২০শে ডিসেম্বর
– কী খবর মিস্টার বোস?
– আরে অবিনাশ বাবু যে। কী মনে করে?
– কিছুই না তেমন। অনেকদিন দেখা হয় নি। তাই ভাবলাম দেখা করে যাই আজ একবার।
– ওহ! তা ভালো করেছেন! আমি ভাবলাম আপনি আবার সেই হেলমেট এর ব্যাপারে….
– আরে না না। ওটা কোনো ব্যাপার না। হতেই পারে।
– হে হে!
– তা আর কিছু নতুন আবিস্কার করলেন নাকি?
– করেছি বৈকি! অনেক গুলো নতুন আবিস্কার করেছি।
– বাহ! এই চশমাটা দারুন দেখতে তো!
– এই না না। ওটায় হাত দেবেন না। রাখুন যেখানে ছিল ওটা।
– আরে! কী হল?
– ওটা সরকারী প্রয়োজনে বানানো। খুব গোপন একটা জিনিস!
– ওহ। আচ্ছা আচ্ছা। Sorry আমি বুঝতে পারিনি। Please Don’t Mind.
– আরে না না ঠিক আছে। মাফি খাবেন?
– আজ্ঞে? সেটা কী?
– এটা মায়ের হাতের চা এবং কফির মিশ্রণ।
– কার মা? আপনার?
– আমার কেন হতে যাবে?
– তাহলে?
– যে খাবে তার.
– এটা কী করে সম্ভব?
– এটাই তো আমার আবিস্কার মশাই!
– সে তো বুঝেছি কিন্তু how?
– কেমন করে হচ্ছে বললে আপনি বুঝতে পারবেন না। তবু একটু সহজ করে বলছি শুনুন। Skin একটা খুব ভালো DNA স্যাম্পেল জানেন তো?
– হ্যাঁ শুনেছি।
– তো আপনি যখন মাফি এর কাপ টা ধরবেন তখন ওটা আপনার Skin টাকে Scan করে আপনার DNA থেকে আপনার মা কে Construct করবে। তারপর ওই মাফি কে আপনার মায়ের হাতের মত করে Develop করবে।
– আ্যাঁ?
– হ্যাঁ। আর পুরোটাই হবে কয়েক ন্যানো সেকেন্ড এর মধ্যে।
– বলেন কী মশাই?
– একবার দেখুন না খেয়ে! অবশ্য আপনি যদি কফি না ভালোবাসেন তাহলে মা এর হাতের চা মানে মাচা খেতে পারেন।
– না না। ঠিক আছে আমি মাফিই খাই বরং।
– আচ্ছা বসুন আমি নিয়ে আসছি।
২১শে ডিসেম্বর
– প্রোফেসর বোস? আছেন বাড়িতে?
– বলুন অবিনাশ বাবু।
– আমায় ক্ষমা করে দিন মিস্টার বোস! আমার ভুল হয়ে গিয়েছে!
– কি হয়েছে বলুন না শুনি আগে।
– আপনি যখন কাল মাফি আনতে গেলেন আমি আপনার ওই চশমা টা পরেছিলাম।
– সর্বনাশ!!! আপনাকে বারন করার পরেও আপনি কেন পরতে গেলেন?
– ভুল হয়ে গেছে মশাই। চশমাটা চোখে পরার পরেই গায়েব হয়ে গেল চোখ থেকে! আমি ভাবলাম বাতাসে মিলিয়ে গেল হয়তো! কিন্তু…
– কিন্তু?
– আরে মশাই সকাল থেকে অদ্ভুত সব কান্ড হচ্ছে আমার বাড়িতে।
– কি হচ্ছে বলুন তো শুনি একটু।
– আরে আমার ছেলে সকালে বেরোচ্ছিল। আমি বললাম কোথায় যাচ্ছিস? বলল, কলেজ আবার কোথায়! বলে আবার বেরিয়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে মাথার মধ্যে কাদের যেন কথা বলা শুরু হল। তারপর হঠাৎ চোখের সামনে দেখলাম আমার ছেলে দাঁড়িয়ে। আর সব কিছু লাল। মানে লাল চশমা পরলে যেরকম দেখা যায় সেরকম। তারপর… তারপর ছেলে বলল, প্রেম করতে যাচ্ছি। ভিক্টোরিয়া। তারপরে আবার সব Normal. কাউকে দেখতে পেলাম না।
– আর কিছু হয়েছে নাকি?
– হয় নি আবার? আমার স্ত্রী স্নান করে বেরিয়ে এসে বলল, ‘বাতাসা কিনে আনো তো! ঠাকুরের বাতাসা শেষ হয়ে গেছে।” তারপরেই মাথার মধ্যে আওয়াজ। তারপর আবার সব লাল হয়ে গেল। স্ত্রী দেখলাম একইভাবে স্নান করে মাথা মুছতে মুছতে এল। বলল, বাতাসা কিনে আনো তো! এখন তোমার বাড়ি থেকে বেরোনোটা জরুরী। প্রমোদ আসবে”
– প্রমোদ কে?
