অর্নব মন্ডল

ওই সীটটায় বসবে কিনা ঠিক করতে পারছিল না অনিন্দ্য। দাঁড়িয়েছিল ফাঁকা বাসে। ফাঁকা মানে সব সীট ভর্তি। ওইটা ছাড়া। শেষটায় যখন কন্ডাক্টর বলল, “কি ভাই সীট খালি আছে দেখতে পাচ্ছনা নাকি?” তখন সে বসে পড়ল মেয়েটার পাশের সীট এ। মেয়েটা ঘুরেও দেখল না ওর দিকে। অনিন্দ্য একটু জড়সড় হয়ে বসে রইল। অন্য সময় হলে হয়ত কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনতে শুরু করে দিত অনিন্দ্য। আজ যেন নড়তেও পারছেনা সে।

পাঠক হয়ত ভাবছেন যে আজকালকার দিনে বাসে একটা মেয়ের পাশে বসতে একটা ছেলের এত লজ্জা কেন? আসল ব্যাপারটা খুলে বলতে হয় তাহলে। মেয়েটি আসলে অনিন্দ্যর পুরোনো প্রেমিকা যাকে বলে এক্স-গার্লফ্রেন্ড। স্কুলজীবনে অনেকগুলো বছর দু’জনে একসাথে কাটিয়েছে। তারপর ও চলে আসে কলকাতায় পড়াশুনো
করতে। তারপর নানা কারণে দু’জনের মধ্যে গোলমাল শুরু। তারপর সম্পর্কে ভাঙ্গন। ইদানিং রাস্তায় দেখা হলেও দু’জনে দু’জনকে না চেনার ভান করে চলে যায়। তা সেই পুরোনো প্রেমিকার পাশে বসতে ইতস্তত করাটাই স্বাভাবিক নয় কি?

সীটে বসে বসে ছোটোবেলার স্মৃতি গুলোই মনে করছিল অনিন্দ্য। গ্রামের বড় মাঠটার পাশের রাস্তা দিয়ে একসাথে সাইকেল নিয়ে ঘুরতে যেত রঞ্জনার সাথে। সাইকেল নিয়ে মানে দু’জনের কাছে দুটো সাইকেল থাকত। অনেকেই নাক উঁচু করত। বয়স্করা বলত, “এইটুকু বয়সে আবার প্রেম হয় নাকি? ছেলে ছোকরাদের যত বাতিক।”
‘লাও ঠ্যালা!’ প্রেমের আবার বয়স আছে নাকি? পাত্তা দেয়নি ওরাও। ক্লাস ইলেভেন-টুয়েল্ভ তো চুটিয়ে প্রেম করে গেছে দু’জনে।

“এই যে! কানের কি প্রবলেম দেখা দিয়েছে?” চমকে উঠল অনিন্দ্য। রঞ্জা এবার জানলার দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে কথা বলছে। একটু  ভ্যাবাচ্যাকা হয়ে হাঁ করে ওর দিকে তাকিয়ে রইল সে। “আরে তোর ফোনটা তখন থেকে বাজছে। শুনতে পাচ্ছিস না নাকি!” এবার খেয়াল হল বাবুর। তাই তো! ফোনটা বাজছে খেয়ালই করেনি। বোকা বোকা একটা হাসি হেসে পকেট থেকে ফোনটা বের করল। মা ফোন করছে। বাসে উঠে মাকে ফোন করতেই ভুলে গিয়েছে ও।          

“বল মা”

“কিরে ফোন করিস নি কেন?”

“আরে বাসে উঠেই ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম।

একদম খেয়াল নেই ফোন করতে।”

“আচ্ছা ঠিক আছে। সাবধানে যাস।”

“হুমম” বলে ফোন রেখে দিল ও। আর সাবধানে! দু বছর ধরে হাওড়া যাতায়াত করছে অনিন্দ্য। নতুন করে আর কি সাবধান হবে। বাস যেমন নিয়ে যাবে সেরকমই যাবে।

