বোধন – পর্ব ৪ঃ https://secularweirdo.com/2018/01/14/বোধন-পর্ব-৪

অষ্টমী, সকাল
অনিন্দিতা

আজ সকাল থেকেই সবার খুব ব্যস্ততা। আজ নাকি শানু কে শায়েস্তা করা হবে। সবাই মিলে কাল প্ল্যান হয়েছে। কিন্তু ছাতার মাথা প্ল্যান টা যে কী সেটাই অনিন্দিতা জানে না! অনেকবার জিজ্ঞেস করেছে ও জয় কে, মৈনাক কে এমনকি অয়নকেও, কেউ ওকে বলে নি। জয় এর কড়া নির্দেশ অমান্য করবে না কেউ! এরা জয় কে বড্ড ভালোবাসে। ও ও বাসে… নাকি বাসত। এক সময় তো ওকে ছাড়া এক মুহুর্ত চলত না। সবাই ভাবত ওরা বোধহয় প্রেম করে, কিন্তু প্রেম-ভালোবাসা টা বোধ হয় ওইভাবে হয় না। তবে মাঝে মাঝে খুব মিস করে ও জয় কে। শুভদ্বীপ টাও শুরুর দিকে এত সময় দিত, এখন আর দেয় না। সব মিলিয়ে একা লাগে মাঝে মাঝে খুব ওর। তবে আজ ওরও খুব ব্যস্ততা।

আজ সকাল এ শুভদ্বীপ ফোন করেছিল। বলল, “সরি! কাল খারাপ ব্যবহার করার জন্য।”

সারাদিন কেটে যাওয়ার পর এখন বলে কিনা সরি! “সারাদিন একবারও মনে পড়েনি ফোন করার কথা?” জিজ্ঞেস করেছিল অনিন্দিতা।

– আসলে তার আগের দিন রাতে একটা Designing এর কাজ এসেছিল। ওটা করতে করতেই খুব টায়ার্ড হয়ে গিয়েছিলাম। তাই কাজ শেষ না করেই ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম পরের দিন উঠেই কাজ টা করব। সেটা নিয়ে টেনশন ছিল। তাই তুই তাড়াতাড়ি ফোন করাতে হঠাৎ খুব গরম হয়ে যায় মাথাটা।

– এটা তো তুই ষষ্ঠীর কথা শোনালি আমায়। কাল সারাদিন ফোন করিসনি কেন?

– এই একই কারনে। কাজ টা গতকাল রাতে শেষ হয়েছে। তারপর আর ফোন বা টেক্সট করা হয় নি, তার জন্যে I’m really sorry!

ভেবেছিল কথা বলবে না ও শুভদীপের সাথে কিন্তু এভাবে অকপটে সব দোষ স্বীকার করলে কী আর রেগে থাকা যায় ভালোবাসার মানুষটার ওপর? “ঠিক আছে। বাদ দে” বলেছিল ও।

ও প্রান্ত থেকে শুভদ্বীপ সঙ্গে সঙ্গে বলেছিল, “আচ্ছা শোন না, আজ তো অষ্টমী। আজ একটু বেরোই চল সকালে!”

এই রে সকালে! সকালে তো আবার জয় দের এনকাউন্টার আছে! অনিন্দিতা বলল, “সকালে কেন? সন্ধ্যে তে বেরোই না প্লিজ!”

– নারে। সন্ধ্যে তে হবে না। আরও কয়েকটা কাজ এসেছে হাতে। ওগুলো করতে হবে সন্ধ্যে বেলা বসে।

এর পর আর কিছু বলার থাকে না! কাজ ফেলে রেখে ওর সাথে শুভ ঘুরতে যাক এটা ও কখনও বলবে না। আর ও জানে শুভ কিছু Designing এর কাজ করে freelance হিসেবে। কিন্তু আজ সকালে যদি ও শুভর সাথে বেরোয় তাহলে তো জয় দের সাথে দেখা হবে না। শানুর ব্যাপার টায় যে কী হবে কে জানে!

“কী রে? বল কিছু? বেরোবি আজ সকালে?” ফোনের ওপ্রান্ত থেকে অধৈর্য গলা শোনা গেল!

“রাতে একেবারেই হবে না? একটুক্ষন এর জন্য!” একবার শেষ চেষ্টা করল অনিন্দিতা।

– নারে সত্যি হবে না আমার। তোর কি তাহলে হবেনা সকালে?

– আমার? নাহ। হবে। বেরোবো আজ তোর সাথে! ক’টায় বেরোবি বল?

