বোধন পর্ব ১ঃ https://secularweirdo.com/2018/01/09/বোধন-পর্ব-১
বোধন পর্ব ২ঃ https://wp.me/p8oqbj-7U
সপ্তমী, সকাল
মৈনাক
মৈনাক আজ সকাল থেকেই প্রচন্ড চিন্তায় আছে। এমনিতেই আজ সকাল থেকেই বেশ কেমন একটা সাজো সাজো রব। তার ওপর একটু আগেই রাজর্ষি দা চলে যাওয়াতে আরও চিন্তায় পড়ে গেছে মৈনাক। ঘট ডোবানো টা ঠিকঠাক উতরে গেলে হয়। তবে রাজর্ষিদার চলে যাওয়াটা দুশ্চিন্তা নয়। দুশ্চিন্তা হল তমালিকার চলে যাওয়ার সম্ভাবনা টা। কিছু বুঝতে পারছে না মৈনাক। দিব্যি ছিল ওরা দু’জন। ঝামেলাও বিশেষ কিছু হত না নিজেদের মধ্যে… তাও যে হঠাৎ কি হল ওর!
অবশ্য মাঝে যে ওর কয়েকবার কিছু মনে হয় নি তা নয়। ওর মনে হত তমালিকা সত্যি ওকে ভালোবাসে তো? জিজ্ঞেসও করেছে এই প্রশ্নটা ও। সব বারেই তমালিকা পালটা প্রশ্ন করেছে ওকে, “তোর এরকম মনে হওয়ার কারন কী?”
উত্তর দিতে পারেনি ও। কিই বা কারণ বলবে। ওর শুধু মনে হত তমালিকা হয়তো ওর সাথে খুশি নয়। কে জানে!
ঘাট এর কাছে প্রায় পৌঁছে গেছে প্রায়। ঘাট থেকে নীচে নামতে গেলে প্রায় ২০ টার মত ধাপ পেরোতে হয়। ঠিক তখনই ফোন টা এল মৈনাক এর ফোনে। তমালিকার ফোন। এত সকালে ও সাধারনত ঘুম থেকে ওঠে না। একটু অবাক হয়েই ও ধরল ফোন টা!
– কীরে এত সকালে উঠে পড়েছিস?
– কেন? উঠতে পারিনা?
– হ্যাঁ পারবি না কেন। উঠিস না তো তাই ভাবলাম। বল
– রাজর্ষিদা নার্সিং হোম এ।
– What?
– হুম। একটু আগেই হয়েছে রাস্তায় পাওয়া গেছে। মাথা ফেটেছে।
– মানে? এই তো মিনিট দশেক আগেই গেলো এখান থেকে। কি বলছিস?
মৈনাক এর গলার আওয়াজ শুনেই বাকিরা এবার একটু থমকে গেছে। সবাই “কি হল? কি হল?” মুখ করে ওর দিকে তাকিয়ে। এমন সময় জয় এর ফোন টাও বেজে উঠল।
– হুম। একটু আগেই হয়েছে।
– কোন নার্সিং হোম?
– সেটা জানিনা। তবে নার্সিং হোম তো একটাই এখানে কাছাকাছির মধ্যে। ওখানেই আছে হয়তো। তোরা যাবি তো?
– হ্যাঁ। আমরা যাবো তো নিশ্চয়ই… তোকে কে খবর দিল?
– আমি এরকম একটা খবর জানানোর পর তোর প্রশ্ন হচ্ছে তোকে কে খবর দিলো?
– আরে আমি তো…
– রাখছি এখন আমি। কেমন আছে জানাস রাজর্ষি দা।
শেষ কথাটা বলেই ফোন টা কেটে দিল তমালিকা। মৈনাক এর হতভম্ব ভাবটা কাটছে না। এদিকে সবাই নেমে গেছে নদী তে। এখুনি মন্ত্র পড়া শুরু হবে। অয়ন জিজ্ঞাসু চোখে ওর দিকে তাকিয়ে। জয় হঠাৎ এই সময় ফোন কাটতে কাটতে এসে বলল, “রাজর্ষি দা। অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে।”
মৈনাক জিজ্ঞেস করল, “তোকে কে বলল?”
