অফিস থেকে বেরোবার সময় ফোন টা হাতে নিয়ে “বেরোলাম” লিখেও মেসেজ টা মুছে দিল অভিষিক্তা। আর তো এই মেসেজটা পাঠাতে হবে না! শেষ হয়ে গেছে সব!
জিনস এর পকেটে ফোন টা ঢোকাতে যাবে হঠাৎ ফোন এল একটা। অফিস থেকে ফোন করছে সুদীপ্ত। ফোন টা ধরল ও। বলল, “হ্যালো?”
“কীরে কোথায়?”, সুদীপ্ত জিজ্ঞেস করল।
অভিষিক্তা বলল, “এই তো বেরোলাম!”
সুদীপ্ত জিজ্ঞেস করল, “আমারও কাজ হয়ে গেছে। কোথায় তুই?”
– এই তো হেঁটে যাচ্ছি মেট্রোর দিকে।
– দাঁড়া আসছি আমি।
– কেন? তুই আসবি কেন?
– আরে আমার তো বাইক আছে। তাড়াতাড়ি পৌঁছে যাবো!
অভিষিক্তা একবার ভাবলো। নীলের সাথে যেসব বিষয় নিয়ে ঝামেলা হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম ইস্যু ছিল সুদীপ্তর ইস্যু। এটাই মূল ইস্যু নয় কিন্তু… তাও এক্ষুনি কী ওকে আসতে বলা ঠিক হবে?
উত্তর দিতে দেরী হওয়াতে ওদিক থেকে সুদীপ্ত বলল, “তুই অফিসের সামনের মোড়ে দাঁড়া। আমি আসছি। ৫ মিনিট লাগবে”
অভিষিক্তা কিছু বলার আগেই সে কেটে দিল ফোন টা। ও আর চেষ্টা করল না। আসুক সুদীপ্ত। কীই আর হবে। যা হওয়ার তো সব হয়েই গিয়েছে।
কয়েকদিন থেকেই ঝামেলাটা ক্রমাগত ওর বাড়ছিল অভ্রনীলের সাথে। অফিসে কাজের চাপ এত বাড়িয়েছে যে অভ্রর জন্য সময়ই বের করতে পারছিলো না ও। আর অভ্রটারও যে হঠাৎ কী হয়েছে কে জানে! ছ’বছর হয়ে গেল এখনও ইনসিকিউরিটিতে ভোগে। মাঝে এই ব্যাপারটা বন্ধ ছিল। অফিসে ওর কাজের চাপ বাড়তে আবার শুরু হয়েছে!
খুব জোরে পাশ থেকে হর্নের আওয়াজে চমকে তাকাল অভিষিক্তা! সুদীপ্ত চলে এসেছে। মাথায় কালো হেলমেট। হাতের হেলমেট টা বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “উঠে বোস!”
অভিষিক্তা উঠে বসল! আগে কখনও অন্য কারও বাইকে ওঠে নি ও। নীলের বাইকটাতেই চড়ে অভ্যস্ত। এই বাইকের আবার পেছন টা কত উঁচু। পেছনে ধরার জায়গাটাও কেমন যেন একটা।
“আমাকে ধরে বোস,পড়ে যাবি নাহলে।” বলল সুদীপ্ত।
অভিষিক্তা বলল, “ঠিক আছে। চাপ নেই।”
সুদীপ্ত বলল, “ধর না বাল!পড়লে তখন দায়িত্ব কে নেবে?”
অভিষিক্তা কিছু বলল না। চুপচাপ সুদীপ্তর শার্ট টা ধরে বসল। সত্যিই তো! দায়িত্ব নেবে কে? যে নেওয়ার সে তো আর নেই। ভালো লাগছে না কিছু। একবার কী ফোন করবে ওকে? নাকি ও করে কিনা দেখবে? তবে ওকে যতদূর চেনে ও নিজে ফোন করবে না। ও জানে অভ্র ফোন করতে চায়। কিন্তু পারবে না। পাহাড় প্রমান ইগো গুলো সব সময়ই আমাদের চাওয়া না চাওয়া গুলো কে নিয়ন্ত্রন করে।
“তোর কী কিছু হয়েছে?” সুদীপ্ত জিজ্ঞেস করল
অভিষিক্তা বলল, “মানে? কেন? কী হবে?”
সুদীপ্ত বলল, “না মানে অফিসেও দেখলাম চুপচাপ ছিলি!”
