এখন কিছু দোকান হয়েছে যেখানে ক্যাপিট্যালিস্ট খাবার পাওয়া যায় কমিউনিস্ট দামে। কলকাতা শহর এবং তার আশে পাশে যাঁরা থাকেন তারা সবাই এই ব্যাপার টার সাথে পরিচিত। একটা উদাহরন দিলেই সবার কাছে পরিষ্কার হবে ব্যাপার টা। কেএফসির নাম আপনারা সবাই জানেন। দাম টা বড্ড বেশী হওয়ায় সাম্যবাদী মানুষদের মাঝে মধ্যেই সাধ আহ্লাদের মধ্যে কুলোয় না কেএফসির খাবার। সেই ঝামেলা থেকে মুক্তি দিতেই বিএফসি (ভাইপো’স ফ্রায়েড চিকেন) বা কিউএফসি (কোয়ালিটি ফ্রায়েড চিকেন) এর এখন খুব রমরমা। অলমোস্ট সেম জিনিস পাওয়া যায় প্রায় হাফ দামে।

যাই হোক সেদিন কিউএফসি থেকে বার্গার আর কোল্ড ড্রিংক নিয়ে ফিরছি হঠাৎ বৃষ্টি নামল। বাইকে ছিলাম। কোনোরকমে তাড়াতাড়ি করে বাইক চালিয়ে বাড়ি আসতে গিয়েও শেষ অবধি ভিজে গেলাম। ফ্ল্যাটের নীচে কোনোরকমে বাইক পার্ক করে উঠে গেলাম দোতলায় আমার ফ্ল্যাটের কাছে। আমার তখন ভয় বার্গার টা ঠান্ডা আর কোল্ডড্রিংক টা গরম না হয়ে যায়। গেটের কাছে গিয়ে আর এক সমস্যা। আমার হাতে তখন ২ টো হেলমেট। একটা কোল্ড ড্রিংক এর বোতল। একটা প্যাকেট যাতে বার্গার টা আছে। আর আমার বাঁ’ পকেটে ফ্ল্যাটের চাবি। আমাদের ফ্ল্যাটের সিঁড়ি যিনি পরিষ্কার করেন সেই মাসি টাকা বাড়ানো হয় নি বলে বিদ্রোহ করে আর পরিস্কার করছেন না। কাজেই হাত থেকে একটা জিনিসও মাটিতে রাখতে ইচ্ছে করল না। কোনোরকমে ওইভাবেই পকেট থেকে চাবিটা বার করে তালা টা খুললাম গেট এর। তারপর আর এক ঝামেলা। আমার কোলাপসিবল গেট টা শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আর আমিও হাতে এতগুলো জিনিস নিয়ে সেটা খুলতে কিছুতেই পারছি না। গোটা জামাকাপড় ভেজা আমার। এভাবে আর খানিকক্ষন থাকলেই ঠান্ডা লাগতে বাধ্য। কাজেই বাধ্য হয়েই খাবার গুলো নীচে নোংরা তে রাখব কিনা ভাবছিলাম কারণ আমার তখন আর বাইরে দাঁড়িয়ে থাকার এনার্জিটুকু নেই।

হঠাৎ পেছনে একটা পায়ের আওয়াজ পেয়ে ফিরে তাকালাম। একটি মেয়ে উঠছে সিঁড়ি দিয়ে। আমার পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিল ওপরে। আমি একটু ইতস্তত করে বলেই ফেললাম – Excuse Me?

মেয়েটি থমকে দাঁড়াল। বলল, “বলুন?”

বললাম, “গেট টা একটু খুলে দেবেন প্লিজ। আমার হাতে এতগুলো জিনিস আসলে… খুলতে পারছি না।”

মেয়েটি বলল, “হ্যাঁ। Sure.”

তারপর এগিয়ে এসে আমার কোলাপসিবল টা খুলে দিল টেনে। প্লিজ এই আগের সেনটেন্স টা পরে হাসবেন না। অনেক চেষ্টা করেও অন্যভাবে গঠন করতে পারলাম না বাক্য টা। যাই হোক, মেয়েটি গেট টা খুলে চলে যাচ্ছিল।

আমি বললাম, “Thank You.”

মেয়েটি একটু হেসে বলল, “You are welcome.”

আমি ঢুকে গেলাম বাড়ির ভেতর। সন্ধ্যেবেলা বাড়ি ফেরার পর আমি সাধারনত আর একবার স্নান করি। আজও তাই করলাম। আর স্নান করার পর এই গরম কালে একটা বারমুডা ছাড়া আমার শরীরে কিছু থাকে না।  নরম্যালি আমি বাইরে বেরোলে একটা টিশার্ট আর ট্র্যাকস্যুট পরে নি একটা। হাফ প্যান্ট পরে বাইরে বেরোনোতে আমার আবার একটু ইয়ে আছে। আপত্তি আছে। তবে সেদিন আর বাড়ি ফেরার পর বেরোনো ছিল না। খাবার নিয়েই ঢুকেছিলাম একদিন। ঘন্টা দু’য়েক পর হঠাৎ খেয়াল হল আজ গেট টায় তালা দেওয়া হয় নি। সাধারনত খাবার নিয়ে ঢুকলে ঢোকার পরেই আমি চাবি দিয়ে দিই। আজ দেওয়া হয় নি কারন ওই কাকভেজা অবস্থায় খাবার নিয়ে ঢোকার পর একদম মনে নেই।

দরজা টা খুলে গেট টা চাবি দেওয়ার জন্য টানতে যাবো এমন সময় আর এক বিপত্তি। দেখলাম সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসছে সেই সন্ধ্যেবেলার মেয়েটি। ফোনে কিছু একটা করছে সে। আমার পরনে তখন একটা বারমুডা ছাড়া আর কিচ্ছু নেই। সাথে সাথে খুব স্পীডে দরজাটা বন্ধ করতে গেলাম। খেয়াল করিনি আমার হাতের একটা আঙুল অবাধ্য ছেলের মত রয়ে গিয়েছিল দরজার ফাঁকে। কাজেই যা হওয়ার সেটাই ঘটল। প্রচন্ড জোরে চিৎকার করে উঠলাম যন্ত্রনায়। দরজাটা হাফ বন্ধ করেই ওখানে বসে পড়লাম নীচে। আজ কী হচ্ছে কি আমার সাথে!

 

(চলবে)

জানি দেখা হবে – প্রথম পর্ব

Arnab Mondal


হিজিবিজি লেখা আর বিরিয়ানি নিয়ে Phd করছি আর আকাশবাণী কলকাতায় নিজের কন্ঠস্বর ভাড়া দিয়ে সংসার চালাচ্ছি।


Post navigation


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কপি করবেন না দাদা/দিদি