“ওই সরে যা। বসব”
ব্যাগ থেকে সবেমাত্র সুকুমার সেনকে বের করে একটু বাজিয়ে দেখছিলাম। তখনি মেয়েলি গলার গর্জন শুনে মুখ তুললাম। তারপর এদিক তাকিয়ে দেখলাম যথেষ্ট জায়গা খালি আছে আশেপাশের বেঞ্চগুলোতে। তাও হঠাৎ আমার কাছে বসার জন্য একটা মেয়ের আগ্রহ দেখে বেশ ভাল লাগল। এমনিতেই ইউনিভার্সিটিতে আজ আমার প্রথম ক্লাস। আগে একদিন ক্লাস হয়েছে। কিন্তু সেদিন আসতে পারিনি। তাই কাউকেই তেমন চিনিনা। যদিও চেনার কথাও নয়। কারন এর আগে আমি থাকতাম মেদিনীপুরে। পড়াশুনো করেছি বিদ্যাসাগর ইউনিভার্সিটির কলেজে। এই কয়েকদিন হল কলকাতায় এসেছি।
“কিরে? কি হল? সরে বসতে বললাম যে!”
বসলাম সরে। সাথে একটা আধ গাল হাসি ফ্রি দিলাম। মেয়েটি দেখতে বেশ মিষ্টি। তবে একটা ‘রাফ এন্ড টাফ’ ব্যাপারও আছে চোখ মুখে। আর আছে চোখে একটা চশমা।
তার একটু পরেই ক্লাসে স্যার এলো। আমি সারা ক্লাস টা বসে বসে ভাবলাম এত জায়গা থাকতে মেয়েটা আমার কাছে বসল কেন? টিফিন ব্রেক এর সময় বেঞ্চ থেকে উঠে বেরোতে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ আবার বাজখাঁই গলায় প্রশ্ন।
– কোথায় যাচ্ছিস?
– আমি?
– নাহ তোর বাবা কোথায় যাচ্ছে জিজ্ঞেস করছি।
ঢোক গিলে বললাম, “আমি তো ক্যান্টিন যাচ্ছি।”
উত্তর এল, “দাঁড়া আমিও যাবো।”
আমাকে তখন আর পায় কে? প্রথম দিন ইউনিভার্সিটি তে এসে একটা মেয়ে আমার সাথে একসাথে যাচ্ছে ক্যান্টিন এ। কার মুখ দেখে সকালে উঠেছিলাম আজ! আসলে কলেজে তো মেয়েরা আমার সাথে কথাই বলত না ভালো করে। তাই এই জিনিস আমার কাছে নতুন একেবারে।
কলেজে যদিও আমার একটা মেয়ে কে খুব ভালো লেগেছিল ফার্স্ট ইয়ার এ। মেয়েটার নাম পায়েল। একবার কলেজের ব্যালকনি তে দাঁড়িয়ে মেয়েটার দিকে তাকিয়েছিলাম। মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে হেসেছিল। আমিও পালটা হাসি বিনিময় করেছিলাম। সেদিন রাত্রে বাংলা টিউশন থেকে ফেরার সময় ৩ জন ছেলে ঘিরে ধরেছিল আমাকে রাস্তায়।
তাদের কে আমি কলেজেই দেখেছি। ক্লাস করেনা। শুধু ইউনিয়ন রুমেই থাকে। আমাকে বলল, “এই শালা তুই আমার গার্লফ্রেন্ডের দিকে তাকিয়ে হেসেছিস?”
আমার তখন ইয়ে হাতে চলে এসেছে। আমি বললাম, “কে? কই না তো? কে তোমার গার্লফ্রেন্ড?”
ছেলেটা বলেছিল, “পায়েল। তোর সাথেই পড়ে। বাংলা অনার্স। চিনিস না?”
আমি বললাম, “হ্যাঁ চিনি। কিন্তু ওই তো আমার দিকে তাকিয়ে হাসল আগে। তারপর আমি হেসেছি।”
ছেলেটি বলল, “তার মানে তুই কি বলছিস? আমি ওকে ক্যালাবো? ও আমার বউ হবে রে বউ! তোর বৌদি হয়! শোন… আজ ছেড়ে দিলাম। এর পর যদি কোনোদিন ওর সাথে কথা বলেছিস রক্তগঙ্গা বয়ে যাবে!”
