজন একজন অফিসার বসে কিছু কাগজপত্র দেখছেন।
আমাদের দেখে বললেন, “বলুন? কি চাই?”
শারদ্বত বলল, “কিচ্ছু চাই না। দিতে এসেছি। সামান্য একটু বুদ্ধি এবং উপদেশ।”
অফিসার বললেন, “হকার নাকি আপনি? বুদ্ধি ফেরি করেন?”
বুঝলাম ভদ্রলোক রসিক মানুষ। এত সহজে রাগবেন না।
শারদ্বত বলল, “একই রকম রয়ে গেলেন মিস্টার মিত্র।”
এক সেকেন্ড! মিস্টার মিত্র মানে? শারদ্বত তাহলে চেনেন এনাকে!
মিস্টার মিত্র বললেন, “আপনিও তো পাল্টাননি দেখছি শারদ্বত বাবু!”
শারদ্বত এবার আমার দিকে ফিরে বলল, “অনিরুদ্ধ আলাপ করিয়ে দিই। ইনি হলেন কাশীপুর থানার ওসি। মিস্টার মিত্র। একবার এক কেসে আমরা একসাথে কাজ করেছিলাম!”
আমি অবাক হয়ে বললাম, “তাই নাকি? তুমি কাজ করেছিলে পুলিশের…
শারদ্বত আমাকে থামিয়ে দিয়ে মিস্টার মিত্র কে বলল, “কাল রাতে তানিয়া ভিলা দু’টো খুনের ব্যাপারে কাকে একটা অ্যারেস্ট করেছেন শুনলাম।”
মিস্টার মিত্র বললেন, “ওই কেস টা আপনি দেখছেন নাকি?”
শারদ্বত আমার দিকে ইঙ্গিত করে বলল, “অনিরুদ্ধর কলেজের বন্ধু ছিল মেয়েটি। আর ওর দাদা… মানে লালবাজারের ডেপুটি কমিশনার নীলাদ্রি সেন ও চাইছেন কেস টা আমি একটু দেখি। তাই আর কি। বুঝতেই পারছেন!”
দাদার নাম নেওয়াতে মিস্টার মিত্র একটু নড়ে চড়ে বসলেন। তারপর বললেন, “কাল আমি ছিলাম না অফিসে। মাইতি বাবু ছিল। উনি অ্যারেস্ট করেছেন শুনলাম ছেলেটিকে।”
– স্বীকার করেছে নাকি?
– নাহ। তা আবার করে? তবে ঠিক করে ফেলবে। ক’টা দিন থাকুক জেলে।
– পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট কী বলছে? ক’টায় হয়েছে খুন টা?
– রিপোর্ট তো বলছে ৬ টা থেকে ৭টার মধ্যে হয়েছে খুন টা।
শারদ্বত এবার বলল, “একবার কথা বলা যাবে ওই ছেলেটির সাথে?”
মিস্টার মিত্র বললেন, “এই রে! কথা বলতে কী করে দিই বলুন? আসলে অফিশিয়াল কোনো পারমিশন না থাকলে…”
শারদ্বত বলল, “হ্যাঁ সেটা কোনো অসুবিধে নেই। অনিরুদ্ধ একবার দাদা কে ফোন করে বলো না একটা Letter যেন ফ্যাক্স করে দেয় কাশীপুর থানায়।”
আমি জানি দাদা কে ফোন করলে দাদা আরোই বারণ করে দেবে মিস্টার মিত্র কে। দাদা একদম পছন্দ করে না শারদ্বত কে। তাও একটু অভিনয়ের ভান করে ফোন বের করতেই মিস্টার মিত্র বললেন, “আচ্ছা ঠিক আছে! ঠিক আছে! চলুন। ৫ মিনিটের বেশি কিন্তু দিতে পারব না।”
শারদ্বত বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ ওতেই হবে!”
একটু পর মিস্টার মিত্রের আদেশ মত একজন কনস্টেবল নিয়ে গেল আমাদের ফারহানের কাছে। খুলে দিল জেলখানার দরজাটা। ঘুপচি মত জেলখানার একদম কোনে বসে আছে সে মাথা নীচু করে। আমাকে দেখেই ফারহান উঠে এল অবাক হয়ে। তারপর বলল, “তুই? তুই কী করছিস এখানে?”
