সকালে বেল এর আওয়াজ এ অচিন্ত্যর ঘুম ভাঙল। একটু অবাকই হল ও। কারন এই পাড়ায় ওকে কেউ চেনে না। ও নতুন এসেছে এখানে। আগে পাশের একটা পাড়াতে থাকত। কিন্তু সেখানে ভোটের সময় বড্ড ঝামেলা হয় বলেই পাশের এই পাড়ায় বিশেষ কাউকে একরকম না জানিয়েই একটা ফ্ল্যাট নিয়েছে ও। কিন্তু এই সাতসকালে আবার কে জ্বালাতে এল?
দরজা খুলেই অচিন্ত্য দেখল সামনে দাঁড়িয়েছে একটা কালো জামা পরা লোক। হাইট টা খুব কম। তবে ভুড়িটা একটু বেশিই বড়। তার ঠিক পেছনে Security Guard এর মত দাঁড়িয়ে আছে দু’জন হোমরা চোমরা লোক।
“বলুন? কাকে চাই?” জিজ্ঞেস করল অচিন্ত্য।
লোকটার ঠোঁটের কোনে হাসি। বলল, “পাড়ায় নতুন মনে হচ্ছে?”
– হ্যাঁ। বলুন কী দরকার?।
লোকটা এবার ফিক করে হেসে ফেলল। বলল, “কী দরকার? আমায় চিনিস?”
অচিন্ত্য বুঝল ওর মাথাটা একবার দপ করে উঠল। প্রথমেই তুই তোকারি? তবু ভদ্রভাবেই ও বলল, “না আপনি কে?”
“ভেতরে কে আছে আর?” জিজ্ঞেস করল লোকটি।
– কেন মশাই তাতে আপনার কী? কিছু দরকার থাকলে বলুন। নাহলে দরজা বন্ধ করবো। আমার কাজ আছে!
লোকটা এবার চেঁচিয়ে বলল, “বেশী কাজ দেখাস না বে! আমার পাড়ায় থাকতে হলে আমার মত করে থাকতে হবে!”
লোকটা এবার ওকে ঠেলে ঢুকে এল ঘরের ভেতর। পেছন পেছন ঢুকল স্যাঙাত দু’টো। অচিন্ত্য এবার একটু অবাক হল। এই লোকটা কে? পাগল টাগল নাকি? সকাল বেলা এসব বলছে কেন?
“কে এল আবার এখন?” ভেতর থেকে একটা মেয়ের গলার আওয়াজ শোনা গেল!
কথাটা বলেছে পায়েল। কাল রাতে ওর থাকার কথা ছিল না যদিও। কারন ওর নাইট ডিউটি থাকে অন্যদিন। কাল Shift শেষ হয়ে যাওয়ায় চলে এসেছে ওখানে।
মেয়ের গলা পেয়েই লোকটার মুখে আবার হাসি ফুটল, বলল, “তাহলে খবর টা ঠিকই পেয়েছি! ওটা কে?”
অচিন্ত্য এবার একটু রেগে গিয়েছে। ও বলল, “ওটা কে সেটা জেনে আপনার কাজ নেই। আপনি বরং এবার আসুন। আমার কাজ আছে!”
লোকটার পাশে দাঁড়ানো বডিগার্ডদের মধ্যে থেকে একজন এবার বলল, “এই এই? তুই জানিস তুই কাকে কী বলছিস?”
পকেট থেকে ফোনটা বের করতে করতে অচিন্ত্য বলল, “কী বলছি জানি। কাকে বলছি জানি না। জানার খুব একটা ইচ্ছে নেই। কী চাই মশাই আপনাদের?”
সেই ভিলেন গোছের লোকটি আবার বলল, “শোন ভাই, তোকে একটা কথা বলি। আমার পাড়ায় আমার নাকের ডগা দিয়ে তুই মেয়ে নিয়ে এসে রাত্রে শুবি। সেটা তো হবে না বাবা!”
– “কেন? আপনার সাথে শুতে হবে তার আগে?” অচিন্ত্য এবার খুব বিরক্ত হয়েছে বোঝা যাচ্ছে।
– শোন বাল, আমায় যারা চেনে তারা এত কথা বলার সাহস পায় না। নতুন এসেছিস বলে কিছু বলছি না। যা মেয়েটাকে ফ্ল্যাট থেকে
বের কর। তারপর তোর সাথে ফয়সালা করছি!
– ফ্ল্যাট থেকে বের করবো কেন? আর আপনি কে বলুন তো? সকাল সকাল ঝাঁট জালাচ্ছেন।
লোকটা একবার ওর বডিগার্ড দের দিকে তাকালো! তারপর বলল, “আমার নাম প্রভাষ কর্মকার। আমি এখানকার এম পি। আমার পাড়ায় কোনো মেয়ের সাথে কোনো ছেলের থাকা আমি allow করি না। মেয়েটাকে বের কর আগে, যদি বাঁচতে চাস!”
অচিন্ত্য এবার ফিক করে হেসে ফেলল। বলল, “কোথায় চুল কাটিস ভাই?”
