বোধন পর্ব ৩ঃ https://secularweirdo.com/2018/01/10/বিবাহ-বিভ্রাট-৩


সপ্তমী, সন্ধ্যে

জয়

এমন কিছু কিছু সময় সবার জীবনেই আসে যখন সে আপ্রান চেষ্টা করে সঠিকভাবে চিন্তা করার। কিন্তু পুরোটাই ঘেঁটে ঘ হয়ে যায়। জয় এরও এখন সেইরকম একটা অবস্থা। ওরা চারজন বসে আছে ওদের মন্ডপ এর পাশে ক্লাব এর সামনে। চারজন মানে অয়ন, মৈনাক, অনিন্দিতা আর জয়। অয়ন বাদে বাকিরা সবাই নার্সিং হোম থেকে ঘুরে এসেছে। এদিক থেকে অয়ন যেতে পারে নি কারন পূজোর পুরো ব্যাপার টাই সামলাতে হয়েছে ওকে।

রাজর্ষির অবস্থা খুব মারাত্মক না। তবে আপাতত পুরো রেস্ট এ থাকতে হবে ওকে। যে সময় জয় রা গিয়েছিল, সেই সময় বেশি কথা বলতে না পারলেও এ কীর্তিটা কার সেটা ওরা সবাই জানে এখন। আর সেই জন্যেই ওদের এত চিন্তাভাবনা, এত আলোচনা। অয়ন এর মাথা যাচ্ছেতাই রকম গরম।

“ছেলেটাকে পেলে জ্যান্ত পুঁতে ফেলব শালা!” – বলল অয়ন।

মৈনাক বলল, “ওটা সম্ভব নয় তুই খুব ভালো করেই জানিস। Literally বললাম। তার চেয়ে এমন কিছু বল যাতে সাপ ও মরবে কিন্তু লাঠিও ভাঙবে না।”

“কিন্তু কী করব আমরা?” প্রশ্ন করল অনিন্দিতা।

জয় এতক্ষন চুপ করে সব শুনছিল। এমন সময় বলে উঠল, “আমরা মানে? তুই কিছু করবি না! শানু কত Dangerous হতে পারে দেখলি তো নিজেই!! তুই থাকবি না এতে!”

– কে কত ভয়ংকর তাতে আমার কিছু যায় আসে না। রাজর্ষি আমারও বন্ধু। আর শেষবার ওর সাথে শানুর ঝামেলার কারনও ছিলাম আমি। তোরা যাই প্ল্যান করিস না কেন আমি থাকব।

– নাহ। তুই থাকবি না ব্যাস!! আমি আর কাউকে নিয়ে রিস্ক নিতে চাই না। যা করার আমরা ৩ জনেই করবো।

মৈনাক এইসময় বলল, “আরে সে না হয় বুঝলাম। কিন্তু করব টা কী?”

অয়ন বলল, “আচ্ছা আমরা পুলিশ এর কাছে যেতে পারি না?”

– ধুস! পুলিশ কী করবে এসব কেস এ। শেষে আমাদেরই ঝাড় দেবে।

– তাহলে কী করনীয়? বল না!!

জয় বলল, “অয়ন তোর সাথে রঞ্জনার কথা হয় এখনও?”

অয়ন একটু চমকে গিয়েছিল কথাটা শুনে। তারপর নিজেকে একটু সামলে নিয়ে বলল, “হ্যাঁ… মানে… কেন হবে না? ওই আর কি… হয় একটু আধটু!”

– গুড! তোকে একটা কাজ করতে হবে।

– কী কাজ?

– ওর কাছে একটা জিনিস আছে সেটা একটু লাগবে আমাদের।

– আরে কী জিনিস?

– সেটা তোকে আমি রাত্রে বলে দেবো মেসেজ এ!

– আরে রাত্রে বললে, আমি নেবো কী করে? এখনই বল না।

– আচ্ছা কানটা বাড়া! বলছি।

অনিন্দিতা এবার খুব বিরক্ত হয়ে বলল, “এই যে এরকম করলে কী করে হবে? আমাদেরও বলা হোক। আমরাও সাহায্য করতে চাই।”

জয় বলল, “যে জিনিসটা চেয়েছি, ওটা যদি পাই তাহলে আর কাউকেই লাগবে না আমাদের।”

অয়ন – কিন্তু ওটা ও দেবে কেন আমাদের?

জয় – কারন ওরকম অনেক গুলো রয়েছে ওর। একটা গেলে এমন কিছু যায় আসবে না। তুই একটু ম্যানেজ কর প্লিজ।

সপ্তমী, রাত

রঞ্জনা

গাঁজা খাওয়ার পর সবাই নাকি কেমন একটা ঘোর এর মধ্যে চলে যায়। রঞ্জনার আবার উলটো হয়। ওর সমস্ত স্নায়ু যেন আরও প্রখর হয়ে ওঠে। সমস্ত দুঃখ, কষ্ট, আনন্দ সবটাই যেন extreme ভাবে বেড়ে যায়। আজও তার ব্যাতিক্রম হয় নি।

ওকে আজ রাতে আসতে বলেছিল রঞ্জনা। একটু রাগের বশেই বলেছিল। কেউ যদি প্রোপোজ করার পর, প্রথমবার সময়ে দেখা করতে আসতে না পারে, তাহলে ভালোবাসি বললই বা কেন? এটা কি কোন খেলা নাকি? আর তাছাড়া আজ একটা কারুর সঙ্গ পেতে ইচ্ছে করছিল খুব।

