বোধন – পর্ব  ৫ঃ https://secularweirdo.com/2018/01/14/বোধন-পর্ব-৫


অষ্টমী, সকাল

অয়ন

অয়ন কে নিয়ে এর আগে কোনো পর্ব হয় নি আলাদা করে। তাহলে কী ও গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র নয়? এই কথাটা মাঝে মাঝেই মনে হয় অয়ন এর। ও যদি না থাকত তাহলে জয় বা মৈনাক কিংবা রাজর্ষি কি ওকে মিস করতো একটুও। সাধারনত অয়ন এত ভাবে না। কিন্তু আজ রঞ্জনার বাড়ি থেকে ফেরার পর থেকেই যেন বার বার এই প্রশ্ন টা বেশি করে মনে হচ্ছে। এর মাঝে একবার গিয়ে জয় কে ও কাঁকড়া বিছের শিসি টা দিয়ে এসেছে। তারপর ফিরে বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবছিল কী লাভ এভাবে? লোকজন যদি ও থাকা বা না থাকার পার্থক্য টা বুঝতেই না পারে! তাহলে শুধু শুধু কষ্ট করে থেকে কী হবে?

আর একটা ব্যাপারও বার বার মনে পড়ছিল খুব। রঞ্জনা আর রাজর্ষি দু’জনেই দু’জন কে পছন্দ করে। তার পরেও কেন ও মাঝে ঢুকতে গেল? ও যে রঞ্জনা কে খুব অপছন্দ করে তা নয়। ওর মনে হয় ওকে রঞ্জনার চেয়ে ভালো বোধ হয় বোঝে না সেভাবে কেউ। সব সময় খিস্তি করে, দাঁত কেলিয়ে কথা বললেও ওরও ইচ্ছে হয় কেউ ওকে বুঝুক। কিন্তু আর একজনের প্রেমের মধ্যে হাড্ডি হওয়ার ইচ্ছে একেবারেই নেই অয়ন এর। তাই ঠিক করেছে আর ও টেক্সট করবেনা রঞ্জনা কে। যেটা হয়ে গেছে সেটা যাক। এর পর থেকে আর ভুল করবেনা ও। বরং ঠিক করার চেষ্টা করবে নিজের ভুল গুলো।

একটা আওয়াজ হতেই ও বুঝল হোয়াটসঅ্যাপ এ মেসেজ ঢুকেছে। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখল রঞ্জনা। লিখেছে – রাজর্ষি কেমন আছে এখন?

ও রিপ্লাই করল, – আছে মোটামুটি! খুব ভালো না।

সাথে সাথে রিপ্লাই এলো, “দেখতে যাওয়া যাবে একবার?”

এই রে! অয়ন এবার একটু দোটানায় পড়ল। এমনিতেই যা জায়গা রামনগর, একটা মেয়ে রাজর্ষিকে দেখতে গেলে হয়তো উল্টোপাল্টা কিছু কথা উঠতে পারে। রঞ্জনা ওসব কেয়ার করে না জানে ও। কিন্তু রাজর্ষির বাড়িতে চাপ হতে পারে।

ও রিপ্লাই করল – I don’t think that’s a good idea.

– Nobody asked your opinion. কোথায় ভর্তি আছে?

এইবার মাথাটা গরম হয়ে গেল অয়ন এর। এই মেয়েটা মাঝে মাঝে এমন সব কথা বলে মাথা গরম হয়ে যায়। ও যেটা বলছে সেটা ওদের ভালোর জন্যেই করছে। অবশ্য ও কি করল না করল তাতে কারুর কিছু যায় আসে না ও সেটা ভালো করেই জানে। তাই আজ ও এমন কিছু করবে যেটার জন্য ওকে সবাই মনে রাখবে। বাবা বাথরুমে গেছে স্নান করতে। থানায় যেতে এখনো ঘন্টা খানেক তো লাগবেই।

আস্তে আস্তে বিছানা থেকে উঠে বাবার পকেট থেকে রিভলবার টা নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল ও। প্রথমে ও গেল মৈনাক এর বাড়ি। তারপর ওকে সাথে নিয়ে এগোলো জয় যেখানে শানুর জন্য অপেক্ষা করছে সেখানে।

অষ্টমী, দুপুর

তমালিকা 

আজ আকাশটা একটু একটু মেঘলা। বৃষ্টি হবে নাকি কে জানে? দুর্গা পূজোর সময় প্রত্যেকবার যেন বৃষ্টি না হলে হয় না! আজকের দিন টা কেমন যেন মন কেমন এর দিন বলে হচ্ছে সকাল থেকে। মৈনাক এর সাথে কথা টা আস্তে আস্তে কেমন যেন কমে যাচ্ছে!

