– একটা ভালো প্রেমের গল্প লেখ না?
– ভালো প্রেমের গল্প? এই খেয়েছে!
– আরে এরকম কেন করছিস? লেখ না!
– আচ্ছা, একটা ভালো প্রেমের গল্পে কী কী থাকবে?
– ওই তো, একটা প্রেমিক থাকবে। একটা প্রেমিকা থাকবে। একটা মেয়ে বা ছেলে কে দরকার যার যেকোনো একজন কে ভালো লাগবে।
– মানে ত্রিকোন প্রেম চাই তোর। বুঝেছি। আর?
– আর কিছু লাগবে না।
– বিরিয়ানি?
– এই হচ্ছে তোর প্রবলেম বুঝেছিস তো! সব সময় খালি বিরিয়ানি আর বিরিয়ানি। ভালো প্রেমের গল্পেও বিরিয়ানি?
– কেন? নয় কেন? জীবন মানে যদি জি বাংলা হতে পারে, তাহলে বিরিয়ানি মানে প্রেম হতে পারে না কেন?
– উফফ! আমি জানিনা। তুই আমায় একটা প্রেমের গল্প লিখে দে। অনেকদিন পড়িনি ভালো প্রেমের গল্প।
– আরে সব সময় প্রেমের গল্প লিখতে আমার ভালো লাগে না।
– সব সময় আমি তোকে বলি? একটা লিখতে বলছি তাতে এরকম দাম বাড়ানোর কী আছে?
– আচ্ছা ঠিক আছে। দেখছি কী করা যায়।
১
কখনো কখনো এরকম হয় কাউকে একবার দেখার পর এতটাই ভালো লাগে, যে সেই ভালো লাগাটা, সেই মানুষটার সাথে পরের বার দেখা হওয়ার আগে পর্যন্ত স্থায়ী হয়। তবে সেই ভালো লাগার ওপর ভিত্তি করে এগোতে একটু সময় লাগে। আগে জেনে নিতে হয়, মানুষ টার পছন্দ অপছন্দ গুলো। তারপর জানতে হয় বয়ফ্রেন্ড বা গার্লফ্রেন্ড আছে কিনা। তারপর একটু একটু করে এগোতে হয়।
অমিতেশের কলেজের ফার্স্ট ইয়ারের কেস টাও সেরকমই হয়েছিল। একটি মেয়েকে অ্যাডমিশনের দিনই চোখে পড়ে। এবং ভালো লাগে। তবে হ্যাঁ Love at first sight ওয়ালা ক্র্যাপ ট্যাপ এ আমি থুড়ি অমিতেশ বিশ্বাস করে না। ওসব কিছুই হয় নি। তবে ওর মনে হল যে এই মেয়েটা কে জানতে হবে। এখন মেয়েটা ওকে পাত্তা দেবে কিনা সেটাই দেখার।
চালাক ছেলে আর বোকা ছেলের পার্থক্য কী? চালাক ছেলে আর বোকা ছেলের পার্থক্য হল, বোকারা ডিরেক্ট যায় মেয়েকে লাইন মারতে এবং যেটা সাধারনত মেয়েরা খুব একটা পাত্তা দেয় না। আর চালাকরা যা করে ভেবে চিন্তে করে। প্রথম দু’তিন দিন অমিতেশ ভিড়ে গেল মেয়েটা যে গ্রুপ এর সাথে আড্ডা দেয় সেই গ্রুপের সাথে। কারুর কোনো সন্দেহের বালাই নেই। সবাই ভাবছে সকলের জন্য সকলে আমরা, প্রত্যেকে আমরা পরের তরে। কিন্তু অমিতেশ যে বাপু অমৃতার তরে এত খাটছে সেটা তো আর লোকে বুঝছে না।
WAIT!
***
– কী হল?
– এটা কী হচ্ছে?
– কী হচ্ছে মানে? প্রেমের গল্প লিখছি তো!
– হ্যাঁ কিন্তু আমার নাম দিয়ে কেন?
