তখন সম্ভবত ২০০১।  আশুতোষ কলেজে বাংলা অনার্স পড়ি। আমরা যখন ফার্স্ট ইয়ারে তখন একটি ছেলে ইঞ্জিনিয়ারিং ছেড়ে পড়তে আসে বাংলা অনার্স। স্বাভাবিক ভাবে অনেকেরই ব্যাপারটা চোখে লাগে। ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে বাংলা Transformation টা কিছু টা ওই রত্নাকর দস্যু থেকে বাল্মীকী বললেও কম বলা হয়। যাই হোক, ছেলেটি তবে বেশ মজার। নাম অবাস্তব রায়। হ্যাঁ নামটা শুনতেও একটু অবাস্তব লাগলেও এটাই সত্যি। ও বলত ওর বাবা মা ওকে পছন্দ করেন না খুব একটা, তাই এরকম নাম রেখেছেন।

আমাদের কলেজে তখন খুব লেট অ্যাডমিশন হত। মানে Session শুরু হয়ে যাওয়ার মাস দু’য়েক পরে অবধি অনেকেই ভর্তি হত। এরকম ভাবেই আমাদের ডিপার্টমেন্ট পেল শ্রীপর্ণা চ্যাটার্জী কে। আমাদের ডিপার্টমেন্ট পেল বললাম কারন, ও যেদিন প্রথম ক্লাসে আসে সেদিন ক্লাসের গে ছেলেটা বাদ দিয়ে বাকি সবাই এমন কি লেনিন স্যার অবধি ওপরওয়ালার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলেছে, “কি বানিয়েছো গুরু! Well done.”

আমি নিজে মেয়েদের বর্ণনা দিতে পারি না। মানে কোনখান থেকে শুরু করে কোন পথে যাবো বুঝতে অসুবিধে হয়। তবে এক কথায় মেয়েটি অসম্ভব সুন্দরী। টাইটানিকে কেট উইনস্লেট এর পর এত সুন্দরী কাউকে দেখলাম বলে মনে হল। উপমাটা বাড়াবাড়ি মনে হলেও এটাই সত্যি।

আমরা সবাই মেয়েটার প্রতি হ্যাল খেলাম বলাই বাহুল্য। তবে সব থেকে খারাপ অবস্থা হল অবাস্তবের। সব সময় হাঁ করে শ্রীপর্ণার দিকে তাকিয়ে থাকত। একবার তো ক্লাসে একটা মজার ব্যাপার হল। স্বর্নালী ম্যাডাম ক্লাস নিচ্ছিলেন। হঠাৎ কী মনে হতে ডেকে বসলেন, “অবাস্তব?”

অবাস্তব প্রথম টা খেয়াল করেনি। ও এক মনে শ্রীপর্ণা কে দেখছিল। আমি পাশ থেকে খোঁচা দিতেই থতমত খেয়ে উঠে দাঁড়ালো।

–      হ্যাঁ ম্যাম বলুন।

–      কী পড়াচ্ছিলাম আমি?

–      ওই তো ম্যাম যা পড়ান। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস।

–      আজ কি পড়াচ্ছিলাম?

–      বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসই তো পড়াচ্ছিলেন।

–      কোন টপিক?

–      অত কি আর মনে থাকে ম্যাডাম। সবই তো ইতিহাস।

–      তা তুমি কী করছিলে?

–      আমি?

