– কি খবর প্রোফেসর বোস??
– আরে! অরিন্দমবাবু যে! এই তো বিশ্রাম নিচ্ছি আজ একটু।
– হ্যাঁ। অনেকদিন পর আপনাকে আজ ইজিচেয়ারে বসে পেপার পড়তে দেখলাম।
– আসলে যে জিনিস টা নিয়ে কাজ করছিলাম সেটা তৈরী হয়ে গেছে। তাই আজ শুধু বিশ্রাম।
– তাই নাকি??? কী বানালেন এবার??
– এবার বানিয়েছি Childhood Helmet!
– এটা আবার কী?
– এটা মাথায় পরলে আপনি আপনার ছোটবেলার সমস্ত স্মৃতি পর্দায় দেখতে পাবেন। একদম সিনেমার মত। চাইলে অন্যরাও দেখতে পাবে।
– সত্যি??? এরকম ও হয় নাকি??
– তবে আর বলছি কি! এটা আমার নূতন আবিস্কার।
– আমি দেখতে চাই। আমায় দেখাবেন?
– হ্যাঁ নিশ্চয়। তবে আজ আর ল্যাবে ঢুকতে ইচ্ছে করছে না। কাল দেখাবো।
– না না Please আজ। শৈশব কে নিজের চোখে আবার দেখতে পাব! এটা ভাবলেই একটা উত্তেজনা আসছে মশাই।
– আচ্ছা চলুন তবে!
– হ্যাঁ চলুন।। আচ্ছা আমায় একটা কথা বলুন…
– কী?
– জিনিসটা কাজ করে কীভাবে? মানে এর পেছনের বিজ্ঞানটা কোথায়?
– আমাদের ব্রেন সেল এ আমাদের ছোটোবেলার সব অভিজ্ঞতাই save হয়ে আছে। আমার এই হেলমেট টা Scan করে ব্রেনের কয়েকটা Standard অভিজ্ঞতা কে Identify করবে। তারপর সেই Standard Element গুলো দিয়ে বাকি স্মৃতিগুলো কে সক্রিয় করবে। তারপর আমরা সেগুলিকে স্ক্রীনে দেখতে পাবো।
– বাহ! দারুন তো!
– এই চেয়ারটাই বসুন। হেলমেট টা পরাতে হবে।
– কি চমৎকার দেখতে হেলমেট টা।
– চুপ! কথা নয় আর।
– সরি!
– আমি সুইচ দিচ্ছি। আপনি Concentrate করুন।
– Okay.
( কিছুক্ষণ পর)
– কই? প্রোফেসর বোস কিছুই তো আসছে না।
– হুম।
– কি হুম মশাই। কী করছেন?
– দেখছি মেশিনে কোথায় fault হল।
– ধুর! আপনার যন্ত্র কাজ করে না মশাই। এ তো পুরো Blank আসছে স্ক্রীনে।
– তাই তো দেখছি।
– আমি চললাম তাহলে।
– এক মিনিট দাঁড়ান তো। কয়েকটা প্রশ্ন আছে। এই Standard স্মৃতিগুলো Automatic Scan করার কথা ছিল। কিন্তু হল না যখন আমি manually করছি।
– করুন।
– রবীন্দ্রনাথের ছোটো গল্প বা কবিতা পড়েছেন?
– না।
– উপন্যাস? নাটক?
– না।
– শরৎচন্দ্র?
– নাহ। আমি আসলে বই খুব একটা পড়তাম না।
– সত্যজিৎ রায়ের সিনেমা দেখেছেন?
– নাহ।
– ঋত্বিক ঘটক?
– নাহ।
– ফেলুদা পড়েছেন?
– আজ্ঞে না। বললাম না বই-টই খুব একটা পড়া হয়নি।
– গাভাসকারের ব্যাটিং দেখেছেন?
– না।
– ওয়াসিম আক্রমের বোলিং?
– না।
– শচীনের ব্যাটিং তো দেখেছেন?
– নাহ মানে আমার আবার ক্রিকেট খুব একটা ভালো লাগে না।
– মারাদোনা না পেলে? কে সেরা?
– আজ্ঞে.. মানে..
– কারুর খেলাই দেখেননি তো! বুঝে গেছি!
– হ্যাঁ। আসলে-
– কিশোরকুমার এর গান শুনেছেন?
– শুনেছি হয়তো! ঠিক মনে পড়ছে না।
– বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের মহালয়া শুনেছেন?
– না মানে ভোরবেলা আমি ঠিক…
– আপনি আমার হেলমেট টা খুলুন মাথা থেকে।
– কি হল বলুন তো? আপনার যন্ত্রটা কি-
– আমার যন্ত্রের সমস্যা না। সমস্যা আপনার। আপনি রবীন্দ্রনাথের লেখা পড়েননি, সত্যজিৎ এর সিনেমা দেখেননি, কিশোরকুমার এর গান শোনেননি, গাভাসকারের ব্যাটিং দেখেননি নিজের শৈশব দেখতে চলে এসছেন? স্ক্রীন Blank দেখিয়েছে আপনার ভাগ্য ভালো। ভাগ্য খারাপ থাকলে Point Blank Range থেকে আপনাকে গুলি করে মারা হত!!

প্রোফেসর বোস ও শৈশব হেলমেট

Arnab Mondal


হিজিবিজি লেখা আর বিরিয়ানি নিয়ে Phd করছি আর আকাশবাণী কলকাতায় নিজের কন্ঠস্বর ভাড়া দিয়ে সংসার চালাচ্ছি।


Post navigation


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কপি করবেন না দাদা/দিদি