– আরে আমার নামের স্টক শেষ হয়ে গেছে। নতুন নাম মাথায় আসছে না।
– ঠিক তো! আর কোনো কারণ নেই তো?
– আর কী কারন থাকবে? উফফ!
– ঠিক আছে। কন্টিনিউ। তবে ফার্স্ট পার্সনে লেখ এবার।
– মানে? গল্পের মাঝে চেঞ্জ করা যায় নাকি?
– হ্যাঁ যায়। আমার হুকুম। আমার নাম ব্যবহার করলে ফার্স্ট পার্সনে গল্প লিখতে হবে।
– ঠিক আছে। ধুর! বড্ড ঝামেলা করিস।
– নে নে। লেখ।
২
কোথায় ছিলাম যেন? ও হ্যাঁ মনে পড়েছে। আর একটি ছেলে ছিল ফার্স্ট ইয়ার এ, যার অমৃতাকে ভালো লাগত। আর সেও ওইরকম উদ্দেশ্যেই ঐ গ্রুপের সাথে ভিড়েছিল। ছেলেটির নাম দেবরূপ। এবার প্রশ্ন আসতেই পারে যে আমি কী করে বুঝলাম। ছেলেরা এসব বুঝতে পারে। তার পছন্দের মেয়েটিকে আর কার ভালো লাগে এটা বোঝা এমন কিছু কঠিন কাজ নয়। কঠিন কাজ হল সেই ছেলেটির সাথে লড়াই করে মেয়েটিকে জিতে নেওয়া।
কলেজের দ্বিতীয় দিনেই স্যার বললেন আমাদের নাকি একটা অনলাইন জার্নাল আছে। সেখানে চাইলে স্টুডেন্টরাও লেখা দিতে পারেন। শুনে সত্যি খুব ভালো লাগল আমাদের। বাড়ি ফিরে সেদিন অমৃতার সাথে কথা বলার একটা ছুতো পেলাম। অবশ্যই ফেসবুকে। ওর নাম্বার তখনও আমি পাইনি। চ্যাটবক্স খুলে ওকে মেসেজ করব কিনা ভাবলাম কিছুক্ষন। তারপর করেই ফেললাম।
বললাম, “জার্নাল টা দেখলি? কলেজের?”
প্রশ্নটা করেই পাশের ট্যাব এ খুললাম জার্নাল টা। যেটা নিয়ে জানতে চাইছি সেটা নিয়ে আমায় জেনে নিতে হবে আগে। কিছুক্ষন পরেই রিপ্লাই এলো।
“না রে। দেখা হয় নি। তুই দেখলি?”
বললাম, “হ্যাঁ। দেখলাম। খুব অরগানাইজড। ভালো লাগল”
– ওহ আচ্ছা।
এরপর কয়েক সেকেন্ড ভাবলাম কী বলব? দেখলাম ও নিজেই মেসেজ করল, “কাল কলেজ যাবি?”
বললাম, “হ্যাঁ। যাবো তো! তুই?”
উত্তর এল, “হ্যাঁ। যাবো।”
স্মাইলি দিয়ে কথা শেষ করে দিলাম। এনাফ ফর ওয়ান ডে। বোকা ছেলে হলে আরও কিছুক্ষন ভাটাতো। কিন্তু অমিতেশ রায়, চালাক ছেলে। কাজেই প্রথম দিনের জন্য এটুকুই থাক। এত তাড়াতাড়ি বিস্ক ফার্মের মত অল্পে স্বাদ না মিটলে মুশকিল।
৩
এর মাঝে একটা ব্যাপার হয়েছে। আমি একদিন চ্যাট করতে করতে অমৃতাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, “প্রেম করিস?”