শারদ্বত বলল, “ফারহান, আমি অনিরুদ্ধর বন্ধু। তোমাকে সাহায্য করতে চাই। আমাদের হাতে বেশী সময় নেই। তাই তোমাকে যা যা জিজ্ঞেস করছি একটু উত্তর দাও।”
আমি বললাম, “তুই কি শ্রীলেখা কে…?”
“না” ফারহান চেঁচিয়ে উঠল, “কেন করব আমি এসব?”
শারদ্বত এবার সেই কনস্টেবল কে বলল, “মিস্টার মাইতি এলে একটু পাঠিয়ে দাও তো এখানে!”
তারপর ফারহান কে বলল, “আপনি ঠিক কী দেখেছিলেন আমাকে একটু বলুন তো খুলে।”
ফারহান বলল, “অনেকক্ষন থেকেই শ্রীলেখা আর ওর বর আমাদের সাথে ছিল না। তাই আমি সবাই কে বলছিলাম, কোথায় গেল ওরা? কিন্তু সবাই আসলে এত মজে ছিল সব কিছুতে তাই ওদের দিকে খেয়াল ছিল না।”
“আপনি মজে ছিলেন না?” শারদ্বত জিজ্ঞেস করল এবার।
– আমিও ছিলাম কিন্তু কেমন যেন একটা খালি খালি লাগছিল। মানে ওরা এল শুধুমাত্র এই বিয়েবাড়িটার জন্যে তাও আমাদের সাথে সময় কাটাচ্ছে না কেন সেটাই ভাবছিলাম।
– শুধুমাত্র এটার জন্য এলো মানে? ওরা এখানে থাকতো না?
আমি এবার বললাম, “নাহ। ওরা তো ব্যাঙ্গালোরে থাকে। বিয়ের পর শ্রীলেখা শিফট করে যায় ওখানে বর এর সাথে।”
শারদ্বত বলল, “আচ্ছা ওর বরের নাম টা কী যেন?”
আমি বললাম, “সুবীর। সুবীর দাসগুপ্ত”
শারদ্বত বলল, “হ্যাঁ ফারহান, তারপর তুমি কি দেখলে?”
ফারহান বলল, “তারপর আমি ওপরে ওদের ঘরে গেলাম। লজে ওদের জন্যেই আলাদা ঘর ছিল। যেহেতু ওদের এখানে থাকার জায়গা সেরকম নেই। সেই জন্যে।”
– কেন? শ্রীলেখার বাড়ি নেই এখানে?
– হ্যাঁ আছে। কিন্তু বাড়ির সাথে সম্পর্ক ভালো না ওর।
– কেন সেটা জানো?
– আসলে একটা অনলাইন ডেটিং সাইটে ওর আলাপ হয় ওর সাথে সুবীরের। বাড়ি থেকে এই ব্যাপার টা ঠিক মেনে নিতে পারে নি।
– হুম। বেশ। তারপর বলুন।
– আমি ওদের রুমে গিয়ে কয়েকবার নক করলাম কিন্তু কেউ খুললো না।
– এটা ক’টার সময়? মনে আছে?
– ৮ টার দিকে বোধহয়।
– তার আগে তুমি কোথায় ছিলে?
– নীচে। ওদের সবার সাথে।
– বেশ তারপর নক করার পর কী দেখলে বলো।
– তারপর দরজাটা দেখলাম খোলাই রয়েছে। মানে জাস্ট ভেজানো ছিল শুধু! আমি ঠেলতেই খুলে গেল। খুলেই দেখলাম বিছানার ওপর পড়ে আছে ওদের দু’জনের…
শারদ্বত বলল, “এটা দেখে আপনি কী করলেন?”
– আমার শরীর খারাপ লাগছিল অত রক্ত দেখে। আমি দৌড়ে নীচে গিয়ে সবাই কে ডেকে নিয়ে আসি।
– এরপর আপনি নিজের ঘরে কখন গেলেন?
– আমি যাইনি। সারা রাত আমি সপ্তর্ষির কাছে ছিলাম। ভোর রাতে পুলিশ এসে হঠাৎ বলল আমার ঘরে নাকি রিভলবার পাওয়া গেছে।
কথাটা বলার পরেই দেখলাম একজন ইন্সপেক্টর এলেন। ইনিই বোধহয় মাইতিবাবু।
শারদ্বত বলল, “আরে মাইতিবাবু যে! আচ্ছা আপনি হঠাৎ ফিরে গিয়ে ফারহানের ঘর সার্চ করলেন কেন?”
