বিয়ের কনসেপ্ট টা রাই এর কোনোকালেই ঠিক পোষাতো না। একটা প্রেম বা ভালোবাসাকে institutionalized করার পক্ষপাতি ও কখনই না। শুধুমাত্র মামীর জেদের কাছে হার স্বীকার করে পাত্রপক্ষের সামনে বসেছিল ও। ছেলেটিকে ও চিনত। আগে দেখেছে অফিসে। এর চাকরি টাই সম্ভবত ও পেয়েছিল। ছেলেটি একটু… যাকে বলে… অদ্ভুত। সেই জন্যেই হয়তো রাই এর ভালো লেগেছিল ওকে। মানে অনর্থ কে। কিন্তু কথাবার্তা বলে বুঝল ছেলেটির মানসিকতাও ঠিক ওরই মত খানিক টা। সেও বিয়ে করতে চায় না। বাবার ওপর রেগে গিয়ে মেয়ে দেখতে এসেছিল। দু’জনে একসাথে বিরিয়ানি খাওয়ার পর তাই যে যার পথে চলে যায়।
বাসে ফেরার সময় ছেলেটির কথাই ভাবছিল রাই। লেডিস সীটে জায়গা পায়নি। তাই পাশের জেনারেল সীটে বসতে হয়েছে আজ। ছেলেটি সত্যিই অদ্ভুত। ফোন নাম্বার টা অবধি চাইলো না। রাইও চায় নি যদিও। তবে ফোন নাম্বার পাওয়াটা আজকাল কোনো সমস্যা না। ওদের অফিসের মৌসুমীর সাথে ছেলেটির কিছু একটা ছিল এক সময়। দরকার পড়লে ওর কাছ থেকে নেওয়া যাবে।
অনেকক্ষন থেকেই বুকের কাছে একটা কনুই অনুভব করছিল রাই। একট ঘোরের মধ্যে ছিল তাই খেয়াল করেনি। এখন খেয়াল হতেই পাশের লোকটিকে বলল, “দাদা, বলছি আপনি যেটা করতে চাইছেন সেটা ঠিক হচ্ছে না। ঠিক করে করুন।”
লোকটাকে দেখে মনে হয় ওঁর বয়স ওই বছর চল্লিশেক হবে। কথাটা শুনে সে প্রথম টা একটু হকচকিয়ে গিয়েছিল। পরক্ষনেই নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, “মানে? কী বলছেন কী?”
রাই বলল, “আপনি কনুই দিয়ে অনেকক্ষন থেকেই কিছু একটা করার চেষ্টা করছেন বুঝতে পারছি। কিন্তু কাজ হচ্ছে না কিছুই। সেটাই বললাম। হাত দিয়ে Try করে দেখবেন?”
লোকটি এবার চেঁচিয়ে উঠল, “ইয়ার্কি হচ্ছে? বয়স্ক লোকের সাথে এই ভাবে কথা বলতে লজ্জা করে না?”
রাই হেসে বলল, “ওমা! ইয়ার্কি কেন করব? সত্যিই বলছি! দেখবেন চেষ্টা করে?”
লোকটি চেঁচিয়ে বাস থামাতে বলল একবার। তারপর নেমে গেল বাস থেকে। বাস এর লোকগুলো ওকে এক দৃষ্টিতে দেখছে ও বুঝতে পারছে। একটু পর ও নিজেও নেমে পড়ল। ও জানে ওর নিজের স্টপেজ এখনও আসে নি। কিন্তু আজ ওর একটু অন্ধকারে হাঁটতে ইচ্ছে করছে।
গোটা শহর টা পশু হয়ে যাচ্ছে। শুধু শহর না। দেশটাও। যেদিকে তাকাও সেদিকেই রেপ! নাবালিকা মেয়েগুলোকে ধর্ষন করা হচ্ছে ধরে ধরে। আর বাকিরা মজা দেখছে। এর ওর ধর্ম টানছে। ওর আগের অফিসের বস পবিত্র দা কিংবা এই যে লোকটি একটু আগে কনুই মারছিল বাসে এদের সাথে এই সব রেপিস্ট দের কী কোনো পার্থক্য আছে? কিছু পার্থক্য নেই। এরা একটা সমাজকে মেনে নেয় বাধ্য হয়ে তাই নিজেদের লালসা চরিতার্থ করতে পারে না!
ওর বাড়ির একটু আগেই একটা মুসলমান পাড়া রয়েছে। ওটা দিয়ে গেলে শর্টকাটে যাওয়া যায় নিজের বাড়ি। রাত অনেক হয়েছে। তাই ওই রাস্তাটাই ধরল ও। কিছুদূর যাওয়ার পরেই হঠাৎ আর একটা পায়ের শব্দ শুনতে পেল মনে হল। থেমে গেল রাই। পেছনে ফিরল! নাহ কেউ নেই! আবার এগোতে লাগল রাই। একটু পর আবার কারুর হাঁটার আওয়াজ পেল ও। পেছনে ঘুরবে কিনা ভাবছে এমন সময় একটা ভারী গলার আওয়াজ শোনা গেল। “কোথায় যাবেন?”
রাই চমকে পেছনে তাকাল। একটি ছেলে দাঁড়িয়ে। গায়ে পাঞ্জাবী। মাথায় টুপি। একে ও চেনে। রাকিব ওর নাম। এই পাড়াতেই দেখেছে কয়েকবার। কোনো একটা পার্টির মেম্বার সম্ভবত। রাই বলল, “মসজিদ বাড়ি স্ট্রীট। কেন?”
ছেলেটি বলল, “চলুন। আমি এগিয়ে দিচ্ছি।”
একটু ভয় ভয় করছিল রাই এর। ও বলল, “আমি একা যেতে পারব।”
ছেলেটি হেসে বলল, “আমি জানি আপনি পারবেন! আমিও ওদিকেই যাবো। তাই ভাবলাম যদি একসাথে যাওয়া যায়!”
রাই উত্তর দেওয়ার আগেই ছেলেটির ফোন বেজে উঠল। ছেলেটি একটু পাশে সরে গিয়ে ফোন টা ধরল। কয়েক সেকেন্ড পর ফোন রেখে ওর কাছে এসে বলল। “কী ঠিক করলেন? যাবেন আমার সাথে?”
রাই বলল, “হ্যাঁ চলুন।”
ছেলেটি আর কথা না বাড়িয়ে এগিয়ে গেল সামনের দিকে। তার ঠিক পেছনেই যাচ্ছিল রাই। ওর আর একটুও ভয় করছে না। ওর কানে তখন বাজছিল ছেলেটির রিংটোন। কবীর সুমনের একটি বিখ্যাত গানের লাইন, “আমি চাই হিন্দু নেতার সালমা খাতুন পুত্রবধূ, আমি চাই ধর্ম বলতে মানুষ বুঝবে মানুষ শুধু!”