–      হ্যাঁ তুমি।

–      আমি তো ম্যাম আপনার পড়ানো শুনতে শুনতে প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখছিলাম।

–      কিন্তু তোমার চোখ তো জানলার বাইরে ছিল না বাবা। অন্য জায়গায় ছিল।

–      ম্যাম সবটাই তো প্রকৃতির অঙ্গ তাই না? আপনি আমি সবাইকে নিয়েই তো এই প্রকৃতি।

ম্যাম কী বলবেন বুঝতে না পেরে আবার পড়ানো শুরু করলেন। অবাস্তব বসে পড়ল। আসল ঘটনা ঘটল টিফিনের সময়। অবাস্তব হঠাৎ ঠিক করে বসল আজ ও শ্রীপর্ণা কে প্রোপোজ করবেই। আমরা বারন করলাম কয়েকজন। অনেকেরই ভয় যদি শ্রীপর্ণা হ্যাঁ বলে দেয় তাহলে তো ও আর সিঙ্গেল থাকবে না। যদিও আদৌ ও সিঙ্গেল কিনা তার কোনো সঠিক খবর কারুর কাছে নেই। তবে আমাদের মধ্যে একজন ছিল যার বারন করার কারন টা ছিল ব্যক্তিগত। তিনি আহেলী গাঙ্গুলি। অবাস্তবের মেহেবুব বললেও যাকে কম বলা হয়। মেয়েটা সব সময় চেষ্টা করে অবাস্তবকে হেল্প করার। যেচে যেচে নোটস জেরক্স করে আনে। টিফিন নিয়ে এসে ওকে ভাগ দেয়। আমাদেরকেও দেয় যদিও। কিন্তু সেটা নেহাৎ আমরা অবাস্তবের সাথে থাকি বলে। কিন্তু অবাস্তবের তাতে ভ্রুক্ষেপ নেই। সে ভালোবাসে শ্রীপর্ণা কে।

সে যাই হোক অবাস্তব গেল শ্রীপর্ণার কাছে। শ্রীপর্না তখন ক্যান্টিনে বসেছিল। আমরা গুটি সুটি মেরে একটু দূরে বসে রইলাম। যাতে সব টা কানে আসে। শুনলাম অবাস্তব বলছে, “বসব এখানে?”

শ্রীপর্ণা বলল, “ফাঁকা আছে বসবি না কেন?”

অবাস্তব বসে পড়ল। তারপর বলল, “একটা কথা বলব?”

শ্রীপর্ণা বলল, “তুই কি সব কাজ জিজ্ঞেস করে করিস আমাকে? আজ কলেজ আসার আগে জিজ্ঞেস করলি না তো?”

অবাস্তব বলল, “না মানে… আসলে… তুই কেমন ভাবে নিবি ব্যাপারটা সেই জন্যেই বলার আগে জিজ্ঞেস করলাম।”

–      কী কথা? বল।

অবাস্তব গলাটা ঝেড়ে বলল, “ইয়ে… আমি না… মানে… আমার… তোকে খুব ভালো লাগে।”

শ্রীপর্ণা স্মার্টলি উত্তর দিল, “স্বাভাবিক। আমি তো তোর পেছনে বাঁশ দিইনি। কাজেই আমাকে খারাপ লাগার কিছু নেই।”

“না মানে তুই বুঝছিস না” অবাস্তব বলল, “আমি তোকে… মানে… ভালোবাসি যাকে বলে…”

শ্রীপর্ণা এবার বলল, “কতদিন চিনিস আমাকে?”

–      চিনি মানে… এই তো… ২ সপ্তাহ।

–      এর মধ্যেই ভালোবেসে  ফেললি? তারপর কদিন পরে একটা মেয়ে কে এক মাস চিনে তখন তাকে বিয়ে করতে ইচ্ছে হবে।

–      আরে না না… মানে…

শ্রীপর্না হাত তুলে থামিয়ে বলল, “মানে আমাকে বোঝাস না। বন্ধুর মত মিশতে পারলে থাক। নাহলে ঝাঁট জ্বালাতে আসিস না। আমার একদম পোষায় না এসব প্রেম প্রেম ন্যাকামি।”

অবাস্তবের মাথা নীচু। শ্রীপর্না উঠে চলে গেল চেয়ার থেকে। আমরা সবাই চুপ। কারুর নিশ্বাস পিন ড্রপ সাইলেন্স পুরো। শুধু মনে হল একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস পড়তে শুনলাম। আহেলী কী?

