১৮ বছরের উর্ধ্বে ছাড়া পড়বেন না।

অনেকক্ষন থেকেই হাই লিখে অপেক্ষা করছিল অভ্রনীল। বার বার ভাবছিল মেসেজটা পাঠানো ঠিক হবে কিনা! প্রায় মিনিট দশেক পর আলতো করে আঙুল ছুঁইয়ে দিল সেন্ড আইকন টা। চলে গেল মেসেজ! সাথে সাথেই ওর একবার ইচ্ছে হল ডিলিট করে দিতে। কিন্তু তারপরেই রাগ টা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠল ওর। ফোন টা রেখে দিল ও পাশে। অভিষিক্তা কে বুঝিয়ে দিতে হবে ওর জন্য মেয়ের অভাব হবে না!

একটু পরেই টুং করে আওয়াজ করে ফোন টা জানান দিল মেসেজ এসেছে। ফোনটা হাতে নিল অভ্রনীল। রিপ্লাই এসেছে! রিপ্লাই করেছে সৃজিতা। লিখেছে, “এত ফরম্যালি হাই বলছো কেন? অচেনা মেয়ে নাকি আমি?”
এত রাগ দুঃখের মধ্যেও অভ্রনীলের ঠোঁটের কোনে হাসি চলে আসে। মেসেজ টা খুলে রিপ্লাই করে ও, “আরে না এমনি!”

সৃজিতা অভ্রর কলেজের জুনিয়র। ও শুনেছে এই মেয়েটির সাথে প্রচুর ছেলের রিলেশন রয়েছে। কখনও কখনও একসাথে ৩-৪ জন অবধি বয়ফ্রেন্ডও একসাথে ছিল এও শুনেছে ও। এই মেয়েটি ওকেও কয়েকবার লাইন মারার চেষ্টা করছে। অদ্ভুত একটা মোহময়ী ব্যাপার রয়েছে মেয়েটির মধ্যে। আর ওর শরীর টা অসম্ভব রকম চোখে পড়ার মত। অভিষিক্তার দাবি ছিল এই মেয়েটি ওর সাথেও নাকি কয়েকবার ফ্লার্ট করেছে। কিন্তু ও খেয়াল করে নি। অবশ্য অভিষিক্তার সাথে থাকলে ও এসব খেয়াল করে না থুড়ি… করত না। এখন তো আর সেসব কিছু নেই।

সৃজিতার রিপ্লাই করল, “এমনি আবার কী? ওই বলবে ওই! হাই টা বড্ড দূরের মনে হয়!”
আবারও হাসল অভ্র। বলল, “আরে কতদিন কথা হয় নি তোর সাথে! তাই ভাবলাম ওই বললে যদি খারাপ লাগে!”
সৃজিতা বলল, “কতদিন? তুমি কলেজের দু’বছর আমার সাথে কখনও যেচে কথা অবধি বলো নি। আমি লাইন মারতাম আর তুমি এড়িয়ে যেতে!”

সত্যিই কী তাই? সৃজিতা বেশ কয়েকবার এসে কথা বলেছে এটা ঠিক। কিন্ত লাইন মারল কবে? যদিও অভিষিক্তা বলত অনেকবারই নাকি মেরেছে! অভ্রনীল বোঝেনি! সেই যাই হোক। সত্যি লাইন মেরেছিল কিনা এখন বোঝা যাবে! এ মেয়ে যেভাবে কথা বলছে তাতে তো মনে হচ্ছে সহজেই পটে যাবে! তারপর ওর সাথে… ওর সাথে… কী করবে অভ্র? প্রেম করবে? নাকি শুধুই শোবার জন্য চাই ওকে? এই রে! এতটা তো ভাবে নি!

