অভিনয় খুব কঠিন। তবে এক্ষেত্রে কঠিন শব্দটা আবার দুরকম ভাবে ব্যবহার করা যায়। পেশার খাতিরে যারা অভিনয় করেন তাদের টা অন্যরকম কঠিন। আবার নিজের ভেতরের অনুভূতি গুলোকে চেপে ধরে মারার সময়েই বাইরে হাসিমুখে কিছু হয়নির অভিনয় টা আলাদাই কঠিন। অদ্ভুত কষ্ট হয় তখন শরীরের ভেতর। জোরে জোরে নিঃশ্বাস পড়ে।
“এই তোকে সুজয় দা ডাকছে”
দীপান্বিতার কথায় চিন্তার তার কাটল আমার। সুজয়দা আমার রিপোর্টিং ম্যানেজার। উঠে গেলাম ওর ঘরে। কাঁচের দরজা ভেজানো ছিল, বললাম, “আসবো?”
সুজয় দা বলল, “হ্যাঁ এসো। বসো!”
বসলাম। বসার পরেই সুজয়দার প্রথম প্রশ্ন!
– কী হয়েছে তোমার?
– কেন বলতো?
– শরীর খারাপ?
– হঠাৎ শরীর খারাপের কথা কেন আসছে?
– একটু আগেই শুনলাম বাথরুমে গিয়েছিলে। প্রচন্ড হাঁফাচ্ছিলে, চোখে মুখে জল দিচ্ছিলে! কী হয়েছে?
একটু আগে মানে ওর ফোনটা আসার ঠিক পরের কথা বলছে সুজয় দা, সেটা বুঝতে পারলাম। বললাম, “হ্যাঁ আসলে শরীরটা ঠিক নেই। কাল আসলে ঠিক করে ঘুম হয় নি আর আজ সকাল থেকে কিছু খাইনি, তাই হয়ত…
সুজয় দা বলল, ” মানে? কেন খাওনি কেন?”
– ইচ্ছে করছিল না সুজয় দা।
সুজয় দা বলল, “শোনো অদ্রীশ, আজকের দিনটা অফ নাও! তোমার কিছু একটা হয়েছে বুঝতে পারছি। শেয়ার করতে ইচ্ছে না হলে আমি জোর করব না। কিন্তু আমার মনে হয় একটু ব্রেক দরকার তোমার!”
ব্রেক যে আমার দরকার। সেটা আমার চেয়ে ভালো কেউ জানে না। কিন্তু বলতে পারছিলাম না। আফটার অল প্রাইভেট অফিস তো!
চেয়ার থেকে উঠতে উঠতে বললাম, “Thank you সুজয় দা! thank you.”
সুজয় দা আর কিছু বলল না। তবে আমি বাড়ি গেলাম না। চলে গেলাম ছাদে। আমাদের অফিসের বিল্ডিং টা ১৬ তলা। ছাদ টা খুব সুন্দর। আর আজ সকাল থেকেই মেঘলা। গরমও খুব একটা নেই। এই সময়টা একটু একা থাকা প্রয়োজন।
ছাদ থেকে পুরো শহরটাকে বড্ড ছোটো লাগে। মনে হয় নীচে পুতুলের মত মানুষরা ঘোরাফেরা করছে। ছাদের একটা দিকে প্রাচীর নেই। খোলা ছাদ। আস্তে আস্তে গিয়ে দাঁড়ালাম সেদিকে। প্লিজ ভাববেন না, সুইসাইড করতে এসেছি। ওসব ভীতুরা করে। আমি ওসবে নেই।
খুব সুন্দর হাওয়া দিচ্ছে। বেশ ঠান্ডা হাওয়া। কাছেই কোথাও বৃষ্টি হয়েছে বোধহয়। হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠল পকেটে। বের করে দেখলাম, তার ফোন এসেছে। ধরব না ভাবতে ভাবতেও ফোনটা ধরে নিলাম। আবার অভিনয় করতে হবে। জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে গলায় একটা নকল উৎসাহ এনে বললাম, ” হ্যাঁ রে বল”
ওদিক থেকে সে বলল, “কী রে! কী করছিস!”