আমি ঘাড় নামিয়ে বলেছিলাম, “আচ্ছা!”
তারপর থেকে সত্যি আর সাহস হয় নি পায়েলের দিকে তাকানোর। তবে ও দু’একবার তাকিয়েছে আমার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে। আমি চোখের পাতাও ফেলিনি। আপনি বাঁচলে প্রেমের নাম।
“ওই, দেখে চল। ধাক্কা খাবি!” আমার হাতে একটা হাতের ছোঁয়া পেয়েই ঘোরটা কাটল। দেখলাম সত্যি ধাক্কা খেতাম সামনে একটা পিলার এর সাথে। ও হাত টা ধরল বলে থেমে গেছি।
২
ক্যান্টিন এ গিয়ে এগ চাউমিন অর্ডার করলাম। ও কফি অর্ডার দিল। তারপর আমার দিকে ফিরে বলল, “নাম কি তোর?”
আমার খেয়াল এতক্ষন হয়ে গেল তাও নামটাও জিজ্ঞেস করা হয় নি। সত্যি! কি যাতা! বললাম, “আমার নাম সৌরভ। সৌরভ চ্যাটার্জী। তোর?”
– আমার কী?
– তোর নাম কী?
– আমার নাম হৈমন্তী।
আবার কিছুক্ষন দু’জনেই চুপ। আমার চাউমিন আর ওর কফি তখনও দিয়ে যায় নি। আমি বললাম, “কোথায় থাকিস?”
ও বলল, “ভবানীপুর। তুই কোথায় থাকিস?”
আমি বললাম, “কলকাতায় থাকি হাতিবাগান এ। কিন্তু আসল বাড়ি মেদিনীপুর এ।”
হৈমন্তী এবার বলল, “কেন? নকল বাড়িতে থাকিস কেন কলকাতায়?”
আমি হেসে বললাম, “আরে না না মানে…
কথাটা শেষ করার আগেই দেখলাম একটা লম্বা মতন ছেলে এসে আমাদের টেবিল টায় বসল। পাশে তাকিয়ে দেখলাম এখনও দু’টো টেবিল সম্পূর্ণ খালি। কিন্তু তাও আমাদেরটায় এসেই বসল ও। তারপরেই আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “ভাই, যা… ক্লাসে যা… আমার ওর সাথে একটু কথা আছে।”
আমি ঢোক গিললাম। মনে পড়ল কলেজের ঘটনাটার কথা। কলকাতায় আসার আগে বাড়ি থেকে কানে কামড়ে বলে দিয়েছে। কলকাতা খুব খারাপ জায়গা। কোনো ঝামেলাতে জড়াবে না। কাজেই আমি চলে যাওয়াটাই শ্রেয় বলে মনে করলাম। চেয়ার ছেড়ে উঠতে যাবো। পাশ থেকে হৈমন্তী আমার হাত টা ধরল। বলল, “বোস তুই। চাউমিন টা খাই আগে তারপর একসাথে ক্লাসে যাবো।”
আমি আবার ঢোক গিললাম। হৈমন্তী এমন ভাব করছে যেন পাশে বসে থাকা ছেলে টা কে দেখতেই পাচ্ছে না। ছেলেটি এবার ওর দিকে তাকিয়ে বলল, “আমার একটু কথা আছে তোমার সাথে।”
হৈমন্তী বলল, “হ্যাঁ। ওর সামনেই বলতে পারো। আমার কোনো অসুবিধে নেই।”
ছেলেটি বলল, “আমার অসুবিধে আছে। কথাগুলো একটু ব্যক্তিগত কথা।”
হৈমন্তী বলল, “তাহলে না বলাই ভালো।”
এতক্ষনে আমাদের চাউমিন দিয়ে গেল। সাথে ওর কফিও। হৈমন্তী আমার প্লেট থেকে এক চামচ চাউমিন খেলো। তারপর বলল, “ভালো করেনি খুব একটা। তোকে একদিন অ্যাকাডেমির সামনে যে চাউমিন বানায় ওটা খাওয়াবো। আমার খুব ভালো লাগে।”
আমি বললাম, “আচ্ছা!”