এসব ভাবতে ভাবতেই আবার টুং করে আওয়াজ। রিপ্লাই না পেয়ে সৃজিতা মেসেজ করেছে আবার। বলছে, “কী গো? রাগ করলে নাকি? গার্লফ্রেন্ড কে নালিশ করে দিও না আবার!”
অভ্রনীলের ঠোঁটের কোনে আবার হাসি এল। তবে এই হাসিটা ম্লান। ও বলল, “নাহ। নালিশ করব না! চাপ নেই!”
সৃজিতা বলল, “যাক! বলো কী খবর তোমার?”
অভ্রনীল বলল, “এই তো চলছে! তোর কী খবর বল? কলেজের কী খবর?”
সৃজিতা বলল, “কলেজের আবার কী খবর হবে যেমন ছিল তেমনই আছে! ক্লাস তো তেমন হয় না। রোজ যাই। আড্ডা দিই। চলে আসি। এই আর কি!”
– আর তোর কী খবর? প্রেম ট্রেম করছিস?
– না অভ্রদা, প্রেম ট্রেম আমার দ্বারা হয় না।
– কেন?
– ধুর! আমার আজ যাকে ভালো লাগে, কাল আবার তাকে সহ্য হয় না। এভাবে কারুর সাথে বেশিদিন থাকা যায় না।
– বুঝলাম।
– কেন হঠাৎ তুমি প্রেম করবে নাকি আমার সাথে?

এই রে! এটার কী উত্তর হয়? অভ্র কি সত্যি প্রেম করবে নাকি? নাকি শুধু শোবে! এখনও কেন ঠিক করতে পারছে না ও? ও তো সিঙ্গল। ওর তো আর সম্পর্ক নেই অভিষিক্তার সাথে! তাহলে?

অভ্রনীল কাঁপা হাতে টাইপ করল, “যদি করি? তুই করবি আমার সাথে?”

তারপর কয়েক মুহুর্ত অপেক্ষা করে মুছে দিল মেসেজ টা। তারপর লিখল, “ধুর! কী যে বলিস?”

সৃজিতা বলল, “কেন গো? আমি দেখতে খারাপ?”

উফফ! এই মেয়েটা এরকম কেন? মেসেজ করতেই ফ্লার্ট করছে! এত সহজ সব কিছু? এত সহজ একটা মেয়ে কে পাওয়া? নাকি সবাই যা বলে ঠিকই বলে? এই মেয়েটাই এরকম? কলেজে পড়াকালীন যখন এই মেয়ে ওর সাথে ফ্লার্ট করেছিল (ও জানে না। অভিষিক্তা বলে) তখন অভিষিক্তা বলেছিল, “তোকে এক হাতে কিনে আর এক হাতে বেচে দেবে এই মেয়ে!”

ও বলেছিল, “ঠিক আছে। যখন বেচে দেবে তখন তুই কিনে নিস না হয় আমায়!”
অভিষিক্তা বলেছিল, “ধুর পাগল! তোকে আমি হাতবদল হতে দেবোই না। তোকে আমি ছাড়া কেউ হ্যান্ডেল করতে পারবে না!”

সৃজিতা মেসেজ ঢুকল আবার, “তুমি কি ডিপি দেখে তারপর রিপ্লাই দেবে নাকি আমি আমার অন্য ছবি পাঠাবো?”
অভ্র মাঝে মাঝেই কেমন একটা ঘোরের মধ্যে চলে যাচ্ছে! ধুর! ও তাড়াতাড়ি রিপ্লাই করল, “না না। এই। তুই সুন্দরী না যে বলবে তারা চোখে দেখতেই পায় না!”

সৃজিতা একটা হাসির স্মাইলি পাঠালো। তারপর বলল, “তাহলে ফটো পাঠাচ্ছি না আর নিজের!”
অভ্র বলল, “সে তোর ইচ্ছে হলে পাঠা! আমার কোনো অসুবিধে নেই!”

সৃজিতা বলল, “ওহ আচ্ছা। এরকম ব্যাপার! ঠিক আছে। এই নাও!”
মেসেজ টার পরেই ঢুকল একটা ফটো। সৃজিতার ফটো। ছবিতে ও শাড়ি পরে রয়েছে একটা। গলায় একটা সোনার হার! আর তার নীচে বুকের ঠিক ওপরে একটা কালো তিল। দু’দিকে মাথা ঝাঁকিয়ে নিল অভ্র। ওকে ঠিক থাকতে হবে। এখনই না। এক্ষুনি না!