যাই হোক। ফোনটা আসাতে কেমন যেন একটু সাহস পেয়েছে অনিন্দ্য। রঞ্জা কথা শুরু করেছে মানে এরপর কথা বলা যেতে পারে। তাছাড়া তিন ঘন্টার রাস্তা এরকম হ্যাবলার মত বসে থেকেও তো লাভ নেই। কিন্তু কি বলবে? অনেক ভেবেও ঠিক করতে পারছিল না যে কি বলে কথা শুরু করা যায়। এমন সময় হঠাৎই ওপরওয়ালার বোধহয় কৃপা হল। রঞ্জা নিজেই জিজ্ঞেস করল, “কেমন আছিস?”   দেখেছ কান্ড! ওর মাথায় এটা এলনা কেন আগে? এই কথাটা জিজ্ঞেস করলেই তো…
“ভা-ভা-ভাল!ত-ত-তুই কেমন আছিস?” এই সেরেছে! আবার তোৎলামো কেন! ধুর! সব কেঁচে যাচ্ছে।
“এই কেটে যাচ্ছে।” বলল রঞ্জা, “তুই কি কলকাতা ফিরছিস?”               “হ্যাঁ।”
এরপর মিনিটখানেক দু’জনেই চুপ। অনিন্দ্য ভাবছিল মেয়েটার হল কি? কদিন আগে অবধি তো আগুনের ফুল্কি ছিল। জলটা ঢালল কে? এই ত মাস দু’য়েক আগে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে রঞ্জাদের বাড়ির সামনের রাস্তায় অপেক্ষা করছিল ও। আসলে ফোন নাম্বার টা আগেই চেঞ্জ করেছে ও অনিন্দ্যর জ্বালায়। তাই ও ভেবেছিল রাস্তাতেই শুভেচ্ছা জানাবে। প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা জুন মাসের কাঠফাটা রোদে অপেক্ষা করার পর দেখা মিলেছিল মহারানীর। কিন্তু হায়! ওকে দেখেই এমন আগুনের স্ফুলিঙ্গ হয়ে উঠেছিল যে সেবার আর শুভেচ্ছা জানানো হয়নি অনিন্দ্যর। তারপর নিজের বাবাকে দিয়ে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছিল রঞ্জনা অনিন্দ্যর বাবার কাছে। উফ! সেটা একটা দিন ছিল বটে! ওর বাবা বলে কিনা ‘আপনার ছেলে আমার মেয়েকে রাস্তায় পেলেই তার সাথে অসভ্যতা করে। নিজের ছেলেকে সামলে রাখুন।’ অনির বাবা সেদিন কিছুই বলতে পারেননি। ভাগ্যিস মা তখন বাড়িতে ছিল না। তাই রক্ষে! মা জানলে কেটে ফেলত ওকে। মা কোনোদিনই পছন্দ করতেন না রঞ্জা কে। বাবা ওকে বকেনি। তবে বাবার মুখ দেখে বুঝেছিল খুব কষ্ট পেয়েছে। সেদিন বাবা ওর মাথায় হাত দিয়ে বুঝিয়েছিল, “অনেক তো হল। এবার ছাড় না! পড়াশুনোটা কর এবার ভাল করে।” বাবার জন্য সেদিন খুব কষ্টও হয়েছিল ওরও। কেউ জানেনা ও সেদিন রাতে বালিশে মুখ গুঁজে কেদেছিল বাবার জন্য। মনে মনে ঠিক করেছিল আর নিজের দুর্বলতা কে প্রশ্রয় দেবে না। ভাল করে পড়াশুনো করবে। কিন্তু প্রতিজ্ঞা রয়ে গেছে প্রতিজ্ঞার জায়গায় আর মন রয়ে গেছে মনের জায়গায়।

