– এদিকে আসবেন। New Comer রা এদিকে। এদিকে আসবেন
– দাদা, বলছিলাম যে…
– পরে বলবেন। আগে আসুন এদিকে। নতুন রা সবাই এদিকে।
– শুনুন না। 
– উফ! বলুন।
– বলছি নিউ কামার মানে কি? এখানে বার বার আসে নাকি লোকজন?
– কেন আসবে না! জন্মিলে মরিতে হবে জানেন না নাকি?
– না মানে সেটা তো জানি। কিন্তু একবার মরার পর আবার জন্মানো যায় নাকি?
– হ্যাঁ যাই বইকি। আপনি আপাতত আসুন এদিকে। স্বর্গের দরজা বন্ধ হয়ে যাবে। তখন আবার বাংলা ডিপার্টমেন্ট এর কারুর মরার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
– বাংলা ডিপার্টমেন্ট মানে?
– মানে এখানে প্রত্যেক ধরনের মানুষের জন্য আলাদা ক্যাম্পাস আছে। এটা বাংলার ক্যাম্পাস। আসুন।
– আচ্ছা আচ্ছা বুঝলাম। আর আবার জন্মানোর ব্যাপার টা?
– আরে আগে আসুন তো! তারপর দেখা যাবে ওসব।


– নাম বলুন।
– আজ্ঞে অরিন্দম চৌধুরী।
– বয়স কত?
– ৩৬
– কিভাবে মরলেন?
– আরে সেটাই তো বুঝতে পারছিনা।
– বুঝতে পারেন নি মানে?
– মানে জানিনা কী হল। বাড়িতে শুয়ে টিভি দেখছিলাম বউ এর সাথে। একটু ঘুম ঘুম পাচ্ছিল। চোখ খুলে দেখি আমি এখানে।
– অত কথা জানিনা। আমাকে তো কিছু লিখতে হবে application এ।
– হার্ট অ্যাটাক লিখে দিন।
– না না। মিথ্যে লেখার নিয়ম নেই।
– তাহলে?
– কি দেখছিলেন টিভি তে?
– বাংলা সিরিয়াল। স্টার জলসা তে।
– ওহ তাই বলুন। আগে বলবেন তো! মৃত্যুর কারন বাংলা সিরিয়াল। যান এবার এদিকে যান প্রিন্সিপাল কথা বলবে সবার সাথে।
– প্রিন্সিপাল মানে?
– যম স্যার। বাংলা ডিপার্টমেন্ট এর।
– প্রত্যেক ডিপার্টমেন্ট এর আলাদা যম?
– হুম।
– কিন্তু আমি যে শুনেছিলাম যমরাজ… থুড়ি… যমস্যার নরকে থাকেন।
– হ্যাঁ। থাকেন তো। সব ডিপার্টমেন্ট এই থাকেন একজন করে যম।
– নরকও ডিপার্টমেন্ট?
– হ্যাঁ আবার কি? যান যান আর কথা না বাড়িয়ে ভেতরে যান।

– বাংলা ডিপার্টমেন্ট এ আপনাদের স্বাগতম। আমি যমরাজ। যম স্যার ও বলতে পারেন। আমাদের ক্লার্ক চিত্রগুপ্ত রয়েছেন। উনি আপাতত ডাটা ডাউনলোড করছেন আপনাদের সম্পর্কে। আপনাদের কোথায় কাকে পাঠানো হবে তারপরেই সিদ্ধান্ত নেবো আমরা Any question?
– স্যার বলছি পৃথিবীতে ফেরত যাওয়া যাবে না কোনোভাবে?
– হ্যাঁ নিশ্চয় যাবে। আপনি সামনে এসে দাঁড়ান। এই চিত্রগুপ্ত হল?
– হ্যাঁ স্যার হয়ে গেছে। আর 3 percent. (চিত্রগুপ্ত)
– আপনার নাম কী?
– অরিন্দম চৌধুরী।
– বাহ বাহ! খুব ভালো। আপনি আমার সাথে দেখা করুন এখানের ঝামেলা শেষ হওয়ার পর।
– আচ্ছা স্যার!
– কই হে চিত্রগুপ্ত দাও টুপি টা?
– কীসের টুপি স্যার?
– ওহো আপনাদের বলা হয়নি। আমাদের এখানে সব কিছুই Automated. সব ডাটা ডাউনলোড করে আমরা একটা টুপিতে আপলোড করে দি। সেই টুপি আপনাদের ডিপার্টমেন্ট ঠিক করে। হ্যারি পটার থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েই আমরা এটা বানিয়েছি। হে হে!
– কি কি ডিপার্টমেন্ট আছে স্যার?
– Brochure এই তো আছে। দেখেন নি?
– নাহ মানে কিসের Brochure?
– সে কি Brochure দেয় নি আপনাদের? ছি ছি! লোকগুলো একদম সরকারি কর্মচারীদের মত আচরন করছে।
– ডিপার্টমেন্ট গুলো…
– দাঁড়ান। আমিই বলে দিচ্ছি।
– বুদ্ধিজীবী, ছদ্ম-বুদ্ধিজীবী, সাধারন, অতিসাধারন আর কমিউনিস্ট।