অভ্র ছবিটায় একটা লাভ স্মাইলি দিল। তারপর বলল, “একদিন দেখা কর না!”
এই মেসেজ টা পাঠিয়েই অভ্রর মনে হল এটা এক্ষুনি বলা কী ঠিক হল? আজকেই কথা হচ্ছে সৃজিতার সাথে। আর আজকেই বলল দেখা করার কথা? ও এত ডেসপারেট কেন হয়ে যাচ্ছে? এত কীসের রাগ ওর?

সৃজিতা রিপ্লাই করল, “হ্যাঁ সে করাই যেতে পারে! তুমি থাকো কোথায় যেন?”
অভ্রনীল বলল, “আমি থাকি যাদবপুরে! তুই তো বোধহয় রুবির কাছে?”
– হ্যাঁ। ওখানেই। ঠিক আছে। কবে তোমার টাইম হবে জানিও। যাবো একদিন!
অভ্র টাইপ করল, “আজ? আজ হবে না টাইম?”
সৃজিতা বলল, “আজ? আজ তো অলরেডি ৭ টা বাজে। সে আমি যেতেই পারি! কিন্তু ফেরাটা একটু চাপ হবে!”
অভ্রর ওপর তখন যেন অন্য কেউ ভর করেছে। ও বলল, “সে তোর অসুবিধে না থাকলে আমার ফ্ল্যাটে রয়েও যেতে পারিস। দু’টো রুম আছে। চাপ হবে না!”
মেসেজ টা সিন হওয়ার পরেও কয়েক মুহুর্ত কোনো রিপ্লাই এল না। অভ্রনীল ভাবল এবার কী একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলল! মেসেজ টা ডিলিট করে সরি বলবে কিনা ভাবছে! এমন সময় এল সৃজিতার রিপ্লাই – “তুমি শিওর? চাপ হবে না তো?”

অভ্র বলল, “না না। চাপ কীসের? দু’টো ঘর আছে!”
সৃজিতা বলল, “দু’টো রুম বা একটা রুম টা আমার জন্য চাপ না। আমি আমার ছেলে বন্ধুর সাথে এক খাটে একসাথেই ঘুমিয়েছি। মানুষ ঠিক থাকতে চাইলে ঠিক থাকতেই পারবে। কিন্তু মানুষ ঠিক থাকতে চায় না!”

অভ্র বলল, “না রে। চাপ হবে না। তোর চাপ না হলে তুই আয়!”
সৃজিতা বলল, “ঠিক আছে আসছি। বেরিয়ে জানাচ্ছি আমি তোমায়!”

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল অভ্র! এটা কী ঠিক করল ও? ঝোঁকের বশে কোনো ভুল করে ফেলছে না তো? পরক্ষনেই ওর চোখ গেল ওর ফোনে ওয়ালপেপার টার দিকে। অভিষিক্তা হাসি মুখে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। যেন বিদ্রুপ করে ও বলছে, “দেখা যাক তোর দৌড় কতদূর!”

চোয়াল শক্ত করল অভ্র! ফোনটা ছুড়ে দিল বিছানায়। তারপর আলমারিটা খুলে বের করল ওর ক্যামেরাটা। প্রমান রাখতে হবে। তারপর পাঠাতে হবে অভিষিক্তা কে! আচ্ছা, কন্ডোম আছে তো বাড়িতে? ওটা তো আজ লাগতে পারে! ওয়ালেট টা নিয়ে ও বেরিয়ে গেল ওষুধ দোকানে! ওর বিছানায় ছুঁড়ে দেওয়া ফোনে তখন একটা ফোন আসছে। অভিষিক্তা ফোন করছে।

(চলবে)

বিষে বিষে নীল – প্রথম পর্ব

Arnab Mondal


হিজিবিজি লেখা আর বিরিয়ানি নিয়ে Phd করছি আর আকাশবাণী কলকাতায় নিজের কন্ঠস্বর ভাড়া দিয়ে সংসার চালাচ্ছি।


Post navigation


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কপি করবেন না দাদা/দিদি