মাইতিবাবু একটু থতমত খেয়ে বললেন, “মানে?”
– মানে আপনি কি লজে সবার ঘর সার্চ করেছিলেন?
– না করিনি।
– তাহলে হঠাৎ ফারহানের টাই করলেন কেন?
– আমার…আমার Sixth Sense বলছিল ওখানেই কিছু পাওয়া যাবে।
– বাবাহ! আপনার আবার ৬ টা?
– কি বললেন?
শারদ্বত বলল, “কিছু না। আপনার রিভলবার টা একবার দিন তো!”
মাইতিবাবু বললেন, “কেন?”
শারদ্বত বলল, “আরে দিন না। দেখতে পাবেন।”
মাইতিবাবু সন্দিগ্ধ চোখে রিভলবার টা বের করে দিলেন শারদ্বতর হাতে।
শারদ্বত বলল, “এই নাও ফারহান।” বলেই ও রিভলবার টা ছুঁড়ে দিল ফারহানের হাতে। ফারহান ক্যাচ ধরেও রিভলবারটা ঠিক করে ধরে রাখতে না পেরে ফেলে দিল মাটিতে। তারপর পিছিয়ে গেল দু’পা।”
মাইতিবাবু এবার চেঁচিয়ে উঠলেন, “এটা কি ইয়ার্কি পেয়েছেন নাকি?”
শারদ্বত বেরিয়ে যেতে যেতে বলল, “মাইতিবাবু, এই ছেলেটি নির্দোষ। আপনি যে রিভলবার ওর ঘর থেকে পেয়েছেন তাতে আঙুলের ছাপ না পেলে এমনিও কোর্ট ওটা প্রমান হিসেবে মানবে না। যদি মাথায় শুভবুদ্ধির উদয় হয় ছেড়ে দিন একে। চলো অনিরুদ্ধ!”
পেছনে না তাকালেও বুঝতে পারলাম দু’জোড়া চোখ অবাক হয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।
৫
“সপ্তর্ষি ছেলেটা একটু মাথামোটা। নাহলে এমনি খারাপ না। তবে অল্পেতেই খুব রেগে যায়। একবার কলেজের ক্যান্টিনে একটা পার্টির ছেলে ওর পা মাড়িয়ে দিয়েছিল বলে প্রচন্ড রেগে গিয়ে পর পর চারবার থাপ্পড় মেরেছিল!”
“তার মানে বলছ ওর মাথা গরম হয়ে গেলে যা ইচ্ছে তাই করে ফেলতে পারে?” শারদ্বত জিজ্ঞেস করল।
আমরা এখন ট্যাক্সিতে রয়েছি। শারদ্বত জানতে চাইছে আমাদের অন্যান্য বন্ধুদের ব্যাপারে। আজ বিকেলে সবার সাথে দেখা হওয়ার আগে সবার সম্পর্কে জেনে নিতে চাইছে ও।
আমি বললাম, “দেখো যা ইচ্ছে করে ফেলা আর খুন করার মধ্যে তো তফাৎ আছে। তাই না?”
শারদ্বত বলল, “হুম তা আছে। একটা কথা বলো। শ্রীলেখা দেবীর সাথে তোমার সম্পর্ক কেমন ছিল?”
আমি বললাম, “বেশ ভালো। কেন বল তো?”
– উনি হঠাৎ এরকম এক্স বয়ফ্রেন্ডের বিয়েতে আসতে এত উৎসাহী ছিলেন কেন বল তো? মানে সাধারনত লোকজন এটা Avoid করতে চায়। কিন্তু এখানে তো দেখছি উলটো টা!
– দেখো আমাদের সবার সাথে সবার সম্পর্ক খুব ভালো। হ্যাঁ। দীপাংশু আর শ্রীলেখা ডেট করেছিল মাস খানেক। আর ব্রেক আপ এর পর কিছুদিন সব টা Awkward হয়ে গিয়েছিল ঠিকই। কিন্তু তারপর আবার আস্তে আস্তে সব নরম্যাল হয়ে যায়। ওর বিয়েতে মানালি ওকে আসতে বলে খুব করে। আর সুবীরও শুনলাম ওকে বলছিল আসতে।
– বুঝলাম। আর দীপাংশুর সাথে মানালির সম্পর্ক কীভাবে হয়?