“তোর বয়ফ্রেন্ড আছে?” এটা জিজ্ঞেস করিনি তার কারন এই প্রশ্ন টাতে খুব ডেসপারেট শোনায়। মনে হয়, উহ্য রেখে বলা হচ্ছে “যদি না থাকে আমি তোর বয়ফ্রেন্ড হতে পারি?” কভি নেহি। এসব বোকা ছেলেরা করে। চালাক ছেলেরা আরও ডিরেক্ট প্রশ্ন করে। “প্রেম করিস?” জিজ্ঞেস করার অর্থ হল শুধু বয়ফ্রেন্ড না, মেয়েটার গার্লফ্রেন্ড থাকার পসিবিলিটি টাকেও আমি বাদ দিচ্ছি না। এই আর কি।
যাই হোক, আমার বুক ভেঙে দিয়ে উত্তর এসেছিল, “হ্যাঁ করি। কেন রে?”
একটু সময় নিয়েছিলাম রিপ্লাই দিতে। বলেছিলাম, “নাহ। এমনি। কতদিন হল প্রেমের?”
অমৃতা বলল, “এই তো এক মাস হল।”
ইস! কানের পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেল। আর এক মাস আগে কলেজ শুরু হলে…! সে যাই হোক, গোলপোস্টে গোলকিপার রয়েছে এবং অপজিশন দলের স্ট্রাইকার গোল করতে চায়। মানে দেবরূপ প্লাস বয়ফ্রেন্ড। হুম। খেলা টা জমবে ভালো।
দিন কয়েক পর ঠিক হল ধর্মতলা যাওয়া হবে। আমি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড রুদ্র। আর অমৃতা বলেছিল যাবে। আমারই কি একটা কেনার ছিল বিগ বাজারে। লাস্ট মোমেন্টে দেখি দেবরূপ কোত্থেকে ভিড়ে গেল। কি আর করা যাবে, ওকে নিয়ে যাবো না বললে অমৃতার কাছে রেপুটেশন খারাপ হতে পারে ভেবে খুব স্পোর্টিংলি বললাম, “হ্যাঁ, চল ভাই। নো প্রবলেম।”
সেখানে গিয়ে একটা ব্যাপার ঘটল। আমি যখন শার্ট দেখছিলাম, রুদ্র আমার সাথেই ছিল। ও সব টাই জানতো। আর একটু দূরে দাঁড়িয়ে দেবরূপ দেখলাম কি যেন বলছে অমৃতা কে। এবং অমৃতাও খুব যেন বুঝছে এরকম মুখ করে ঘাড় নাড়ছে দেখলাম। তখন জানিনি কী বলেছে, একটু পর দেবরূপ একটু সরে যাওয়ার পরেই অমৃতা আমার কাছে এল।
আমি বললাম, “কী এত বলছে দেবরূপ?”
অমৃতা বলল, “কিছু না। ভাট বকছে। ছাড় তো!”
আমি বললাম, “প্রোপোজ করে ফেলল নাকি এক্ষুনি?”
অমৃতা খুব অবাক হয়ে বলল, “মানে? প্রোপোজ কেন করবে?”
আমি খুব স্বাভাবিক ভাবেই বললাম, “ওর তো তোকে ভালো লাগে।”
– What?
– সে কি তুই জানতিস না?
– তোকে কে বলল?
– আরে বোঝা যায়। আমরা ছেলেরা বুঝতে পারি।
অমৃতা কিছু একটা ভেবে তারপর বলল, “আচ্ছা সেই জন্যেই আমাকে এসব বলল!”
“কী বলল?” আমি এবার কৌতূহলী ভাবে প্রশ্ন করলাম।
অমৃতা বলল, “আরে ও জিজ্ঞেস করছিল আমার বয়ফ্রেন্ড আছে কিনা। আমি হ্যাঁ বলার পর কিছু বলেনি প্রথমে। তারপর একটু বাদে বলল ওর নাকি যাদের যাদের ভালো লাগে তাদেরই দেখে বয়ফ্রেন্ড রয়েছে। এটা শুনে একটু Weird লাগল আমার। ভাবলাম হঠাৎ আমাকে এসব শোনাচ্ছে কেন?”
আমি বললাম, “হুম। বুঝলাম। এবার বিশ্বাস হল তো!”
অমৃতা কিছু বলল না। শুধু ঘাড় নাড়ল।
Hold On!
