– আসবো?
– হ্যাঁ আসুন অরিন্দম বাবু। অনেকদিন পর।
– হ্যাঁ আসলে এই পুজোর সময় আপনাকে ডিস্টার্ব করবো না ভাবছিলাম। কিন্তু একটা সমস্যায় পড়েছি তাই ভাবলাম আপনার কাছে আসি।
– কি ব্যাপার?
– আমার মেয়ে কলকাতায় থাকে বুঝলেন। ওখানে থেকেই পড়াশুনো করে। বহুদিন পর বাড়ি এসেছে।
– বাহ! এতো ভালো ব্যাপার। এতে সমস্যার কী হল?
– নাহ মানে… বাড়ি এসে থেকে কেমন যেন অদ্ভুত একটা ব্যবহার করেছে।
– কীরকম শুনি।
– মানে অদ্ভুত সব অঙ্গভঙ্গী করছে। বসে থাকতে থাকতে হঠাৎ হঠাৎ মাথাটা ওপর দিকে তুলে মুখ বাঁকাচ্ছে। ডান দিক বাঁদিক ঘাড় বাঁকিয়ে কি করছে বুঝতে পারছি না।
– সে কী? শরীর বেঁকে যাচ্ছে? ধনুষ্টংকার নাকি?
– না না। তাহলে তো যন্ত্রনার চিহ্ন থাকত চোখে মুখে। সেসব কিছু নেই। ওর পরেই সব নরম্যাল হয়ে যাচ্ছে। দিব্যি কথা বলছে হাসছে। কিন্তু মাঝে মাঝেই ওইরকম।
– হুম। না দেখলে বুঝতে পারবো না তো ঠিক সমস্যা টা।
– জানি। সেই জন্যেই নিয়ে এসেছি মেয়ে কে আমি।
– তাই? কোথায়?
– আপনার বাড়ির বাইরের ইজিচেয়ারে বসে আছে। আসুন…
– হ্যাঁ চলুন। বাইরে কেন বসিয়ে রেখেছেন? ভেতরে ডাকবেন তো!
– নাহ মানে… আপনি ব্যস্ত থাকবেন কিনা… সেটা আসলে…
– ঠিক আছে চলুন দেখি। কোথায়?
– ওই যে… বসে আছে। ওই দেখুন আবার এক জিনিস… ঠোঁট টা কেমন করছে দেখুন। ওরকম কেন করছে মশাই?
– হাতে ওটা কী?
– কোন টা?
– ওই যে যেটা ধরে আছে? আয়না?
– নাহ নাহ। ওটা তো স্মার্ট ফোন… কদিন আগেই কিনেছে বলল।
– বুঝে গেছি।
– কি বুঝে গিয়েছেন?
– অরিন্দম বাবু… আপনি একটু দাঁড়ান। আমি আসছি এক্ষুনি।
– কোথায় যাচ্ছেন?
– একটা জিনিস আনতে। এখানেই থাকুন যাবেন না।
– নাহ নাহ যাচ্ছি না।
[একটু পর]
– এই নিন। এগুলো নিয়ে যান?
– কি ওষুধ এগুলো? আমার মেয়ের কি তাহলে সত্যি কিছু রোগ হল।
– রোগ না। এটা কে Hyper-Narcissism বলে।
– কি পার??
– আরে মশাই… Narcissism হল নিজেকে ভালোবাসা। আমরা সবাই অল্প বিস্তর নিজেকে ভালোবাসি। আপনার মেয়ে তার মধ্যে একটু বেশীই ভালোবাসে নিজেকে। শহরে থাকার ফলাফল এটা। এটা নিয়ে পড়েছি আমি। এটা কে Selfie বলে। মানে ঐ ফোন দিয়ে নিজের ফটো তোলার এই ব্যাপার টা কে।
– সত্যি আমরা কত কম জানি মশাই!
– লালমোহন বাবুর মত কথা বললেন পুরো।
– কার মত?
– Never Mind. এই ট্যাবলেট টা আপনার মেয়ে কে তিনদিন খেতে বলবেন। রাতে ডিনার এর পর। তারপর কি হয় জানাবেন আমায়।
– আচ্ছা। আর এটার নাম কি? ওই কি একটা যেন বলে বললেন? Selfie… এটা কি Anti Selfie Tablet?
– নাহ। এটার নাম এখনো ভাবিনি। তবে That’s an interesting name. দেখি… কলকাতায় শুনছিলাম খুব Demand এটার। দেখা যাক। যদি পাঠাই নাম ভাববো।
– আচ্ছা।
– ঠিক আছে। আজ আপনি আসুন। আমার একটু কাজও রয়েছে। জানাবেন কী হল?

[পরের দিন]
– ও প্রোফেসর বোস? আছেন নাকি?
– আরে! এত সকাল সকাল কী ব্যাপার?
– ধুর! আর ব্যাপার… আপনি কি ট্যাবলেট দিলেন মশাই?
– মানে? কেন? কী হয়েছে?
– আরে কাল রাতে ট্যাবলেট টা দিলাম মেয়ে কে। সে বলল কীসের ট্যাবলেট? বললাম কৃমির… খেয়ে নে।
– তারপর?
– খাওয়ার আগে অনেকক্ষন ট্যাবলেট টা কে নিয়ে মুখ চোখ বাঁকিয়ে Selfie তুললো অনেকগুলো। তারপর খেলো। কিন্তু একটু পরেই বলল আমার বমি পাচ্ছে।
– সে কী?
– হ্যাঁ। তারপর বেসিনের কাছে গিয়ে রাত্রে যা খেয়েছিল সব তো বমি করে দিলো।
– এই রে!!
– এটা সর্বনাশ এর কথা নয়।
– তাহলে? আরও বাকি?
– হ্যাঁ। যে সময় টা বমি করছিল সেই সময় টা ওর মা কে চেঁচিয়ে বলছিল ফোন টা দিয়ে যেতে। সেলফি তুলবে বলে। ওর মা দেয় নি বলে সে কী রাগ মশাই মেয়ের! জানিনা কী হবে মশাই। আজ সকাল থেকে দেখলাম আমার ছেলেও দিদির ফোন নিয়ে একই জিনিস শুরু করেছে। আচ্ছা এটা কি ছোঁয়াচে?
– হুম। ভীষন। I’m sorry অরিন্দম বাবু।
– কেন? কী হল?
– এ রোগের আর কোনো সুরাহা আমার কাছে নেই। ওর mind এ এতটাই narcissism ভর্তি হয়ে গিয়েছে যে ওর শরীর ওই ট্যাবলেট টা রিজেক্ট করছে। কিছু করার নেই আমার আর।
– তাহলে? আমি কী করব?
– কিছু করার নেই। ইষ্টনাম জপ করুন। এই ভূত যাবার নয়।

আবার প্রোফেসর বোস

Arnab Mondal


হিজিবিজি লেখা আর বিরিয়ানি নিয়ে Phd করছি আর আকাশবাণী কলকাতায় নিজের কন্ঠস্বর ভাড়া দিয়ে সংসার চালাচ্ছি।


Post navigation


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কপি করবেন না দাদা/দিদি