ছেলেটি আমার দিকে কটমট করে তাকিয়ে চলে গেল। তারপর নীচু হয়ে নিশ্চিন্ত মনে প্লেট থেকে চাউমিন তুলতে যাচ্ছি হঠাৎ মাথায় একটা চাঁটি খেতেই চামচ থেকে চাউমিন টা আবার পড়ে গেল প্লেট এ। বিরক্ত হয়ে বললাম, “কী হল মারলি কেন?”
হৈমন্তীর ভুরু কুঁচকে গেছে। ও বলল, “তুই আমায় ওই ছেলেটার সাথে একা ছেড়ে চলে যাচ্ছিলি?”
আমি বললাম, “আরে ও এমন ভাবে বলল…”
হৈমন্তী বলল, “ভীতুর ডিম তুই একটা!”
৩
কয়েকদিন পর শুনলাম ওই ছেলেটি এখানের বিরাট হোমরা চোমরা কেউ একটা। ওর নাম বুলেট। আর পদবী দে। ছেলেটার স্কুল লাইফ টার কথা ভেবে মায়া হল। ছেলে টা সেদিন রাত্রে এবং তার পরেও কয়েকদিন হৈমন্তী কে মেসেজ করেছে। কোত্থেকে নাম্বার পেয়েছে জানা যায় নি। হৈমন্তী আমাকে দেখালো চ্যাট গুলো। সব গুলোই ওই “Hi,” “hey sexy” “hello beautiful” “tok to me please” এই জাতীয় মেসেজ। নাহ টক বানান টা আমি ভুল লিখিনি। ওটাই লেখা ছিল চ্যাটে।
এরও দিন কয়েক পরে আমাকে সৌরদীপ বলল, “ভাই আমাকে একটা হেল্প করবি?”
সৌরদীপ আমার সাথেই পড়ে ইউনিভার্সিটি। এমনিতে খুব একটা কথা বলে না যদিও আমার সাথে। তাও আজ হঠাৎ বলল দেখলাম।
আমি বললাম, “হ্যাঁ বল।”
– না মানে… আমি আসলে…
– আরে কী হয়েছে বল…
– কাউকে বলবি না তো! প্রমিস কর।
– আরে হ্যাঁরে। বল না কী কেস?
সৌরদীপ এদিক ওদিকে তাকিয়ে ফিসফিসে গলায় বলল, “হৈমন্তী কারুর সাথে প্রেম করে?”
আমি বললাম, “নারে। ওরকম তো কিছু শুনিনি। কেন বল তো?”
সৌরদীপ বলল, “আমার না দারুন লাগে ওকে। একটু জিজ্ঞেস করবি বয়ফ্রেন্ড আছে কিনা!”
আমি এবার একটু দোটানায় পড়লাম। হৈমন্তী আমার ভালো বন্ধু ঠিক আছে। কিন্তু এইভাবে সরাসরি এসব জিজ্ঞেস করলে যদি কিছু মনে করে!
আমি বললাম “দেখ ভাই, তুই নিজে জিজ্ঞেস কর না। আমি আসলে…।”
সৌরদীপ আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, “না না। প্লিজ। তুই জিজ্ঞেস কর। তোর ভালো বন্ধু। তোর সাথেই ঘোরে সব সময় ও। তোকে স্বপন স্যারের সব নোটস্ আমি দিয়ে দেবো।”
স্বপন স্যার আমাদের ইউনিভার্সিটির বাংলার প্রোফেসর। ওর নোটস্ না লিখলে উনি নাকি নাম্বার দেন না। আবার ওর নোটস্ উনি শুধু ওঁর কাছে যারা পড়ে তাদেরই দেন। আর আমার বাবার কড়া হুকুম “তাবেদারি করে নাম্বার পেতে হবে না। যা পাবে নিজের যোগ্যতা তেই পাবে।” সেই জন্যেই আমি সেই সব অভাগা দের একজন যে স্বপন স্যারের কাছে পড়ে না।
প্রস্তাব টা খুব একটা খারাপ লাগল না। বললাম “আচ্ছা ঠিক আছে। আমি জিজ্ঞেস করবো।”
৪
সেদিন বিকেলেই হৈমন্তী বলল, “চল নন্দন যাই! তোকে সেই চাউমিনটা খাওয়াবো বলেছিলাম তো। আজ খাওয়াবো চল।”
আমি আপত্তি করিনি। ফ্রী খাবারে আমি খুব একটা না বলি না। গেট থেকে বেরোবার সময় দেখলাম সেই বুলেট দাঁড়িয়ে দেখছে আমাদের দিকে। হৈমন্তী ইচ্ছে করে আমার হাত টা ধরে নিল গেটের সামনে। তারপর একটু পর ছেড়ে দিল।
আমি বললাম, “কী হল এটা করে?”