***
– কী হল? গল্পের মাঝে থামাস না বার বার। Rhythm টা কেটে যাবে।
– কিন্তু এটা তো…
– Sshhh! বাকি টা লেখা হোক। তারপর কথা হবে।
– কিন্তু…
– চুপ একদম।
৪
প্রথম ধাপ অলরেডি কমপ্লিট হয়ে গিয়েছে আমার। অমৃতা আমায় বিশ্বাস করে। নাহলে আর একটা ছেলের কথা আমায় এভাবে বলে দিত না। আর অমৃতা জানে দেবরূপ ওকে লাইন মারার চেষ্টা করছে। এটা জানার পর মেয়েরা নরম্যালি কম পাত্তা দেয়। এবার দেবরূপ কে বোঝাতে হবে যে অমৃতা ওর প্রতি খুব Interested না। সেটার সুযোগ অবশ্য এল কিছুদিন বাদেই।
তার আগে কয়েকটা কথা শেয়ার করে নি পাঠকদের সাথে। অমৃতা মেয়েটা প্রচন্ড কেয়ারিং একটা মেয়ে। দুর্দান্ত রান্না করে। দেখতেও অসাধারন মিষ্টি। ও জানতো আমি কলকাতায় একা থাকি। মেস এ। আমি ঠিক ঠাক খাচ্ছি কিনা। খাওয়া স্কিপ করলাম কিনা এই ব্যাপার গুলো ও বেশ খুঁটিয়ে জানতে চাইতো। এই সময় থেকেই আমি হালকা একটু ফ্লার্ট শুরু করেছিলাম। ও যখন আমি খেয়েছি কিনা জানতে চাইতো, আমি উত্তর দেওয়ার পর বলতাম, “তোর বয়ফ্রেন্ড কিন্তু ভীষন লাকি।”
ও বলতো, “কেন?”
আমি বলতাম, “এই যে তুই এত খেয়াল রাখিস সব সময়। এরকম সবাই করে না।”
ও হাসত। বলত ওর বয়ফ্রেন্ডের নাকি এমনিও এসব ব্যাপারে খেয়াল থাকে না। সারাদিন কথা বলার টাইম পায় না। কি একটা কাজ যেন করত। তাই রাত জেগে অমৃতা কে গল্প করতে হত ওর সাথে। এই কারনে মাঝে মধ্যেই ওর ঘুমোতে ভোর চারটে পাঁচটা বেজে যেত।
যাই হোক, One Problem at a time. প্রথমে দেবরূপ এর কেস টায় আসি। তারপর গোলকিপার কে সরানোর চিন্তা করব।
একদিন কলেজের পর হেঁটে হেঁটে হাতিবাগানের দিকে হাঁটছি। হঠাৎ দেবরূপ ফোন করল আমার ফোনে। আইডিয়াটা তক্ষুনি মাথায় খেলে গেল আমার। আমি হঠাৎ অমৃতা কে বললাম, “এই আমার পার্স টা কোথায় গেল?”
অমৃতা একটু চমকে গেছে প্রশ্নটা শুনে। বলল, “এই রে! কলেজে ফেলে এলি নাকি?”
ফোন তখন বাজছে। আমি ওকে ফোন টা দিয়ে বললাম, “তুই ফোন টা ধর তো! দেবরূপ ফোন করছে। আমি খুঁজি পার্সটা।”
অমৃতা আর কিছু না বলে ফোনটা ধরল দেবরূপ এর। আমি তখন ব্যাগের ভেতর পার্স খোঁজার কাজে ব্যস্ত। দেবরূপ বোধহয় একটু অবাক হয়েছিল অমৃতা আমার ফোন ধরছে দেখে। আমাকে চেয়েছিল বুঝতে পারলাম। অমৃতা বলল, “ও একটু ব্যস্ত আছে। তুই আমায় বল। আমি ওকে বলে দেবো।”
“ও” একটু ব্যস্ত আছে! “ও”! আমি তো ছিলাম অমিতেশ। হয়ে গেলাম “ও”। হচ্ছে হচ্ছে! তার মানে হচ্ছে!
