সকাল থেকেই একটা বিরাট গোলমাল শুরু হয়েছে অফিসের মধ্যে। অনেকজন মিলেই থামানোর চেষ্টা করছে, কিন্তু তা থামার নয়। আমাদের বস ইন্দ্রনীল দা এখনও আসেনি আজ। এলে হয়তো ঝামেলা টা থামতো। অফিসে ঢুকে যেটুকু বুঝলাম পারিজাত এবং সপ্তর্ষিদার মধ্যে ঝামেলা লেগেছে। যদিও এই ঝামেলা টা আরও আগে হওয়ার কথা ছিল। এতদিন যে কীভাবে সবাই চুপ করেছিল কে জানে!
ব্যাপার টা খুলে বলা যাক। আমাদের অফিসে বছর খানেক আগে মৌসুমী নামে একটি মেয়ে জয়েন করে। মেয়েটি দেখতে শুনতে বেশ ভালো। শরীর স্বাস্থ্যও বেশ চোখে পড়ার মত। অফিসে আসার কিছুদিন পর থেকেই সপ্তর্ষিদার সাথে ওকে একটু বেশী সময় কাটাতে দেখা যাচ্ছিল। সপ্তর্ষি দা আমাদের সেলস ম্যানেজার। বিবাহিত। তবে আজকাল আর সে সব কে খেয়াল রাখে। কাজেই অফিসের মধ্যে এবং বাইরে কিছু একটা চলছিল ওদের মধ্যে। বাইরে বললাম তার কারন আমি একদিন সেন্ট্রাল পার্ক গিয়েছিলাম। আমি মাঝে মাঝেই যাই ওখানে। কম বয়সী ছেলে মেয়েদের প্রেম দেখতে আমার খুব ভালো লাগে। সে যাই হোক, ওখানে গিয়েই দেখলাম সপ্তর্ষিদা এবং মৌসুমীকে। সপ্তর্ষিদা মৌসুমির কোলে শুয়ে। মাথাটা তবে নিম্নমুখী। মানে… সে মানে যাই হোক…
তো এরকম ক’দিন চলছিল। তারপর এই মাস দুয়েক আগে আমাদের অফিসে পারিজাত নামে একটি ছেলে জয়েন করে। ছেলেটি বেশ হ্যান্ডসাম দেখতে। মুখ ভর্তি দাড়ি। জিম করা শরীর। ও জয়েন করার দিন কয়েক এর মাথায় দেখলাম মৌসুমী সপ্তর্ষিদার রুমে যাওয়া প্রায় বন্ধ করে দিলো। ব্যাপার টা আমদের সবারই চোখে লাগে। কারন তার আগে প্রায় অনেকটা সময়ই মৌসুমী ওর ঘরেই থাকতো। তার কয়েকদিন পর আমরা আসল ব্যাপার বুঝতে পারলাম। পারিজাত আর মৌসুমী একসাথে অফিসে আসছে। একসাথে অফিস থেকে বেরোচ্ছে। বুঝলাম বঁড়শি তে অন্য মাছ পড়েছে এবার।
এটা নিয়ে সবাই চুপ ছিল। সপ্তর্ষি দা কে দুয়েকবার ছলছল চোখে ওদের দিকে তাকাতে দেখেছি কিন্তু কখনও কিছু ঘটেনি এটা নিয়ে। আজকের আগে। আজ তো হেব্বি ক্যালাকেলি চলছে।
অসিত কে জিজ্ঞেস করলাম, “কি হয়েছে ভাই?”
অসিত বলল, “আরে আর বলিস না… ওই যে Sarahah না কি একটা শুরু হয়েছে না? ওখানে সপ্তর্ষিদাকে কে একজন ভুলভাল কিছু লিখে পাঠিয়েছে। তো সপ্তর্ষি দা বলছে সেটা নাকি পারিজাতই পাঠিয়েছে।”
আমি বললাম, “কি লিখে পাঠিয়েছে?”
অসিত ফিসফিসিয়ে বলল, “লিখেছে কি গো সপ্তর্ষিদা তোমার নাকি দাঁড়ায় না শুনলাম। আর দাঁড়ালেও ২ মিনিটেই খেল খতম।”
আমি কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলাম। এমন সময় হঠাৎ ইন্দ্রনীল দা অফিসে ঢুকতেই শান্ত হয়ে গেল সবাই। ছেঁড়া কলার নিয়ে নিজের কিউবিকলের দিকে চলে গেল পারিজাত। সপ্তর্ষিদাও রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে চলে গেল ওর রুমের দিকে। মজার ব্যাপার এই ঝামেলার মধ্যমনি কে আজ অফিসে পাওয়াই গেলো না।
আমি নিজের কিউবিকলে গিয়ে বসে নেট টা খুললাম। ফেসবুকে দেখলাম একটা নিউজ বেরিয়েছে, “Sarahah তে কারা কারা কাকে মেসেজ পাঠিয়েছে তার একটা লিস্ট বের করা যাবে।”
মার গেড়েছে। এসব আপদ আবার কেন? তাহলে মেসেজ টা যে পারিজাত পাঠায় নি সেটা তো বুঝে যাবে লোকে। তারপরেই আমার মনে পড়ল, আমি তো ওটা অন্য একজনের কম্পিউটার থেকে পাঠিয়েছি। ফাঁসলে সে ফাঁসবে। আমার কী?
হঠাৎ ফোন টা বেজে উঠল আমার। কম্পিউটার এর মালকিন ফোন করছে। ফোন টা ধরে বললাম, “বলো।”
ও প্রান্ত থেকে মৌসুমি জিজ্ঞেস করল, “অনর্থ, আজ রাতে আসছো তো আমার ফ্ল্যাটে?”
আমি বললাম, “নিশ্চয়।”