৮ নাগাদ বাড়ি ফিরেই বৌ আর ছেলে কে ডাকলেন রাজমিস্ত্রি হরিসাধন মাইতি। বললেন,
– শোন। আজ ব্যাঙ্কে গিয়ে লাইন দিয়েছিলাম টাকা পালটে দেওয়ার জন্য। কিন্তু ৩ ঘন্টা পর যখন আমার সুযোগ এলো তখন শুনলাম প্যান কার্ড ছাড়া হবে না। আজকের দিনটা কিছু খাওয়া হবে না তোদের। কষ্ট করে মানিয়ে নিস একটু।

ছেলে বলল, “কোনো ব্যাপার না বাবা। ২ দিন খেতে না পেলে এমন কিছু ক্ষতি হবে না। এতে তো দেশেরই ভালো হবে তাই না?”

স্ত্রী বললেন, “হ্যাঁ। চলো আমরা সবাই মিলে বন্দেমাতারম গাই।”

– স্যার, আজ পড়তে যেতে পারবো না।
– কেন?
– আসলে স্যার আজ তো আপনার মাইনে দেওয়ার শেষ তারিখ। আর আমার কাছে ১০০ টাকার নোট নেই। ২ টোই ৫০০ টাকা। তাই আজ যাবো না।
– ধুর পাগল। আমায় এ মাসে টাকা দিতে হবেনা। জানিস বর্ডারে সৈন্যরা কত দেরীতে মাইনে পায়! কোনো চিন্তা করিস না। চলে আয়। আজ জনগন মন গাইবো সবাই মিলে।

– ছিঃ ছিঃ। কি অবস্থা দেশটার?
– মানে কী হল আবার?
– একটা ৭৩ বছরের বৃদ্ধ মারা গেছেন, জানিস? ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে। কি যাচ্ছেতাই একটা পরিবেশ তৈরী হয়েছে।
– বাবাহ! এই বুড়োগুলোও সত্যি!!
– মানে? কি বলছিস কি?
– আরে জিও সিম কেনার লাইনে মরতে পারে না। মরতে হয় ব্যাঙ্কের লাইনেই! সব চক্রান্ত করে মরছে।


– ফেসবুকে একটা ছবি দেখলাম বুঝলি। তারপর থেকে মনটা একদম আনন্দে ভরে আছে।
– কি ছবি?
– আরে দেখলাম যে কয়েকটা বিদেশী ATM এর লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। মোদী একদম জিনিয়াস।
– এতে মোদীর জিনিয়াসের কী হল?
– আরে? তুই কিছু বুঝিস না!
– কী বুঝব বল?
– প্রায় ২০০ বছর আমাদের দেশ শাসন করার প্রতিশোধ রে এটা। মোদী আমাদের সবার হয়ে প্রতিশোধ নিল।

– কি ব্যাপার?
– স্যার আমায় একটু বেশি টাকা পাল্টাতে দিন না!
– না ওরকম নিয়ম নেই।
– আমার ঠাকুমার খুব শরীর খারাপ স্যার। ডেঙ্গু হয়েছে। নার্সিং হোম এ ভর্ত্তি। ওরা কেউ পুরোনো নোট নিচ্ছে না।
– সরি। আমার হাতে কিছু নেই।
– একটু দেখুন না স্যার। ঠাকুমাটা মরে যাবে আমার।
– আরে দূর মশাই। রোজ বর্ডারে কত মশা মরছে জানেন?? মশার কামড়ে না হয় একজন মরল তাতে কি এসে গেল?

হীরক রাজার দেশে

Arnab Mondal


হিজিবিজি লেখা আর বিরিয়ানি নিয়ে Phd করছি আর আকাশবাণী কলকাতায় নিজের কন্ঠস্বর ভাড়া দিয়ে সংসার চালাচ্ছি।


Post navigation


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কপি করবেন না দাদা/দিদি