– ওর সাথে মানালির সম্পর্ক হয় কলেজের ফাইনাল ইয়ারে। ওদের কোনো একটা ম্যাচ মেকিং ওয়েবসাইটে আলাপ হয়েছিল। matchmakers.com না কি একটা যেন নাম। তারপর আস্তে আস্তে কলেজে বন্ধুত্ব টা বাড়ে।
– স্ট্রেঞ্জ!
– কেন? স্ট্রেঞ্জ কেন?
– না মানে… শ্রীলেখা দেবীর সাথে সুবীর বাবুর আলাপ ডেটিং সাইটে। আবার এদেরও আলাপ ডেটিং সাইটে। অদ্ভুত Coincidence!
– এ আর এমন কি।
– হুম। এবার বাকিদের সম্পর্কে বলো।
– আর বাকি বলতে দু’জন। আমি আর শুভদ্বীপ।
– শুভদ্বীপ সম্পর্কে কিছুই জানিনা যে। কে এ?
– এ একটা ইন্টারেস্টিং ক্যারেক্টার।
– কেমন ? শুনি?
– এর শ্রীলেখার ওপর ক্রাশ ছিল। প্রোপোজও করেছিল। শ্রীলেখা না বলাতে বলেছিল আর কাউকে ওর সাথে থাকতে দেবে না।
– বাবাহ! এটা কি দীপাংশুর সাথে সম্পর্কের আগে না পরে?
– এটা তার পরের ঘটনা।
– তাহলে এ তোমাদের এরকম ক্লোজ সার্কেলের মধ্যে কীভাবে রয়েছে?
– আসলে দীপাংশুর সাথে শুভদ্বীপের খুব ভালো সম্পর্ক। ওর বাবা যখন মারা যায় তখন শুভদ্বীপ ওকে খুব সাপোর্ট করেছিল। Financially এবং Mentally ও।
– Interesting Character তো গো!
– প্রচন্ড!
ট্যাক্সি থেকে নামলাম আমরা দীপাংশুর বাড়ির সামনে। নেমেই শারদ্বত কাকে যেন ফোন করল।
বলল, “শারদ্বত হাজরা কথা বলছি”
– —
– বহুদিন পর লাইন পেলাম তোমার।
– —
– আমার একটা ছোট্টো সাহায্য লাগবে।
শারদ্বত আর কি বলল শুনতে পেলাম না। ফোন রাখার পর আমরা ঢুকলাম দীপাংশুর বাড়িতে।
দীপাংশু আমাদের দেখেই এগিয়ে এসে শারদ্বত কে বলল, “কালকের জন্য প্লিজ কিছু মনে করবেন না। কাল আসলে মাথার ঠিক ছিল না। তাই হয়তো…”
শারদ্বত বলল, “না না। It’s okay. চাপ নেই।”
দেখলাম সবাই অলরেডি চলে এসেছে। এবং আজকের আলোচনার বিষয়বস্তু ওই ফারহান এবং শ্রীলেখা। শারদ্বত গিয়ে সোফায় বসেই বলে বসল, “ফারহান শ্রীলেখাকে খুন করে নি By the way!”
সবাই হঠাৎ চুপ। সবাই এর ওর মুখের দিকে দেখছে।
শারদ্বত বলল, “ওহ… সরি… আমার পরিচয় টা দিয়ে দিই। আমার নাম শারদ্বত হাজরা। আমি একজন প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর।”
শুভদ্বীপ বলল, “এটাও আবার একটা পেশা নাকি এখন? গল্পের বইতে পড়তাম তো আগে!”
শারদ্বত হেসে বলল, “হ্যাঁ।”
শুভদ্বীপ বলল, “তা রোজগারপাতি হয়?”
শারদ্বত বলল, “চলে যায় আর কি!”
দীপাংশু বলল, “শারদ্বত বাবু আপনি বলছেন ফারহান খুন করে নি। কিন্তু পুলিশ তো ওকে নিয়ে গেল। ওর ঘরে রিভলবারও পাওয়া গেল!”
শারদ্বত বলল, “হ্যাঁ। তা পাওয়া গেছে। কিন্তু তাও আমি বলছি ও খুন করেনি। ওকে ফাঁসানো হচ্ছে!”
মানালি বলল, “এত পুরো ফেলুদার গল্প মনে হচ্ছে!”