তবে সেই চাওয়াটা শারীরিক না। মানসিক। ও আজ জোর করছে না দেখে একটু অবাক হয়েছে রঞ্জনা। এরকম তো হয় না সাধারনত। অনেকক্ষন থেকেই কিছু একটা ভাবছে যেন ও।

“কিছু হয়েছে তোর?” জিজ্ঞেস করল রঞ্জনা।

– “নাহ। ওই আর কি। দে জয়েন্ট টা দে”

– কি হয়েছে বল না।

– কিছু না। মন টা খারাপ একটু।

ওরও আজ মন খারাপ? আজ কি মন খারাপের দিন নাকি? সপ্তমী বলে কথা! দেবীর বোধন! এরকম পর পর সবার মন খারাপ হবে কেন? রঞ্জনা আজ নেতাজী সুভাষ পার্ক থেকে ফিরে এসে বাবার কাছে গিয়েছিল। একটু গল্প করতে। ভেবেছিল মন হয়তো ভাল হবে তাতে। কিন্তু নাহ। বাবা নাকি কী সব বই লেখার কাজে ব্যস্ত। তাই আঁতেল বন্ধুরা আসবে দুপুরে। সেই নিয়ে মায়েরও হয়রানি। কিছু কিছু সময় নিজেকে খুব একা লাগে ওর।

তবে সেই একাকীত্ব আবার মাঝে মাঝে ঘুচে যায় ওর এই কাঁচের অ্যাকোয়ারিয়াম কাছে গেলেই। নাহ। মাছ নেই এই অ্যাকোরিয়াম এ। যেটা রয়েছে সেটা কোনো অবস্থাতেই মাছের মত নিরীহ প্রানী নয়। যখনই একা লাগে ওর তখনই কাঁচের অ্যাকোয়ারিয়াম এর কাছে এসে ও ছোট ছোট কাঁকড়া বিছেগুলোর অবাধ বিচরন দেখে। ও জানে এগুলোর একটার কামড় খেলে আর দেখতে হবে না! কিন্তু কিই বা করবে! ভয়ংকর সুন্দর বলে একটা ব্যাপার হয় না! এটা খানিকটা সেরকম। বড্ড টানে ওকে।

“তোরও কী কিছু হয়েছে আজ? কি একটা যেন ভাবছিস মনে হচ্ছে!” জিজ্ঞেস করল ও!

– ওই আর কি! ছাড় Bore হবি।

– আচ্ছা কী ব্যাপার শুনি না।

“আচ্ছা বলছি” বলে হাত বাড়িয়ে রঞ্জনা বলল, “জয়েন্ট টা দে!”

– হ্যাঁ বল।

– আরে… I liked someone. অনেকদিন ধরেই কথা হচ্ছে। তো কাল আমায় প্রোপোজ করেছিল।

– তারপর!!

– Then আমি হ্যাঁ বলেছিলাম। আজ দেখা করার কথা ছিল নেতাজী সুভাষ পার্ক এর কাছে! আসে নি দেখা করতে। অনেকক্ষন অপেক্ষা করেছিলাম আমি। এল না ও!

– ওহ! কিছু কাজ পড়ে গেছে হয়তো!

– জানিনা। একবারও জানালো না। ফোনটাও অফ।

– হুম। আমায় আগে বলতে পারতিস যে you love someone. তাহলে আসতাম না আজ!

– আর love! এলই তো না বাল!

– Still….

– হুম।

– আমি চিনি?

– কাকে?

– আরে তোর ওই মেহেবুব কে?

– খুব ভালো করে চিনিস।

– তাই??? কে বল কে বল!!

– কী করবি জেনে?

– বল না। এত কথা বলছিস কেন?

– রাজর্ষি।

– What?

ওর মাথাটা হঠাৎ খুব ঘুরতে শুরু করল। এই উত্তরটা একেবারেই আশা করে নি ও!!

“কী বলছিস কী তুই?” আঁতকে উঠে জিজ্ঞেস করল ও এবার!

“কী হয়েছে এরকম করছিস কেন তুই?” রঞ্জনা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল!

– রাজর্ষি কে তুই ভালোবাসিস! আর আমি তোর সাথে… ইস! না এটা উচিত হয় নি। আগে বলতে পারতিস আমায়!

– আগে বললে কী করতিস শুনি? আমার সাথে শুতিস না?

– নাহ! শুতাম না। তুই জানিস রাজর্ষি আমার কত কাছের একজন??

তারপর রঞ্জনা কিছু উত্তর দেওয়ার আগে অয়ন আবার বলল, “আর ও আজ আসেনি কেন জানিস? কারন ও নার্সিং হোম এ ভর্তি! ওকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে আমাদেরই এখানকার আর একটি ছেলে!”

কেন? কেন? কেন? শুধু এই প্রশ্নটাই মাথায় বার বার ঘুরছে রঞ্জনার। আজ তো বোধন। আজ তো এরকম হওয়ার কথা ছিল না। কেন সব টা ঘেঁটে যাচ্ছে? কেন সবার খারাপ হচ্ছে? বহুদিন পর কয়েক ফোঁটা জল হঠাৎই গাল বেয়ে গড়িয়ে এল ওর।

(চলবে)

বোধন – পর্ব ৪

Arnab Mondal


হিজিবিজি লেখা আর বিরিয়ানি নিয়ে Phd করছি আর আকাশবাণী কলকাতায় নিজের কন্ঠস্বর ভাড়া দিয়ে সংসার চালাচ্ছি।


Post navigation


One thought on “বোধন – পর্ব ৪

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কপি করবেন না দাদা/দিদি