তমালিকার মাঝে মাঝেই অনিন্দিতা কে দেখলে খুব হিংসে হয়। শুভদ্বীপ এর মত একজনকে পেয়েছে ও বয়ফ্রেন্ড হিসেবে। তার ওপর রয়েছে জয়। জয় অনিন্দিতা কে কতটা ভালোবাসে সেটা সবাই জানে? সবাই বুঝতে পারে। কিন্তু অনিন্দিতা কি বুঝেও বোঝে না?

তমালিকারও ইচ্ছে হয় ওর একটা জয় হোক। যে ওকে জয় এর মত এত ভালোবাসবে। মৈনাক ওকে ভালোবাসে ও জানে, কিন্তু ঠিক ঐ ব্যাপার টা ও চায় না। ও যায় অনিন্দিতা কে হারাতে! অনিন্দিতা যেমন জয় কে চাইলেও ভালোবাসতে পারবে না। কারন ও শুভদ্বীপ কে কখনও ছাড়তে পারবে না! কিন্তু ও চায় এমন একজন কে যে ওকে জয় এর মত ভালোবাসবে এবং যাকে ও খুব ভালোবাসবে!

হঠাৎ মনের কাছের একটা নাম থেকে ফোন এল তমালিকার। মন কেমন টা যেন হঠাৎ অনেকটা কম হয়ে গেল! তাড়াতাড়ি করে ফোন টা তুলল ও।

– কীরে? আজ যে ব্যস্ত থাকবি বললি?

– হুম। বলেছিলাম… শোন বলছি যে জয় দের কী হয়েছে জানিস কিছু?

– মানে? কেন?

– নাহ। মানে… কিছু একটা অঘটন ঘটেছে বোধহয়!

– কী বলছিস কী? তুই কী করে জানলি?

– একটা আভাস পেলাম। একটু আগেই। পরে সব বলবো! তুই একটু জানতে পারবি খোঁজ নিয়ে?

– আমি… কাকে… অনিন্দিতা কে জিজ্ঞেস করি দাঁড়া।

– না না! ওকে করে লাভ নেই। তুই মৈনাক কে কর।

– মৈনাক কে? আমি তো নিজে থেকে ওকে আর ফোন করি না!

– আমার জন্য করছিস ভেবে কর একটু। সিরিয়াস কিছু হয়েছে মনে হচ্ছে ওদের!

– আচ্ছা… ঠিক আছে। একটু অপেক্ষা কর জানাচ্ছি আমি তোকে।

ফোন টা রেখে কয়েক মুহুর্ত একটু ভাবলো তমালিকা। ফোনে ব্যালান্স খুব কম! মাঝে যদি কেটে যায়? যা হবে দেখা যাবে ভেবে তারপরেই ও ফোন করল মৈনাক এর নাম্বার এ। প্রথম বার রিং হয়ে হয়ে কেটে গেল। কেউ ধরল না। দ্বিতীয় বারও তাই হল। এবার একটু চিন্তা হতে লাগল তমালিকার! মৈনাক ঠিক আছে তো! সম্পর্ক নেই কিন্তু এখনো ওর চিন্তা হয় মৈনাক এর জন্য! তৃতীয়বার ফোন করার পর ফোন ধরল মৈনাক।

খুব হাঁফাতে হাঁফাতে ফোনের ও প্রান্ত থেকে বলল, “শোন না… পরে কথা বলি? This is not a good time!”

– কী হয়েছে তোর? তুই ঠিক আছিস?

– আমি ঠিক আছি… কিন্তু… নার্সিং হোমে এখন!

– কেন? কি হয়েছে?

– জয়… জয় এর…

– কী হয়েছে জয় এর!