– আমি ২ ঘন্টা পর আসছি তোর বাড়ির সামনে।

ফোন কেটে দিয়েই জয় কে ফোন করেছিল ও। জানিয়ে দিয়েছে যে আজ যেতে পারবে না ও সকালে। জয় টা এত শয়তান গলা শুনে মনে হল যেন খুশি হয়েছে।

যাই হোক সেই কারনে এখন অনিন্দিতারও ব্যস্ততা! এতক্ষনে বোধ হয় জয়দের কাজ শেষ! নাহ! এখন একদম ওসব ভাববে না ও। বহুদিন পর শুভর সাথে বেরোচ্ছে আজ একদম অন্য কথা নয়।

আজ একটা শাড়ি পরেছে ও। শুভ কে যতদূর চেনে, মনে হয় আজ পাঞ্জাবী পরবে। অষ্টমী বলে কথা। সেই কারনেই আজ শাড়ি। এত হল্লা করে চারপাশে পূজো হলেও ঠিক পূজো পূজো গন্ধ টাই যেন পাচ্ছে না এখনও। ফোনটা টেবিল থেকে নিয়ে অনিন্দিতা দেখল 4 Missed Calls. জয় ফোন করেছে চারবার! কিন্তু… কেন? ও তো জয় কে জানিয়ে দিয়ে তারপরেই স্নানে গিয়েছে। ঘুরে ফোন করল ও জয় এর নাম্বারে।

“The Subscriber you are calling is currently switched off”

এই সময় বন্ধ কেন জয় এর ফোন? কিছু ঘটল নাকি আবার?

অষ্টমী, সকাল
জয়

আজ খুব উত্তেজিত জয়। শানুর সাথে একটা এস্‌পার ওস্‌পার না করে ছাড়বে না ও। কি ভেবেছে কি ছেলে টা? পাড়ার মধ্যে যাকে তাকে মারধোর করবে নাকি? অয়ন কে যে কাজ টা দিয়েছিল সেই কাজটা খুব ভালো ভাবেই করেছে ও! ও জানতো অয়ন পারবে। তবে সবার সামনে রঞ্জনার সাথে কথা হয় কিনা জিজ্ঞেস করায় খুব অপ্রস্তুতে পড়ে গিয়েছিল অয়ন।

পরে অয়ন একটু রাগতস্বরেই বলেছে ওকে, “তুই সবার সামনে ওরকম বললি কেন?”

– কি বললাম? আমি তো শুধু জানতে চাইলাম তোর এখনও মানে ওসব…

– দেখ বাল তোকে আমি সব কথা বলি কারন তুই বিশ্বাস ভাঙিস নি কখনও আমার! কিন্তু এভাবে সবার সামনে…

– আরে কোথায় সবার সামনে? অনিন্দিতা ছিল আর মৈনাক ছিল। ওরা তো আমাদের কাছেরই কেউ একজন! আর আমি শুধু জিজ্ঞেস করেছিলাম কথা হয় কিনা।

আর কিছু বলে নি অয়ন। তবে আজ সকালে ওকে খুব depressed লেগেছে। কে জানে কি হয়েছে! একবার জিজ্ঞেস করল জয়, “কিছু হয়েছে?”

অয়ন বলল, “নাহ! কিছু না।”

আর ঘাঁটায় নি ও। এমনিতেই আজ ওর অন্য চাপ রয়েছে মাথায়। আর এই মুহুর্তে তো আরও চাপ। প্রথমত ও দাঁড়িয়ে রয়েছে শানুর পাড়া থেকে বেরোনোর মোড় টার কাছে। ও যেখানেই যাক এই মোড় টা পেরোতেই হবে! আর দ্বিতীয়ত ওর একটু আগে করতে যাওয়া suicide mission টা।
একটু খুলেই বলা যাক। একটু আগে অনিন্দিতার ফোন আসে ওর ফোনে। একটু আগে মানে ঘন্টা খানেক আগে। অনিন্দিতা জানায় যে ও আসতে পারবে না আজ।

কথাটা শুনে একটু খুশি হয়েছিল জয়। ও বলেছিল, “ওহ! আচ্ছা ঠিক আছে রে!”

– কেন জিজ্ঞেস করবি না?

– ওহ হ্যাঁ। এই জিজ্ঞেস করতে যাচ্ছিলাম। কেন আসবি না?

– আজ বহুদিন পর শুভদীপ বেরোচ্ছে আমাকে নিয়ে।

এই কথাটাই কেমন একটা মনের ভেতরের গুমরে থাকা দুঃখ টা তে মোচড় দিল মনে হল। ও বলল, “ওহ আচ্ছা। বাহ! ভালো ভালো।” তারপর আর কথা বাড়াতে না দিয়ে বলেছিল, “ঠিক আছে। বেরোতে হবে আমায়। মজা কর আজ।”

কেন হয় এরকম? না পাওয়ার অর্থ টা কেই কি ভালোবাসা বলে? মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছে করে ওর অনিন্দিতা কে বলে দিতে। কিন্তু ভয় হয়। ভাবে সব যদি শেষ হয়ে যায়! আজ একটু বেশীই কষ্ট হচ্ছে ওর। সবার মাঝে থেকেও একটা অদ্ভুত একাকীত্ব গ্রাস করে ওকে।

