মাঝে মাঝে এরকম হয় পুরো দুনিয়ার ওপর মাথাটা গরম হয়ে থাকে। কেউ কথা বলতে এলেই ঝাঁট টা আরও জ্বলতে শুরু করে। রাই এর ক্ষেত্রে তার ব্যাতিক্রমই হল। কারন রাই চেঁচানো তে বিশ্বাস করে না। তার চেয়ে মিষ্টি মিষ্টি করে কথা শোনালে বা শান্ত হয়ে অপমান করলে কাজ হয় বেশী। কিন্তু সমস্যাটা হল রাই এর কোনোটাই করতে পারছে না। কারন যাদের ওপর ওর রাগ তারা ওর নিজের লোক।
নাহ! এবার একটু ব্যাকগ্রাউন্ড ইনফরমেশন গুলো দেওয়া যাক! রাইকে রিসেন্টলি মামা বাড়ি আসতে হয়েছে অফিসের কাজে। অফিসের কাজ বলতে ওদের কোম্পানীর যে নতুন পেজ খোলা হয়েছে সেটায় লাইক তেমন পড়ছে না। সেই জন্যেই রাই সাজেস্ট করে কিছু ভিডিও পোস্ট বানাতে হবে। কিন্তু বানাবো বললেই তো বানানো যায় না। তার জন্য শ্যুট করতে হবে। এডিট করতে হবে। তার জন্য নতুন ভিডিও এডিটর লাগবে। কিন্তু কোম্পানী এটা অ্যাফর্ড করবে কিনা সেটা নিয়ে ও বেশ সন্দেহেই ছিল। কিন্তু শেষ অবধি ওর প্রস্তাবে রাজি হয়েছে ইন্দ্রনীল দা। মানে ওদের বস। সেই কারনেই ওর মামা বাড়ি আসা। ওর মামা বাড়ি মালদার একটা গ্রামে। নাম সর্বমঙ্গলা পল্লী। এখানের কিছু ভিউ বেশ ভালো সেই কারনেই ও আগে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে একবার জায়গাটা দেখতে এসেছে। অফিস থেকে পারিজাত ছেলেটিকে ওর সাথে পাঠানোর কথা হয়েছিল। কিন্তু ও না করে দিয়েছে। আসলে ওর মামা বাড়ি একটু কনসারভেটিভ। হঠাৎ করে অচেনা ছেলে কে নিয়ে এসে উঠলে কি ভাবতে কি ভেবে বসবে লোকজন তার ঠিক নেই। যাই হোক সেসব তো ঠিক আছে কিন্তু আজ ওর মাথা গরমের কারন অন্য। মামীর হঠাৎ খেয়াল হয়েছে আমাদের মেয়ে টা এত বড় হয়ে গেছে কিন্তু এখনও বিয়ে করেনি। কাজেই ওর বিয়ে দিতে হবে। ও যত বলে আমি বিয়ের কনসেপ্ট এই বিশ্বাস করি না। ওর মামী কিছুতেই শুনতে রাজি নয়। আসলে ছোটোবেলা থেকে ওর বাবা মা ওকে দেখাশোনা করার চেয়ে নিজেদের মধ্যে ঝগড়াই বেশী করেছে। মামীর একটা বাচ্চা হওয়ার পরেই মারা যায়! আর তার পর থেকে মামাবাড়ি এলেই মামী ওকে যেতে দিতে চাইতো না। বাংলা সিনেমার ভাষায় ওকে ছোটোবেলা থেকে কোলে পিঠে কাঁধে করে মানুষ করেছে এই মামা মামীই।
– তুই বিয়ে করবি না?
– আমি বিয়ে কোনোদিনই করব না।
– কেন??
– বিয়ে ব্যাপারটা আমার কীরকম অদ্ভুত লাগে।
– কেন? আমাকে আর তোর মামা কে অদ্ভুত লাগে?
– হ্যাঁ।
– কি বললি তুই?
– বললাম অদ্ভুত লাগে তোমাদের।
– কেন অদ্ভুত লাগে?
– তোমার কত বছর বয়সে বিয়ে হয়েছে?
– ১৭
– মামার তখন বয়স কত?
– ২৯?
– তুমি কি জানো এটা বেআইনি। ১৭ বছর বয়সে মেয়েদের বিয়ে হওয়া টা।
– ওহ!! কোত্থেকে আমার উকিল বাবু এলেন রে!
– বিয়ে করবো না আমি। ঝাঁট জ্বালিও না।
– আমাদের জন্যেও করবি না?
– তোমাদের করতে ইচ্ছে করলে করো না। আমাকে কেন বলছো?
– কারন তোর বিয়ের বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে। এরপর দেরী করলে আর বিয়ে হবে না।
– তোমার কথা যদি ধরি তাহলে আমার বিয়ের বয়স ১৭ তেই পেরিয়ে গেছে।
– ধুর পারবো না তোর সাথে কথায়! আমি ছেলে দেখছি। বিয়ে করবি কিনা তোর ব্যাপার!
এই চলছে সারাদিন। তো এই কারনেই রাই এর মাথা প্রচন্ড গরম। একটু পরেই নাকি কোন ছেলের বাড়ি থেকে আসবে ওকে দেখতে। উফফ!! কি কুক্ষনেই যে মামাবাড়ি এসেছে ও। আর ছেলে দেখতে আসবে মেয়ের বাড়িতে। এর থেকে ঝাঁট জ্বালানো কিছু হতে পারে? প্রোডাক্ট নাকি মেয়েরা যে দেখতে আসবে?
হঠাৎ মামী এসে বললেন, “কীরে? তুই শাড়িটা পরিসনি?”
রাই বলল, “কেন শাড়ি পরব?”
– তোকে যে বললাম শাড়ি পরতে! তোকে দেখতে আসবে।
– তো আসবে তো আসুক না। তার জন্য আমাকে শাড়ি পরতে হবে কেন?
– আরে শাড়ি পরতে হয় রে!
– কেন শাড়ি কি ড্রেস কোড? ছেলের বাড়ির সবাই শাড়ি পরছে? ছেলেও শাড়ি পরছে?
– উফফ!! পারিনা এই মেয়ে কে নিয়ে! ওরা এসে গেছে চল চল। আর চুলটা বেঁধে নে।
– কেন?
– কেন মানে? খোলা চুলে যাবি নাকি?
– ছেলে টা কি চুল বেঁধে এসেছে?
– আরে মেয়েদের এরকম করতে নেই। সব সময় ছেলেদের সাথে পাল্লা দিতে নেই।
– পাল্লা কে দিচ্ছে? কিন্তু অকারনে আমি আমার কমফর্ট নষ্ট করতে পারবো না।
– উফফ! তুই চল। কথা বলিস না বেশী। ওরা বসে আছে তোর জন্যে।
(চলবে)