সপ্তর্ষি বলল, “আপনি বলছেন মানে বুঝলাম না। আপনি কি করে জানলেন যে ফারহান খুন করেনি?”
শারদ্বত বলল, “ও রিভলবার ধরতেই জানেনা। ওর আঙুল দেখে মনে হল ভালো গীটার বাজাতে পারে। কিন্তু রিভলবার টা একদম পারে না! কাজেই পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে খুন করা ওর পক্ষে সম্ভব নয়।”
দীপাংশু বলল, “হ্যাঁ। ও খুব ভালো গান করতে পারে, গীটারও বাজাতে পারে!”
শারদ্বত বলল, “পুলিশ হয়তো আজকেই ছেড়ে দেবে ওকে!”
শুভদ্বীপ বলল, “তা গোয়েন্দাবাবু? খুন দু’টো কে করল সেটা আপনি জানেন কী?”
শারদ্বত বলল, “না। তা জানি না। তবে জেনে যাবো। কালকেই।”
শুভদ্বীপ বলল, “তাই নাকি? কীভাবে?”
শারদ্বত হেসে বলল, “আরে আজ সকালে তানিয়া ভিলা গিয়েছিলাম। ওদের ওখানে তো সিসিটিভি আছে। রিসেপশনের কম্পিউটারে সব সেভ থাকে শুনলাম। আজ ওদের লোক নেই কেউ। তাই বের করতে পারলো না। কাল বলেছে ১০ টার দিকে গেলেই পেয়ে যাবো।”
সপ্তর্ষি বলল, “কীভাবে পাবেন বুঝলাম না। মানে সিসিটিভি কি ঘরের মধ্যেও আছে নাকি?”
শারদ্বত বলল, “না তা নেই। তবে পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট বলছে খুন টা হয়েছে সন্ধ্যে ৬ টা থেকে ৭ টার মধ্যে। ওই টাইমে ওদের রুমে কে ঢুকেছিল দেখলেই তো বোঝা যাবে খুন টা কে করেছে!”
দীপাংশু এবার বলল, “কিন্তু আপনি যে বললেন আমাদের ক্লোজ সার্কেলের মধ্যে কেউ…
শারদ্বত বলল, “Please don’t mind ওটা। আমার মনে হয় বাইরের কেউই কাজ টা করেছে। আপনারা শুধু শুধু কেনই বা এটা করতে যাবেন!”
৬
দীপাংশুদের বাড়ি থেকে ডিনার করেই বেরোলাম। পৌনে দশটা বাজে। অনলাইনে ক্যাব বুক করব কিনা জিজ্ঞেস করতে শারদ্বত বলল কোনো দরকার নেই। ট্যাক্সি নেবো আমরা। ট্যাক্সিতে উঠে শারদ্বত বলল, তানিয়া ভিলা চলুন।
আমি ভুরু কুঁচকে বললাম, “সকালে তো গিয়েছিলে বললে ওখানে। এখন আবার কেন?”
শারদ্বত বলল, “আরে চলোই না। দেখতে পাবে।”
একটা ফোন এল শারদ্বতর। ফোন টা তুলে শারদ্বত বলল, “হ্যাঁ পার্থদা কিছু পাওয়া গেল?”
ও প্রান্ত থেকে কি বলা হল জানিনা। কিছু শুনতে পেলাম না।
শারদ্বত বলল, “হুম। বুঝলাম। Interesting! আমাকে একটু Whatsapp করতে পারবেন ছবিগুলো?”
– —
– Thanks.
ফোন রাখার পর জিজ্ঞেস করলাম, “কে ছিল এটা?”
শারদ্বত বলল, “তোমায় শার্লক কমিউনিটির কথা বলেছিলাম মনে আছে। সারা পৃথিবী জুড়ে প্রত্যেক দেশের একজন করে শার্লক হোমস্।”
আমি বললাম, “হ্যাঁ। আর তুমি নাকি আমাদের দেশের শার্লক হোমস্!”
শারদ্বত বাঁকা হাসি হেসে বলল, “পার্থ দা হচ্ছে ওই কমিউনিটির একজন Devoted Member. খুব কম সময়ই ওনাকে লাইনে পাওয়া যায়। আজ পেলাম বহুদিন পর।”
“কি করেন উনি?” আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম
– সব জানতে পারবে। একটু সবুর করো।
আমরা যখন তানিয়া ভিলাতে ঢুকলাম তখন বাজে ১০ টা ১৫। এত রাতে আমরা এখানে কী করছি তাই জানি না। একজন গেট কিপার ছিল। তাকে শারদ্বত কি একটা বলে ১০০ টাকা দিতেই সে গেট থেকে সরে গেল। এই ছেলেটা পারে বটে। এবার রাতদুপুরে কি খেল দেখাবে কে জানে?