আমি বললাম, “এই তো অফিসে!”
ও বলল, “আজ কটায় বেরোবি? সুজয় দা কে বল না আজ একটু তাড়াতাড়ি ছেড়ে দিতে। তাহলে বিরিয়ানি খেতে যেতাম। কতদিন আমরা একসাথে বিরিয়ানি খাইনি!”
কী বলব বুঝতে পারলাম না। আমার কি বলা উচিত কাল রাত্রে জল খেতে উঠে ওর ফোনে আসা মেসেজ টা আমি দেখেছি। আমার স্ত্রীকে রাত ১ টার সময় আমার বস সুজয় দা মেসেজ করে যে কথাগুলো বলছে সেগুলো যে আমি জানি সেটা কি আমার বলা উচিত? ওরা যে ওয়ো গিয়েছিল কদিন আগে সেটা যে আমি জানি এখন, সেটা কি আমার বলা উচিত?
কিন্তু আমার মুখ দিয়ে বেরোলো, ” আচ্ছা দাঁড়া বলে দেখছি সুজয়দা কে। যদি ম্যানেজ করতে পারি!”
রাই বলল, “হ্যাঁ। দেখ না। তবে বিরিয়ানি খেতে যাওয়ার কথা বলিস না। তাহলে হয়ত ছাড়বে না তোকে।”
ঠিকই বলেছে। জেলাস ফিল করতে পারে সুজয় দা। আফটার অল আমার স্ত্রী ওর মিস্ট্রেস বলে কথা!
একটু জোরে নিঃশ্বাস নিলাম আমি। বুঝতে পারলাম হাঁফিয়ে যাচ্ছি। দম কমে আসছে। বললাম, “হ্যাঁ। তুই চাপ নিস না। আমি ম্যানেজ করছি রে!”
রাই হেসে বলল, “ঠিক আছে। আমি আনতে আসব তোকে অফিসের বাইরে!”
আমি বললাম, “আচ্ছা রে। একদম। আসিস!”
ফোন রাখার আগে রাই বলল, “লাভ ইউ!”
আমি বুঝতে পারলাম আমি আর পারছি না। তাও নিজের সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করে বললাম, “I love you too রে!”
রাই রেখে দিল ফোন। আমার খুব জোরে জোরে নিঃশ্বাস পড়ছিল। অনেকটা অভিনয় করতে হল আমাকে এখন। মাথাটা এক মুহুর্তের জন্য ঘুরে গেল কী? হাত থেকে ফোনটা পড়ে গেল। কয়েক মুহুর্তের জন্য চোখের সামনে টা অন্ধকার হয়ে গেল। তারপরেই ঘটলা ঘটনাটা। পা টা হঠাৎই সরে গেল ছাদের কনারা থেকে। আমি বুঝতে পারলাম আমার দেহটা এখন শূন্যে!
আচ্ছা ১৬ তলা থেকে পড়লে কি মানুষের বাঁচার চান্স আছে? মনে হয় না। ধুর! কত ভাবলাম সুইসাইড করব না। কী থেকে কী হয়ে যায়। নীচে পুলিশের গাড়ির আওয়াজ পাচ্ছি কেন? আমি তো এই মাত্র ছাদ থেকে পড়লাম। এত তাড়াতাড়ি।পুলিশ? তারপরেই মনে পড়ল আমার পকেটের রক্তমাখা কাঁচিটার কথা। সুজয়দার ঘর থেকে বেরোনোর সময়েই ওর গলায় কাঁচিটা বসিয়ে দিয়েছিলাম আমি। বেরোবার সময় সেটা বের করে পকেটে নিয়ে নিয়েছিলাম।
গল্পটা ভালো, তবে বর্তমান সব লেখকের গল্পেই মহিলাদের এরম গোল্ড ডিগার হিসেবে দেখানো হয় কেনো , সেটাই মানতে অসুবিধা হচ্ছে
Bhalo golpo..ajkal kar dine besirvaag immature meyera kmn jno gold digger type