– আরে একটা গুলি…

ফোন টা কেটে গেল ওর। ব্যালান্স শেষ! এবার? জয় এর কী হল? গুলি লেগেছে নাকি? তার পরেই আগের চেনা নাম্বারটা থেকে ফোন ঢুকল ওর ফোনে।

– বল?

– কিছু খবর পেলি?

– পেলাম বলতে জয় এর কিছু একটা হয়েছে! গুলি লেগেছে বোধ হয়!

– সে কি? এখন কেমন আছে? কিভাবে হয়েছে এসব?

– কিচ্ছু জানিনা। ব্যালান্স কম ছিল। ফোন টা কেটে গেল!

কথাটা বলার পরেই একটা বিপ আওয়াজ এর পর তমালিকা দেখল মৈনাক ফোন করছে। ওয়েটিং এ দেখাচ্ছে! তাড়াতাড়ি করে ফোনটা ধরল ও!

– বল? কেটে গেল ফোন টা! কী হয়েছে জয় এর?

– গুলি লেগেছে ওর গায়ে! এখন নার্সিং হোম এ রয়েছি।

– কী করে? এখন কেমন আছে?

– কী করে অত কথা এখন বলার সময় নেই! পরে বলব যদি ফোন ধরিস।

– ঠিক আছে। Take care.

– হুম.

ফোন টা কেটে শুভদ্বীপ এর ফোন টা Unhold করল ও। জিজ্ঞেস করল, “আছিস লাইনে?”

“হুম আছি”, বলল শুভদ্বীপ, “বয়ফ্রেন্ড এর ফোন?”

– এক্স বয়ফ্রেন্ড।

– কী বলল মৈনাক?

– জয় এর গায়ে গুলি লেগেছে Somehow!

– সেটা তো শুনলাম। কিন্তু এখন কেমন আছে?

– ভালো না মনে হয়!

– মনে হয় কেন? ভালো করে জিজ্ঞেস করিস নি? নাকি প্রেম করছিলি?

– এরকম ভাবে বলছিস কেন? ওরা এখন নার্সিং হোম এ রয়েছে। ভালো করে কথা বলতে পারবে না।

– ও তাহলে কী পরে ফোন করবে?

– আশ্চর্য! আমাদের বন্ধুদের গ্রুপ এ একজনের এরকম অবস্থা আর তার মাঝখানে তুই এরকম বাজে ব্যবহার করছিস কেন?

– ছাড়! পরে কথা হবে!

– আরে!! একি??? তুই তো আমায় বললি মৈনাক কে ফোন করতে।

– আমি বলেছিলাম খোঁজ নেওয়ার জন্য! প্রেমালাপ করতে বলিনি আমি!

তমালিকার মাথাটা এবার খুব গরম হচ্ছে। ও বলল, “তুই নিজে যেন খুব ভালো কাজ করছিস? আজ তো অনিন্দিতা কে নিয়ে বেরিয়েছিস ঠাকুর দেখতে!”

– সেই! আমি তাই ভাবছিলাম কবে কথা শোনাবি এসব নিয়ে? তোর আর আমার মধ্যে যা হয়েছে তা কিন্তু সব জানিয়েই হয়েছে। তুই জানতিস আমি অনিন্দিতার সাথে কমিটেড। তার পরেও কিন্তু তুই…

ফোন টা কেটে দিল তমালিকা। ভালো লাগছে না ওর আর! হ্যাঁ ও জানতো শুভদ্বীপ অনিন্দিতার সাথে সম্পর্কে রয়েছে! তারপরেও ও ওর সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছে। মাঝে মাঝে নিজেকে খুব দোষী মনে হয় ওর। আর সেই কারনেই হয়তো অনিন্দিতার কোনো অনুরোধ ও ফেলতে পারে না এখন!

(চলবে)

বোধন – পর্ব ৬

Arnab Mondal


হিজিবিজি লেখা আর বিরিয়ানি নিয়ে Phd করছি আর আকাশবাণী কলকাতায় নিজের কন্ঠস্বর ভাড়া দিয়ে সংসার চালাচ্ছি।


Post navigation


One thought on “বোধন – পর্ব ৬

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কপি করবেন না দাদা/দিদি