রিসেপশনের কাছে অন্ধকারের মধ্যে আমরা বসে আছি ঘাপটি মেরে। তানিয়া ভিলার মেন গেটটা খোলা। তালা দেওয়া নেই। এটাও কি শারদ্বতর কীর্তি নাকি?
ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “কতক্ষন বসে থাকতে হবে এভাবে?”
শারদ্বত ঠোঁটে আঙুল দিয়ে চুপ করতে বলল।
কতক্ষন এভাবে বসে ছিলাম জানিনা। একটু ঘুম ঘুম পাচ্ছিল। ঝিমুনি আসছিল। হঠাৎ শারদ্বতর কনুই এর খোঁচায় চোখ খুলে দেখলাম একটা ছায়ামূর্তি পা টিপে টিপে ঢুকছে তানিয়া ভিলাতে। তারপর সে এগিয়ে এল রিসেপশনের কম্পিউটারের দিকে। শারদ্বত এই সময় ফোন বের কাকে একটা মেসেজ করল, “It’s Showtime!”
রিসেপশনের কম্পিউটার টা চালু করা হতেই শারদ্বত পেছন থেকে হাত বাড়িয়ে লাইটের সুইচ টা দিয়ে দিল। তারপর বলল, “কি ব্যাপার মানালি দেবী? এত রাত্রে তানিয়া ভিলায়? আবার বিয়ে করবেন নাকি?”
শারদ্বতর কথাটা শুনে মানালি যতটা চমকে পেছনে তাকিয়েছে আমিও ততটা চমকে গিয়েছি ওকে দেখে। ও এত রাত্রে এখানে কী করছে? অনেক সময় এরকম হয় কোনো একটা চিন্তা আমাদের মাথার মধ্যে আস্তে চায় কারন সেটাই সত্যি। কিন্তু খুব কঠিন সত্যি টা কে আমরা আটকে দিই। আস্তে দিই না মনে। ভাবি আমাদেরই বোধহয় কোনো ভুল। ঠিক এরকম টাই হচ্ছিল আমার। শুধু মনে হচ্ছিল ঠিক দেখছিই তো?
মানালি পেছন ঘুরেই বলল, “আমি তো… ওই যে… আপনি বললেন না যে সিসিটিভি ক্যামেরা তে রয়েছে কে খুন করেছে শ্রীলেখাকে সেটা দেখতেই এলাম। খুব কৌতূহল হচ্ছিল আসলে।”
শারদ্বত বলল, “ওহ তাই বুঝি? একসাথে দেখবেন নাকি? চলুন দেখি!”
মানালি বলল, “না না… থাক। কালকে আপনার মুখ থেকেই শুনব না হয়! আসি আজ।”
“আরে দাঁড়ান দাঁড়ান। যাবেন তো” শারদ্বত বলল, “এত তাড়া কীসের? এত ঠান্ডায় রাত্রে কষ্ট করে বেরিয়েছেন শুনে যান কে খুন করেছে?”
আমি এবার অতি কষ্টে বললাম, “মানালি… তুই… শ্রীলেখা কে… খুন…
মানালি বলল, “ধুর! কী বলছিস অনিরুদ্ধ? আমি কেন শ্রীলেখা কে খুন করতে যাবো?”
শারদ্বত বলল, “হ্যাঁ। শ্রীলেখা কে খুন করার উদ্দেশ্য ওনার ছিলই না। উনি চেয়ে ছিলেন সুবীরবাবুকে খুন করতে।”
মানালি হেসে বলল, “শারদ্বত বাবু আপনিও না! খুব ভালো গল্প বলতে পারেন! এই আমি এবার বেরোই। অনেক রাত হয়ে গেল আজ।”
শারদ্বত বলল, “হ্যাঁ। বেরোবেন তো দাঁড়ান। পুলিশের গাড়ি ওয়েট করছে বাইরে। পৌঁছে দেবে আপনাকে।”
মানালির মুখ টা এবার হঠাৎ শুকিয়ে গেল। ও বলল, “পুলিশ! পুলিশ কেন?”