হঠাৎ ওর মনে হল যা হয় হোক। ও আজ অনিন্দিতা কে জানিয়ে দেবে ওর মনে কথা। তারপর অনিন্দিতা চাইলে সম্পর্ক রাখবে। নাহলে রাখবে না! কথাটা মনে হতেই ফোন করল ও অনিন্দিতা কে। মনের মধ্যে অদ্ভুত এক উত্তেজনায় ফুটছে ও তখন। কিন্তু রিং হয়ে হয়ে কেটে গেল ফোন টা! ধরল না। আবার রিডায়াল করল জয়। এবারও কেউ ধরল না। তিন নম্বর বার যখন ফোন এ রিং শুরু হয়েছে তক্ষুনি “সরি ভাই, লেট হয়ে গেল” শুনেই চমকে উঠল ও। কেটে দিল ফোন টা।

মৈনাক আর অয়ন এসেছে! “কীরে তোরা? তোদের তো আসার কথা ছিল না!” জিজ্ঞেস করল জয়।

“রাজর্ষিদা তোর একার বন্ধু নাকি ভাই? আমাদের কেউ না! আমরা আসব না ভাবলি কী করে?” উত্তর দিল মৈনাক!

– তা না। আসলে আমি তো বললাম আর কাউকে লাগবে না! তাই…

অয়ন এবার দাঁত খিঁচিয়ে বলল, “এই বাল, চুপ কর তো! তুই ক্যালান খাবি আজ। আর আমরা দেখবো সেই জন্যে এসেছি। হয়েছে?”

সে আর যেই আসুক। আজ জয় এর কাউকে লাগবেনা সেটা ও জানে। পুরো প্ল্যান টা ও কষে নিয়েছে। রঞ্জনার কাছ থেকে অয়ন এনে দিয়েছে একটা কাঁকড়া বিছে। একটা কৌটোর মধ্যে! প্রথমে নাকি একটু কিন্তু করছিল। তারপর কী কারনে দরকার শুনেই দিয়ে দিয়েছে ও।

কথা বলার সময় এই কৌটোর ঢাকনা খুলে শানুর গায়ের ভেতর ছেড়ে দেবে ও এটা। বাকি কাজ রঞ্জনার বিছেই করবে। এসব ভাবতে ভাবতেই গাড়ির আওয়াজ পেয়ে ওরা দেখল শানু আসছে বাজাজ ডিসকভার নিয়ে। ওদের দেখে একটা বাঁকা হাসি হেসে গাড়ি থামাল ও।

তারপর সানগ্লাস টা খুলে বলল, “কীরে হিঁচড়ের দল? এখানে কী করছিস?”

জয় এর ব্রম্ভতালুটা অত্যধিক রকমের গরম হচ্ছে ও বুঝতে পারছে। কিন্তু ও জানে মাথা গরম করলে চলবে না এসব জায়গায়।

জয় বলল, “তুই রাজর্ষিকে মেরেছিস কেন?”

বাইক থেকে নেমে ওদের দিকে এগিয়ে এসে শানু বলল, “আমার ইচ্ছে হল মালটাকে ক্যালাতে! তাই কেলিয়েই দিলাম। এখন আমার যা ইচ্ছে হয় আমি সেটাই করি।”

এরপর যেটা হল সেটার জন্য জয় একদমই তৈরী ছিল না। অয়ন এবার “শালা শুয়োরের বাচ্চা!” বলে হঠাৎ ঝাঁপিয়ে পড়ল শানুর ওপর। শানু প্রথমটা একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলেও পরক্ষনেই সামলে নেয় নিজেকে। তারপর জয় আর মৈনাক ছাড়াতে চেষ্টা করে অয়ন কে। কাঁকড়া বিছের প্ল্যান তখন ভন্ডুল হয়ে গিয়েছে।

হঠাৎই গায়ে একটা ঠান্ডা নল জাতীয় কিছু অনুভব করে ছেলেটি। রিভলবার নাকি? আর কিছু ভাবার আগেই একটা আকাশ কাঁপানো আওয়াজ! আর তারপরেই ওদের সবার গায়ে ছিটকে পড়ল রক্ত। মাটিতে লুটিয়ে পড়ল ও। সারা শরীরে অসম্ভব যন্ত্রনা হচ্ছে। ওকে ধরতে গিয়ে বাকিরাও পড়ে গেল মাটিতে। সবার হাতে রক্ত। আর চোখে একটা হাহাকার এর শূন্যতা!

(চলবে)

বোধন – পর্ব ৫

Arnab Mondal


হিজিবিজি লেখা আর বিরিয়ানি নিয়ে Phd করছি আর আকাশবাণী কলকাতায় নিজের কন্ঠস্বর ভাড়া দিয়ে সংসার চালাচ্ছি।


Post navigation


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কপি করবেন না দাদা/দিদি