(ভীড়ের মধ্যে থেকে কেউ)
– স্যার তৃনমূ…
– থেমে যান। ওখানেই থামুন। এখানে সব কটা বিভাগ অত্যন্ত চিন্তাভাবনা করে বিভিন্ন আদর্শের কথা মাথায় রেখে বানানো! এটা নিয়ে প্রশ্ন করবেন না! এবার আসুন এক এক করে এই চেয়ারে বসুন।


– বলুন অরিন্দম বাবু কি ব্যাপার!?
– স্যার আপনি বললেন না… দেখা করতে…
– ওহ হ্যাঁ। By The Way, আপনার যেন কোন ডিপার্টমেন্ট হল?
– কমিউনিস্ট!
– ওহ হ্যাঁ। আমাদের কমিউনিস্ট বিভাগ টা কিন্তু নরক এ। জানি অনেক বড় ক্যাম্পাস একটু ম্যানেজ করে নেবেন।
– হ্যাঁ স্যার সে তো ঠিক আছে। কিন্তু বলছিলাম যে আমার ফেরত যাওয়ার ব্যাপার টা কী হল?
– হ্যাঁ সে তো নিশ্চয় যাবেন। তার আগে একটা ফর্ম ফিল আপ করতে হবে। আগে কয়েকটা দিন থাকুন। এক সপ্তাহ না থাকলে সে ফর্ম পাওয়া যাবে না।
– ওহ!
– আচ্ছা আপনার ফেরৎ যাওয়ার এত ইচ্ছে কেন বলুন তো? কিছু অসম্পূর্ণ কাজ রয়েছে নাকি?
– হ্যাঁ মানে ওইরকমই।
– কী ব্যাপার। বলুন না শুনি।
– আরে… মানে… আমি খুব সম্প্রতি বিয়ে করেছি।
– তাই? এই ৩৬ বছর বয়সে?
– হ্যাঁ তবে আমার বউ এর বয়স খুব কম। ২২।
– আচ্ছা?
– হ্যাঁ। মানে ভালো করে সব কিছু করার আগেই মানে… বুঝতেই পারছেন আশা করি!
– হ্যাঁ নিশ্চয় বুঝতে পারছি। আচ্ছা এক কাজ করুন আপনাকে আমার খুব ভাল লেগেছে। আপনাকে আমি এখনই একটা Form দিচ্ছি। আপনি Fill up করে দিয়ে দিন। এক সপ্তাহের মধ্যেই পেপারওয়ার্ক হয়ে যাবে হয়তো।
– Thank you sir.
– আরে কোনো ব্যাপার না। এই নিন ফর্ম।


– স্যার
– আরে অরিন্দমবাবু যে, বলুন।
– বলছিলাম যে… বাড়ি যাওয়ার ব্যাপার টা!
– ও হ্যাঁ! আপনার বাড়ির ঠিকানা টা লিখতে ভুলে গিয়েছেন বোধহয়!
– কিন্তু চিত্রগুপ্ত বাবুর কাছে ঠিকানা তো থাকার কথা!
– ধুর! অত কে খুঁজবে। আপনি এই ফর্মের পেছনে লিখে দিন।
– আচ্ছা স্যার!
– অরিন্দমবাবু, আপনার স্ত্রীর নামটা যেন কী?
– কমলা!
– এই রে!
– কী হল স্যার?
– না আসলে কমলা শুনলেই পেটের ভেতর টা কেমন যেন করে ওঠে! দাঁড়ান একটা পাঁঠাঞ্জলী ট্যাবলেট খাই।
– ওহ আচ্ছা! তা স্যার কবে নাগাদ বাড়ি যেতে পারবো আমি?
– এই তো আর ২-৩ দিন মত অপেক্ষা করতে হবে। তারপরেই পৃথিবীতে যেতে পারবেন আপনি। তবে বৌ কে দেখতে পাবেন না কিন্তু ৮-৯ মাস!
– এতদিন?
– হ্যাঁ কি করবো বলুন, একটা তো প্রোসিডিয়র আছে আমাদের।
– হ্যাঁ তা ঠিক। আসলে বৌ কে কতদিন দেখিনি। মন খারাপ করছে খুব। আমার বৌ টা তো আবার হেব্বি ইয়ে… মানে…
– হ্যাঁ। বুঝতে পারছি। আর কটা দিন অপেক্ষা করুন। তারপরেই তো বৌ এর একদম কাছে পৌঁছে যাবেন!
– একদম কাছে? মানে কত কাছে?
– সেটা দেখতেই পাবেন। আপনি ফর্ম এ লিখেছেন তো Reason এর জায়গায়। যে বৌ এর কাছে যেতে চান?
– হ্যাঁ স্যার সবই লিখেছি।