হৈমন্তী বলল, “মজা!”
অ্যাকাডেমির সামনে চাউমিন টা সত্যি খুব ভালো বানায়। চিকেন চাউমিন এর ওপর চিলি চিকেন এর গ্রেভি দিয়ে দেয় অল্প করে। দারুন লাগে খেতে। খেতে খেতে বললাম, “শোন না… একটা কথা জিজ্ঞেস করার আছে তোকে।”
হৈমন্তী এক চামচ চাউমিন মুখে তুলে বলল, “হ্যাঁ বল।”
আমি বললাম, “কিছু মনে করবি না তো?”
হৈমন্তী বলল, “নেকুপুষু আমার। বল তো। বেশি ভাটাস না!”
আমি আমতা আমতা করে বললাম, “বলছিলাম যে… তোর ইয়ে… মানে… প্রেম করিস তুই? বয়ফ্রেন্ড আছে তোর?”
হৈমন্তীর ভুরুটা কুঁচকে গেল প্রশ্ন শুনে। বলল, “কেন বল তো?”
– না… এমনি… তেমন কোনো কারন নেই…
কথাটা বলার পরেই মাথায় আবার একটা চাঁটি। আমি কিছু বলার আগেই ও বলল, “গল্প দিস না। কেন বল? এক্ষুনি বল!”
আমি বিরক্ত হয়ে বললাম, “সৌরদীপের তোকে ভালো লাগে তাই তোকে জিজ্ঞেস করতে বলেছিল। সেই জন্যেই আর কি…”
হৈমন্তী খানিকক্ষন চুপ করে থেকে বলল, “ওকে বলিস আমাকে মেসেজ করতে। বাকি কথা ওর সাথেই বলব। তুই বেশি দালালি করিস না মাঝখানে।”
কথাটা শুনেই আমার ঝাঁট জ্বলে গেল। আমি আর কিছু বললাম না।
সেদিন রাত্রেই খবর পেলাম আমার ঠাকুমা মারা গিয়েছে। পরের দিনই ভোরবেলা বেরিয়ে চলে গেলাম বাড়ি। বাড়িতে গিয়ে আবার আর এক কেলো। চুল কাটতে হবে। মানে নেড়া হতে হবে। আমি প্রতিবাদের স্বরে বললাম, “আমি ওসব নেড়া ফ্যাড়া হতে পারব না!”
মা একটু বাওয়াল দিলো। কিন্তু আমি আর আমার চুল দু’জনের তীব্র প্রতিবাদে এবং বাবার হস্তক্ষেপে শুধুমাত্র হাতের এবং পায়ের নখ কাটা অবধিই সীমাবদ্ধ থাকলো সবটা।
মাঝে ২ দিন নিজে থেকেই মেসেজ করেছিলাম হৈমন্তী কে। জিজ্ঞেস করেছিলাম সব ক্লাস হচ্ছে? আমার প্রক্সি পড়েছে একটাও? উত্তর এল যথাক্রমে হ্যাঁ এবং না। ও সেদিনের পর আমার সাথে আর কথা বলেনি ভালো করে। আমিও রাগ দেখিয়ে কিছু বলিনি।
৫
সেদিন ইউনিভার্সিটি তে ঢুকে কয়েকটা অদ্ভুত দৃশ্য দেখলাম। ক্লাসে সৌরদীপ আর হৈমন্তী একসাথে বসে। খুব হাসছে দু’জনে কথা বলতে বলতে।
আমাকে দেখে সৌরদীপ বলল, “ভাই ভালো তো?”
