সকালে ঘুম থেকে উঠে অয়ন্তিকার মেসেজ টা পেয়েই চমকে গেল দীপ্র। ক’দিন হল যেন? ৯ দিন না?
দেরী না করে বিছানা থেকেই ফোন করল অয়ন্তিকা কে!
– হ্যালো?
– হ্যাঁ সরি এই উঠলাম।
– হুম।
– হয় নি?
– না…
– ৯ দিন হয়ে গেল না?
– ১০ দিন। ২২ তারিখ হওয়ার কথা ছিল।
– Shit! এবার তো চাপ লাগছে রে।
– চাপ তো আমারও লাগছে। কিন্তু কি যে করি। এই লকডাউনের সময় বাড়ি থেকেও বেরোতে পারবো না।
– কেন? বেরোতে পারলে কী হত?
– আরে প্রেগনেন্সি কিট একটা…
– এই এই…এরকম বলিস না… ভয় দেখাস না…..
– ভয় কী সাধে দেখাচ্ছি। আমার নিজের তো ফেটে হাতে চলে আসছে। খুব চাপ লাগছে।
– কিন্তু আমরা তো… ইয়ে… প্রোটেকশন ইউজ করেছি…
– থাক। তুই আর কথা বলিস না।
– কী হল?
– লাস্ট দিন ভুলে গেলি?
– লাস্ট দিন… ও… হ্যাঁ…
– খুব ইচ্ছে বাবুর। দরকার নেই প্রোটেকশন। আগে বের করে নেবো আগে বের করে নেবো! নাও এবার বোঝো।
– আরে তুইই তো বলিস ওভাবেই বেশী ভালো লাগে।
– তখন কী জানতাম এই অবস্থা হবে?
দীপ্র বুঝতে পারল ঘরের মধ্যে শুয়ে ও ঘামছে। টেনশন টা বাড়ছে আস্তে আস্তে।
ওদিক থেকে অয়ন্তিকা আবার বলল, “ওই… কী করব বল না!”
দীপ্র বলল, “আমি জানিনা। তুই বল!”
– দায়িত্ব নিবি তো?
– মানে? কিসের কী? কী দায়িত্ব?
– যদি সত্যিই প্রেগনেন্ট হই।
– এই তুই কি ইচ্ছে করে আমাকে টেনশন দিচ্ছিস বল তো!
– নারে উফফ! সিরিয়াসলি বলছি!
– আমি… আমি রাখছি… টেনশন হচ্ছে খুব আমার!
– জানতাম। জানতাম তুই এটাই করবি!
– মানে? কী করব?
– এই যে বিপদে পড়লে দায়িত্ব এড়িয়ে চলে যাবি।
– আমি দায়িত্ব এড়াচ্ছি না। জাস্ট টেনশন হচ্ছে। তুই তিন্নির সাথে কথা বলে দ্যাখ না। ও যদি কিছু বলতে পারে।
– আচ্ছা আমি দেখছি। তুই চাপ নিস না।
আচ্ছা বলে ফোনটা তো রাখলো দীপ্র! মনের মধ্যে চাপটা ক্রমশ বাড়তেই থাকল। সত্যি যদি অয়ন্তিকা প্রেগনেন্ট হয় তাহলে কী হবে? ওকে কী বিয়ে করতে হবে? এক্ষুনি দায়িত্ব নিতে হবে? কিন্তু ওর পড়াশুনো আর ওর কেরিয়ারের কী হবে? এসব না হয় ছেড়েই দিল। কিন্তু বাবা? বাবা তো শেষ করে ফেলবে ওকে!
Shit! কেন যে কন্ডোম ছাড়া এসব করতে গেল! এবার কেস টা খেলে কী হবে? তিন্নি কিছু আইডিয়া দিতে পারবে কী? তিন্নি কে একটা ফোন করবে ও? তিন্নি অয়ন্তিকার বেস্ট ফ্রেন্ড! দীপ্ররও খুব ভালো বন্ধু। এই সব বিপদে পড়লে ওকেই স্মরন করতে হয়। ও বাঁচিয়ে দেয়! কিন্তু এই লকডাউনের সময় কী করবে?