– যমস্যার কোথায়?
– উনি একটু কাজে গিয়েছেন পৃথিবীতে। আপনার আজ বাড়ি যাওয়ার কথা তো?
– হ্যাঁ!
– আচ্ছা। আমার নাম…
– চিত্রগুপ্ত ৬৯। জানি।
– আপনার বুকে নামের tag টা দেখা যাচ্ছে! আসলে ছোটোবেলা থেকেই গোয়েন্দা গল্প পড়ে পড়ে এখন খানিকটা গোয়েন্দার মতই হয়ে গেছি বুঝলেন কিনা!
– হুম। আচ্ছা আপনি terms and condition গুলো পড়ে নিয়েছিলেন তো ভালো করে?
– কীসের terms and condition?
– সে কি? form fill up করেছেন আর ওতে যে শর্তাবলী প্রযোজ্য লেখা ছিল ছোটো করে সেটা দেখেন নি।
– না তো। মানে… ওই তো যমস্যার এসে গিয়েছেন। স্যার, চিত্রগুপ্ত দা কী সব বলছে। শর্তাবলীর কথা।
– ও তেমন কিছু না। মাইনর কয়েকটা ব্যাপার।
– ওহ! বাহ! স্যার আপনি এত সেজেগুজে কোথায় গিয়েছিলেন? দারুন লাগছে আপনাকে।
– ওই আর কি। পৃথিবীতে তো আমার অনেক গুলো ইয়ে আছে। তাদের সাথেই মাঝে মাঝে গিয়ে একটু ইয়ে করতে হয় আর কি!
– বাহ বাহ! ভালো!
– এই যে আপনি রেডি তো? [চিত্রগুপ্ত ৬৯]
– হ্যাঁ আচ্ছা আপনাদের এখানে সব ক্লার্ক এর নামই কী চিত্রগুপ্ত?
– হ্যাঁ। তাহলে মেশিন চালুকরছি। এখানে, এই চেয়ার টায় এসে বসুন।
– আচ্ছা।
– ঠিক আছে অরিন্দম বাবু, ভালো থাকবেন তাহলে।
– হ্যাঁ স্যার! থ্যাঙ্ক ইউ। এত হেল্প করার জন্য!
– আরে আমি তো রয়েছি আপনাদের সেবার জন্যই। আর ২০ সেকেন্ড এর মধ্যেই আপনি পৌঁছে যাবেন পৃথিবীতে।
– কিন্তু স্যার শর্তাবলী গুলো তো পড়া হল না।
– আচ্ছা আপনি যেতে যেতে আমি বলে দিচ্ছি শর্তগুলো।
– হ্যাঁ বলুন স্যার!
-. ৯ মাস ১০ দিন আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে। পৃথিবীতে গিয়ে। তারপরেই আপনি আপনার স্ত্রীকে দেখতে পাবেন। আর হ্যাঁ এই ৯ মাস আপনি আপনার স্ত্রীর সব চেয়ে কাছে থাকবেন। আর হ্যাঁ, যখন আপনার জ্ঞান হবে তখন হয়তো আপনার গায়ের রঙ টা একটু চাপা মানে আমার মত মনে হতে পারে। আর মুখ চোখের সাথেও আমার মুখ চোখের সাদৃশ্য থাকতে পারে। বিদায়। ভালো থাকবেন।
– মানে??????
– যাক আর একটা আপদ বিদেয় হল। এই চিত্রগুপ্ত আর কেউ পৃথিবীতে তার বৌ বা গার্লফ্রেন্ড না কি যেন বলে তাদের কাছে যেতে চাইলে খবর দিও আমায়।
– আচ্ছা স্যার! [চিত্রগুপ্ত ৬৯]

স্বর্গকল্পদ্রুম

Arnab Mondal


হিজিবিজি লেখা আর বিরিয়ানি নিয়ে Phd করছি আর আকাশবাণী কলকাতায় নিজের কন্ঠস্বর ভাড়া দিয়ে সংসার চালাচ্ছি।


Post navigation


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কপি করবেন না দাদা/দিদি