প্রবল রৌদ্রে প্রান তখন ওষ্ঠাগত। যেদিকে তাকাই গার্লফ্রেন্ড তো দূরের কথা কোনো সুন্দরী মেয়ের চিহ্নমাত্র নেই। এমতাবস্থায় বেঁচে থাকা আদৌ যৌক্তিক কিনা সেটা ভাবছি হঠাৎ অ্যালার্ম বেজে মনে করিয়ে দিল ওঠার সময় হয়ে গিয়েছে। বিছানা আমায় আঁকড়ে ধরছিল বলে। আমি রেগেমেগে বিছানাকে বললুম, “রেডিওর অনুষ্ঠান টা কি তোর বাবা করবে হতচ্ছাড়া!”

বৈশাখ এর প্রথম দিনেই ঝাড় খেয়ে বিছানা আর কিছু না বলে আমায় ছেড়েই দিলে। যাই হোক অনুষ্ঠান এর বর্ণনায় গিয়ে কাজ নেই। কারন তার পরের ঘটনা গুলো বেশী চিত্তাকর্ষক।

আমার বাবা-মা আজ শিলং চলে গেল। গ্রীষ্মের দাবদাহে বাংলায় থাকাটা টা বড়ই যাতনাময়! আমি এমনিতেও ওদের সাথে প্লেনে ওঠার আগে দেখা করতে যাবো কিনা সেই নিয়ে বোধহয় মায়ের মনে কিঞ্চিত সন্দেহের উদ্রেক হয়েছিল। তাই বললো, “শোন, আমি হলদিরামের কেশর লাড্ডু নিয়ে যাচ্ছি। যখন সি অফ করতে আসবি নিয়ে নিস মনে করে!”

মা-বাবা কে সি অফ করতে এমনি না গেলেও আমি যে কেশর লাড্ডুর লোভ ছাড়তে পারবো না সেটা আমার মা এর চেয়ে ভালো আর একজনই জানে। আমি নিজে।

যাওয়ার পথে আবার বাওয়াল! এমনিতেই রোদে গরমে মাথার ঠিক নেই। দমদম থেকে সাপেরবাজার (পড়ুন নাগেরবাজার) যাওয়ার রাস্তায় বাইক নিয়ে যাচ্ছি। হঠাৎ একজন মাঝবয়সী লোক কোনোদিকে না তাকিয়ে রাস্তা পার হতে হতে এসে পড়লেন ঠিক আমার বাইকের সামনে। নেহাৎ আমার দয়ার শরীর তাই ব্রেক কষেছি। নাহলে কী হত ভাবুন তো? পাব্লিক কেলিয়ে আমার চিকেন কোর্মা বানিয়ে দিত! যাই হোক এই পর্যন্ত হয়ে থেমে গেলে না হয় মানতাম। বাইকের সামনে পড়ে ভদ্রলোক হঠাৎ নিজেকে বাঙালী প্রমান করার মরিয়া চেষ্টায় বলে উঠলেন, “ওরে শুয়রের বাচ্চা দেখে যেতে পারিস না?”

আমিও বাঙালী। তবুও নিজের অভদ্র সত্তাটা নিয়ন্ত্রন করে বললাম, “আমি তো দেখেই যাচ্ছিলাম কাকু। আপনার বোধহয় চশমার শক্তি বেড়েছে। একটু দেখিয়ে নেবেন তো!”

সঙ্গে সঙ্গে ভদ্রলোকের উত্তর, “বাইক চালাতে জানিস হতচ্ছাড়া?”

বললাম, “হ্যাঁ কাকু জানি। লাইসেন্স ও আছে!”

– সে ওসব টাকা থাকলে সবই কিনতে পারা যায়! তারপর তোদের মত গান্ডুরা বেরিয়ে পড়ে বাইক নিয়ে ___বাজি করতে!

বাইকটায় স্টার্ট দিয়ে বললাম, “হ্যাঁ কাকু। টাকায় কি না হয়! দমদমে আমার দোকানে একদিন আসবেন পারলে। ভদ্রতা কিনতে পাওয়া যায়। ১০৮ টাকা কিলো। আপনার জন্যে না হয় ৬৯% ডিসকাউন্ট করে দেবো!”

কথাটা বলেই বেরিয়ে গিয়েছি। আমার মুখের অভিব্যক্তি তখন, “কেমন দিলাম কাকা!”

তখন থেকেই ভাবছিলাম ব্যাপারটা না ফেসবুকালে শান্তি নেই। তারপর ভাবলাম ১লা বৈশাখ এসেছে [একলা নয় কিন্তু] একেবারে না হয় ব্লগিয়েই দেবো সবটা! ও হ্যাঁ যা বলছিলাম বাবা-মার কাছে গিয়ে যথারীতি হলদিরামের লাড্ডুটা বাগালাম আগে। তারপর বাবা হাতে পাঁচশত টাকা দিয়ে বলল, “ভালো কিছু খেয়ে নিস!” আমায় তখন আর পায় কে! হলদিরামের লাড্ডু আর ৫০০ টাকা!! পৃথিবীতে আমার থেকে আনন্দে আর কেই বা আছে!

ফেরার সময় আবার আর এক কেস! রাস্তা পুরো জ্যাম! সামনে পেছনে কোথাও এগোনোর জায়গা নেই। আমার ঠিক সামনেই একটা মিনিবাস! একটা ওলাওয়ালা[Ola] ক্রমাগত কানের কাছে হর্ন বাজিয়ে যাচ্ছে। আরে ভাই এগোবো কোথায়? তাও তার হর্ণ থামছে না দেখে। আমি বাইকটা সেখানেই স্ট্যান্ড করে নামলাম বাইক থেকে। তারপর মিনি বাসের তলাটা একবার উঁকি দিয়ে ওলাদা কে বললাম, “দাদা বাসের চাকার নীচে ছাড়া আর তো যাওয়ার জায়গা নেই। আপনি কি যাবেন? আমি সরে দাঁড়াবো?”

ওলাদা কি উত্তর দিত জানিনা। ঠিক তক্ষুনি জ্যাম টা কেটে গিয়ে সে এক কেলেঙ্কারি কান্ড। পেছন থেকে উবেরদা, লরীদা, অটোদা একসাথে হর্ণ মারতে শুরু করেছে। যাই হোক খুব তাড়াতাড়ি করে বাইকে চেপে বেরিয়ে এলাম ওখান থেকে।

আর বিশেষ কিছু ঘটেনি আজ! কাজেই আজকের মত এখানেই থামবো! বৈশাখ এর শুরুর দিনটা বেশ বাওয়ালেই কাটল বলা যায়। এবার বাকি বছরটা কেমন কাটে সেটাই দেখার!

শুভ ১লা বৈশাখ সব্বাই কে। একলা নয় কিন্তু!

মজা করলাম! আমার বৈশাখ একলাই কাটবে। ‘ফরেভার অ্যালোন’ বলে কতা!

বাওয়ালে বৈশাখ

Arnab Mondal


হিজিবিজি লেখা আর বিরিয়ানি নিয়ে Phd করছি আর আকাশবাণী কলকাতায় নিজের কন্ঠস্বর ভাড়া দিয়ে সংসার চালাচ্ছি।


Post navigation


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কপি করবেন না দাদা/দিদি