“ফার্স্ট ইয়ারের রেজাল্ট কেমন হল তোর?” রঞ্জার ডাকে আবার বাস্তবে নেমে এল অনিন্দ্য। “খুব ভাল হয়নি। ফিফটি সিক্স পারসেন্ট।” এবার খানিকটা সামলে নিয়েছে নিজেকে। “তোর কেমন হল?” উত্তরটা জানা সত্ত্বেও জিজ্ঞেস করল ও। খবর ও আগেই নিয়েছে রঞ্জার রেজাল্টের। “ভাল না রে।” উত্তর দিল রঞ্জা। উফ! এই হচ্ছে মেয়েসুলভ ন্যাকামি। এই জিনিসটাই বড় বিরক্ত লাগে অনিন্দ্যর। পেয়েছে সিক্সটি ওয়ান পারসেন্ট আর বলে কিনা ভাল না। “ও আচ্ছা” বলে চুপ করে গেল ও। মিনিটখানেক দু’জনেই চুপ। এবার নীরবতা ভাঙ্গল অনিন্দ্য নিজেই, “কোথায় যাচ্ছিস তুই?”
“দিদির বাড়ি”
“শ্রীরামপুর?”
“হ্যাঁ”
আর কিছু বলল না অনিন্দ্য। ওর দিদির বিয়ে হয়েছে হাওড়ার শ্রীরামপুরে। এটা জানত ও। ওহ! কম জালিয়েছে এই দিদিটা তখন? রাস্তায় ওদের দু’জনকে একসাথে দেখলেই বাড়িতে গিয়ে লাগিয়ে দিত। কতবার কেস খেয়েছে ওইভাবে। একবার তো ওকে রাস্তায় কি জ্ঞানটাই না দিল। বলল “ইংরেজীতে অনার্স পড়ছিস মানে ত রেজাল্ট ভাল হয়নি। বাচ্চা বয়স থেকে প্রেম করলে রেজাল্টটা হবে কি করে?” মনে হয় বলতে চেয়েছিল আমার বোনের সাথে প্রেম করলে রেজাল্ট কি করে ভাল হবে। কিন্তু সৌভাগ্যবশত সেটা আর বলেনি। রেজাল্ট যদিও খুব খারাপ হয়নি অনিন্দ্যর। সাতাশি পারসেন্ট হয়েছিল টোটাল পারসেন্টেজ। আর ইংরেজী অনার্স রেজাল্ট খারাপ হলে পড়ে! যত্তসব গাঁইয়া যুক্তি।

“কোথায় এলাম রে?” রঞ্জার হঠাৎ প্রশ্ন। বাইরের দিকে তাকিয়ে অনিন্দ্য উত্তর দিল “কোলাঘাট।”
“আর কতক্ষন লাগবে?”
“এখনো দেড় ঘন্টা তো বটেই।”
“ও!” বলে চুপ করে গেল রঞ্জা। অনিন্দ্য একটা প্রশ্ন অনেক্ষন থেকেই করবে ভাবছিল। কিন্তু সাহসে কুলোচ্ছিল না। এবার ‘যা হবে দেখা যাবে’ ভেবে সেটা করেই ফেলল, “তোর প্রেম কেমন চলছে?” একটু ম্লান হাসি হাসল মনে হল রঞ্জা। তারপর বলল, “কার সাথে?”
“ওই যার সাথে ছিল। প্রদীপ না কি একটা নাম যেন!”
“সে তো কবেই ভেঙ্গে গেছে।”
এই সেরেছে! এ বলে কি? এক সপ্তাহ আগে সৌরভ ওকে ফোনে জানিয়েছে রঞ্জা আর ওর বয়ফ্রেন্ড নাকি রাত্রে সাড়ে নটা অবধি ওদের বাড়ির পাশের গলিতে দাঁড়িয়ে গল্প করেছে। তাহলে কি রঞ্জা মিথ্যে বলছে?
“কি ভাবছিস? আমি সত্যি বলছি কিনা” রঞ্জা জিজ্ঞেস করল।
একটু থতমত খেয়ে গেল অনিন্দ্য। বলল, “না না তা নয়। কিছুই ভাবিনি। এমনি চুপ করেছিলাম।”
“ও। তা তোর কেউ জুটল?”
“নাহ রে।”
“কেন? কাউকে পছন্দ হয়নি?”
“নাহ”
পছন্দ যে অনিন্দ্যর সত্যি হয়নি তা নয়। অনেক মেয়েকেই ভাল লেগেছে। কিন্তু সবই ওই এক সপ্তাহের জন্যে। এক সপ্তাহ পরে ওর মন আবার যার কাছে যাওয়ার তার কাছে গিয়েই পড়ে আছে। এভাবে কি আর প্রেম হয়!