– আমার স্ত্রীর একজন কলেজের বন্ধু।
– শুধুই বন্ধু তো?
– জানিনা। আমারও সেই প্রশ্ন রয়েছে মনের মধ্যে।
– তাই বলুন। তারপর বলে যান।
– আরে আমি তখনও বুঝতে পারিনি কি হচ্ছে। তবে আন্দাজ করছিলাম যে যারা মিথ্যে বলছে তাদের মিথ্যে গুলো আমার সামনে চলে আসছে। তারপরেই মনে পড়ল আপনার সেই চশমাটার কথা। ওটা কি some kind of মিথ্যে চশমা?
– বলছি। তার আগে বলুন আর কিছু হয়েছে কিনা।
– হ্যাঁ অফিসে গিয়েছিলাম। তো আমার একজন সহকর্মী অফিস থেকে বেরোনোর সময় বলল, “অবিনাশ দা বড়বাবু আজ আপনার খুব প্রশংসা করলেন। বললেন তুমি নাকি খুব ভালো কাজ করছো। Promotion হতে পারে তোমার একটা। তারপরেই মাথার মধ্যে আওয়াজ এবং তারপরেই চারদিক টা লাল হয়ে গেল। তারপর আমার সহকর্মীকে বলতে শুনলাম, “অবিনাশদা বড়বাবু আজ তোমায় নিয়ে যা নয় তাই বললেন। বললেন তুমি দিন কে দিন অকর্মণ্য হয়ে যাচ্ছো। খুব শিগগিরই তোমায় বরখাস্ত করা হতে পারে।” এটা শুনে আর থাকতে পারিনি মশাই। সোজা আপনার কাছে চলে এলাম। আমি জানতে চাই না এত সত্যি কথা। আপনি আমায় ঠিক করে দিন.
– এটা তো আমার হাতে নেই অবিনাশ বাবু।
– মানে টা কী? আপনার চশমা আপনি ঠিক করবেন। ব্যাস!
– আপনাকে বারন করেছিলাম। তাও শুনলেন না। এটাই আপনার শাস্তি।
– Please এরকম করবেন না। Please.
– তবে একটা কথা আপনাকে বলি, এই চশমা কিন্তু আপনি যেভাবে ভাবছেন সেভাবে কাজ করে না।
– তাহলে? এটা মিথ্যে চশমা নয়?
– হুম। মিথ্যে চশমা বলতে পারেন আপনি। তবে অন্য ভাবে। আপনার সবচেয়ে খারাপ দুঃস্বপ্ন কে সামনে নিয়ে আসে এই চশমা। আমি যার কাছ থেকে যেটা শুনতে চাইবেন না, যেটা দেখতে চাইবেন না সেটাই আপনাকে শোনাবে এবং দেখাবে এই চশমা। যেমন আপনার ছেলে কলেজ বন্ধ করে ভিক্টোরিয়ায় প্রেম করছে এটা আপনার worst nightmare ছেলে কে নিয়ে, তাই আপনি এটাই দেখলেন। তারপর ধরুন আপনার স্ত্রী। প্রমোদ বাবুকে নিয়ে আপনি আপনার স্ত্রীকে সন্দেহ করেন তাই ওটাই আপনি শুনেছেন স্ত্রী এর মুখে। আর অফিসের বড়বাবুর ব্যাপারটাও তাই। আপনি যেটা শুনে শিউরে উঠবেন সেটাই আপনাকে শোনানো হয়েছে।
– What??? এ জিনিস আবিস্কার কেন করেছেন?
– শত্রু মশাই শত্রু! পৃথিবীতে এর জিনিসটার অভাব নেই। আর আমার মত যারা একটার পর আর একটা যুগান্তকারী অবিস্কার করছে তাদের তো আরও সাবধান হতে হয়।
– কিন্তু আপনি যে বললেন এটা সরকারী প্রয়োজনে বানানো?
– হ্যাঁ উদ্দেশ্য তাই ছিল। সরকার চেয়েছিল যারা ওদের বিরোধিতা করবে তাদের এটা পরানো হবে। কিন্তু আমার এতে সায় নেই। কারন এটা সরকার হাতে পেলে দেশে গনতন্ত্র বলে কিছু থাকবে না। Dictatorship চলে আসবে।
– কিন্তু? আমি? আমায় ঠিক করে দিন Please. আর কখনো আপনার কথা অমান্য করবো না।
– ঠিক আছে। এই নিন। এটা খান।
– কী এটা?
– Antidote… Permanently এই চশমার এফেক্ট কাটতে ৩ বছর লাগবে। আপাতত কিছুক্ষনের জন্য আপনাকে মুক্তি দেওয়া যেতেই পারে।
– কিন্তু কী এটা?
– ওই যে… মাফি। মায়ের হাতের কফি। আরে খান খান। দেখবেন একটু Better Feel করছেন।
প্রোফেসর বোস ও শৈশব হেলমেটঃ https://secularweirdo.wordpress.com/2016/09/22/প্রোফেসর-বোস-ও-শৈশব-হেলমে