অভিষিক্তা বলল, “না না। সব ঠিক আছে!”
সুদীপ্ত আর কিছু বলল না। অভিষিক্তার সাথে স্কুলে পড়ত সুদীপ্ত! তারপর কলেজে ওঠার পর বহুদিন কোনো যোগাযোগ ছিল না। এখন আবার অদ্ভুত ভাবে একই অফিসে চাকরি করে দু’জনে!
“অভ্রনীলের সাথে কিছু হয়েছে তাই না?” সুদীপ্তর প্রশ্নে চমকে উঠল অভিষিক্তা!
অভিষিক্তা বলল, “ধুর! কী হবে ওর সাথে?
– সে আমি জানিনা। তবে মনে হচ্ছে কিছু একটা তো হয়েইছে! নাহলে তো এরকম চুপচাপ তুই থাকিস না!
– আরে না রে। কিচ্ছু হয় নি।
– ফাইন! তাহলে চল আজ কোথাও একটা খেয়ে ফিরি!
এবার একটু অপ্রস্তুতে পড়ল অভিষিক্তা!
“এই না না। প্লিজ না! আজ থাক!” অভিষিক্তা বলে উঠল
“কেন? স্যালারি ঢুকেছে তো কাল! চল না যাই! আমি খাওয়াবো!” সুদীপ্ত বলল
অভিষিক্তা উত্তর দেওয়ার আগেই সে আবার বলল, “আসলে আজ আমার জন্মদিন! সেই কারনেই মানে…”
এরপর সত্যিই আর কোনো যুক্তি চলে না। অভিষিক্তা ঘড়ির দিকে দেখল। সাতটা বাজতে পাঁচ। এখন গেলে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতেও চাপ হবে না!
অভিষিক্তা বলল, “আচ্ছা বেশ! চল। যাচ্ছি! তাড়াতাড়ি ফিরে যাবো কিন্তু”
সুদীপ্ত হেসে বলল, “আরে হ্যাঁ রে বাবা! তাই হবে!”
অভিষিক্তা বলল, “কোনদিকে যাবি বল?”
সুদীপ্ত বলল, “যাদবপুরের দিকে যাই। ওখানে অনেকগুলো রেস্টুরেন্ট আছে ভালো!
উফফ! আবার সেই যাদবপুর! কেন ভাই? সেই ঘুরে ফিরে যাদবপুরই বা কেন? আর কোন জায়গা নেই পৃথিবীতে?
“কীরে যাই?” অধৈর্য গলায় সুদীপ্ত প্রশ্ন করল আবার!
অভিষিক্তা বলল, “হ্যাঁ তাই চল
কথাটা বলেই ওর খেয়াল হল নীলের বাড়িতে ওর একটা স্টোল রয়েছে। যাচ্ছে যখন তাহলে ওটাও নিয়ে নেওয়া যেতে পারে। আবার কবে আসা হবে তার ঠিক নেই। ঠান্ডায় স্টোল টা খুব কাজে লাগে।
অভিষিক্তা সুদীপ্তকে বলল ” ডিনারের পর আমাকে একবার একটা জায়গায় একটু যেতে হবে। তুই একটু অপেক্ষা করিস নীচে!”
সুদীপ্ত বলল, “যথা আজ্ঞা!”
ফোন বের করে একবার অভ্রনীল কে ফোন করল ও। জানিয়ে রাখা দরকার যে ও আসছে আজ! হুট করে সদ্য প্রাক্তন বয়ফ্রেন্ডের বাড়িতে চলে যাওয়া ঠিক না।
ফুল রিং হয়ে গেল ফোন কেউ ধরল না। আজব তো! এক মুহুর্ত ভাবল অভিষিক্তা। পরক্ষনেই মনে পড়ল ওর কাছে এক নীলের ফ্ল্যাটের এক সেট চাবিও আছে। এটাও তো ফেরত দেওয়া দরকার! ও না থাকলে চুপচাপ টিভির সামনে টেবিলে চাবি রেখে নিজের জিনিস নিয়ে চলে আসবে। আর থাকলেও একটা কথাও বলবে না। সেটাই বরং ভালো।
সুদীপ্ত বড্ড স্পিডে গাড়ি চালাচ্ছে কেন কে জানে! পকেটে ফোন টা ঢুকিয়ে রাখল অভিষিক্তা। যাওয়ার আগে আর একবার ফোন করে দেখবে না হয়!