ফোন রাখার পরেই আমার পার্স টা পাওয়া গেল আমার জিন্স এর প্যান্টের পেছন পকেটে। অমৃতা বলল, “যাক! ভয় পাইয়ে দিয়েছিলি!”
আমি কিছু বললাম না। আশা করছি মিশন সাকসেসফুল। কাল কলেজে বোঝা যাবে। আর হলও তাই। পরের দিন কলেজে যাওয়ার পর থেকেই দেবরূপ খুব বেশী আসছিল না আমাদের কাছে। যে দেবরূপ আগে আমার আর অমৃতার সাথে চিপকে থাকত। সে আর আসছে না। যাক! দ্বিতীয় ধাপও কমপ্লিট। এবার শেষ ধাপ। বয়ফ্রেন্ড মানে গোলকিপার!
৫
সেদিন তখন বাজে প্রায় ৩ টে। অমৃতা বলছিল ওর বোধহয় জ্বর এসেছে। গা টা গরম। আমি জিজ্ঞেস করলাম, “জেগে আছিস কেন এখনও? শুয়ে পড়।”
ও বলল, “অভিষেকের সাথে গল্প করছে।” (অভিষেক ওর বয়ফ্রেন্ড। লাকি বাস্টার্ড)
আমি বললাম, “ও জানে না তোর জ্বর?”
অমৃতা বলল, “হ্যাঁ বললাম। ও বোধহয় খেয়াল করে নি। গেম খেলছে তো আসলে।”
আমি এবার একটু অবাক হলাম। বললাম, “গেম খেলছে মানে? তুই যে বললি ওর সাথে গল্প করছিস!”
– হ্যাঁ। গল্প করছি তো! গেম খেলছে ও। আর যখনই টাইম পাচ্ছে রিপ্লাই দিচ্ছে। একটু রিল্যাক্সেশনও তো দরকার বল ওরও। সারাদিন অফিস করে।
আমি এর উত্তরে কী বলব বুঝতে পারলাম না। একটু থেমে বললাম, “দেখ আজ তো শরীর খারাপ। আজ তুই শুয়ে পড়। রাত জাগলে শরীরটা কিন্তু আরও খারাপ হবে।”
অমৃতা বলল, “হ্যাঁ রে। শুয়ে পড়ব। একটু বাদেই।”
আমি আর কথা না বাড়িয়ে গুড নাইট জানিয়ে শুয়ে পড়লাম। একটা মানুষের জীবনে প্রাইওরিটি টা ঠিক থাকা উচিত। গেম যদি খেলতেই হয় গার্লফ্রেন্ডকে জাগিয়ে রাখার কোন মানে হয় না। তার ওপর জ্বর নিয়ে।
কদিন পরে গল্প করতে করতে জানতে পারলাম এক মাসের সম্পর্কে অভিষেক ওর সাথে দেখা করেছে মাত্র এক দিন। তাও ওই আধঘন্টার জন্য। এ কেমন সম্পর্ক ভাই?
আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, “ও তোকে চিনল কীভাবে?”
অমৃতা বলেছিল, “ও আমার দাদা বন্ধুর ভাই। আমাদের ফ্যামিলির কোনো অনুষ্ঠানে আমায় দেখেছিল। তারপর ফেসবুকে কন্ট্যাক্ট করে!”