– অনিন্দিতা ফোন করেছিল। ওই বললো।
– ওহ তাহলে হয়তো ওই তমালিকা কে বলছে।
– না তো। ও তো বললো ওকে তমালিকা জানিয়েছে।
– ওহ!
– যাই হোক, যেতে হবে আমাদের।
– কিন্তু ঘট ডোবানো…
মৈনাক আর জয় দু’জনেই এবার তাকালো অয়ন এর দিকে। অয়ন এতক্ষন গোগ্রাসে গিলছিল ওদের কথা। এবার একটু থতমত খেয়ে বলল, “আমার দিকে তাকাচ্ছিস কেন? আমি রাজর্ষি দা কে দেখতে যাবো!”
মৈনাক বলল, “দেখ অয়ন এখানে একজন কে থাকতে হবে। একটু বোঝ ব্যাপার টা!”
– কিন্তু আমি কেন? তুই বা জয় থাক না?
“কারন” জয় বলল, “তুই ছাড়া এদিক টা কেউ সামলাতে পারবে না।
নিজের প্রশংসা শুনে বার খেয়ে গিয়ে, অয়ন আর ঝামেলা করেনি। মৈনাক আর জয় এগোলো নার্সিং হোম এর দিকে।
সপ্তমী, সকাল
রঞ্জনা
রঞ্জনার মধ্যে একটা বেপোরোয়া ভাব কাজ করে সব সময়। ও জানে ওকে এই কারনে অনেকেই পছন্দ করে না। আড়ালে ওকে নিয়ে কথা বলে। তবে তাতে ওর কিস্যু যায় আসে না। ওর যখন যা ইচ্ছে হয় তাই করে। গতকাল রাত টা যেমন খুব ভালো কাটল ওর। ষষ্ঠী হওয়া সত্ত্বেও এখানে এখনো কিছু শুরুই হয় নি পূজোর। কলকাতা টা এই জন্যেই ওর ভালো লাগে ওর বেশী। ওখানে ওদের ফ্ল্যাট রয়েছে। ছুটি পেলেই কলকাতায় চলে যায় ও। তবে এবার যায় নি। তার বেশ কিছু কারন আছে যদিও। একটা কারন অবশ্যই রাজর্ষি। ছেলেটাকে ওর খুব ভালো লাগে। ভাল গান শোনে, সিনেমা দেখে, টিভি সিরিজ দেখে বেশ কিছু। এবং সব চেয়ে বড় কথা বই পড়তে ভালোবাসে। এর চেয়ে বেশী একটা ছেলের মধ্যে আর কি দরকার?
তাই কাল রাতে যখন রাজর্ষি কথা বলতে বলতে মেসেজ টা পাঠালো তখন থেকেই মন টা খুব ভালো ওর। আর একটা কারনও আছে যদিও মন ভাল হওয়ার। কিন্তু সে কথা থাক। এখন শুধু রাজর্ষির কথাই ভাববে ও। কাল রাতে রাজর্ষি হঠাৎ মেসেজ পাঠায়, “I think I’m in love with you.” ওর ইচ্ছে হচ্ছিল সাথে সাথেই উত্তর দিতে। তারপর ছেলেটাকে একটু চাপ খাওয়ানোর জন্য ভাবলো থাক। উত্তর টা পরে দেবে। যাই হোক উত্তর আজ সকালেই দিয়ে দিয়েছে ও রাজর্ষি কে। ৯ টায় তো আসার কথা ছিল আজ ওর।
এটা মনে পড়তেই চমকে ঘড়ির দিকে তাকালো রঞ্জনা। এখন বাজে ৯ টা বেজে ২৫। ভুরুটা কুঁচকে গেল ওর। সময় জ্ঞান না থাকাটা খুব বড় অপরাধ।
ওর আগে একজন এর সাথে কিছুদিনের সম্পর্ক হয়েছিল। সে সব সময় দেরী করে দেখা করতে আসত বলে তার সাথে সব সম্পর্কই শেষ করে দিয়েছিল ও। ছেলেটি আবার ন্যাকামো করে বলেছিল, “রঞ্জনা, তাহলে আমি আর আসবো না!”