দিন কয়েক পরের কথা। আর একটা ঘটনা ঘটল। তবে এটা ক্যান্টিন বা ডিপার্টমেন্ট এর মধ্যে না। লোকভর্তি করিডরের মধ্যে। তার আগে একটা কথা বলা দরকার ক্যান্টিন এর ঐ ঘটনার পরে অবাস্তবের প্রেম কিন্তু কমেনি বরং বেড়েছে। যাই হোক, এবার নেক্সট ঘটনায় আসা যাক। আমাদের থার্ড ইয়ারে একটা ছেলে ছিল। নাম গব্বর। পদবী সিং নয় বলেই জানতাম। ছেলেটা লাল পার্টি করত। তখন তো সব জায়গাতেই লাল।

ওই ছেলেটারও শ্রীপর্ণা কে বোধহয় ভালো লাগত। সেদিন আমরা কানাঘুষো শুনছিলাম কিছু একটা হতে চলেছে। কিন্তু সেটা যে এটা তা ভাবিনি। সেদিন করিডরের মাঝে হঠাৎ শ্রীপর্ণার সামনে গিয়ে হাঁটু গেড়ে গোলাপফুল এগিয়ে দিল গব্বর ছেলেটি। শ্রীপর্ণা জল ভরে নিয়ে ক্লাসে আসছিল। তার মাঝে এই বিভ্রাট। শ্রীপর্ণা একবার চারপাশে দেখল আমাদের সবাই কে। তারপর মারল এক থাপ্পড়। আমাদের সবারই বুক টা ছ্যাঁত করে উঠেছে সাথে সাথে। শ্রীপর্ণা কার সাথে লাগছে ও জানে তো? অবাস্তব এগিয়ে যেতে গেল সেদিকে। আহেলী ওর হাত চেপে ধরল। বলল, “যাস না তুই। ঝামেলায় জড়াস না বেকার।”

অবাস্তব কিছু বলল না। তবে গব্বর ছেলেটা গালে হাত বুলোতে বুলোতে আমাদের পাশ দিয়ে যেতে যেতে বলে গেল, “ও শালী কে দেখে ছাড়ব আমি। মেরে রেখে দেবো সব।”

এর কয়েকদিন পর আমি তখন মেস থেকে সবে বেরিয়েছি কলেজ যাবো বলে। হাঁটা পথ। মিনিট সাতেক লাগবে। হঠাৎ দেখি অবাস্তব পাগলের মত দৌড়ে আসছে আমার মেসের দিকে। বুঝলাম আবার কিছু ঘটিয়েছে। বললাম, “কী হল তোর? দৌড়োচ্ছিস কেন?”

অবাস্তব হাঁফাতে হাঁফাতে বলল, “মেট্রোর কাছে একটা গাড়িতে হঠাৎ করে শ্রীপর্ণা কে কারা যেন তুলে নিয়ে গেল জোর করে।”

আমার তখন ইয়েটা ইয়েতে চলে গেছে। আমি বললাম, “মানে? কি বলছিস?”

অবাস্তব বলল, “হ্যাঁ ভাই। আমি ট্যাক্সিতে করে ওদের পিছু নিয়েছিলাম। ওদের গাড়িটা একটা গলিতে ঢুকল দেখে এলাম। একটা কনস্ট্রাক্টিং এরিয়া সম্ভবত।”

আমি বললাম, “চল চল। এক্ষুনি থানায় যাই।”

“না না প্লিজ থানায় না।” অবাস্তব চেঁচিয়ে উঠল।

–      কেন?

–      পুলিশ যদি জিজ্ঞেস করে আমি তখন কী করছিলাম? ওকে যখন নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল?

–      কী করছিলি তুই?

–      আমি মানে…

–      আবার কিছু উল্টোপাল্টা ঘটিয়েছিস তুই?