আমার আর অমৃতার বন্ধুত্ব ইতিমধ্যে বেশ গভীর হয়েছিল। কলেজেও কানাঘুষো শুরু হয়ে গিয়েছিল যে এরা দু’জন প্রেম করছে। যদিও তখনও অবধি কিচ্ছু ঘটে নি। তবে এরপর বাজে একটা ঘটনা ঘটালাম আমি। আমি নিজেও একেবারেই ভেবচিন্তে করিনি কাজ টা। কিন্তু করার পর খুব রিগ্রেট করেছিলাম।
কলেজ থেকে অমৃতার বাড়ির দূরত্ব ওই দেড় কিলোমিটার মত। ওই রাস্তাটা এক এক দিন আমি হেঁটে নিতাম ওর সাথে। তারপর বাড়ি অবধি দিয়ে আমার ফিরে আসতাম। তো এই পথের মাঝেই একটা বড় ব্রীজ পড়ত। গৌরিবাড়ি ব্রীজ। যার নীচ দিয়ে বয়ে যেত পচা খাল। যেখান থেকে মাঝে মধ্যেই অদ্ভুত সুবাস ভেসে আসত নাকে। মাঝে মধ্যেই এই ব্রীজের ওপর আমরা দাঁড়িয়ে গল্প করতাম। খুব সুন্দর হাওয়া দিত ওখানটায়।
সেদিন তখন সন্ধ্যে নেমেছে। আমরা দু’জন ব্রীজের ওপর দাঁড়িয়ে গল্প করছি। অমৃতা কিছু একটা বলছিল। আমি শুনছিলাম। ওই আধো আলো ছায়াতে বড্ড সুন্দর লাগছিল ওকে। আমি হঠাৎ একটা কাজ করলাম এর পর। এদিক ওদিক তাকিয়ে আমার ঠোঁটটা দিয়ে আলতো করে স্পর্শ করলাম ওর গাল। তারপরেই সরিয়ে নিলাম নিজেকে। ব্যাপারটা এত তাড়াতাড়ি ঘটেছে যে ও নিজেও ভাবতে পারেনি এরকম কিছু একটা হতে চলেছে। কাজ টা করার পরেই বড্ড লজ্জা লাগল। এটা করা একদম উচিত হয় নি আমার। অমৃতা এতটাই অবাক হয়ে গেছে যে ও কিছু বলছে না।
আমি বললাম, “আমি আজ আসি। একটা কাজ মনে পড়ল হঠাৎ”
ও তাও কিছু বলল না। আমি পেছন ঘুরে হাঁটা দিলাম বাড়ির পথে।
৬
বাড়ি ফেরার পর অজস্র মেসেজ করি ওকে। রিপ্লাই করে নি। আমি বললাম I am sorry. এটা করা আমার উচিত হয় নি এটাও বললাম। কিন্তু নো রিপ্লাই। একটু অপেক্ষা করার পর ফোন করলাম। ধরল না।
আমার এবার খুব টেনশন হচ্ছিল। শুরু থেকে নিজেকে চালাক ছেলে চালাক ছেলে বলে ঘ্যান ঘ্যান করতে করতে শেষ পর্যন্ত বোকা ছেলের মত কাজ করে বসলাম?
তখন বাজে সাতটা। আমি বুঝতে পারলাম আমি যেটা করলাম সেটার কোনো ক্ষমা নেই। সব টা ঘেঁটে ফেললাম আমি নিজে। রাত ৮ টা নাগাদ একটা অচেনা নাম্বার থেকে ফোন এল আমার ফোনে। ধরলাম। ও প্রান্ত থেকে শোনা গেল একটা অচেনা মহিলা কন্ঠ।
“হ্যালো অমিতেশ?”
আমি বললাম, “হ্যাঁ। কে বলছেন?”
উত্তর এল, “আমি অমৃতার মা বলছি।”
এই কেস করেছে রে! আবার মা কেন? বাড়িতে গিয়ে বলে দিল নাকি? এবার কি মোলেস্টেশনের কেস দেবে আমায়? সব গেল আমার। একটা চুমু আমার সব শেষ করে দিল।
আবার আওয়াজ এল, “হ্যালো… হ্যালো…
নিজেকে সামলে বললাম, “হ্যাঁ কাকিমা বলুন।”
– তুমি এখন কোথায়?
একবার ভাবলাম উত্তর দেওয়াটা ঠিক হবে? পুলিশ আসবে নাকি? তারপর যে ভগবান কে কোনোদিন ডাকিনি তার নাম করে উত্তরটা দিয়েই দিলাম। বললাম, “আমি তো মেসে। কেন?”
কাকিমা বললেন, “কি ইম্পর্ট্যান্ট জেরক্স করার আছে তোমাদের?”
আমি বললাম, “মানে? কিসের জেরক্স?”