যদিও প্রেম হয় কি না হয় সেটা অনিন্দ্যর ভাবনা এখন নয়। ও এখন ভাবছে কেসটা কি হচ্ছে। যে মেয়ে দু’দিন আগে অবধি দু চক্ষে দেখতে পারত না তার আজ কি হল সেটা ওর কাছে পরিস্কার হচ্ছে না। অনেক কিছুই ওর কাছে পরিস্কার নয় যদিও। এখন সেসব কথা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। রঞ্জা হঠাৎ ব্রেক আপ করেছিল কেন তা ও এখনো জানেনা। কলকাতায় নিজের মেসের ঘরে ঘুমোচ্ছিল সেদিন। হঠাৎ খুব সকালে রঞ্জার ফোনে ঘুম ভাঙ্গল। অনিন্দ্য ঘুম জড়ানো গলায় বলেছিল, “বলুন ম্যাডাম।”
“আমার তোকে কিছু কথা বলার আছে।” ও পাশ থেকে রঞ্জা বলল।
“হুম। বল বল। কি কথা?”
“আমি তোর সাথে আর সম্পর্ক রাখতে পারবনা। আজই সব শেষ করতে হবে আমাকে।” অনিন্দ্য হেসে বলেছিল, “ ওরে আজ পয়লা এপ্রিল নয়। কি সব ভাট বকছিস।”
“দয়া করে একটু সিরিয়াসলি শোন। আমাদের যা সম্পর্ক হয়েছে তুই ভুলে যা। সরি। আমি ভুল করেছি। আজ সেই ভুল শোধরাতে চাই।”
অনিন্দ্য এবার আঁতকে উঠেছিল “মানে? কি বলছিস? কি হয়েছে বল না খুলে?”
“কিছু হয়নি। আমি আর নিতে পারছিনা। আমি আমার বাবা-মাকে আর কষ্ট দিতে পারব না। আমায় ক্ষমা করিস।” এরপর আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ফোন কেটে দিয়েছিল রঞ্জা। তারপর বহুবার ফোন করেছে, এস এম এস করে করে আঙ্গুল ছোট হয়ে গেছে। কিন্তু রঞ্জা একটাও রিপ্লাই করেনি। তারপর মাসখানেক পরে ফোন নাম্বারও চেঞ্জ করে নিল। তার কিছুদিন পরেই অনিন্দ্য জানতে পারে রঞ্জা প্রেম করছে। প্রদীপ নামে একটি ছেলের সাথে।

“সরি!” রঞ্জার গলা শোনা গেল। আবার চমকে উঠল অনিন্দ্য। কিছুটা আন্দাজও হয়ত করতে পেরেছিল সরির কারণটা। তাও জিজ্ঞেস করল, “কিসের জন্য?”
“এতদিন অবধি যা হয়েছে তার জন্য।”
“যা হবার তা হয়েই গিয়েছে। এখন আর কি লাভ পুরানো কাসন্দি ঘেঁটে?” এবার অনিন্দ্য ‘নরম্যাল মোড’ এ এসেছে।
“লাভ আছে কিনা জানিনা কিন্তু আমার মনে হচ্ছে আজ যখন সুযোগ পেয়েছি পুরো ব্যাপারটা তোর কাছে পরিষ্কার করে দেওয়াই ভাল।”
“আমার আর কিস্যু যায় আসে না।”
“আমিও সেটাই ভাবতাম। তাই জন্যেই নিজে যোগাযোগ করিনি শেষ গোলমালটার পর। কিন্তু আজ তোর মোবাইলের ওয়্যালপেপারটা দেখার পর আমার সেই ভুল ধারনাটা ভেঙ্গে গেছে।”
শেষ কথাটা শোনার পরেই অনিন্দ্য নিজের ফোনের দিকে তাকিয়েই বুঝতে পারল রঞ্জার ভুল ধারণা ভাঙ্গার কারন। মোবাইলের ওয়্যালপেপারে রঞ্জার ছবি সেট করা। আর কিছু বলল না ও। রঞ্জা বলতে শুরু করল, “আমার বাড়িতে তোর ব্যাপার জানার পর মারাত্মক গোলমাল শুরু হয়। দিদি আমাদের ‘এস এম এস’ পরে নিয়েছিল। আগেও অনেক গোলমাল হয়েছে কিন্তু সে দিনেরটা একটু বেশি বাড়াবাড়ি রকমের হয়েছিল। বাবা বলছিল সুইসাইড করবে যদি তোর সাথে সম্পর্ক রাখি।”
অনিন্দ্য চুপ করে শুনছে। রঞ্জা বলে চলল, “সেদিন সকালে যখন তোকে ফোনটা করি বাবা, মা, দিদি পাশে ছিল। ফোন লাউডস্পীকারে ছিল। ওইদিনের পর থেকেই আমার কাছ থেকে ফোন কেড়ে নেওয়া হয়। সব বন্ধুদের সাথেই যোগাযোগ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়”
কিছু বলল না অনিন্দ্য। অনেকক্ষন থেকেই মনের মধ্যে আর একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল। উত্তরটা এবার পেয়ে গেল।
“আর আমার জন্মদিনের দিন আমার পেছনেই আমার কাকু ছিল। তোর সাথে যখন কথা বলছিলাম উনি দেখছিলেন। আর তাই তোর সাথে ওইরকম খারাপ ব্যবহার করেছিলাম। আর উনিই বাড়িতে গিয়ে বাবাকে সব বলেন। আর তাই বাবা তোর বাবার কাছে গিয়ে……”
মনের মধ্যে একটা অদ্ভুত আনন্দ হচ্ছে অনিন্দ্যর। মনের মধ্যে এতদিন ধরে জমে থাকা প্রশ্নের উত্তর গেল পেয়ে গেল বলে কি? সেটাই হবে হয়ত। জানলার দিকে তাকাল অনিন্দ্য। সাঁতরাগাছি পেরিয়ে গেছে। আর একটু পরেই নামতে হবে।
“তুই নাম্বার চেঞ্জ করেছিলি কেন?” জিজ্ঞেস করল অনিন্দ্য।
“ওটাও বাড়ির লোকের চাপে। তুই বারবার ফোন করতিস। মেসেজ করতিস। সেই কারনেই জোর করে বাবা নাম্বার চেঞ্জ করিয়েছিল।”
“তুই নিজে একটা ফোন করতে পারতিস না কি?”
“কি করে জানব যে তুই এখনো……”
“আমি এখনো?” কথা শেষ করতে না দিয়েই অনিন্দ্য জিজ্ঞেস করল।
“কিছু না। এখন আবার আগের সিমটাই লাগিয়েছি। ইচ্ছে হলে ফোন করিস। আর কোনো ঝামেলা নেই। বাড়ির পরিবেশ অনেকটাই ঠিক আছে এখন।”
এবার অনিন্দ্যর মনের মধ্যে একটা পিং পং বল হঠাৎ যেন লাফাতে আরম্ভ করে দিল। প্রশ্ন যে আর ছিলনা মনের মধ্যে তা নয়। প্রদীপের ব্যাপারটা এখনো পরিষ্কার নয়। ওগুলো কি সবই গুজব ছিল? যাকগে ওসব পরে দেখা যাবে। এখন তো আবার হয়ত আগের মতনই কথা হবে ওর সাথে। যখন হোক একটা জিজ্ঞেস করে নিলেই হল।
“আই লাভ ইউ।” হঠাৎই কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে ফিসফিসে গলায় রঞ্জা বলল। অনিন্দ্য খানিকটা অবাক হয়ে তাকাল তার দিকে। এবার ওর হাতের ওপর হাত রাখল রঞ্জা।