অবাস্তব বলল, “ না না ভাই। বিশ্বাস কর। আমি রোজ এই সময় মেট্রোর কাছে থাকি। আসলে শ্রীপর্ণা এই সময়েই কলেজ আসে। আমি দূর থেকে ওকে দেখি। আর কিচ্ছু না। সত্যি বলছি।”

তারপর একটু থেমে নিজেই বলল, “এখন এটা যদি পুলিশ জেনে যায় তাহলে তো আমাকে আগে লকআপ এ ভরবে।”

আমি বুঝতে পারলাম ওর ভয়ের কারন টা। আমি বললাম, “কিন্তু আমরা তাহলে করব টা কী?”

অবাস্তব একটু ভেবে বলল, “চল আমি আর তুই যাই একবার ওখানে। খুব বেশী লোক থাকলে না হয় পুলিশে খবর দেবো। ২-১ জন আমরা পেড়ে ফেলতে পারবো আশা করি।”

আমি বললাম, “ওদের কাছে যদি রিভলবার থাকে তাহলে?”

–      দেখ আমার মনে হয় এটা নিতান্তই একটা ভয় দেখানোর কেস। কলেজের ওই ঘটনাটার জন্য। মনে হয় না ওসব রিভলবার টিভলবার থাকবে। তবে যদি থাকে দু’জনেই দৌড়োবো কিন্তু। আপনি বাঁচলে বাপের নাম।

আমি আর কি বলি। অগত্যা রাজি হয়ে গেলাম। মোড় থেকেই একটা ট্যাক্সি নিয়ে রওনা দিলাম শ্রীপর্ণা উদ্ধার করতে।

যে গলিটার মুখে আমাদের ট্যাক্সি টা থামল সেটা হাজরা মেট্রো থেকে মিনিট ১৫-২০ র রাস্তা হলেও আগে কখনও আসিনি। এখানে সম্ভবত একটা ফ্ল্যাট হচ্ছে। সব টাই Under Construction. কোনো কারনে এখন হয়তো কাজ বন্ধ। ট্যাক্সি ভাড়া দিয়ে আমরা পা টিপে টিপে এগোলাম ওই বিল্ডিং টার দিকে। সামনে অবাস্তব, পেছনে আমি।

একটু ভেতরে যেতেই একটা পিলার এর আড়াল থেকে দেখলাম, একটা চেয়ারে হাত বাঁধা অবস্থায় রয়েছে শ্রীপর্না। মুখে সম্ভবত রুমাল জাতীয় কিছু রয়েছে। গোঁ গোঁ আওয়াজ করছে কিন্তু কথা বলতে পারছে না। আর ওর ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে আছে তিনটে ছেলে। তাদের মধ্যে একজন বার বার ঘড়ি দেখছে।

আমি ফিসফিসিয়ে অবাস্তব কে বললাম, “কী করবি ভাই?”

অবাস্তবে নীচ থেকে একটা কাঠের টুকরো তুলে নিল। তারপর আমার দিকে একবার তাকিয়ে চিৎকার করে দৌড়োলো যেদিকে ওরা রয়েছে সেদিকে।

হঠাৎ দেখলাম হিন্দিতে কিছু চিৎকার করছে অবাস্তব, “মার ডালেঙ্গে। সবকো মার ডালেঙ্গে। পুলিশ কো বুলা অনিরুদ্ধ!”