– সে কি? তুমি জানো না? অমৃতা যে বলল তুমিও থাকছো। দেবরূপ কী একটা জেরক্স করতে ডেকেছে তোমাদের। আজকেই নাকি লাগবে সেটা। কি একটা অ্যাসাইনমেন্ট আছে!
আমি কি উত্তর দেবো সেটাই বুঝতে পারছিলাম না। কীসের জেরক্স? কীসের অ্যাসাইনমেন্ট? দেবরূপ আবার ফোন করছে অমৃতা কে? এসবের মাঝে বিপ বিপ আওয়াজ শুনে বুঝলাম একটা কল ওয়েটিং। কান থেকে ফোন টা নামিয়ে দেখলাম, অমৃতা ফোন করছে। বুঝতে পারলাম আমার হার্টবিট টা বেড়ে গেল। জোরে নিঃশ্বাস পড়ছে। কোনোরকমে কাকিমা কে বললাম, “অমৃতা ফোন করেছে। একটু রাখছি আমি।”
তারপর ওর ফোন রিসিভ করলাম। হ্যালো বলার আগেই অমৃতার কন্ঠস্বর শোনা গেল। “নীচে আয়।”
নীচে আয় মানে আমার মেসের বিল্ডিং টা তিন তলা। এবং তিন তলাতেই থাকি। তাই নীচে যেতে বলছে বুঝতে পারলাম। জিজ্ঞেস করলাম, “দেবরূপ কী জেরক্স আনছে? কীসের অ্যাসাইনমেন্ট রে?”
ও প্রান্ত থেকে আবার ইকো হল, “নীচে আয়।”
আমি আর কথা না বাড়িয়ে বললাম, আসছি।
আমার মেসের গলি টা নর্থ কলকাতার টিপিক্যাল গলি। আলো কম, লোক কম। অন্ধকার বেশী। নীচে গিয়ে দেখলাম, অমৃতা দাঁড়িয়ে রয়েছে মেসের দরজার বাইরে। আমি বললাম, “I am really Sorry. আমি আসলে…”
অমৃতা বলল, “Shut up.”
আমি বললাম, “তুই বিশ্বাস কর আমি প্ল্যান করে ওটা করিনি। খুব impulsively….”
“Shut up” আবার ইকো হল একই কথা।
কিছুক্ষন দু’জনেই চুপ। একটু পর নীরবতা ভাঙলাম আমি নিজেই। বললাম, “কিছু বলবি না যখন তাহলে ডাকলি কেন?”
অমৃতা বলল, “কী বলব ভাবছি।”
“কেন? কী ভাবছিস?” আমি জিজ্ঞেস করলাম।
অমৃতা উত্তর টা আমার সারাজীবন মনে থাকবে। বলল, “ভাবছি লোক ভর্ত্তি ব্রীজে যে কাজ টা তুই অনায়াসে করলি, এই জনশূন্য গলিতে আর একবার সেটা পেতে গেলে আর কতক্ষন আমায় মশার কামড় সহ্য করতে হবে।”
গোল হয়ে গেল কী? গোল দিয়ে ফেললাম? কই বুঝতে পারছি না তো! গোলকিপার অভিষেকের কী হল? পরে শুনেছিলাম আমার কাছে আসার আগে ওর সাথে সব শেষ করে এসেছিল ও। অর্কিমিডিস না জানি কি একটা পেয়ে গিয়ে ইউরেকা বলে চেঁচিয়ে উঠেছিলেন। আমিও তো পেলাম। ইউরেকা বলে চেঁচাবো কী? তারপরেই মনে হল, ওসব বোকা ছেলেরা করে। অমিতাংশু রায় চালাক ছেলে। ও গৌরীবাড়ি ব্রীজে শুরু করা কাজ টা শেষ করবে এখন। তারপর আর একটি প্রেমের গল্প লেখা শেষ করবে। তারপর একসাথে বিরিয়ানি খেতে যাবে। বিরিয়ানি ছাড়া প্রেম সম্পূর্ণ হয় না।
No comment… Just osm…
Waiting for next one !
<3
Just fatafati
Nice ending bro.