১
– কীরে? তুই হঠাৎ?
– ইচ্ছে হল। চলে এলাম।
– বাহ! খুব ভালো করেছিস বাবা! আর তোর অফিস?
– অফিস কী?
– না মানে… ছুটি পেলি এই সময়?
– ছেড়ে দিয়েছি!
– চাকরিটা ছেড়ে দিলি?
– হ্যাঁ।
– কেন?
– পোষাচ্ছিল না। এত প্রশ্ন করছো কেন?
– না না। আমি এমনি জানতে চাইছিলাম। দাঁড়া তোর বাবাকে খবর টা দিই।
২
– শুনছো?
– শুনতেই হবে?
– তোমার ছেলে এসেছে গো!
– সেটা আবার কে?
– আরে তোমার ছেলে! উফফ! এরকম হাড় জ্বালানো উত্তর দাও কেন সব সময়? অনর্থ এসেছে অনর্থ!
– কেন হঠাৎ?
– কেন মানে? নিজের বাড়ি আসতে পারে না?
– হাত পা আছে আসতে পারবে না কেন? কিন্তু কেন এল হঠাৎ?
– অত প্রশ্ন কোরো না তো! ছেলে এসেছে। আনন্দে থাকো!
– আনন্দে আর থাকি কী করে? আবার তো জ্বালাবে ক’দিন। ওর অফিস কী হল?
– হুম? অফিস…? অফিস বোধহয় ছুটি নিয়েছে। যাই হোক আমি যাই ভাত বসাই। তুমি ওকে রাগিও না আবার!
– কথা দিতে পারছি না!
৩
– কী ব্যাপার? কি মনে করে?
– মনে করলাম একবার দেখে আসি পৈতৃক বাড়ি টা।
– হঠাৎ এসব মনে করলে কেন? ভুল ভাল কিছু খেয়েছিলে নাকি?
– কেমন আছো তুমি আর মা?
– ছিলাম তো ভালোই। এবার কেমন থাকবো জানিনা।
– ওহ আচ্ছা।
– অফিস কী হল?
– চাকরি ছেড়ে দিয়েছি।
– কেন?
– ইচ্ছে হল।
– তোর মা যে বলল ছুটি নিয়েছিস।
– আসলে মা জানে তুমি চেঁচাবে অকারনে তাই মিথ্যে বলেছে। সেই যে ছোটোবেলায় তোমার দামী পার্কার পেন টা হারিয়ে দিয়েছিলাম না। তখনও তো বলেছিল যে পেন টা ঝন্টু কাকুর ছেলে মুম্বাই নিয়ে চলে গেছে।
– উফ! শুরু হল জ্বালা।
– কিছু বললে?
– বলছিলাম যে নতুন চাকরি কবে জুটবে?
– দেখি। আপাতত ক’দিন রেস্ট নিই। শোনো না বাবা, তোমার কি এখনও বিরিয়ানি খেতে ভালো লাগে?
– হ্যাঁ? কেন?
– তাহলে একটা নিয়ে এসো আমার জন্যে। এই তো স্টেশনের কাছেই দেখলাম দোকান।
– আমার এখন খাওয়া চলে না।
– আমি আমার জন্যেই আনতে বললাম যদিও… ঠিক আছে তাহলে তো ভালোই হল… আমার একার জন্যেই নিয়ে এসো।
– নিজে যেতে পারছিস না?
– যেতে পারলে ভালোই হত। কিন্তু ইচ্ছে করছে না। তুমি একটু যাও না। সারাদিন তো ঘরেই থাকো। একটু হাঁটাহাঁটি করলে শরীর ভালো লাগবে।
৪
– শোন না… বাবা…
– হ্যাঁ বলো।
– তোর মায়ের একটা কথা রাখবি বাবা?
– কোথায় রাখবো? ল্যাপটপ ব্যাগে ধরবে কী? তাহলে ওখানে রাখতে পারি। কিংবা ছোটো খাটো কিছু হলে মাথার বালিশের তলায় রাখতে পারি।
– কি যে বলিস ছাই! মাথায় ঢোকে না।
– জায়গা কোথায় মাথায়? ২ জিবি পেনড্রাইভ এ আর কত ডাটা ধরবে?
