এম.এ ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা সবে শেষ হয়েছে। আকাশবানী কলকাতার রোয়াকে বসে আড্ডা দিচ্ছি হঠাৎ টেনিদা এসে হাজির। ডালমুটের প্যাকেট টা ব্যাগের মধ্যে লুকোতে গিয়েও পারলাম না। ছোঁ মেরে হাত থেকে নিয়ে নিল। তারপর আমার কেনা সাধের ডালমুট চিবুতে চিবুতে বলল, “কাল সন্ধ্যে বেলা কী করছিস?”
আমি বললাম, “কাল? কাল আসলে একটা বান্ধবীর সাথে একটু ঘুরতে যাওয়ার কথা আ-

“নেই” টেনিদা আমার কথা শেষ না করতে দিয়েই বলে উঠল, “কোথাও ঘুরতে যাওয়ার কথা নেই।”

“নেই?” আমি অবাক হলাম।

টেনিদা বলল, “না নেই। কাল সন্ধ্যেবেলা অ্যাকাডেমি তে আসবি। আমার নাটক আছে।”

“তুমি নাটকও করতে পারও টেনিদা?” আমি অবাক হলাম।

হাবুল থাকলে বলে উঠত, “হ! এদ্দিন ধইর‍্যা তাই তো করত্যাসে”

টেনিদা বললে, “শোন প্যালা… এই ভজহরি মুখুজ্জ্যে পারে না এমন কাজ পৃথিবীতে নেই।”

কাঁচুমাচু মুখ করে বললুম, “কিন্তু আমার বান্ধবী?”

টেনিদা চেঁচিয়ে বলল, “বাজে বকলে রদ্দা খাবি প্যালা। যেটা বলছি সেটাই কর।”

আমি বাধ্য ছেলের মত ঘাড় নাড়লাম দেখে বোধহয় টেনিদার মায়া হল। বলল, “ঠিক আছে বান্ধবী কে নিয়েই আয়। ও ও দেখুক নাটক। আমি টিকিট রেখে দেবো তোদের। কাল সাড়ে ৬ টায়। অ্যাকাডেমি তে। মনে থাকবে তো?”

আমি গালভরা হাসি নিয়ে বললাম, “থাকবে”

সন্ধ্যেবেলা যখন গুটিগুটি পায়ে পৌঁছোলাম অ্যাকাডেমি তে তখন নাটক শুরু হতে আর মিনিট পাঁচেক বাকি। টিকিট আগেই নিয়ে নিয়েছিলাম। ফোন সাইলেন্ট। থার্ড বেল পড়ল। শুরু হল টেনিদার নাটক।

আমার কৌতূহল ঘন হচ্ছিল। ভাবছিলাম টেনিদা কীসের রোলে অভিনয় করবে। আরিব্বাস। নাটক দেখে তো আমার চক্ষু চড়কগাছ। এতো আমাদেরই গল্প। আমি, ক্যাবলা, হাবুল সবাই রয়েছি। হ্যাঁ মানে আমি রয়েছি দর্শক আসনে। কিন্তু আমাদের গল্প নিয়েই হচ্ছে এ নাটক। কোনো একটা বিশেষ গল্প নয়। বেশ কয়েকটা ছোটো গল্প নিয়ে।

সত্যি কথা বলতে কী ওই ১ ঘন্টা ২০ মিনিট এক মুহুর্তের জন্যেও অন্য কথা ভাবতে পারিনি। নিজেদের ঘটনা স্টেজে দেখতে যে এত ভালো লাগবে ভাবতে পারিনি। টেনিদা তো অনবদ্য। সাথে হাবুল, ক্যাবলা এরাও পুরো মাতিয়ে রাখল ১০০ মিনিট। ইয়ে তবে আমার নিজের চরিত্র টা মানে ইয়ে প্যালা… আর একটু মানে… বেটার হতে পারত হয়তো। নাটকের পরে টেনিদা কে সে কথাটা বলতে গিয়েও বলার সাহস হয়নি যদিও। তবে শুরুর দিকে সামান্য একটু দুর্বল লাগলেও একটু পর থেকে প্যালাও বুঝিয়ে দিয়েছে সেও কম যায় না। বিশেষ করে ওই আমাদের বনভোজনের গল্প টা থেকে যে অংশ টা দেখানো হল স্টেজে। সেখানে আমার ওই “আলুভাজা, শুক্তো, বাটি চচ্চড়ি” বলা টা দেখে মন ভরে গিয়েছে। মনে হল নিজেকেই দেখছি স্টেজে।

নাটক শেষে টেনিদার সাথে দেখা করতে গিয়ে দেখলাম টেনিদার পায়ে চোট। রিহার্স্যাল করতে গিয়েই নাকি চোট লেগেছে। এই ব্যাথা নিয়ে স্টেজে বার কয়েক পড়ে যাওয়ার অভিনয় টা কীভাবে করল সেটা ভাবতে ভাবতেই শিউরে উঠছিলাম। তবে ভেবে যা বুঝলাম এ জিনিস টেনিদার পক্ষেই সম্ভব।

গতকাল আমার ডালমুট মেরে দেওয়ায় কিঞ্চিত চটে গিয়েছিলাম বটে। আজ নাটক দেখে মন টা ভরে গিয়েছে পুরো। আহা। তবে শুধু আমাদের চারমুর্তির কথা বললে হবে না। বাকি আরও অনেকেই রয়েছেন যারা দুর্দান্ত অ্যাক্টো করেছেন। দস্যি, লতা, পাতা সবাই খুব খুব ভালো। আর পরিচালক অনির্বান ভট্টাচার্য্য কে ধন্যবাদ আমাদের নিয়ে এত সুন্দর একটা নাটক উপহার দেওয়ার জন্য।

টেনিদা কে জিজ্ঞেস করলাম, “পরের শো টা কবে টেনিদা? এ নাটক একবার দেখে মন ভরবে না”

টেনিদা ওরফে ভজহরি মুখার্জী ওরফে উদ্ভাস রায় হাত তুলে গাঁট্টা মারতে গিয়েও কি মনে হতে যেন থেমে গেল। তারপর বলল, “৬ই সেপ্টেম্বর। অ্যাকাডেমি তে। ঠিক ৬ টা বেজে ৪৫ মিনিট এ। আসছিস তো?

আমি বললাম, “আলবাৎ আসবো। হাবুল আর ক্যাবলা কে নিয়ে আসবো এবার।”

টেনিদা অ্যান্ড কোং

Arnab Mondal


হিজিবিজি লেখা আর বিরিয়ানি নিয়ে Phd করছি আর আকাশবাণী কলকাতায় নিজের কন্ঠস্বর ভাড়া দিয়ে সংসার চালাচ্ছি।


Post navigation


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কপি করবেন না দাদা/দিদি