মায়ের হাতের ছোঁয়া পেয়েই ঘুমটা ভেঙ্গে গেল অনিন্দ্যর। “কিরে? অ্যালার্ম তো বেজে বেজে বন্ধ হয়ে গেল। অঘোরে ঘুমোচ্ছিলি তো!” মা বলল। কি বলবে কিছু বুঝতে পারছিল না ও। পুরোটাই স্বপ্ন ছিল? বেশ কিছুদিন হল এরকম কিছু স্বপ্ন দেখছে বটে আজকেরটা একটুও টের পায়নি ও। মাকে জিজ্ঞেস করল, “ক’টা বাজে?”
“সাড়ে পাঁচটা। আজ তো সকাল সকাল ফিরবি বললি কোলকাতা। তাই ডেকে দিলাম। উঠে পড়” বলে চলে গেল মা।
সাড়ে পাঁচটা! মানে তো এখন ভোর! মনের মধ্যে একটু আশা জাগল অনিন্দ্যর। কে যেন বলেছে ভোরের স্বপ্ন সত্যি হয়। তাহলে কি ওর আজকের স্বপ্নটা পুরোপুরি স্বপ্ন নয়? রঞ্জার পুরানো নাম্বারে কি একটা ফোন করে দেখবে ও?
এসবই ভাবতে ভাবতেই ও বিছানা থেকে নেমে ফোনটা হাতে নিয়ে রঞ্জার নাম্বারটা ডায়াল করল। খানিক পরে একটা মেয়েলি কন্ঠস্বর শোনা গেল।
নাহ! রঞ্জার গলা নয়। কান থেকে নামিয়ে বিছানায় রেখে দিল ফোনটা। ফোনে শোনা যাচ্ছে, ‘দি সাবস্ক্রাইবার ইউ আর কলিং ইজ কারেন্টলি সুইচড অফ।’

ব্রেক আপের পর

Arnab Mondal


হিজিবিজি লেখা আর বিরিয়ানি নিয়ে Phd করছি আর আকাশবাণী কলকাতায় নিজের কন্ঠস্বর ভাড়া দিয়ে সংসার চালাচ্ছি।


Post navigation


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কপি করবেন না দাদা/দিদি