তাও একবার তিন্নি কে ফোন করল দীপ্র! ধুর কল ওয়েটিং! নিশ্চয় অয়ন্তিকার সাথেই কথা বলছে। ফোনটা কেটে দিল দীপ্র।
২
তিন্নির ফোনটা কেটে বাড়ির কয়েকটা কাজ সারল অয়ন্তিকা। তারপর ফোন করল দীপ্র কে।
– হ্যালো…
– বল… তিন্নি কি বলল?
– ও বলল ওর কাছে একটা প্রেগনেন্সি কিট আছে! ওটা দিয়ে যাচ্ছে!
– মানে? লকডাউনের সময়?
– হ্যাঁ। ও বলল স্যানিটারি ন্যাপকিনের নাম করে কালো প্যাকেটে করে দিয়ে যাবে। কেউ বুঝতে পারবে না।
– আচ্ছা। আমায় জানাস প্লিজ। খুব চাপ লাগছে।
– চাপ কি আর আমার লাগছে না রে? ধুর! আর কখনও করব না!
– মানে টা কী? কখনও করবি না মানে? বিয়ের পরও করবি না?
– আরে ধ্যাত! আমি বললাম প্রোটেকশন ছাড়া করব না!
– তাই বল! তুই আমায় জানা ও এলে!
– আরে ও তো পাশেই থাকে। এক্ষুনি আসবে। এলেই জানাচ্ছি।
এরপর প্রায় আধঘন্টা কেটে গেলে। তিন্নি এল অয়ন্তিকার বাড়ি এল আধঘন্টার মধ্যেই। অয়ন্তিকা সাথে সাথে তিন্নিকে নিয়ে বেডরুমে চলে গেল। ওই ঘরের সাথেই লাগোয়া বাথরুম রয়েছে।
কিছুক্ষন পরেই অয়ন্তিকা ফোন করল দীপ্র কে। দীপ্র যেন ফোন হাতে নিয়ে বসেছিল মনে হল। সাথে সাথে ফোন তুলল ও। বলল, “বল…!”
দীপ্রর গলায় ভয় টা স্পষ্ট।
অয়ন্তিকা ভাঙা বলল, “আর কিছু করার নেই রে!”
দীপ্র বলল, “মানে?”
অয়ন্তিকা বলল, “মানে… মানে আমি প্রেগনেন্ট! পজিটিভ এসেছে টেস্ট!”
দীপ্র কিছু বলল না প্রথমে। তারপর বলল, “নারে। কিছু ভুল হচ্ছে। এটা… এটা হতে পারে না!”
অয়ন্তিকা বলল, “I am sorry রে। আমি… আমি জানিনা আমি কী করব! তুই থাকবি তো আমার সাথে? আমরা একসাথে সামলাবো সবটা!”
দীপ্রর ফোনটা কেটে গেল সাথে সাথে!
অয়ন্তিকা প্রথমটা একটু চমকে গেলেও। আবার ডায়াল করল ওর নাম্বার। রিং হয়ে যাচ্ছে। ধরল না দীপ্র প্রথম বার। তারপর আবার ফোন করল ও। তাও তুলল না ও!
অয়ন্তিকা এবার দেখল একটা মেসেজ এসেছে। দীপ্রর নাম্বার থেকে!
দীপ্র লিখেছে, “আমি পারবো না রে। আমি কাউকে মুখ দেখাতে পারবো না এভাবে! আমায় ক্ষমা করিস। আমি চললাম! ভালো থাকিস!”
মেসেজটা পড়ে মাথাটা ঘুরতে লাগল অয়ন্তিকার! এটা ও কী করে ফেলল? ওর পিরিয়ড শেষ হয়ে গেছে তিন দিন আগে। কিন্তু দীপ্রকে এপ্রিল ফুল করার জন্য কতদিন থেকে প্ল্যান করে রেখেছে ও তিন্নির সাথে। তার ফল যে এরকম হবে সেটা ও ভাবে নি একবারও! আরও ২ বার ফোন করল দীপ্রর নাম্বারে ও! ফোন তুলল না সে। সাথে সাথে কাকিমা মানে দীপ্রর মাকে ফোন করল অয়ন্তিকা। ওর মাও ফোন ধরছে না। তাহলে কী কিছু অঘটন ঘটে গেল?