আমি বললাম, “কিন্তু কেন? কেন ও খুন করল সুবীর কে?”
শারদ্বত বলল, “কারন আমার ধারনা সুবীর ওকে দিনের পর দিন ব্ল্যাকমেইল করছিলেন।”
– ব্ল্যাকমেইল? কীভাবে?
“ডেটিং ওয়েবসাইটে ভুল ভাল কিছু ছবি পাঠিয়েছিলেন উনি সুবীর কে। তখন আস্তে আস্তে ব্যাপার টা মিটে যায়। কিন্তু যখন সুবীর দেখে ওর স্ত্রী এর বন্ধু মানালি। তারপরেই পুরোনো ফটো নিয়ে ব্ল্যাকমেইল করতে থাকেন ওকে। তাই না মানালি দেবী?”
মানালি তখন খুব জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে।
তারপর আর উপায় নেই দেখে ও বাধ্য হয়ে বলল, “হ্যাঁ। দিনের পর দিন আমাকে ব্ল্যাকমেইল করছিল ও। টাকা চাইছিল। বলছিল না হলে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেবে ওসব ফটো।”
আমি বললাম, “তুই সাইবার ক্রাইমে জানাতে পারতিস। তাই বলে তুই একটা জলজ্যান্ত মানুষ খুন করে দিলি?”
– “আমার বিয়ের আগে আমি চাইছিলাম না এসব কিছু করতে। সব জানাজানি হত আমার বিয়েটাও ভেঙে যেত। দীপাংশু কে আমি খুব ভালোবাসি রে। বিশ্বাস কর আমাকে!”
শারদ্বত বলল, “সেদিন উনি শ্রীলেখার ঘরে গিয়েছিলেন সুবীর কে Confront করতে। এই ব্ল্যাকমেল টা বন্ধ করতে। সাথে নিয়ে গিয়েছিলেন একটা রিভলবার। রিভলবার টা উনি খুব ভালোই চালাতে জানেন সেটা আমি জানি। কারন আজ সকালেই আমি দীপাংশুবাবুর Shooting School এ গিয়েছিলাম। ওখানেই দেখলাম স্বামী স্ত্রী দু’জনে একসাথেই ভর্তি হয়েছিলেন Shooting Class এ।”
মানালি বলল, “শ্রীলেখা কে আমি মারতে চাইনি বিশ্বাস করুন। ও হঠাৎ করে চলে এল ঘরে। আমি বুঝতে পারিনি আর কি করব!”
শারদ্বত বলল, “করলাম বিশ্বাস। মিস্টার মিত্র চলে আসুন। নিয়ে যান আপনার আসামী কে।”
কথাটা বলতেই ভেতরে এলেন কাশীপুর থানার ওসি মিস্টার মিত্র সাথে একজন মহিলা কনস্টেবল।
মানালি যাওয়ার আগে বলল, “সিসিটিভি ক্যামেরার কথা ভাবা উচিত ছিল আমার। একদম খেয়াল ছিল না এটার কথা।”
শারদ্বত হেসে বলল, “তানিয়া ভিলার সিসিটিভি ক্যামেরা গুলো মাস ছ’য়েক হল খারাপ”
আমি বললাম, “কিন্তু তুমি যে বললে…
শারদ্বত হেসে বলল, “ওটা তো টোপ ছিল। ওটা না দিলে বঁড়শি তে মাছ পড়ত নাকি?”