“Like I fucking care!” উত্তর দিয়েছিল ও। সত্যি পৃথিবীতে খুব কম জিনিস নিয়েই কেয়ার করে ও। এত কেয়ার করে কী হবে? যার জন্য করেছিল সে তো থাকলো না ওর সাথে! তাহলে ওই বা করবে কেন কারুর জন্য?
সাধারনত কারুর সাথেই তেমন কথা বলে না ও। নিজের চারপাশে একটা দেওয়াল তুলে রাখে সব সময়। একদিন হঠাৎই ওর Whatsapp এ status দেখে ওকে মেসেজ করেছিল রাজর্ষি। বলেছিল, “মন খারাপ?”
একটু অবাক যে ও হয় নি তা নয়। ওকে ওর স্কুলের পুরোনো বন্ধুরা কেউই মেসেজ করে না। জয় এর সাথে কথা হয় মাঝে সাঝে দরকার এ। ও খুব ভালো একটা ছেলে। বাকি আর কেউ ওকে ঠিক পছন্দও করে না এটা ও বোঝে।
ও বলেছিল, “হ্যাঁ ওই আর কি!”
রিপ্লাই এসেছিল, “মন খারাপ থাকলে ভালো গান শুনতে হয়।”
– তাই? জানতাম না।
– এই নে শোন এটা।
বলেই একটা গানের লিংক পাঠিয়েছিল ও। Owl City র গান। “You are not alone.”
আবার অবাক হয়েছিল রঞ্জনা। রামনগর এর মত একটা জায়গায় English গান এবং বিশেষ করে Owl City র গান শুনছে কেউ। ব্যাপার টা খুব অবাক করা। এইভাবেই কথা শুরু ওদের। তারপর আস্তে আস্তে কখন দু’জনে কাছাকাছি চলে এসেছে সেটা ঠিক…
এখন ঠিক ১০টা বাজে। আজ আর রাজর্ষি আসবেনা বোধ হয়। ছেলেটা কে বাকিদের থেকে আলদা ভেবেছিল রঞ্জনা। কিন্তু নাহ! আবার পরে নতুন কিছু অজুহাত নিয়ে মেসেজ করবে ও। উফফ! বিরক্তিকর।
ওর ফোন টা বেজে উঠল এই সময় হঠাৎ। চেনা নাম্বার। সেভ করা নেই। তবে চেনা।
– বল?
– ব্যস্ত?
– না তেমন কিছু না। বল।
– বলছি যে আজ যাবো?
– কখন?
– কখন যেন তুই জানিস না!
– হুম।
– যাবো তাহলে?
– নাহ আজ থাক।
– কেন? কাল রাত্রে তোর ভালো লাগেনি?
– That’s not the point.
– তাহলে?
– I Think… কিছু না। শোন… আজ থাক।
– বল না। কি ব্যাপার। I thought you enjoyed yesterday.
– কালকের ব্যাপারটা আলাদা ছিল!
– কেন?
– কারন কাল আমি committed ছিলাম না।
– What? তুই…. Committed? কার সাথে?
– That’s none of your business.
– হ্যাঁ তাও ঠিক। কিন্তু তাতে কী? তুই তো বলিস জীবন টা enjoy করার জন্য। যাই না আজ আমি। কথা দিচ্ছি খারাপ কাটবে না রাতটা…
কি উত্তর দেবে বুঝতে পারছে না রঞ্জনা। রাজর্ষি ওকে নিয়ে সিরিয়াস কিনা ও এখনও জানে না। আজ তো এলো না আর। তাহলে তো technically ও single. তাহলে কি হ্যাঁ বলে দেবে ও?
(চলবে)