তিন্নি কে সাথে নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে গেল অয়ন্তিকা। যা হওয়ার তা বোধহয় হয়েই গেল। ধুর কেন যে এরকম করতে গেল! নিজের চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করছিল অয়ন্তিকার। ও ভাবতে পারেনি দীপ্র এভাবে রিয়্যাক্ট করবে।
ওর বাড়ি থেকে দীপ্রর বাড়ি বেশি দূর না। মিনিট ১৫ পরে যখন ও পৌঁছোলো দীপ্রর বাড়ি তখন সারা বাড়িটা যেন নিস্তব্ধ!
“কাকিমা!” ডাকল অয়ন্তিকা!
দীপ্রর মা বেরিয়ে এলেন। অয়ন্তিকা বলল, “দীপ্র কোথায়? তোমাকে কখন থেকে ফোন করছি আমি!”
দীপ্রর মা বললেন, “কই খেয়াল করিনি তো! দীপ্র তো ছাদে গেল দেখলাম একটু আগে! ওকে পাসনি ফোনে?”
কথাটা শুনে আর একটুও অপেক্ষা না করে দৌড়ে ছাদের সিঁড়ি দিয়ে উঠে গেল অয়ন্তিকা আর তিন্নি! ওপরে উঠে দেখল যা ভয় করেছে তাই। দীপ্র পড়ে আছে মাটিতে! বাঁহাতের শিরার কাছে রক্ত লেগে রয়েছে। আর ডান হাতে একটা ব্লেড চকচক করছে।
“দীপ্র!!” অয়ন্তিকার আর্ত চিৎকারে সারা বাড়ি যেন কেঁপে উঠল। দীপ্রর মা নীচ থেকে বলে উঠল, “কী হল রে?”
অয়ন্তিকার চোখে তখন জল। সামান্য পিরিয়ড নিয়ে মজা করতে গিয়ে সবটা শেষ হয়ে গেল ওর। মাটিতে বসে পড়ল ও। তিন্নি ওর কাঁধে হাত রাখল।
কাঁদতে কাঁদতে অয়ন্তিকা বলল, “আমার সব শেষ হয়ে গেল রে! আর কিছু রইল না! সব শেষ!”
তিন্নি এতক্ষন কিছু বলে নি। এবার হঠাৎ বলে উঠল, “এই এটা বাড়াবাড়ি হচ্ছে কিন্তু এবার! বাদ দে না। কাটা না!”
অয়ন্তিকা ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলে উঠল, “কী?”
তিন্নি বলল, “তোকে বলিনি! এই দীপ্র বাল! ওঠ না এবার! কেমন কাঁদছে দেখ মেয়েটা!”
তিন্নির কথা শেষ হতেই দীপ্র উঠে বসল। মুচকি হেসে অয়ন্তিকার দিকে তাকিয়ে বলল, “এপ্রিল ফুল!”
অয়ন্তিকা প্রথমটায় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গিয়েছিল এই ঘটনায়। তারপরেই নিজেকে সামলে নিয়ে সবটা বুঝতে পেরে তেড়ে গেল দীপ্রর দিকে, “তোকে মেরে ফেলব আমি! এসব নিয়ে ইয়ার্কি ব্যাঙ! তুই জানিস… তুই জানিস… আমি…
কথা বলতে বলতে আবার ভ্যাঁ করে কেঁদে ফেলল অয়ন্তিকা। দীপ্র শক্ত করে জড়িয়ে ধরল ওকে।
বলল, “আচ্ছা আমার ভুল হয়েছে! তিন্নি যখন বলল তুই এরকম প্ল্যান করেছিস তখন আমিও আসলে লোভ সামলাতে পারলাম না। ওকে বিরিয়ানির লোভ দেখিয়ে দলে টেনে নিলাম!”
অয়ন্তিকা কিছু বলল না। আরও শক্ত করে আঁকড়ে ধরল দীপ্র কে!
তিন্নি পেছন থেকে বলে উঠল, “প্রোটেকশন আছে তো সাথে?”
দারুন লাগলো❤️
Darun laglo apnar golpota.just awesome
Uff osadharon ❤
darun just ❤️
Hehe ending ta ufff
Darun