এদিকে ওই তিনজন তো ওকে হঠাৎ দেখে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছে। তারা নিজেদের দিকে একবার তাকিয়ে কি করবে ভাবছিল। এবার আমিও আড়াল থেকে বেরিয়ে এলাম। তারপর এগিয়ে গেলাম ওইদিকে। দু’জন রয়েছি দেখে ওরা আর দাঁড়ালো না। সোজা দৌড়োলো পেছন দিকে। অবাস্তব ওর হাতে থাকা কাঠার টুকরো টা ছুঁড়ে দিল ওদের দিকে। একজনের পিঠে গিয়ে লাগল সেটা। কিন্তু কেউ থামলো না একবারের জন্যেও।

ব্যাপারটা যে এত সহজে মিটে যাবে সেটা আমি ভাবিনি। ওরা চলে যাওয়ার পর গেলাম শ্রীপর্ণার দিকে। অবাস্তব ওর হাতের বাঁধন খুলে দিল। মুখে বাঁধা রুমালও খুলে দিল। শ্রীপর্না তখনও বেশ Traumatized মনে হচ্ছে। চোখ মুখ পুরো লাল। অবাস্তব হঠাৎ একটা অভাবনীয় কাজ করল তখন। শ্রীপর্ণা কি একটা বলতে যাচ্ছিল। হঠাৎ অবাস্তব আমার দিকে ফিরে বলল, “আয় অনিরুদ্ধ, আমাদের কাজ শেষ।”

তারপর গটগট করে হাঁটতে শুরু করল পেছন দিকে। আমি একবার শ্রীপর্ণার দিকে তাকালাম। তারপর অগত্যা ফলো করলাম অবাস্তব কে।

পরের দিন কলেজে ক্লাসে বসে আছি আমরা সবাই। কালকের ব্যাপার নিয়ে আর সেভাবে লোকজন কে জানাইনি আমি। অবাস্তব কে একবার বলেছিলাম, “তুই ওকে ওখানে এক ফেলে চলে এলি?”

অবাস্তব বলেছিল, “একার কী আছে? গলি পেরোলেই তো রাস্তা। নিজে চিনে দিব্যি বাড়ি ফিরতে পারবে।”

আমি আর কিছু বলিনি তখন। ক্লাসে পরের দিন শ্রীপর্ণা এল আমাদের বেঞ্চের কাছে। বেঞ্চে বসে আছি আমি, আহেলী আর অবাস্তব। শ্রীপর্ণা বলল, “তোর সাথে একটু কথা ছিল।”

অবাস্তব বলল, “হ্যাঁ বল।”

শ্রীপর্ণা বলল, “একটু আলাদা বলতে পারলে ভালো হত।”

–      না না। আলাদার কী আছে। এদের সামনেই বল।

শ্রীপর্ণা একবার আমাদের দিক তাকাল, তারপর বলল, “I am sorry.”

অবাস্তব অবাক হয়ে বলল, “এবাবা কীসের জন্যে?”

–      ক্যান্টিনে ওরকম বাজে ব্যবহারের জন্য। আমার সত্যি কোনো Excuse দেওয়ার নেই। I am sorry.”

“দেখ, একটা কথা বলি” অবাস্তব বলল, “তুই সুন্দরী, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু সেটার জন্য মাটিতে পা পড়বে না সেরকম ভাবার কোনো কারন নেই। এর থেকে বেশী আমার আর কিছু বলার নেই। যাই হোক, তুই আয় এখন। আমি একটু দরকারী কথা বলছি এদের সাথে।”

শ্রীপর্ণার মুখ আবারও লাল হয়ে গেছে। কিন্তু লজ্জায়, অপমানে। ও চুপচাপ চলে গেল নিজের বেঞ্চের দিকে। আহেলী জিজ্ঞেস করল, “কী হয়েছে রে?”

আমি বলতে যাচ্ছিলাম। অবাস্তব আমাকে থামিয়ে বলল, “পরে শুনিস। এখন না!” তারপর আমাকে বলল, “অনিরুদ্ধ তুই আজ বিকেলে ফ্রী?”

আমি বললাম, “হ্যাঁ। কেন রে?”

–      আজ বিকেলে কলেজ থেকে ফিরে ধর্মতলায় আসতে পারবি একবার?

–      হ্যাঁ। কিন্তু কেন?

–      ট্রীট দেবো।

আমি অবাক হয়ে বললাম, “কীসের ট্রীট?”