বডিগার্ড দের আর একজন এবার বলল, “শালা বোকা……
“আহ!” ওকে থামালো কালো জামা পরা এম পি, “খিস্তি না। ভদ্রভাবে। ক্যালাতে হলে ক্যালা নাহলে খিস্তি করিস না।
হঠাৎই বাইরে সিঁড়িতে কয়েকটা পায়ের শব্দ পাওয়া গেল। ৩ টে সাদা পাঞ্জাবি পরা লোক উঠে এল। তারপর ঘরে ঢোকার আগে জিজ্ঞেস করল, “স্যার আসব?”
প্রভাষ নামের লোকটি বলল, “হ্যাঁ আয়।”
লোকগুলো তাও ভেতরে আসছেনা দেখে আবার বলল প্রভাষবাবু, “আয় রে। আসতে বললাম তো ভেতরে!”
“ওরা আপনাকে জিজ্ঞেস করছে না” বলল অচিন্ত্য। “এসো তোমরা!”
ভেতর থেকে পায়েল বেরিয়ে এসেছে তখন। লোকগুলো পায়েল কে দেখেই বলল, “নমস্কার বৌদি।”
প্রভাষ লোকটা এবার একটু হতভম্ব হয়ে গেছে। বলল, “বৌদি মানে? ও তোর বৌ?”
“সেসব জেনে আপনার কোনো কাজ নেই।” অচিন্ত্যর কন্ঠস্বর এবার কঠিন, “এবার বলুন তো আপনি কে? কি মতলব আপনার?”
– “বললাম তো! আমি এখানকার MP. এখানে যা হয় সব আমার অনুমতি নিয়ে হয়”
– ওরে বাল আমার। এখানকার MPর নাম অচিন্ত্য সরকার। যেটা হলাম গিয়ে আমি। একটা ব্লকে ২ টো MP তো হয় না। সুতরাং… ভালোয় ভালোয় বলবি নাকি পার্টির লোক ডেকেছি ওদের দিয়ে ক্যালান খাওয়াবো!”
লোকটার স্যাঙাত গুলো এবার আস্তে আস্তে বাইরে বেরোতে যাচ্ছিল। পার্টির তিনটে লোক দরজা ঘিরে দাঁড়ালো এবার। পায়েল ও বেশ অবাক হয়েছে এসবে। প্রভাষ লোকটা এবার বলল, “স্যার আমি আপনাকে চিনতে পারিনি আসলে। আমি সত্যি এখানকার MP। Moral Police. আমি খেয়াল রাখি পাড়ায় কোথায় হচ্ছে না হচ্ছে। যা করছি সব তো এই পার্টির ভালোর জন্যে”
অচিন্ত্যর এবার খুব হাসি পেল! শেষ পর্যন্ত Moral Police. ও বলল, “তা আপনাকে এই কাজ করতে কে বলেছে? পার্টি থেকে বলা হয়েছে নাকি?”
– না স্যার। আমি তো সমাজের ভালোর জন্যে নিজে থেকেই এসব করে থাকি। Sorry স্যার। আমি আসলে বুঝতে পারিনি। আর হবে না এরকম।
অচিন্ত্য বলল, “শুনুন আপনাকে একটা কথা বলি। এসব নোংরামি যত তাড়াতাড়ি পারেন বন্ধ করুন। একজন মানুষ কী খাবে? কী পরবে? কার সাথে প্রেম করবে তাতে আপনার বাবার কিছু ছেঁড়া যাওয়ার কথা নয়। ফের যদি দেখেছি এসব করছেন, ফল ভালো হবে না। এবার আসুন আপনি!”
তিনজন মাথা নীচু করে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে।
* * *
বাকি যে তিনজন ঘরে ছিল তারা হল সাত্যকী, স্মরজিৎ আর কুন্তল। দরজা বন্ধ করার পর পায়েল বলল, “দারুন খেল দেখালি তো!”
কুন্তল বলল, “কীরে বলেছিলাম না। ওই মাল টা আসবে!”
“সেটাই তো দেখলাম।” বলল অচিন্ত্য। “এখন আমার মনে একটাই প্রশ্ন”
“কীরে?” জিজ্ঞেস করল সাত্যকী
– এদের দেয় কে ভাই? কোত্থেকে চলে আসে বল তো!
স্মরজিৎ এবার বলল, “সবই ঠিক আছে ভাই। তবে রিস্ক টা আজ একটু বেশি নিয়ে নিলি তুই। আমাদের কে না হয় বলে রেখেছিলি বলে তুই মেসেজ করতেই আমরা চলে এলাম। কিন্তু লোকটি যদি আসল MP কে চিনত? তাহলে তো বাঁশ খেয়ে যেতিস পুরো!”
অচিন্ত্য হেসে বলল, “আরে এই টুকু রিস্ক তো নিতেই হত। MP এর নামের সাথে আমার নামের মিল থাকাটা একটা খুব বড় প্রাপ্তি! আর তাছাড়া একটা জিনিস আমি খেয়াল করেছিলাম আগে।”
“কী?” জিজ্ঞেস করল পায়েল!
– “ যে এই পাড়ায় ভোটের খুব একটা এফেক্ট পড়ে না। মানে হোর্ডিং বা পোস্টার খুব কম পড়ে। কেন জানি না। আমার আগের পাড়ায় সেটা একটু বেশীই হত। সেই জন্যেই ওখানটা ছেড়ে এই ফ্ল্যাট টা ভাড়া নিলাম।”