মানালি কে নিয়ে যাওয়ার পর আমরাও বেরোলাম তানিয়া ভিলা থেকে। মনটা খারাপ লাগছিল খুব। মানুষ চেনা খুব কঠিন। আজ জিজ্ঞেস করতেও ইচ্ছে করছিল না শারদ্বত কীভাবে বুঝলো মানালিই যে খুনী।
একটু পর শারদ্বত নিজেই বলল, “আজ দীপাংশুর বাড়িতে যখন সিসিটিভি ক্যামেরার কথাটা বলছিলাম তখন সবার মুখের এক্সপ্রেশন খেয়াল করছিলাম আমিই। দেখলাম মানালির মুখটা আস্তে আস্তে শুকিয়ে যাচ্ছে ভয়ে। তখনই বিশ্বাস টা দৃঢ় হল যে কাজ টা ওর। কিন্তু মোটিভ বুঝতে পারছিলাম না। Jealousy র জন্য খুন? কেন জানিনা মন টা ঠিক মানতে চাইছিল না।”
“তারপর? কীভাবে পেলে মোটিভ?” আমি না জিজ্ঞেস করে পারলাম না।
শারদ্বত বলল, “ওই তো। পার্থ দা। আমাদের শার্লক কমিউনিটির Ethical Hacker. অন্ধকারের মধ্যে থেকে আলোর রেখা পেলাম ওর ফোনে। ওকে ডিটেইল দিতেই ও সব বের করে ফেলল। ও জানালো সুবীর আর মানালির কানেকশন। আর ভুল ভাল ছবি শেয়ারের গল্প। তখনই মোটিভ পরিস্কার হয়ে গেল! খুন করে রিভলবার লোকানো হল ফারহান এর ঘরে।”
“বুঝলাম” আমি বললাম।
শারদ্বত বলল, “এবং খুব ভুল যদি না করি তানিয়া ভিলা থেকে সেদিন রাত্রেই মাইতি বাবুর কাছে একটা ফোন যায়। এবং বলা হয় ফারহানের ঘর চেক করলেই মার্ডার ওয়েপন পাওয়া যাবে। মাইতি বাবু হিরো হওয়ার লোভ সামলাতে না পেলে সেই টোপ এই পা দিলেন।
আমি কিছু বলতে পারলাম না! সত্যি মানুষ চেনা বড় দায়! খুন করেও ক্ষান্ত হল না মানালী। তার ওপর একজন নির্দোষ মানুষকেও ফাঁসালো?
শারদ্বত একটু থেমে নিজেই জিজ্ঞেস করল, “দীপাংশু কে কী বলবে ভাবছো?”
আমি বললাম, “জানিনা! ও হয়তো আমাকে ক্ষমা করবেনা কখনও। বন্ধুত্বটাও শেষ হয়ে গেল বোধহয়।”
শারদ্বত বলল, “এটাই তো জীবন অনিরুদ্ধ। কিছু বন্ধুত্ব অল্প কিছুদিনের জন্য। আর কিছু বন্ধুত্ব সারা জীবনের জন্য।”
আমি শারদ্বতর দিকে তাকালাম। ওর চোখ রাস্তার দিকে। মাঝে মাঝে ভালো কথা বলে ছেলেটা।
আমি বললাম, “তুমি বললে তুমি আজ সকালে F1 Shooting Class এ গিয়েছিলে।”
– হ্যাঁ গিয়েছিলাম তো।
– ওরা তুমি চাইতেই ওদের Student List দেখিয়ে দিল তোমায়?
শারদ্বত একটা সিগারেট ধরাতে ধরাতে বলল, “প্রথমে দিতে চাননি। তারপর ওদের অফিসার ইন চার্জ কে বললাম ওঁর সাথে রিসেপশনিস্ট এর বিবাহ বহির্ভূত ব্যাপার টা ওঁর স্ত্রী কে জানিয়ে দেব। তারপরেই দিয়ে দিলেন।”
আমি অবাক হয়ে বললাম, “মানে? এটা আবার তুমি কীভাবে বুঝলে?”
শারদ্বত বলল, “রিসেপশনিস্ট এর পারফিউমের গন্ধ ওনার কাছেও পেলাম। তাই অন্ধকারে ঢিল ছুঁড়লাম একটা।”
– What? Seriously?
– হ্যাঁ। সত্যি! এগুলো ক্লাসিক শার্লক হোমস ডিডাকশন! ওঁর থেকেই শেখা!
– ইয়ার্কি মেরো না! পারফিউম?
– হ্যাঁ। Why Not?
আমি বললাম, “বিশ্বাস করি না আমি! গল্প দিচ্ছো তুমি!”
শারদ্বত বলল, “বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর! বিরিয়ানি খাবে?”
আমি বললাম, “এত রাতে কে দেবে তোমায় বিরিয়ানি?”
শারদ্বত বলল, “সবই যদি তুমি জানবে, তাহলে আমার নাম শারদ্বত হাজরা কেন হবে?”
সব সময় শো অফ! তবে বিরিয়ানি পাওয়ার লোভে এই কথাটা আর বললাম না। ওই যে একটা গান আছে না?
কথা কিছু কিছু, চেপে যেতে হয় সে তো মুখে বলা যায় না!