– মানে?
– কী বলছিলে বলো।
– বলছিলাম যে… এবার এসেছিস যখন বিয়েটা করে নিবি বাবা? বয়স তো আর কম হল না।
– না না। ওসব পারবো না।
– কেন পারবি না? এরপর আবার কবে আসবি ঠিক নেই সেই জন্যেই আর কি!
– আমি এখন আছি মাস খানেক। চাপ নিও না। কিন্তু বিয়ে ফিয়ে আমার দ্বারা হবে না।
– কেন হবে না? তোর কী ঠিক করা আছে কোথাও?
– কী ঠিক করা থাকবে?
– মানে ওই গার্লফ্রেন্ড না কি যেন বলে…
– না না। ওসব কিছু নেই। কিন্তু বিয়ে করবো না।
– কেন?
– ইচ্ছে করছে না।
– সবই কি ইচ্ছে অনিচ্ছের দিয়ে ভাবলে হয়? আমাদের কথাটা ভাববি না? আমরা আজ আছি কাল নেই। তোর বিয়েটা দেখে যেতে না পারলে…
– না পারলে কী? কী হবে না পারলে? কিস্যু হবে না। ছেলের বিয়ে সবাই দেখে। বাবার বিয়ে ক’জন দেখে বলতো? বাবা কে কী বলব? আর একটা বিয়ে করতে? মেয়ে দেখবো?
– সব সময় অসভ্যতামো। ধুর আর পারি না আমি।
– ঠিক আছে ওসব না পারলেও হবে। বাবাকে বিরিয়ানি আনতে বলেছিলাম দেখো তো এনেছে কিনা। তাহলে দাও এই ঘরে।
৫
– এই নে। খাটের ওপর বসে খাবি না। মেঝে তে বোস।
– কেন? আমি কলকাতায় খাটে রেখেই খাই বিরিয়ানি।
– না এখানে খাবে না। আয় আয়। নাহলে দেবো না আমি খেতে।
– উফফ! আচ্ছা দাও। নামছি।
– হুম।
[কয়েক মিনিট পর]
– মা? মাআআ?
– কী হল?
– একবার বাবা নামক প্রানী টিকে ডাকো তো?
– অসভ্যতামো টা ক’দিন বন্ধ করো। ডাকছি।
[একটু পর]
– বল।
– এটা কী?
– বিরিয়ানি। আগে দেখিস নি কখনো?
– মাটন টা কোথায়?
– আমি খেলাম তো!
– মানে? কেন?
– আরে তুই তো বিরিয়ানি আনতে বললি। মাটন বা চিকেন কিছু বলিস নি। তাই আর রাখিনি ওটা। দোকানে বসে খেয়ে বাকিটা তোর জন্য আনলাম।
– বিরিয়ানি আবার মাটন ছাড়া হয় নাকি? আর আলু? আলুটা কী হল?
– ওটাও খেলাম। শুধু মুখে মাটন খেতে ইচ্ছে করছিল না।
– তাহলে এতে রইলো কী? মাটন আলু সবই তো খেয়ে নিলে?
– তুই কি খাবি না? আমি খেয়ে নেবো?
– মা-আ-আ? মা?
– কী হল আবার?
– এদিকে এসো তো একটু।
– হ্যাঁ বল।
– বলছিলাম যে বিয়ের কাজকর্ম সব হতে ক’দিন লাগবে। মানে কাল থেকে যদি মেয়ে দেখা শুরু করো।
– তা প্রায় অন্তত মাস ছয়েক তো লাগবেই। হঠাৎ করে এসব কী আর হয়? কেন?
– আমি বিয়ে করব।
– অ্যাঁ? সত্যি?
– হুম। কেন হঠাৎ?
– এমনি। ভাবলাম যত বেশীদিন বাড়িতে থাকা যায় ততই ভালো। মেয়ে দেখো তুমি।