আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় টা ইতিমধ্যেই বিপ্লবের জন্য বিশ্বজয় করে ফেলেছে বলা চলে। লোকজন এখন এখানে বিপ্লবের এর ওপর পিএইচডি করতে আসে। ফেল করেছে? হোক বিপ্লব। পরীক্ষা নেবে কিন্তু পড়া হয় নি। করো কলরব। অনেক ক্ষেত্রেই অভিযোগের তীর গিয়েছে বহিরাগত দের দিকে।

এই সব কিছুর মাঝে পড়ে সিকিউরিটি গার্ডগুলোর হয়েছে বেশ মজা। তাদের বলা হয়েছে আই কার্ড ছাড়া কোনো ছাত্র-ছাত্রীকে ঢুকতে দিও না। তারা খুব ভালো ভাবে তাদের কর্তব্য পালন করছে। যদিও এরকমও নিয়ম রয়েছে যে কেউ চাইলে গেটের কাছে রাখা রেজিস্টারে সাইন করে ঢুকতে পারবে। কিন্তু সিকিউরিটি গার্ড গুলো সেটাও অ্যালাও করে না। ঝামেলা করে।

সেদিন আমি আই কার্ড নিয়ে যেতে ভুলে গিয়েছিলাম, কাজেই গেটেই আটকালো আমাকে। বলল, “কোথায় যাবে?”
আমি বললাম, “নার্নিয়ার ম্যাজিক্যাল ওয়ার্ল্ডে”
একজন সিকিউরিটি গার্ড পান চিবোতে চিবোতে এগিয়ে এসে বলল, “কোথায়?”
আমি বললাম, “ক্লাস আছে।”

– আই কার্ড দেখাও।
– আনা হয় নি আজ। সাইন করে যাবো।
– নাহ। ওরকম তো নিয়ম নেই।

আমি বললাম, “তাহলে এই রেজিস্টার খাতাতে কী কাটাকুটি খেলো তোমরা?”
এবার আর একজন সিকিউরিটি গার্ড এগিয়ে এসে বলল, “এত কথার কী আছে? বললাম তো আই কার্ড ছাড়া ঢুকতে দেওয়া হবে না।”

আমি বললাম, “দেখো আমার ক্লাস আছে। প্রোজেক্ট জমা দিতে হবে।”
আওয়াজ এল “হবে না বললাম তো!”

বললাম, “দেখো পরে তোমরা সমস্যায় পড়বে। বাড়াবাড়ি কোরো না।”

তারা আর আমায় উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করলো না। আমি আর কথা না বাড়িয়ে ইউনিভার্সিটির দিকে এগোতে যেতেই পেছন থেকে একজন আমার ব্যাগ টা টেনে ধরল। আমি হাত পা ছুঁড়ে ছাড়ানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু পারলাম না। তিন চার জন মিলে আমায় ধরে ছিল। আমি তখন তারস্বরে চেঁচাচ্ছি। গেটের সামনে ভীড় জমে গেছে। এর ফাঁকে তিন চারজন আই কার্ড ছাড়াই ঢুকে পড়ল ভেতরে।

তারপর আমায় নিয়ে যাওয়া হল ভিসির রুমে। প্রথমে একজন ভেতরে গিয়ে কিছু একটা বলে এল ভিসি কে। তারপর আমায় নিয়ে যেতে বলা হল ভেতরে। সাথে ২ জন সিকিউরিটি গার্ড। ভেতরে যাওয়ার পরে কেউ কিছু বলার আগেই আমি বললাম, “স্যার এভাবে অযথা একজন স্টুডেন্ট কে হেনস্থা করার মানে কী? আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা রেপুটেশন আছে। সেটা কে ধুলোয় মেশানো কি উচিত হচ্ছে আপনার?”

ভিসি কথাটা শুনে প্রথমে একটু হকচকিয়ে গিয়েছিলেন। পরক্ষনেই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে আমায় বললেন, “ইউনিভার্সিটির সম্মান কিসে থাকবে না থাকবে সেটা ঠিক করে দেবে একজন বহিরাগত ছাত্র?”

আমি এই প্রশ্ন টার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। ব্যাগ থেকে আই কার্ড বার করে বললাম, “আমি বহিরাগত নই। এই দেখুন আমার আই কার্ড। এই সিকিউরিটি গার্ড বলল, আমায় ঢুকতে দেওয়া হবে না। আমি বললাম আমার আইকার্ড আছে তো। ওরা বললো, থাকলেও ঢুকতে দেওয়া হবে না। ভিসির হুকুম।”

ভিসি এবার তাকালেন গার্ড দু’জনের দিকে। ওরা তখন চেঁচামেচি জুড়ে দিয়েছে। “না স্যার ও মিথ্যে কথা বলছে। ও বললো আই কার্ড নেই সাইন করে ঢুকবে।”

আমি বললাম, “আমায় দেখে কি পাগল মনে হয়? আই কার্ড থাকলে কি এত ঝামেলা পোয়াতাম বলে মনে হয় আপনার? মিথ্যে বলবেন না।”

কথাটা বলেই বাকিদের আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বেরিয়ে এলাম ভিসির ঘর থেকে। ভেতর থেকে চিৎকার শুনতে পাচ্ছি ভিসি স্যার এর। যাক এবার কিছুদিন গার্ড গুলো কম ঝাঁট জ্বালাবে। ব্যাটাদের শুরুতেই বললাম বাড়াবাড়ি কোরো না। সমস্যায় পড়বে। শুনলো না! এবার বুঝুক ঠ্যালা!

অনর্থ ৮

Arnab Mondal


হিজিবিজি লেখা আর বিরিয়ানি নিয়ে Phd করছি আর আকাশবাণী কলকাতায় নিজের কন্ঠস্বর ভাড়া দিয়ে সংসার চালাচ্ছি।


Post navigation


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কপি করবেন না দাদা/দিদি