অবাস্তব বলল, “একটা ভালো ব্যাপার ঘটেছে। বিকেলে আয় সব বলছি।”

ধর্মতলার ব্যস্ততা আজকে ২০১৭ তে দাঁড়িয়ে যা দেখি, ২০০১ এও মনে হয় যেন একই ছিল। চারদিক লোকময়। মেট্রোর সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ কাঁধে হাত পড়তেই দেখি অবাস্তব। বলল, “চল। আমিনিয়া যাই।”

আমার তখন ভীষন আনন্দ। বিরিয়ানি খাওয়া হবে বহুদিন পর। কিন্তু উপলক্ষ্যটা কী?

আমি বললাম, “খাওয়াচ্ছিস কীসের জন্যে?”

অবাস্তব বলল, “উফফ! এত অধৈর্য কেন ভাই? একটু দাঁড়া না।”

অগত্যা আমি চুপ। আমিনিয়ায় গিয়ে বসলাম একটা টেবিলে। তার কয়েক মিনিট পরেই আমাদের টেবিলে এসে বসল তিনটে ছেলে। আমি একটু অবাক হলাম। কিন্তু অবাস্তব দেখলাম চেনে ওদের কে। আমারও খুব চেনা লাগছিল। কিন্তু কোথায় দেখেছি ভাবতে ভাবতেই…

অবাস্তব বলল, “অনিরুদ্ধ, আলাপ করিয়ে দিই। আমার ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের বন্ধু শেখর, প্রিয়াংশু আর হাসান।”

আমার তখন মাথা বোঁ বোঁ করছে। কারন ততক্ষনে আমি চিনতে পেরেছি তিনজন কেই। কাল ওই গলির ভেতরের বাড়িটায় এরাই তো গার্ড দিচ্ছিল শ্রীপর্ণা কে। আমি অবাস্তব কে বললাম, “তুই… মানে… এরা… কালকে…”

অবাস্তব বলল, “হ্যাঁ ভাই সরি। তোকে ব্যাপারটাতে জড়ানোর জন্য। কিন্তু আমার একটা Witness দরকার ছিল।”

আমি বললাম, “মানে কীসের জন্য Witness?”

অবাস্তব বলল, “আরে লাগে লাগে কাজে লাগে। আসলে Revenge টা দরকার ছিল আমার। মেয়েটার বড্ড ঘ্যাম। এত ঘ্যাম সহ্য হয় না।”

–      তাই বলে তুই… এভাবে?

–      কী আর করেছি ভাই। ঘন্টা খানেক একটু চাপে ফেলেছি। ওর সাথে হওয়া দরকার ছিল এরকম। নাহলে শিক্ষা হত না।

আমি কি বলব বুঝতে পারছিলাম না। অবাস্তব বলল, “বাস্তব টা বড় কঠিন ভাই। আমাকে তুই যাই ভাবিস না কেন আমি মোটেই ভালো ছেলে না। Anyway, থাক সে কথা। তোরা বিরিয়ানি খা। যা হেল্প করেছিস তা আর বলার নয়।”

আমি ভদ্রতার খাতিরে বললাম, “তুই খাবি না?”

অবাস্তব বলল, “নারে। আহেলী আসবে একটু পর। ওর সাথেই খাবো। এখন খেলে আর খেতে পারবো না।”

আমি এতক্ষনে বুঝতে পারলাম এই খাওয়ানোর উপলক্ষ্যটা। সত্যি! বাস্তব বড়ই কঠিন এবং বিস্ময়কর।

অবাস্তবের বাস্তব দর্শন

Arnab Mondal


হিজিবিজি লেখা আর বিরিয়ানি নিয়ে Phd করছি আর আকাশবাণী কলকাতায় নিজের কন্ঠস্বর ভাড়া দিয়ে সংসার চালাচ্ছি।


Post navigation


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কপি করবেন না দাদা/দিদি