আমি বললাম, “হ্যাঁ। চলছে রে”
তারপর হৈমন্তীর দিকে তাকিয়ে দেখলাম ও নিজের ফোন নিয়ে ব্যস্ত। আমাকে যেন দেখতেও পেল না এরকম ভাব করল। আমিও আর কিছু বলিনি। সেদিন বুঝলাম ইউনিভার্সিটি গিয়ে থেকে আমার আর একটাও ভালো বন্ধু হয় নি। হৈমন্তী ছাড়া।
৩ টে ক্লাসের পর ক্যান্টিনে গিয়ে আমি আবার অবাক। দেখলাম বুলেট আর হৈমন্তী বসে আছে একসাথে। আমি আর থাকতে পারলাম না। কাছে গিয়ে হৈমন্তীর দিকে তাকিয়ে বললাম, “তোর সাথে কিছু কথা আছে আমার।”
হৈমন্তী বলল, “হ্যাঁ বল।”
আমি বললাম, “এখানে না। একটু আলাদা বলতে চাই।”
হৈমন্তী বলল, “আলাদাই তো আছি। বুলেটের সামনেই বল। চাপ নেই।”
আমি বললাম, “নাহ। ওর সামনে হবে না।”
হৈমন্তী এবার বলল, “তাহলে ছাড়। বলতে হবে না।”
আমি কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলাম। তখনই বুলেট আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “যা বেটা… ক্লাসে যা… বলতে হবে না বলল তো ও।”
হৈমন্তী কিছু বলল না। আমার মাথা গরম হচ্ছে আমি বুঝতে পারছি। বুলেট আবার বলল, “কী হল বাবু? দুধ খাবি? দাঁড়া দিতে বলছি… এই ভাই… একে এক গ্লাস দুধ দিও তো!”
সহ্যের বাঁধ ভাঙা বোধহয় একেই বলে। আমি তক্ষুনি কষে থাপ্পড় মারলাম বুলেট কে। তারপর নাকে মারলাম ঘুঁষি। ওর মাথাটা দেওয়ালে ঠুকে গেল।
সবাই খুব অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি নিজেও খুব অবাক হইনি তা নয়। কিন্তু যে কাজ টা করলাম সেটার পরিনতির কথা ভাবলে বোধহয় ভালো হত। বুলেট প্রথম টা হকচকিয়ে গিয়েছিল ঠিকই। তারপরে উঠে আমায় খুব জোরে ধাক্কা মারল। আমি পড়লাম পেছনের টেবিলে। তারপর মাটিতে। তারপর কাছে এসে খুব জোরে লাথি মারল আমার পাঁজরে। যন্ত্রনায় কুঁকড়ে গেল শরীর টা। তক্ষুনি দেখলাম হৈমন্তী বুলেট কে ঠেলে দিয়ে বলল, “হয়েছে। অনেক হয়েছে। এবার থামো!”
তারপর আমার পাশে বসল ও। বুলেট তখনও ফুঁষছে। প্রচুর লোক জড় হয়েছে আশেপাশে বুঝতে পারছি। সবাই সিনেমা দেখতে পাচ্ছে। সেই সুযোগ আর কেউ ছাড়ে। আমি ওঠার চেষ্টা করলাম। কিন্তু যন্ত্রনাটা তখনও হচ্ছিল। বুলেট বলল, “তোকে শালা আমি দেখে নেবো। আজ ইউনিভার্সিটির বাইরে বেরো!”
হৈমন্তী পেছন ফিরে চেঁচিয়ে বলল, “ওর গায়ে একটা হাত পড়লে তোর বিরুদ্ধে সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট এর কেস দেবো আমি। সব মেসেজ আছে আমার ফোনে!”
জোঁকের মুখে নুন পড়ল মনে হল। বুলেট বেরিয়ে গেল ক্যান্টিন থেকে। আমি আস্তে আস্তে উঠে বসলাম। হৈমন্তী আমার দিকে ফিরে বলল, “ঠিক আছিস?”
ঘাড় নাড়লাম। তারপর বলল, “সৌরদীপ স্বপন স্যার এর নোটস দেবে বলে, ওর সাথে আমায় ভিড়িয়ে দিতে চেয়েছিলি?”
আমি কি বলব বুঝতে না পেরে ওকে কাছে টেনে নিলাম। আমার কাঁধে রাখলাম ওর কাঁধ। হ্যাঁ এটাকেই বোধহয় hug করা বলে। ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বললাম, “সরি।”
অনুভব করলাম পাঁজরের যন্ত্রনার পাশাপাশি আর একটা জায়গায় ব্যাথা লাগল হঠাৎ। বুঝতে পারলাম মাথার পেছনে চাঁটি মেরেছে হৈমন্তী। তারপর বলল, “ভীতুর ডিম তুই একটা!”